৭২+ তোকমার উপকারিতা অপকারিতা [সঠিক তথ্য]

তোকমা বীজ, ছোট হলেও এর গুণাগুণ অনেক বড়। আপনি হয়তো অনেক সময় মিষ্টি পানীয় বা শরবতে তোকমা বীজ খেয়েছেন, কিন্তু জানেন কি, এই বীজের রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা? 

এটি শুধু শরীরের ভেতরে নয়, বাইরেও নানা সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। তোকমা বীজের পুষ্টিগুণ এবং ব্যবহার সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হবেন। চলুন, খুব সহজ ভাষায় এই ছোট্ট বীজের বড় বড় উপকারিতা এবং কিছু সতর্কতার কথা জেনে নেওয়া যাক।

৭২+ তোকমার উপকারিতা অপকারিতা [সঠিক তথ্য]

তোকমা দানার উপকারিতা

ইউনানি ও চীনা মেডিসিনে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, প্রোটিন, আয়রন ও ক্যালরি রয়েছে, যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তোকমা শরীরের নানা রকম সমস্যা প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর।

ওজন কমাতে

দেহের ওজন কমাতে এ বীজের জুড়ি নেই। তোকমার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়া এর নানা উপাদান দেহের চর্বি কমাতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, যা বাড়তি ক্ষুধা দূর করে এবং পেট দীর্ঘক্ষণ পরিপূর্ণ থাকার অনুভূতি দেয়।

এসিডিটি দূর করে

তোকমা এসিডিটি দূর করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে তোকমা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর খেতে হবে। এছাড়াও তোকমার বীজ পানিতে পরিপূর্ণ থাকে, যা দেহের ক্ষতিকর পদার্থও দূর করতে সহায়ক।

রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ

রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর তোকমা। মূলত দেহের বিপাকক্রিয়া ধীর করে দেয় তোকমা। ফলে কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুকোজে রূপান্তরের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এ কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিস যাঁদের রয়েছে, তারা এটি নিয়মিত খেতে পারেন।

চাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যে

তোকমার শরবত মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমায়, শরীর শীতল করে এবং ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

তোকমা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। সামান্য তোকমা অল্প পানিতে ভিজিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর তা দুধে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। এছাড়াও এটি হজমের সমস্যাও দূর করতে সহায়তা করে।

সুস্থ ত্বক ও চুল

ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে তোকমা ব্যবহার করা যেতে পারে। এজন্য কিছু তোকমা বীজ গুঁড়ো করে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ত্বকে প্রয়োগ করতে হয়। এটি একজিমা এবং সোরিয়াসিসের মতো চর্মরোগ নিরাময়ে সহায়ক। সুস্থ ও সুন্দর চুলের জন্য নিয়মিত তোকমা খাওয়াও উপকারী।

ঠান্ডার সমস্যায়

তোকমা বীজে রয়েছে ঠান্ডা প্রতিরোধী উপাদান। এটি দেহকে ঠান্ডার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়তে সহায়তা করে। সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকতে চাইলে তাই নিয়মিত তোকমা খাওয়া যেতে পারে।

ওমেগা-৩

ওমেগা-৩ শরীরের জন্য ভীষণ দরকারি একটি উপাদান। উদ্ভিদ ভিত্তিক ওমেগা অ্যাসিডের অন্যতম ভালো একটি উৎস হচ্ছে তোকমা দানা। তাই তোকমা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

তোকমা খাওয়ার অপকারিতা

যেহেতু প্রায় প্রতিটা বিষয়ের খারাপ দিক এবং ভালো দিক রয়েছে, তোকমা খাওয়ার উপকারিতা থাকার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য

গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে থাকা ইস্ট্রোজেন হরমোনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি খুব বেশি পরিমাণ তোকমা বীজ খাওয়ানো হয়, তখন এই ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমতে পারে, যা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

শিশুদের জন্য

ছোট শিশুদের পেটের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে তোকমা। এমনকি এটি শিশুদের শ্বাসপ্রশ্বাসেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই শিশুদেরকে তোকমা কখনোই খাওয়ানো উচিত নয়।

তোকমা খাওয়ার নিয়ম

তোকমা সাধারণত বীজ বা দানা জাতীয় খাদ্য। এটি পানির সাথে মিশিয়ে কিংবা বাদামের সাথে ব্লেন্ড করে খাওয়া যায়। পানিতে ভিজিয়ে ফুলে উঠলে দুধ ও মধু দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

তোকমা দানার পুষ্টিগুণ

পুষ্টিগুণে ভরা তোকমায় রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট এবং প্রচুর ফাইবার। এছাড়াও এতে রয়েছে ওমেগা-৩, ফ্যাটি অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন সি।

তোকমা খাওয়ার সময়

তোকমা প্রতিদিন রাতে পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খাওয়া ভালো। ১-২ চামচ তোকমা ২৫০ গ্রাম পানি বা ১ গ্লাস পানির মধ্যে মিশিয়ে চিনি ছাড়া খাবেন।

তোকমায় প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার থাকে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক। এছাড়াও, তোকমার শরবত শরীরের তরলের মাত্রা পূরণ করতে সাহায্য করে, হাইড্রেটেড রাখতে সহায়ক।

তোকমা বীজের উপকারিতা তোকমা বীজের অপকারিতা
ওজন কমাতে সাহায্য করে। গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
এসিডিটি দূর করে। ছোট শিশুদের জন্য বিপজ্জনক।
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। শিশুদের দম বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকর।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী।
ঠান্ডা প্রতিরোধে সহায়ক।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস।

স্বাস্থ্যের উপকারিতা

তোকমায় থাকা ফাইবার কার্ডিওভাসকুলার রোগ, কোলোরেক্টাল ক্যানসার এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে।

ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক যৌগ যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, দেহের ফ্রি র‍্যাডিক্যাল প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধেও তোকমা কার্যকর।

তোকমায় ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

তোকমা বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা এখন আপনার জন্য অনেক সহজ। তবে তোকমা খাওয়ার সময় কিছু বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে। বিশেষ করে, গর্ভবতী নারী এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করার আগে সতর্ক হতে হবে। আপনি যদি আরও এমন উপকারী স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পোস্ট পড়তে চান, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান্য পোস্টগুলোও দেখে নিতে ভুলবেন না।


Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.