সাইয়েদুল ইস্তিগফারঃ ইস্তিগফারের গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে কিছু জানলে আমাদের মন শান্তি পেতে শুরু করে। এটা আমাদের কাছে এক ধরনের উপহার, যা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সহজ পদ্ধতি। সাইয়েদুল ইস্তিগফার একটি বিশেষ দোয়া, যা পঠনে আমাদের জীবন হয়ে ওঠে আরও বরকতময়। আপনি জানেন কি, সাইয়েদুল ইস্তিগফারের নিয়মিত পাঠের মাধ্যমে কী কী দোয়া পাওয়া যায়? এই পোস্টে আমরা সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আসুন, জেনে নিই সাইয়েদুল ইস্তিগফারের আসল ফজিলত এবং এর উচ্চারণের সঠিক পদ্ধতি কী।
সাইয়েদুল ইস্তিগফারের উচ্চারণ
সাইয়েদুল ইস্তিগফার হলো ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া, যা মানবজাতির পাপ ও ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে সহায়ক। এর মাধ্যমে বান্দা তার পাপ থেকে মুক্তি লাভ করে এবং আল্লাহর অশেষ রহমত ও ক্ষমা পায়।
এটির আরবি উচ্চারণ হলো:
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْت
সাইয়েদুল ইস্তিগফারের অর্থ
হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই; আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার গোলাম, আর আমি আছি আপনার প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের ওপর আমার সাধ্যমতো। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আমার অপরাধ ও ভুল থেকে। আমি স্বীকার করছি আমার প্রতি আপনার সব নিয়ামত, আরও স্বীকার করছি আপনার কাছে আমার সমস্ত পাপ। সুতরাং, আমাকে ক্ষমা করে দিন, আপনি ছাড়া আর কেউ পাপ মাফ করতে পারে না। (সুনানে নাসায়ী ৫৫২১, বুখারি ও মুসলিম)
সাইয়েদুল ইস্তিগফারের উচ্চারণ ও ফজিলত
ইস্তিগফার শব্দটি "ক্ষমা প্রার্থনা" করার অর্থ বোঝায়। এটি হল, আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের ভুল বা পাপ স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া। ভুল-ত্রুটি না থাকলেও ইস্তিগফার করা সুন্নত হিসেবে গণ্য হয়, কারণ এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা খুশি হন। সবচেয়ে ছোটো এবং সহজ ইস্তিগফার হলো "আস্তাগফিরুল্লাহ" যার মানে "আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।" বান্দা যখন ইস্তিগফার করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন এবং তাঁর ডাকে সাড়া দেন।
মাওলানা নোমান বিল্লাহ বলেন, "বান্দা ইস্তিগফার করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। বান্দা যখন ডাকেন, আল্লাহ তখন সাড়া দেন।"
আল্লাহর দয়ার প্রতীক
আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত দয়ালু, মেহেরবান এবং ক্ষমাশীল। তাঁর দয়ার কোনো সীমা নেই এবং তিনি নিজের বান্দাদের ভুল, পাপ ও অন্য যে কোনো ধরনের অপরাধ ক্ষমা করে দেন। যখন বান্দা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তখন তিনি দয়ার হাত বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য রহমত ও ক্ষমার সাগর হয়ে উপস্থিত থাকেন।
ইস্তিগফারের ফজিলত
কোরআন শরীফে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, "আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি, যে তওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে এবং সৎপথে অবিচল থাকে।" (সুরা তহা ৮২) এছাড়া আরও এক আয়াতে বলা হয়েছে, "যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে বা নিজের প্রতি অবিচার করে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে আল্লাহর অতি ক্ষমাশীলতা ও দয়া পাবে।" (সুরা নিসা ১১০)
ইস্তিগফার এবং হতাশা দূরীকরণ
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, "যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করে, আল্লাহ তাআলা তাকে সকল প্রকার দুর্দশা ও হতাশা থেকে মুক্তি দেন এবং এমন উৎস থেকে রিজিক দেন যা সে কখনও কল্পনা করতে পারে না।" (আবু দাউদ)
রাসুলুল্লাহ সা. আরও বলেছেন, "যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার করে, আল্লাহ তার দারিদ্র্য দূর করেন এবং তাকে নিরাপত্তা ও সচ্ছলতা দেন।" যদিও রাসুল সা. এর কোনো গুনাহ ছিল না, তবুও তিনি দিনে-রাতে ইস্তিগফার করতেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, "আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছি, 'আল্লাহর কসম, আমি প্রতিদিন ৭০ বারও বেশি ইস্তিগফার করি।'" (বুখারি, হাদিস ৬৩০৭)
সাইয়েদুল ইস্তিগফারের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, "যদি কেউ সকাল ও সন্ধ্যায় বিশ্বাসের সঙ্গে সায়িদুল ইস্তেগফার পাঠ করে, সে যদি ঐদিন বা ঐরাতে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সে জান্নাতি হবে।" এটি একটি অসীম ফজিলতপূর্ণ দোয়া যা যারা নিয়মিত পাঠ করেন, তারা আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ করেন।
রাসুল সা. আরও বলেন, "যে ব্যক্তি দৃঢ়বিশ্বাসের সাথে সায়িদুল ইস্তিগফার সকালে পাঠ করে, যদি সে সারা দিন বা রাতে মৃত্যুবরণ করে, তবে সে জান্নাতি হবে।" এটি প্রমাণ করে যে, সায়িদুল ইস্তিগফার সকালে ও রাতে পাঠ করা উচিত।
সাইয়েদুল ইস্তিগফার কখন পড়া উচিত
বিশেষত ইস্তিগফার করার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। তবে, যখনই পাপের জন্য অনুতপ্ত হন তখনই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাইয়েদুল ইস্তিগফার সকালে ও রাতে পড়া সবচেয়ে উত্তম। রাসুল সা. বলেন, "যে ব্যক্তি সাইয়েদুল ইস্তিগফার সকালে পাঠ করে, যদি সে সারা দিন মারা যায় তবে সে জান্নাতি। এবং যারা রাতে এটি পাঠ করে, তারা যদি রাতে মারা যায়, তাহলে তারা জান্নাতি।" এটি প্রমাণ করে যে, সাইয়েদুল ইস্তিগফার সকাল ও রাতে দুবার পড়া উচিত।
সাইয়েদুল ইস্তিগফার FAQ
সাইয়েদুল ইস্তিগফার FAQ
Conclusion:
আপনি যদি সাইয়েদুল ইস্তিগফারের ফজিলত সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে চান, তবে আমাদের আরও পোস্টগুলো পড়ুন। StudyTika.com-এ আপনি পাবেন অনেক আরও তথ্য, যা আপনার জীবনের জন্য উপকারী হতে পারে। আমরা আশাবাদী, আপনি আমাদের সাইটে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাবেন।