এই ব্লগে সুন্দরবন নিয়ে একটি রচনা দেওয়া হয়েছে। রচনা পড়ে আপনারা সুন্দরবন সম্পর্কে কিছু ভালো তথ্য পাবেন।
সুন্দরবন রচনা ১
ভূমিকা : সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লোনা পানির বন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঐশ্বর্যের অপূর্ব লীলাভূমি এ বন। সুন্দরবনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী গাছ। আর এ বনের নাম অনুসারে বনের নামকরণ করা হয়েছে সুন্দরবন। এ বনে বাস করে পৃথিবীর বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তাই এ বন দিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশে পরিচিতি ও ব্যাপক। জীববৈচিত্র্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ চমৎকার এক বন এ সুন্দরবন।
সুন্দরবনের ভূতত্ত্ব, মৃত্তিকা ও জলবায়ু : হিমালয় পর্বতের ভূমি ক্ষয়জনিত জমা পলি ও মাটি থেকেই সুন্দরবনের ভূভাগ গঠিত হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এটি ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণ মৃত্তিকার তুলনায় সুন্দরবনের মৃত্তিকা একটু ভিন্নধর্মী, কারণ এটি পলিযুক্ত দোআঁশ মাটি। এখানে জোয়ার-ভাটার প্রভাবে পানির লবণাক্ততা থাকে। সুন্দরবনের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ প্রায় ৩০° সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন প্রায় ২১° সেলসিয়াস।
সুন্দরবনের আয়তন ও অবস্থান : সুন্দরবনের মোট আয়াতন ১৩৯৫০০ হেক্টর বা ৩৪৫০০ একর (তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া) এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লোনাপানির বন। সুন্দরবনের প্রায় ৬২ ভাগ বা ৬০১৭ বর্গ কি:মি: রয়েছে বাংলাদেশের মধ্যে। আর বাকি অংশ ভারতের মধ্যে পড়েছে। এ বনভূমির মোট ৩১.১ শতাংশ এলাকা জলাজীর্ণ।
বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাঘেরহাট, দক্ষিণে বিশাল বঙ্গোপসাগর, হরিণঘাট নদী, বরিশাল ও পিরোজপুর জেলা, পশ্চিমে রাইমঙ্গল, হাড়িয়াভাঙ্গা নদী ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আংশিক প্রান্ত সীমানা জুড়ে সুন্দরবনের অবস্থান। অক্ষাংশের হিসাবে ভারত ও বাংলাদেশ উপকূল ধরে বিস্তৃত ২১°৩০′ - ২২°৩০′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০০-৮৯°৫৫ পূর্ব দ্রাঘিমার মধ্যবর্তী স্থানে এ বনের অবস্থান। নানা ধরনের জীবজন্তু আর গাছপালা দ্বারা সজ্জিত এ বন।
সুন্দরবনের উদ্ভিদ : সুন্দরবন যেন উদ্ভিদের মিলনকেন্দ্র। সরকারি জরিপ অনুসারে, এ বনে ২৪৫ শ্রেণি ও ৩৩৪ প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে। এ বনের প্রধান উদ্ভিদ সুন্দরী গাছ। এ গাছের নামানুসারেই বনের নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে গেওয়া, কেওড়া, পশুর, বাইন, সেগুন, আমলকীসহ নানা ধরনের ফল ও ঔষধি গাছ; যা আমাদের দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে অসীম ভূমিকা রাখছে।
সুন্দরবনের প্রাণী : প্রাণী ছাড়া বনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। সুন্দরবনে বিপুলসংখ্যক প্রাণী বাস করে। এখানে রয়েছে ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী। সুন্দরবনের কথা উঠলেই সবার আগে মনে পড়ে বাঘ। বিশেষত, এখানে রয়েছে পৃথিবীর বিখ্যাত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, যার একমাত্র আবাসস্থল সুন্দরবন। অতীতে এখানে প্রচুর চিতাবাঘও ছিল। বাঘের পর সুন্দরবনের হরিণদের সংখ্যা বেশি। এখানে মায়াহরিণ, চিত্রা হরিণ, বারোশিঙা, সাম্বার জাতের হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ রয়েছে, যারা ঘাস-পাতা খেয়ে জীবন যাপন করে। সুন্দরবন পাখিদের জন্যও বিখ্যাত; বনভূমিতে প্রতিনিয়ত শালিক, ময়না, ঘুঘু, টিয়া, টুনটুনি, শকুন, ফিঙে, মাছরাঙা, বুনোকবুতর, বন্য মোরগসহ বিভিন্ন পাখির কিচির-মিচির কণ্ঠ শোনা যায়। সুন্দরবনের গাছগাছে রয়েছে বিশাল মৌচাক, যেখানে অগণিত মৌমাছি মধু জমা করে। মৌমালারা এই মধু সংগ্রহ করে। দেশের সর্বত্র সুন্দরবনের মধুর খ্যাতি রয়েছে। উপরোক্ত প্রাণীগুলো ছাড়াও সুন্দরবনে আরও অসংখ্য প্রাণী বাস করে, যা এই বনকে সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের কারণে সুন্দরবনের অনেক প্রাণী বিলুপ্তির মুখে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক দশকের মধ্যেই সুন্দরবনে প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠবে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুন্দরবনের অবস্থান : সুন্দরবন জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি দেশের বনজ সম্পদের সর্ববৃহৎ উৎস। কাঠের উপর নির্ভরশীল শিল্পে কাঁচামালের জোগান দেয় সুন্দরবন। খুলনা নিউজপ্রিন্ট ও হার্ডবোর্ড মিলস্ সুন্দরবনের বনজ সম্পদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এছাড়া কাঠ, জ্বালানি ও মণ্ড ইত্যাদি সম্পদ আমরা সুন্দরবন থেকে পেয়ে থাকি। এই বন থেকে পাওয়া যায় গোলপাতা, মধু, মোম। এ বনের প্রবাহমান নদী থেকে নিয়মিত আহরণ করা হয় মাছ, কাঁকড়া ও শামুক-ঝিনুক। ঝিনুক-শামুক থেকে খাবার চুন তৈরি করা হয়।
সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থা : বর্তমানে সুন্দরবনের প্রাণিকুল ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে। মানুষের অবাধ বৃক্ষনিধন, অবৈধ পশু শিকার এবং পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ড সুন্দরবনের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নষ্ট করছে। সম্প্রতি শ্যালা নদীতে তেল ট্যাংকার দুর্ঘটনার ফলে সুন্দরবনের পরিবেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভরা পূর্ণিমার শক্তিশালী জোয়ারের সঙ্গে তেল বনভূমির গভীরে প্রবেশ করে, অনেক জায়গায় গাছের শ্বাসমূলসহ বনভূমি তেলের আস্তরণে ঢাকা পড়ে। বনের নিম্নাঞ্চল ও খালে তেলের অস্তিত্ব স্পষ্ট দেখা যায়। মৃত কাঁকড়া, মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী পানিতে ভেসে ওঠে। বিষাক্ত পানি পান করে অনেক পাখি ও বিরল প্রাণী প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ওরিয়র বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সরকারি সাইলো গুদাম সুন্দরবনের পরিবেশকে ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
উপসংহার : বাংলাদেশের জলবায়ুর উপর সুন্দরবনের একটি বিরাট প্রভাব রয়েছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ক্রমান্বয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রাণিজগৎ বিলুপ্ত হয়ে গেলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত এবং আমাদের সুন্দরবনের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত। দল-মত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে আমাদের সুন্দরবনকে রক্ষা করতে হবে।
সুন্দরবন রচনা ২
সূচনা :
আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ এক অদ্ভুত সুন্দর দেশ। এখানে রয়েছে পাহাড়, নদীনালা, সমুদ্র, বন। সুন্দরবন বাংলাদেশের বৃহত্তর বন। এটি পৃথিবীর বৃহত্তর ম্যানগ্রোভ বন ।
অবস্থান :
সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত। তবে এর বেশিরভাগই সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত
আয়তন :
সুন্দরবনের মোট আয়তন দশ হাজার বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবনের ৬২ শতাংশ রয়েছে বাংলাদেশে যার আয়তন ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার।
উদ্ভিদ :
সুন্দরবনে হাজার হাজার প্রকার গাছপালা রয়েছে। সুন্দরী, গেওয়া, গরান, কেওড়া ইত্যাদি বৃক্ষ এখানে ব্যাপক পরিমাণে জন্মে। এছাড়া গোলপাতাও সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান গাছ। এই বনের নাম ‘সুন্দরবন’ রাখা হয়েছে প্রধান সুন্দরী গাছের নাম অনুসারে।
প্রাণী :
সুন্দরবনে অনেক জীবজন্তু রয়েছে। যেমন— রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, শেয়াল, ভালুক ইত্যাদি । সুন্দরবনের জলে রয়েছে হাঙর, কুমির, কামট ইত্যাদি ।
মৌয়ালি :
সুন্দরবনের আশেপাশে কিছু লোকজন রয়েছে যারা সুন্দরবনে কাঠ কাটতে ও মধু সংগ্রহ করতে যায় । সুন্দরবনে যারা মধু সংগ্রহ করতে যায় তাদের বলা হয় মৌয়ালি। এরা মৌচাকের ভেতর থেকে মধু সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রি করে আয় উপার্জন করে।
বাওয়ালি :
সুন্দরবনে যারা কাঠ কাটে এবং সেই কাঠ বাজারে বিক্রি করে তাদেরকে বলা হয় বাওয়ালি। এরা বন থেকে কাঠ কেটে তা বাজারে বিক্রি করে জীবনধারণ করে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব :
সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের কাঠ বড় বড় খুঁটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। গেওয়া গাছ থেকে নিউজপ্রিন্ট এবং দিয়াশলাই কারখানায় কাঁচামাল পাওয়া যায়। ধুন্দল গাছের কাঠ পেন্সিল তৈরিতে কাজে লাগে। গরান গাছের বাকল চামড়া পাকা করার কাজে ব্যবহৃত হয় এবং গোলপাতা ঘরের ছাউনিতে ব্যবহার করা হয়। এ বন থেকে প্রচুর পরিমাণ মধু ও মোমও সংগ্রহ করা হয়।
উপসংহার :
সুন্দরবন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় আমাদের সকলকে এগিয়ে আসা উচিত।
আমার ওয়েবসাইট StudyTika.com এ আরও অনেক সুন্দর রচনা আছে। অনুগ্রহ করে সেগুলোও পড়ুন এবং উপকার লাভ করুন।