সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও এর প্রতিকার রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

 Introduction: আজকের এই রচনাটিতে আমরা আলোচনা করব সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং এর প্রতিকার নিয়ে। আপনি জানবেন কীভাবে আমাদের সমাজের মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং কীভাবে এর সমাধান সম্ভব। এই রচনাটি Class 7, 8, 9, 10 এবং SSC, HSC শিক্ষার্থীদের জন্য উপকারী হবে।

সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও এর প্রতিকার রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও এর প্রতিকার রচনা 

ভূমিকা : বাংলাদেশে সামাজিক মূল্যবোধের যে চরম অবক্ষয় ও অবনতি ঘটেছে, সে কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের সামাজিক মূল্যবোধের এই অবক্ষয়ে জনজীবন আজ অতিষ্ঠ। অফিস-আদালত, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, যানবাহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই এর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশে যতগুলো সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়কে শীর্ষ পর্যায়ে রাখা যায়। 

সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও এর কারণসমুহ : দীর্ঘকাল ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে স্বাধীনতা-উত্তরকালে একাধিক কারণে বাংলাদেশে সামাজিক মূল্যবোধের পূর্ণ অবক্ষয় ঘটেছে- এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। সাম্প্রতিক এর ক্রমবর্ধমান ব্যাপকতা জাতীয় উন্নয়নের মূল স্রোতধারাকে ব্যাহত করছে। মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণসমূহ আলোচনা করা হলো : 

১. দারিদ্র্য : কাজকর্ম করতেও দ্বিধাবোধ করে না। ChatGPT said: দরিদ্রতার দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন রিপোর্ট ২০১৮ অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬তম। দেশের অধিকাংশ মানুষই দারিদ্র্যের কঠিন পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করছে। এর ফলে জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং পরিবারের ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করতে গিয়ে অনেক সময় মানুষ সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ে, এবং এতে তারা কোন দ্বিধাবোধ করে না।

২. জনসংখ্যার আধিক্য : ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে পঞ্চম আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১ অনুযায়ী জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৪ জন এবং প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১,০১৫ জন লোক বাস করে। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বর অষ্টম এবং এশিয়ার পঞ্চম জনাধিক্য দেশ। মাথাপিছু জমির পরিমাণ মাত্র ০.২৩ একর। 

৩. বেকারত্ব : দেশে প্রায় তিন কোটি লোক বেকারত্বের বোঝা বহন করে চলেছে। বেকারত্ব গোটা জাতিকে এক মহাসংকটে ফেলেছে। কর্মক্ষম মানুষ কর্মের অভাবে নিশ্চুপ বসে থাকতে থাকতে জীবিকার তাগিদে যে কোনো কাজের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে। বিশেষ করে পরিবারের প্রতি অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে চোরাচালন, রাহাজানি, ছিনতাই, মাদকদ্রব্যের ব্যবসা ইত্যাদি গর্হিত কাজ করে থাকে। এভাবেই বাড়তে থাকে মূল্যবোধের অবক্ষয়। 

৪. মাদকাসক্তি : বাংলাদেশে মাদকাসক্তির সমস্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে মাদকাসক্তি এবং সন্ত্রাস শব্দ দুটি প্রায় সমার্থক হিসেবে বিবেচিত হয়। দেখা যায়, যে ব্যক্তি মাদক সেবন করে, সে সাধারণত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকে। মাদক সেবনের জন্য টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে তাকে ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি অপরাধে লিপ্ত হতে হয়। এর ফলে আজকের সমাজ দিন দিন কলুষিত হয়ে উঠছে।

৫. অসম বণ্টন ব্যবস্থা : বাংলাদেশে সম্পদ বণ্টন ব্যবস্থা যথেষ্ট ক্রটিপূর্ণ। এ দেশের মুষ্টিমেয় লোকের কাছে বিশাল সম্পত্তি ও টাকা-পয়সার অধিকারী। এর ফলে সমাজের অধিকাংশ লোক সহায়-সম্পদহীন। এক হিসাবে দেখা গেছে, এ দেশের শতকরা ৯০ ভাগ সম্পদ ১০ ভাগ লোক ভোগ করছে এবং মাত্র ১০ ভাগ সম্পদ ভোগ করছে ৯০ ভাগ লোক। প্রাচুর্যের আধিক্যে লালিত সন্তান সম্পদের অহংকার ও টাকার গরমে যেমন অসামাজিক কার্যকলাপ তথা মদ, গাঁজা, হেরোইন ও কোকেন সেবন করে, তেমনি অভাব আর তাচ্ছিল্যের মধ্যে বেড়ে ওঠা সন্তান সন্ত্রাস মাস্তানি চাঁদাবাজি আর রাহাজানিতে সুদক্ষ হয়ে ওঠে।

৬. সামাজিক কারণ : কিছু কিছু সামাজিক কারণেও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় বাড়তে থাকে, সেগুলো হচ্ছে: 

ক. পারিবারিক কারণ : যেসব পিতা-মাতা অর্থনৈতিক বা অন্যান্য কাজকর্মে ব্যস্ত থাকে এবং সন্তানের পেছনে সময় দিতে পারে না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের সন্তান পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ে গড়ে ওঠে। এর ফলে সন্তান মাদকাসক্তিসহ সমাজবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হতে থাকে। 

খ. সঙ্গদোষ : মানুষ সামাজিক জীব। সবাই মিলেমিশে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে চায়। ফলে পরিবারের বাইরে মিশতে গিয়ে সঙ্গদোষে অনেকেই খারাপ হয়ে যায়। আর এদের দ্বারাই সংঘটিত হয় সামাজিক অবক্ষয়মূলক কার্যাদি। 

ঘ. অনুকরণ : মানুষ অনুকরণপ্রিয়। কেউ কোনো কিছু করলে অন্যদের সেটা করার ইচ্ছে বা প্রবণতা জাগে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের অনেকেই অশ্লীল পত্রিকা, সিনেমা দেখে বা গল্প শুনে অধঃপতনের দিকে যাচ্ছে। অনেকে মাদকদ্রব্য সেবন একটি বাহাদুরিমূলক ফ্যাশন হিসেবে গ্রহণ করে অবাধে তার ব্যবহার করছে। 

৭. চলচ্চিত্র ও স্যাটেলাইট চ্যানেল : চলচ্চিত্রের অশ্লীল নাচ, গান, সংলাপ আর অতি নিম্নমানের কাহিনীতে এ দেশের যুবসমাজ ক্রমান্বয়ে বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ডিশ এন্টেনার প্রভাবে বিদেশী সংস্কৃতির নামে যে অপসংস্কৃতি আমাদের সমাজে ভূতের মতো চেপে বসেছে তার কুফল ইতোমধ্যেই অনুমান করা যাচ্ছে।

৮. ভৌগোলিক কারণ : ভৌগোলিক কারণ তথা নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এলাকার প্রভাব, ঋতুর প্রভাব, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি কারণও মানুষের মধ্যে বিরাট প্রভাব ফেলে এবং এর ফলে মানুষ সামাজিক মূল্যবোধ-গর্হিত কাজ করে থাকে। 

মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রতিকার : আমাদের জাতীয় জীবনে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় জাতীয় সামাজিক সমস্যা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। দেশ ও জাতির স্বার্থে এ সমস্যার প্রতিকার খুবই জরুরি। নিচে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কিছু প্রতিকার সম্পর্কে আলোচিত হলো : 

১. দারিদ্র্য বিমোচন : সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধকল্পে দারিদ্র্য বিমোচনের ওপর যথেষ্ট নজর দিতে হবে। সহায়-সম্বলহীন লোকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বেকারদের বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ঋণ দিয়ে উৎপাদনমুখী কাজে নিয়োগ করতে হবে। 

২. বেকারত্ব হ্রাস : যেহেতু অধিকাংশ অপরাধ বেকাররাই ঘটিয়ে থাকে, তাই এদের কর্মের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করলে সামাজিক অবক্ষয়ও বহুলাংশে হ্রাস পাবে। বেকারদের আত্মকর্মসংস্থানে প্রেরণা যোগাতে হবে। তাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী ব্যাংক ঋণের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং কর্মসংস্থান ব্যাংকের শাখা ও মূলধন বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি ঋণগ্রহণের শর্ত আরো শিথিল করতে হবে। 

৩. রাজনৈতিক অঙ্গীকার : যেকোনো রাজনৈতিক সংগঠন বা স্থানীয় নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যুবশক্তিকে পেশীশক্তির কাজে ব্যবহার করবে না এই মর্মে আন্তরিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে। প্রয়োজনে নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসে বিষয়টি সুরাহা করতে হবে। 

৪. সম্পদের সুষম বণ্টন : বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় সম্পদ বণ্টনে যে বিশাল বৈষম্য রয়েছে তা দূর করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে নতুন নীতি প্রণয়ন করতে হবে। সবার সম্পদের হিসাব নিতে হবে এবং আয়ের উৎসের সাথে সম্পদ বৃদ্ধির সামঞ্জস্য কতটুকু তার একটা জরিপ চালিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। 

৫. সংস্কৃতির অবাধ প্রসার রোধ : বাংলাদেশের সামাজিক অবক্ষয়ে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ। সংস্কৃতি তথা বিনোদনের নামে স্যাটেলাইটের কিছু চ্যানেল আমাদের যুবসমাজ থেকে প্রৌঢ় পর্যন্ত সবার মধ্যে যৌন উদ্দীপনা তথা বিকৃতির সৃষ্টি করছে, যার ফলে বেড়ে যাচ্ছে ধর্ষণসহ মারাত্মক সামাজিক অপরাধসমূহ। তাই নির্দিষ্ট কিছু শিক্ষামূলক এবং সপরিবারে দেখার মতো চ্যানেল রেখে বাকি চ্যানেল বন্ধের ব্যাপারে সরকারকে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। 

৬. পারিবারিক কর্তব্যবোধ : পিতা-মাতাকে সন্তান-সন্ততির ব্যাপারে আরো বেশি খেয়াল রাখতে হবে। সন্তান-সন্ততি যেন পাড়া বা মহল্লায় বখাটে ছেলেমেয়েদের সাথে না মেশে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অর্থাৎ সন্তানদের গতিবিধির ওপর পিতা-মাতার কড়া নজর রাখতে হবে। 

৭. ধর্মীয় বোধ জাগ্রত : মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বোধ জাগ্রত করতে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। কেননা ধর্মীয় অনুভূতি মানুষের বিবেকের রক্ষাকবচ। 

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি, যা সমাজে প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধকে অস্বীকার করে। এর ফলে সমাজের সর্বত্রই হতাশা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে এর প্রভাব লক্ষ্যণীয়। সামাজিক অবক্ষয়ের মাধ্যমে একটা দেশ ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যেতে পারে, ধ্বংসের অতল গহ্বরে বিলীন হয়ে যেতে পারে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে। আবার এই অবস্থার উন্নতির মাধ্যমে হয়ে উঠতে পারে একটা আধুনিক সভ্য ও উন্নত জাতি এবং রাষ্ট্রে। তাই বাংলাদেশের সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধকল্পে উপরিউক্ত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

আরও রচনা পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটে আসুন। StudyTika.com-এ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ রচনা পাবেন।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.