ঘুম থেকে উঠার পর দোয়াঃ ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে, বিশেষত যখন গভীর ঘুমে ডুবে থাকি। কিন্তু জানেন কি, এই সময়টাতে আমাদের জন্য রয়েছে অমূল্য বরকত এবং উপকারিতা? আল্লাহর রহমত ও মঙ্গলে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতে পারা আমাদের জন্য একটি বিশেষ মর্যাদা। কিভাবে আপনি সহজে ভোরে ওঠবেন এবং কী কী আমল ও দোয়া আপনার জন্য উপকারী হতে পারে, সেই বিষয়ে আজকের পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ঘুম থেকে উঠার পর দোয়া
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা ভোরে উপনীত হয়ে (ঘুম থেকে উঠে) এই দোয়া পড়বে-
اللَّهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا وَبِكَ أَمْسَيْنَا وَبِكَ نَحْيَى وَبِكَ نَمُوتُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা ওয়া বিকা আমসাইনা ওয়া বিকা নাহইয়া ওয়া বিকা নামুতু।
অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার আদেশেই আমরা প্রভাতে উপনীত হই এবং তোমার আদেশেই আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হই, তোমার আদেশেই আমরা জীবন ধারণ করি এবং তোমার আদেশেই আমরা মৃত্যুবরণ করি। (ইবনে মাজাহ: ৩৮৬৮)
অপর একটি দোয়া নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে,
الحمدلله الذي أحيانا بعدما أماتنا و إليه النّشور
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের মৃত বানানোর পর জীবিত করেছেন। আর তার দিকেই পুনরুত্থান। (বুখারি: ৬৩২৪)
| ঘুম থেকে উঠার পর দোয়া সারাংশ | |
|---|---|
| দোয়া ১ | اللَّهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا وَبِكَ أَمْسَيْنَا وَبِكَ نَحْيَى وَبِكَ نَمُوتُ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা ওয়া বিকা আমসাইনা ওয়া বিকা নাহইয়া ওয়া বিকা নামুতু। অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার আদেশেই আমরা প্রভাতে উপনীত হই এবং তোমার আদেশেই আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হই, তোমার আদেশেই আমরা জীবন ধারণ করি এবং তোমার আদেশেই আমরা মৃত্যুবরণ করি। (ইবনে মাজাহ: ৩৮৬৮) |
| দোয়া ২ | الحمدلله الذي أحيانا بعدما أماتنا و إليه النّشور উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর। অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের মৃত বানানোর পর জীবিত করেছেন। আর তার দিকেই পুনরুত্থান। (বুখারি: ৬৩২৪) |
| ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার আমল | - রাতে দেরি না করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া। - ভোরে জেগে ওঠার দৃঢ় ইচ্ছা থাকা। - কোরআনের আয়াত পড়া (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৬৪)। - নামাজের গুরুত্ব অনুধাবন করা। - তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। |
| ঘুম থেকে উঠে করণীয় | - ঘুমের প্রভাব দূর করতে চেহারা মুছে নেয়া। - দোয়া পড়া: الْحَمْدُ للَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُورُ উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর। - আল্লাহর কাছে দোয়া করা। - মিসওয়াক বা ব্রাশ করা। - অজু করা। - ফজরের নামাজ জামাতে পড়া। |
| এই দোয়া ও আমলগুলোতে আল্লাহর রহমত ও বরকত থাকুক। | |
ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার আমল ও দোয়া
ঘুম মহান আল্লাহর অন্যতম নেয়ামত। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু নেই। ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা কষ্টকর। তবে তাদের জন্য নয়- যারা নিয়মিত তাহাজ্জুদ ও ফজরের নামাজ পড়েন।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের মৃত বানানোর পর জীবিত করেছেন। আর তার দিকেই পুনরুত্থান। (বুখারি: ৬৩২৪)
মহান আল্লাহ ইসলাম পালন আমাদের জন্য সহজ করেছেন। ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার দোয়া ও আমল শিখিয়ে দিয়েছেন-
ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার আমল
- রাতে দেরি না করে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া।
- ভোরে জেগে ওঠার দৃঢ় ইচ্ছা থাকা। কেউ যদি ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠার জন্য সময় নির্ধারণ করে; তবে সে অবশ্যই ৫টা বাজার এক মিনিট আগে হলেও জেগে ওঠবে। (ইনশাআল্লাহ!) কারণ বান্দার দৃঢ় ইচ্ছার কারণেই সে ফজরের সময়ে জেগে ওঠবে। মহান আল্লাহ যখন বান্দার একনিষ্ঠতা দেখবেন; তখন কোনো অ্যালার্ম বা সংকেত ছাড়াই ওই বান্দা আল্লাহর ইচ্ছায় জেগে ওঠবেন।
- নামাজের গুরুত্ব অনুধাবন ও মহান আল্লাহর নির্দেশ মানার জন্য ব্যাকুলতা থাকা। তাহলে এমনিতেই ঘুম থেকে জেগে ওঠবেন।
- ভোরবেলা ওঠার নিয়তে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কোরআনের একটি আয়াত পড়া যায়। তাহলো-
لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَياةِ الدُّنْيَا وَفِي الآخِرَةِ لاَ تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
উচ্চারণ: লাহুমুল বুশরা ফিল হায়াতিদদুনইয়া ওয়া ফিল আখিরাতে লা তাবদিলা লিকালিমাতিল্লাহি জালিকা হুয়াল ফাউযুল আজিম।
অর্থ: তাদের জন্য সুসংবাদ দুনিয়ার জীবনে ও পরকালীন জীবনে। আল্লাহর কথার কখনো হের-ফের হয় না। এটাই হল মহা সফলতা। (সুরা ইউনুস, আয়াত: ৬৪)
ঘুম থেকে উঠে মুমিনের করণীয়
- ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথম করণীয় হলো, হাত দিয়ে চেহারা থেকে ঘুমের প্রভাব দূর করা। (বুখারি, হাদিস : ১৮৩)
- ঘুম থেকে ওঠার দোয়া পড়া। দোয়াটি হলো,
الْحَمْدُ للَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩২৪)
- আল্লাহর কাছে দোয়া করা : উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাতের ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে এই দোয়া পাঠ করবে,
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله، والله أكبر، ولا حول ولا قوة إلا بالله
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদির, আল-হামদু লিল্লাহ, ওয়া সুবহানাল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।’
অথবা সে বলে, ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি’ (হে আল্লাহ, আপনি আমাকে মাফ করে দিন) কিংবা সে যেকোনো দোয়া করে, তাহলে তার দোয়া কবুল করা হবে। আর যদি সে অজু করে এবং সালাত আদায় করে, তার সালাত কবুল করা হবে। (বুখারি, হাদিস : ১১৫৪)
- আকাশের দিকে তাকিয়ে সুরা আলে-ইমরানের শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩)
- মিসওয়াক করবে। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুম থেকে উঠে মিসওয়াক করতেন। (বুখারি, হাদিস : ২৪৫) মিসওয়াক করতে না পারলে ব্রাশ করে নেবে।
- অজু করে নেবে। গোসল ফরজ হলে গোসল করে নেবে।
- সম্ভব হলে শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করবে। তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলে কুপ্রবৃত্তি দমন ও শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই দলনে রাত্রিকালীন উত্থান প্রবলতর এবং বাকস্ফুরণে সঠিক।’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৬)
- জামাতের সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করবে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬)
FAQ
FAQ
এখন, আপনি জানেন কীভাবে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠতে পারবেন এবং কীভাবে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করতে পারবেন। যদি এই তথ্যগুলি আপনাকে সহায়ক মনে হয়, তবে আরও অনেক মূল্যবান পোস্টের জন্য আমাদের ওয়েবসাইট StudyTika.com নিয়মিত পরিদর্শন করুন। আল্লাহ আমাদের সবার ওপর রহমত এবং বরকত বর্ষণ করুন।