সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

ভূমিকা: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সমাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই রচনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি খুবই উপকারী হবে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনা

ভূমিকা : সারা পৃথিবীতে বর্তমানে আস্তিক লোকের সংখ্যা নাস্তিকদের তুলনায় অনেক বেশি। এ আস্তিক মানুষেরা আবার ইসলাম, খ্রিষ্টান, হিন্দু, ইহুদি ধর্মসহ নানা ধর্মের অনুসারী। ঐতিহাসিক পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান প্রভৃতি ধর্মাবলম্বী মানুষ পাশাপাশি অবস্থান করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক গীতিময় ঐতিহ্য ধারণ করে আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বাস হলেও স্বীয় অস্তিত্ব আর মান-সম্মান নিয়ে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধসহ অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষও এখানে স্ব-স্ব ধর্ম পালন করছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ধর্মীয় বাতাবরণকে পাশ কাটিয়ে জাতীয় চেতনা এবং শান্তির প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রত্যেকেই সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে জীবনযাপন করছে। এ সৌহার্দের ঐতিহ্যগত সহমর্মিতা আর শান্তির স্বর্গীয় শিক্ষা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সব সময় বাড়াবাড়ির পথ থেকে ফিরিয়ে রেখেছে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং নিয়মতান্ত্রিক উপাসনার ধর্মীয় রীতি এদেশের প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে থাকলেও ধর্মান্ধতার বিষাক্ত ছোবল এ সমাজকে কখনো আক্রান্ত করতে পারেনি।

বাংলাদেশের ধর্ম: বাংলাদেশের এ ধর্মীয় ইতিহাস অনেক প্রাচীন। দীর্ঘদিনের ইতিহাসের ধারায় এখানে বিভিন্ন শাসকগোষ্ঠী যেমন শাসন করেছে, তেমনি বিকাশ লাভ করেছে বিভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতি আর বিশ্বাস। তাই বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে আজও হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, ইংরেজ আর মুসলিম শাসকদের নানা কীর্তি চোখে পড়ে। বর্তমানে এদেশের প্রায় ৯০% লোক মুসলমান। দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী হিসেবে হিন্দুরা স্বাধীনতা পূর্বকালে বিশেষ করে ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের প্রাক্কালে এদেশে বিপুল পরিমাণ হিন্দুর বসবাস থাকলেও মূলত রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কারণেই হিন্দুরা কালক্রমে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পাড়ি জমায়।

ফলে তাদের সংখ্যা ক্রমে হ্রাস পেতে থাকে। অন্যদিকে ব্রিটিশ শাসনামল এবং পরবর্তীকালে এনজিও কার্যক্রমের নামে খ্রিষ্টান মিশনারিদের ব্যাপক তৎপরতায় এদেশে খ্রিষ্টানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে যেসব উপজাতি রয়েছে তাদের অধিকাংশই বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান। তবে তাদের অনেকেরই আবার নিজস্ব ধর্ম রয়েছে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ: বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অন্যতম উদাহরণ। সাম্প্রতিককালে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ উঠলেও প্রকৃতার্থে এটি দু-দিক থেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কেউ যদি সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করে থাকে তা যেমন সুযোগসন্ধানী রাজনীতিকদের নোংরামীর ফল, তেমনি যারা এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় করছে সেটাও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির কৌশল। কারণ এদেশের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতায় এমন আচরণ অনুপস্থিত।

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলেও দেখা যায়, এদেশের বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছে। ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন থেকে ভাষা আন্দোলন এবং সর্বশেষ স্বাধীনতা আন্দোলনেও এদেশের মানুষ ধর্মীয় বাদ-বিচারের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় চেতনা নিয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে লড়েছে।

পাকিস্তানি শাসকরা যখন ধর্মের দোহাই দিয়ে বাঙালি জাতিকে শোষণ করেছিল, তখন এদেশের মানুষ সে শুভংকরের ফাঁকি ঠিকই বুঝতে পেরেছিল। ফলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শোষকের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে স্বদেশ ভূমিকে মুক্ত করেছে। এদেশের মানুষ জেনেছে ধর্মের দোহাই দিয়ে শোষণ করা কোনো শাসকের কাজ নয়, এটি জালিমের কাজ। বর্তমানে এদেশের মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ঐতিহাসিককাল থেকেই এখানে হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। হিন্দু-মুসলিম সৌহার্দের অনেক নিদর্শন এখনো দেখা যায়।

বাংলার আনাচে-কানাচে পাশাপাশি বাড়িতে হিন্দু- মুসলিম-খ্রিষ্টান বসবাস করছে, প্রতিনিয়ত তাদের পারস্পরিক লেনদেন হচ্ছে। সমমর্যাদা আর অধিকার নিয়ে এখানে সব ধর্মের মানুষ তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবন পরিচালনা করছে। ব্রাহ্মণ্যবাদের মিথ্যা আভিজাত্য এক সময় বাঙালি সমাজে জাতিভেদ আর বর্ণভেদের দুষ্টক্ষত সৃষ্টি করলেও কালক্রমে তা বিলুপ্ত হয়। বিশেষ করে মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও· মানসিক শিক্ষার প্রচ্ছন্ন ছায়া এবং বাঙালির ঐতিহ্যগত সৌহার্দ এ ক্ষতকে বিস্তৃত হতে দেয়নি।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনা: বাংলাদেশের মানুষের আরেকটি গুণ হলো এখানে হিন্দু-মুসলমানের বাইরে প্রতিবেশী ও সমাজের সদস্য হিসেবে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ককে তারা বেশ গুরুত্ব দেয়। এখানে প্রতিটি ধর্মের মানুষ তাদের স্ব স্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করে এবং একে অপরের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও রীতিনীতির প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। এমনকি একে অপরকে নিজস্ব ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানানোর যে ঐতিহ্যগত রীতি তা সত্যিই প্রশংসনীয়। পর ধর্মের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া এবং উপভোগ করার অনুপম রীতি এখানে বিদ্যমান। এছাড়া পহেলা বৈশাখ, পৌষ সংক্রান্তি ও পিঠা-পুলির উৎসবসহ এমন কিছু উৎসব আছে যেখানে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে প্রতিটি বাঙালি এক অভিন্ন অস্তিত্বের সন্ধান খোঁজে।

পরধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং প্রত্যেককে তাদের ধর্মকর্ম পালনের সুযোগদানের ব্যাপারে এদেশের প্রতিটি মানুষ সজাগ। প্রতিটি মসজিদে আজনের পবিত্র ধ্বনির আবহ যেমন মানব মনকে আলোড়িত করে, তেমনি মন্দির চর্চা কিংবা প্যাগোডায় বিনীত প্রার্থনার আকুলতাও পবিত্র আবহ ছড়ায়।

মুসলমানদের আচার অনুষ্ঠান ও দৃষ্টিভঙ্গি: বাংলাদেশ বহু ধর্মের মানুষের দেশ হলেও জাতীয় জীবনে মূলত মুসলিম জনগোষ্ঠীর আচার-অনুষ্ঠান ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব বেশি। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে এখানে প্রায় ১৩ কোটি মুসলমান বাস করে। বাংলাদেশের মুসলমানরা ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও আনুষ্ঠানিকতা পালনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট যত্নবান, যেমনটি দেখা যায় বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশেও। এ দেশের মানুষের মধ্যে ধর্মীয় কর্তব্য পালনের গভীর অনুভূতি, ধর্মের প্রতি অনুরাগ ও বিধি-বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বিদ্যমান। তবে ধর্মের নামে অতিরঞ্জন বা উগ্রতা সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের চেতনায় নেই। ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও, বাংলাদেশের মুসলমানেরা তাদের বিশ্বাস অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার নীতিতে বিশ্বাসী নয়।

তাছাড়া বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় কার্যকলাপ ও আনুষ্ঠানিকতায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকলেও তা তাদের পারস্পরিক সম্পর্ককে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত করে না। বরং প্রত্যেকেই যার যার মত ও পথ অনুযায়ী ধর্মীয় অনুশাসনের অনুসরণ করে থাকে। পির মাশায়েখ আর আলেম-ওলামাদের দিক্ নির্দেশনায় আবহমানকাল থেকেই এদেশের প্রতিটি ঘরে ধর্মীয় শিক্ষার যে অমিয় ধারা প্রবাহিত তা শান্তির শিক্ষা, স্রষ্টাকে ভালোবাসার শিক্ষা। ধর্ম এদেশের সহজ-সরল মানুষের মধ্যে উগ্রতা কিংবা বিচ্ছিন্নতা নয়, ভ্রাতৃত্ব আর সৌহার্দের শিক্ষাই দিয়েছে।

তাই ঈদ বা ধর্মীয় সভায় মুসলমানদের যে মিলন মেলা হয় তা প্রতিটি মানুষকেই ভ্রাতৃত্ব ও সহমর্মিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে। বাংলাদেশের মুসলমানদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, তারা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ওপর যে নির্যাতন বা নিপীড়ন হচ্ছে তার বিরোধী হলেও তাদের প্রতিক্রিয়া অবশ্যই শান্তিপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের গুজরাটে মুসলমানদের ওপর যে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালানো হয় তার প্রতিক্রিয়ায় এদেশের হিন্দুদের কোনো ক্ষতি এদেশের মুসলমানরা করেনি।

বরং এদেশের হিন্দুরাও এ বর্বরতার নিন্দা করেছে। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের দুর্দশা লাঘবের জন্য মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করাকে এদেশের মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব মনে করে। পাশাপাশি সন্ত্রাস, নৈরাজ্যসহ মানববিধ্বংসী সব কর্মকাণ্ডকে এদেশের মানুষ বরাবরই ঘৃণা করে এসেছে। তাই ধর্মীয় উগ্রতা কিংবা ধর্মান্ধতা নয় বরং ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি ঐকান্তিকতা আর অনুসরণই দুনিয়া-আখিরাতে মুক্তির একমাত্র পথ হিসেবে ধরে নেওয়াই এদেশের মানুষের বৈশিষ্ট্য।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্ম: বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মের উপস্থিতি নিয়ে অনেক কথা চালু থাকলেও এদেশের মানুষ ধর্মকে রাজনীতি থেকে পুরোপুরি পৃথক করা সত্ত্বেও এখনও পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে ওঠে নি। তাই বলে ধর্মের নামে রাজনৈতিক সহিংসতাকেও তারা সমানভাবে ঘৃণা করে। বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে ধর্মকে হেয়প্রতিপন্ন করা বা ধর্মবিরোধী কার্যক্রমকে তারা কখনোই সমর্থন করেনি। বিপরীত পক্ষে পুরোপুরি ধর্মীয় শাসন প্রতিষ্ঠার যে আদর্শিক আন্দোলন তার প্রতিও জনসাধারণের সমর্থন তেমন লক্ষ করা যায় না।

বরং এদেশের মানুষ মধ্যপন্থা অবলম্বনে বিশ্বাসী। তাই দেখা যায়, জামায়াতে ইসলামির মতো ধর্মভিত্তিক দল এককভাবে যেমন সুবিধা করতে পারেনি, তেমনি বামপন্থি দলগুলোর অবস্থাও করুণ। বরং বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির মতো দলগুলো যখন ধর্মের প্রতি তাদের সহানুভূতি তুলে ধরতে পেরেছে তখন ভোটারদের সহানুভূতিও পেয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের আলেম ওলামা ও পীর মাশায়েখদের একটি বিরাট অংশ সরাসরি কোনো দলের সমর্থন করে না। তারা মূলত মানুষকে ধর্ম-কর্মের শিক্ষাদান ও এসব ব্যাপারে সজাগ করে তোলাকেই মূল দায়িত্ব মনে করেন।

ফলে বাংলাদেশে কোনো উগ্রবাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর উপস্থিতির কথা শুধুই কাল্পনিক। তাই একবার এক কমিউনিস্ট নেতা বলেছিলেন— ‘বিকেলবেলায় আমি যখন সমাজতন্ত্রের ওপর বক্তৃতা দেই তখন প্রচুর লোক জড়ো হয়, কিন্তু যখন মাগরিবের আযান হয় তখন মুসলমানরা মসজিদে আর হিন্দুরা মন্দিরে চলে যায়।

উপসংহার: নানা অপপ্রচার এবং অপতৎপরতা সত্ত্বেও একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলাদেশ কোনো অর্থেই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র নয়। এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের যে সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য তা কোনো সময়ই ধর্মীয় বাড়াবাড়িকে প্রশ্রয় দেয় নি। বরং প্রাচীনকাল থেকে এখানে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ পাশাপাশি বাস করে আসছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চর্চার সর্বজনীনতা দেখলে অনায়াসেই বলা যায়, এখানকার মানুষ প্রথমেই তাদের জাতীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয়কে প্রাধান্য দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে মসজিদ, মন্দির ও মানুষের ধর্ম-কর্ম পালন কোনো মতেই এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।

(একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো)

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রচনা ২

ভূমিকা: সাম্প্রদায়িকতা হলো এমন একটি মানসিকতা, যা সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে বিরোধ ও বিভেদ সৃষ্টি করে সমাজে অশান্তি ও বিপর্যয় ডেকে আনে। এটি মানুষের মনে অমানবিক বিদ্বেষ ও ঘৃণার জন্ম দেয়, যা কখনোই শুভবুদ্ধির বিকাশ ঘটায় না; বরং মনকে সংকীর্ণ করে তোলে। বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা হত্যা, দাঙ্গা, লুণ্ঠনের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সভ্যতার অগ্রগতির পথে এটি একটি বড় বাধা। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব— "আশরাফুল মাখলুকাত"। এই শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে হলে মানবতাবাদী মনোভাব গ্রহণ করা এবং সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে দাঁড়ানো জরুরি।

সাম্প্রদায়িকতা কী: ‘সম্প্রদায়’ শব্দ থেকেই ‘সাম্প্রদায়িকতা’ শব্দের উৎপত্তি। আভিধানিকভাবে ‘সম্প্রদায়’ মানে দল বা গোষ্ঠী, তাই সাম্প্রদায়িকতার প্রকৃত অর্থ হলো দলীয় বা গোষ্ঠীগত মতাদর্শ। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই শব্দটি উগ্র ধর্মবিশ্বাসীদের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ডের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

যখন কেউ ধর্মের মহৎ উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়, তখন সাম্প্রদায়িকতার বিষ মানুষের সুস্থ ও সুন্দর জীবনবোধকে বিপথে ঠেলে দেয়। একদল মানুষ যখন নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জোরপূর্বক অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়, তখন সাম্প্রদায়িকতার আগ্রাসন সৃষ্টি হয়। সংকীর্ণ গোষ্ঠীচেতনা, অনুদার মানসিকতা ও জাত্যভিমান মানুষকে ধৈর্যহীন ও অসহিষ্ণু করে তোলে। ফলে তারা ধ্বংসের উন্মাদনায় মেতে ওঠে, স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে এবং হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে।

সাম্প্রদায়িকতা কেন: মানুষে-মানুষে কোনো ভেদাভেদ নাই। বর্তমানে সাম্প্রদায়িকতার কারণে এ নীতিবাক্য ধূলিসাৎ হয়ে পড়েছে। নানা উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য সমাজের নেতৃস্থানীয় কিছু লোক সর্বসাধারণের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই প্রধান। ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে নাড়া দিতে পারলেই তাদের সুপ্ত উদ্দেশ্য হাসিল হয়। 'এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোককে শাসন করবে এটা কখনও মেনে নেয়া যায় না' এটাই হয় সুবিধা ভোগীদের উসকানিমূলক বক্তব্য। ফলে শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা, খুনাখুনি আর হানাহানি। আর এই ঘোলা জলে সুবিধাভোগী রাজনীতিবিদগণ মৎস্য শিকারে তৎপর হয়ে ওঠেন। নিজেদের আসন পাকাপোক্ত করার ব্যবস্থা করেন। বিশ্বের বহু দেশে আজ এ অবস্থা দেখা যায় । 

উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িকতা: এ উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যকার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা বিশ্বের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে আছে। বিহারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল ১৯৪৬ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত, যেখানে হিন্দু জনতা মুসলিম পরিবারগুলিকে টার্গেট করেছিল। যা ১৯৪৬ বিহার দাঙ্গা নামে পরিচিত। মোগল আমলে ১৭৩০ সালে দোল খেলাকে কেন্দ্র করে হিন্দু- মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা লেগেছিল এবং লক্ষ লক্ষ লোকের রক্তক্ষয় হয়েছিল। ১৯২০ থেকে ১৯৪৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের নানা জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সুত্রপাত ঘটে। ১৯২২ থেকে ১৯২৭-এর মধ্যে ১৯২টি দাঙ্গার কথা জানা যায় এবং এতে অসংখ্য লোকের প্রাণহানি ঘটে। ১৯৩০ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই ভারতে দাঙ্গা সংঘটিত হয়। ১৯৪৬, ১৯৯০ সালেও ছোটখাটো দাঙ্গা লেগেছিল। ভারতের বাবরী মসজিদকে কেন্দ্র করে যে দাঙ্গা হয় তা অবর্ণনীয়। হাজার হাজার লোক সে দাঙ্গায় জীবন দিয়েছে। এর পেছনে ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের অদৃশ্য হাত ছিল। এসব দাঙ্গার রেশ আজও কাটেনি।

সাম্প্রদায়িকতার কালো ছোবল: সাম্প্রদায়িকতা মানবকল্যাণে কখনো সুফল বয়ে আনেনি। বরং মানুষে- মানুষে বিভেদ সৃষ্টির বিষবাষ্প সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রভৃতি পড়ছে মুখ থুবড়ে। মানুষ শান্তি বিসর্জন দিয়ে যেন অশান্তির বাঁশি বাজিয়ে চলেছে। সাম্প্রদায়িকতার যুপকাষ্ঠে অগণিত শিশু-কিশোর-যুবা-বৃদ্ধ বলি হচ্ছে। পৃথিবীকে স্বর্গ করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণের পরিবর্তে মানুষ যেন শশ্মশান করার ব্রত গ্রহণ করেছে। মানুষ তার মানবিক বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে

সাম্প্রদায়িকতার কুফল: জীবন হল গতিশীল। প্রগতিই হল সমাজ উন্নয়নের চাবিকাঠি। এ যাত্রাপথে পাড়ি দিতে হলে মানুষকে ভ্রাতৃত্ববোধে আবদ্ধ হতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে সমাজ প্রগতির পথকে রুদ্ধ করে দেয়। অথচ কোন ধর্ম, কোন আদর্শই পৃথিবীতে এ সর্বনাশা ভেদবুদ্ধিকে সমর্থন করে নি। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্বের ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজও দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে সীমাহীন ভেদবুদ্ধি। আজও বিভেদ ও হিংসার অগ্নিদহন। সাম্প্রদায়িকতার জন্যেই একদিন হিটলারের গ্যাসচেম্বারে লক্ষ লক্ষ ইহুদি প্রাণ দিল। সেই ইহুদি অস্ত্রাঘাতেই আজ আবার কত প্যালেস্টাইনবাসী রক্তাপ্লুত। এখনও শ্বেতাঙ্গের কৃষ্ণাঙ্গ নির্যাতনের কলঙ্কিত ইতিহাস। এই সেদিনও ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংরেজ ও ভারতীয়দের মধ্যে সাম্প্রদায়িক আগুন জ্বলে উঠেছিল। ভারতেও মাঝে মাঝে তারই নগ্ন বিভীষিকার চেহারা। ১৯৯২ সালে ভারতের কট্টর হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি অযোদ্ধার ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ভেঙে দিলে বাংলাদেশেও এর তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।

প্রতিকারের উপায়: কিছু স্বার্থপর-কুৎসিত স্বভাবের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। এদেরকে চিহ্নিত করে জনগণের সামনে এদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে জাতিকে উদ্ধারের জন্য মৌলবাদী রাজনৈতিক দলসমূহ নিষিদ্ধ করতে হবে। দেশের মধ্যে জনসংখ্যানুপাতে সরকার গঠনে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোকেরই প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের মানুষ সুখে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।

বিভেদ নয়, ঐক্যই মুক্তির পথ: আমরা আজ উন্নয়নমুখী। আমাদের জাতীয় জীবনে গঠনমূলক কাজের উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। চাষি, জেলে, কামার, কুমার, মুচি, ডোম, সকলকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেই জাতির উন্নয়নের জন্য গঠনমুলক পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা আমাদের জন্যে অপরিহার্য।

বিশ্বব্যাপী সাম্প্রদায়িকতার প্রসার
বর্তমানে বিশ্বের দিকে তাকালে সাম্প্রদায়িকতার স্বরূপ চোখে পড়ে। ভারত, পাকিস্তান, প্যালেস্টাইন, সার্বিয়া, বসনিয়া, হার্জেগোভেনিয়া, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশে শুধু ভিন্ন ধর্মের নয়, গোত্রে গেত্রেও সংঘটিত হচ্ছে দাঙ্গা। তবে বিশ্বের বর্তমান দৃশ্যে শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাঙ্গার দৃশ্যগুলোই চোখে পড়ার মতো। ইসরাইলের ইহুদি সম্প্রদায় বছরের পর বছর ধরে প্যালেস্টাইনি মুসলমানদের নির্মূল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। মিয়ানমারে নির্যাতিত হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা। ভারতের দৃশ্যও তাই। পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া- সুন্নির দাঙ্গা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থামার পরিবর্তে আরো যেন প্রসারিত হচ্ছে। ফলে মানুষের মনে অস্থিতিশীলতা এবং অস্থিরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সম্প্রীতির প্রয়োজনীয়তা: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপিত না হলে সে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমভাবে বিরাজ করে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগের মাধ্যমে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। দেশের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটানোও সম্ভব হয় না। উপরন্তু দেশপ্রেমের মনোভাব জনসাধারণের মধ্যে জাগ্রত হয় না। বহিঃশত্রুর আক্রমণের ভয় থাকে। দেশের মানুষের মনে গড়ে। ওঠে বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসামূলক মনোভাব যার সবগুলোই স্বাধীনতা ও উন্নয়নের পরিপন্থী। দেশকে কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে এর ভূমিকা অপরিসীম।

জাতীয় জীবনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রয়োজনীয়তা: আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেমন অপরিহার্য তেমনি আমাদের জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্যেও এটি একান্ত প্রয়োজনীয়। আমরা যতই উন্নয়ন পরিকল্পনা আর অর্থনৈতিক উন্নতির ঘোষণা দেই না কেন, জাতীয় অর্থনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অপরিহার্য। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হল আমাদের মত উন্নয়নকামী দেশের উন্নতির চাবিকাঠি। বিশ্বজনীন সামাজিক সম্প্রীতি তথা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করেই পৃথিবীতে শান্তি ও প্রগতি স্থাপন সম্ভব। এই সম্প্রীতিই কেবলমাত্র মানব-জীবনের শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের প্যারান্টি দিতে পারে। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সকলের কাম্য হওয়া উচিত।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম পীঠভূমি হল বাংলাদেশ। এটি আমাদের গৌরব। পার্শ্ববর্তী বৃহৎ রাষ্ট্র ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়েও মাঝে মাঝে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ছে। চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এর বিষময় প্রতিফলন ঘটেনি আমাদের দেশে। এদেশের মানুষের সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের চেতনা এখানে লক্ষণীয়। এ সচেতন মনোবৃত্তি আছে বলেই এ দেশের বুকে পার্শ্ববর্তী দেশের চরম সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড এবং ঘটনাবলির কোনো অশুভ প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয় নি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগোষ্ঠীর সাথে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলেই মিলেমিশে বসবাস করে আসছে।

শুধু আজ নয়, সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের নজিরটি এ দেশ বহন করছে। খেতে- খামারে, কলে-কারখানায়, অফিস-আদালত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নানা সম্প্রদায় কাজ করেছে। একে অন্যের দুঃখে-আনন্দে শরিক হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে গভীর সংহতি ও ঐক্য জাতীয় ইতিহাসে গৌরবময় ঐতিহ্য ও ইতিহাস হয়ে আছে। আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ তারই স্বাক্ষর। ১৯৭১ সালে এদেশের হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

১৯৭২ সালের সংবিধানে বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ঘোষিত হয়। আমরা তাই গৌরবান্বিত। জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এ সম্প্রীতি সংরক্ষণের পরিস্থিতিটি খুবই উপযোগী। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশ একটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহান মন্ত্রে দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল। জাতীয়তাবোধের দৃঢ়বন্ধনে তারা আবদ্ধ।

বিশ্ব-শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি: মানুষ আজ আর বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করতে পারে না। তার মঙ্গল নিহিত রয়েছে বিশ্বজনীন শান্তি ও সম্প্রীতির মধ্যে। বর্ণভেদ, ধর্মভেদ, সাদা-কালোর দম্ভ আজকের পৃথিবীতে স্থান পেতে পারে না। শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের পাশাপাশি আজ কৃষ্ণাঙ্গ নিগ্রো জাতি তার আপন অবস্থানের স্বীকৃতি আদায় করে নিচ্ছে, আমরা আজ এ সত্যের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য।

অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ, ছাত্রসমাজের ভূমিকা ও শিক্ষা সংস্কার: সাম্প্রদায়িকতা এক দুরারোগ্য ব্যাধি। এই ব্যাধির জীবাণু জাতির জীবনের গভীরে প্রোথিত। শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলার কঠোরতার মধ্যেই এর সমাধান সূত্র নেই। তরুণ শিক্ষার্থীরাই হল দেশের সবচেয়ে আদর্শপ্রবণ, ভাবপ্রবণ অংশ। ছাত্র-সমাজই দেশের ভবিষ্যৎ, জাতির কাণ্ডারী। তাদের মধ্যে আছে অফুরান প্রাণশক্তি। পারস্পরিক শ্রদ্ধার মনোভাব, আন্তরিক মেলামেশা, ভাবের আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় হবে এক নতুন প্রজন্মের। এরই মধ্য দিয়ে ছাত্ররা নতুন করে অনুভব করবে মানবতার উদার মহিমা। শুনবে সেই মহামিলনের মন্ত্র। ছাত্রাবস্থায়ই সাম্প্রদায়িকতার রাহু মুক্তির শপথ নিতে হবে। সম্প্রীতির মহাব্রত অনুষ্ঠানের তারাই হবে প্রধান পুরোহিত। শুধু পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া নয়, সুকুমার বৃত্তিগুলো যথাযথ বিকশিত হলেই তাদের শিক্ষার পূর্ণতা, সার্থকতা। মনুষ্যত্বের অধিকার অর্জনই হবে তাদের শিক্ষানুশীলনের পরম প্রাপ্তি। শিক্ষার নিবেদিত প্রাঙ্গণে তারা নতুন করে উপলব্ধি করবে সবার উপরে মানুষই সত্য। মানুষে মানুষে প্রীতি-বন্ধনই হবে তার শেষ কথা।

উপসংহার: সাম্প্রদায়িকতা বিশ্ববিবেকের কাছে নিঃসন্দেহে ঘৃণ্য বিষয়। মানবকল্যাণ পরিপন্থী এবং সভ্যতাবিধ্বংসী সাম্প্রদায়িকতা বেশি দিন স্থায়ী হতে পারে না। আমরা যদি একটু সচেষ্ট হই তাহলে এ হানাহানি সমাজ থেকে নির্মূল করা অবশ্যই সম্ভব হতে পারে। এ বিষবাষ্প অপসারিত হলেই মানবসমাজে সম্প্রীতির শান্তির হাওয়া বইবে এবং 'মানুষ মানুষের জন্য' কথাটি সার্থকতা পাবে। আমাদের জীবন হয়ে উঠবে আরো সুন্দর, আরো সুখময়। বিশ্বের বুকে একটি সত্য ও আদর্শ জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাব আমরা।

উপসংহার: আশা করি, এই রচনাটি তোমার জন্য সাহায্যকারী হয়েছে। আরও ভালো ভালো রচনা পড়তে ভিজিট করো StudyTika.com!

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.