কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়মঃ জীবনের পথে চলতে আমাদের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঘটনা ও অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। তবে মৃত্যুর কথা স্মরণ করা আমাদের হৃদয়কে নরম করে, আমাদের দুনিয়াবিমুখ হতে সহায়তা করে। কবর জিয়ারত এমন একটি আমল যা আমাদের জীবনের এই ক্ষণস্থায়ীতা এবং আখিরাতের গুরুত্বকে গভীরভাবে উপলব্ধি করায়। কবর জিয়ারতের নিয়ম-কানুন, দোয়া এবং ফজিলত নিয়ে বিশদ আলোচনায় আজ আমরা এ ব্লগে কথা বলব। তাই লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং জেনে নিন এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের সঠিক পদ্ধতি।
কবর জিয়ারতের দোয়া
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনার কবরবাসীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করেন:
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ
বাংলা উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর; ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম, আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আ-সার।
অর্থ: হে কবরবাসী! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের ক্ষমা করুন। তোমরা আমাদের আগে কবরে গিয়েছ এবং আমরা পরে আসছি।
কবর জিয়ারত: সুন্নত এবং গুরুত্ব
কবর জিয়ারত করলে হৃদয় বিনম্র হয়, মৃত্যুর কথা স্মরণ হয় এবং আখিরাতের প্রতি উৎসাহ পাওয়া যায়। এটি গুনাহ থেকে তওবা করার মানসিকতা তৈরি করে এবং সৎ-আমলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত হিসেবে কবর জিয়ারতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
কবর জিয়ারতের হাদিস
কবর জিয়ারতের অনুমতি দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো, এতে পরকালীন জীবনের কথা স্মরণ হয়। ইসলামের প্রথম দিকে কবর জিয়ারতের অনুমতি ছিল না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আমি তোমাদের কবর জিয়ারতে নিষেধ করেছিলাম, এখন থেকে কবর জিয়ারত করো। কারণ, তা দুনিয়াবিমুখতা এনে দেয় এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৫৭১)
কবর জিয়ারতের নিয়ম
কবরস্থানে গিয়ে প্রথমে জিয়ারতের দোয়া পড়ুন। এরপর কবরবাসীর ইসালে সওয়াবের নিয়তে দরুদ শরিফ, সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসি ইত্যাদি পড়ুন। মৃতের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করুন। কবরের সামনে দুই হাত তুলে দোয়া করবেন না। বরং কবরকে পেছনে রেখে কিবলামুখী হয়ে দোয়া করুন।
কবর জিয়ারতের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি প্রতি জুমার দিনে তার পিতা-মাতার বা তাদের মধ্যে একজনের কবর জিয়ারত করে, তাকে মাফ করা হবে এবং তাকে পিতা-মাতার প্রতি উত্তম ব্যবহারকারী হিসেবে গণ্য করা হবে।”
আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যখন কোনো ব্যক্তি মারা যায়, তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি জিনিস অব্যাহত থাকে: সদকায়ে জারিয়া, এমন জ্ঞান যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয় এবং নেক সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।”
কবর জিয়ারতের সময়ের বিশেষ আমল
কবর জিয়ারতের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনবার হাত তুলে দোয়া করেছেন। এটি মুস্তাহাব হিসেবে গণ্য। কবরবাসীর জন্য দোয়া করার সময় মনে মনে দোয়া করা বা কিবলামুখী হয়ে হাত তুলে দোয়া করাও বৈধ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আবদুল্লাহ যুলবিজাদাইন (রা.) এর দাফনের সময় কিবলামুখী হয়ে দু’হাত তুলে দোয়া করেন: “ইয়া আল্লাহ, আমি তার ওপর সন্তুষ্ট, আপনিও তার ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যান।”
মৃতের জন্য দোয়ার গুরুত্ব
মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে কবরস্থানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যে কোনো স্থান থেকেই দোয়া করা যায়। দোয়া মৃত ব্যক্তির নাজাতের জন্য বিশেষ উপকারী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি মৃতদের জন্য দোয়া করে, আল্লাহ তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন।”