বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়াঃ বদ নজর এমন একটি বিষয় যা অনেকের জীবনকে বিপদগ্রস্ত করতে পারে। এটি কোনো জাদু বা অলৌকিক কাহিনি নয়; বরং কুরআন ও হাদিসে এর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। বদ নজরের কুপ্রভাব আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। তাই এ বিষয়ে সচেতন থাকা এবং সঠিক দোয়া ও আমল জানা অত্যন্ত জরুরি। আজকের এই ব্লগে, আপনি জানবেন বদ নজর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কী কী আমল এবং দোয়া গুরুত্বপূর্ণ। পুরো লেখাটি পড়ুন এবং আপনার পরিবারকে এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখুন।
বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) বদ নজর থেকে বাঁচতে কিছু দোয়া শিখিয়েছেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হলো:
بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللهِ أَرْقِيكَ।
উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি আরকিকা মিন কুল্লি শাইয়িন ইউজিকা মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আউ আইনিন হাসিদিন, আল্লাহু ইয়াশফিকা বিসমিল্লাহি আরকিকা।’
অর্থ: ‘আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি; যেসব জিনিস আপনাকে কষ্ট দেয়, সেসব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন।’
এ দোয়াটি বারবার পড়া এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে ফুঁ দিলে ইনশাআল্লাহ বদ নজরের প্রভাব দূর হবে।
কুরআন ও হাদিসে বদ নজরের প্রমাণ
পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াতে বদ নজরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কাফিররা যখন উপদেশবাণী শোনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টির মাধ্যমে তোমাকে আছড়ে ফেলবে, আর তারা বলে, এ তো এক পাগল’। (সুরা কলম, আয়াত ৫১)।
এই আয়াতের তাফসিরে ইবনে কাসির রহ. উল্লেখ করেছেন, এ আয়াতের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে, মানুষের হিংস্র দৃষ্টি ও খারাপ নজর ক্ষতির কারণ হতে পারে।
হাদিসেও এ বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বদ নজরের প্রভাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর, কেননা নজরের প্রভাব সত্য।’ (ইবনে মাজাহ ৩৫০৮)।
ছোটদের জন্য উপকারী দোয়া
ছোট বাচ্চাদের জন্য এই দোয়াটি খুবই কার্যকর:
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ।
উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস-সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।’
অর্থ: ‘আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এই দোয়াটি তিনবার বলবে, সকাল পর্যন্ত কোনো বিপদ আসবে না, আর সকালে বললে সন্ধ্যা পর্যন্ত সে নিরাপদ থাকবে।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)
বাচ্চাদের রক্ষার দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) ছোটদের জন্য এই দোয়াটি পড়তেন:
أُعِيْذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَّهَامَّةٍ وَّمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ।
উচ্চারণ: ‘উয়িযুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।’
অর্থ: ‘সকল শয়তান, কীটপতঙ্গ এবং বদ নজর থেকে আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের আশ্রয়ে তোমাদের রক্ষা করছি।’
কোরআনি আমল
বদ নজর থেকে রক্ষা পেতে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস তিনবার পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ফুঁ দেওয়া উচিত।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এই তিন সুরার মাধ্যমে বদ নজর ও জিন থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। (তিরমিজি ২০৫৮)
বদ নজর সম্পর্কে FAQ
প্রশ্ন ১: বদ নজর কী?
প্রশ্ন ২: বদ নজর থেকে বাঁচার দোয়া কী?
প্রশ্ন ৩: ছোটদের বদ নজর থেকে রক্ষা করার দোয়া কী?
বদ নজর সম্পর্কে FAQ
Conclusion
বদ নজর থেকে রক্ষা পেতে কুরআন ও হাদিসের নির্দেশিত আমলগুলো খুবই উপকারী। দোয়াগুলো সহজ এবং কার্যকর, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগানো উচিত। আপনারা যারা এই ব্লগটি পড়েছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, দোয়াগুলো নিজের জন্য এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য নিয়মিত পড়ুন।
আপনারা যদি আরও ইসলামিক দোয়া, আমল এবং শিক্ষণীয় ব্লগ পড়তে চান, তাহলে অবশ্যই StudyTika.com-এর অন্যান্য পোস্টগুলো দেখুন। এখানে শিক্ষামূলক অনেক সুন্দর ব্লগ পাবেন। ধন্যবাদ!