ভূমিকা: এই ব্লগপোস্টে রয়েছে হাডুডু বা কাবাডি বিষয়ে একটি সুন্দর রচনা। সহজ ভাষায় লেখা, পড়তে আর বুঝতে খুবই মজার। পুরো রচনাটি একবার পড়ে দেখুন!
হাডুডু বা কাবাডি রচনা
ভূমিকা : বাংলাদেশের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খেলার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সমাদৃত খেলা হচ্ছে হাডুডু বা কাবাডি। বাংলাদেশের বিশির ভাগ জায়গায় এই খেলা হাডুডু নামেই পরিচিত। এই খেলা বাঙালির লোকজীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এবং প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী। ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও লোকায়ত ঐতিহ্যের জন্যে এই খেলা বাংলাদেশের জাতীয় খেলার মার্যাদা পেয়েছে। সামপ্রতিককালে গণমাধ্যমের প্রচারণা ও বৈদেশিক আনুকূল্যে আমাদের দেশে ক্রিকেট ও ফুটবলের ব্যাপক জনপ্রিয়তার মুখেও হাডুডু এখনো নিজের মর্যাদা ও অস্তিত্ব বজায় রাখতে পেরেছে।
জন্ম, প্রচলন ও উপলক্ষ : হাডুডুর উৎপত্তিস্থল ফরিদপুরে। কেউ কেউ এর উৎপত্তিস্থল বরিশাল বলে মনে করেন। উৎপত্তি যে জেলাতেই হোক এই খেলার জন্ম যে বাংলাদেশে এবং এটি যে বাংলাদেশের নিজস্ব খেলা তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই খেলা বিভিন্ন আঞ্চলিক নামে অভিহিত হয়ে থাকে; যেমন : ডু-ডু, কপাটি, কাপাটি, কবাটি, কাবাডি, ছি-খেলা ইত্যাদি। গ্রাম বাংলার সর্বত্র লৌকিক খেলা হিসেবে হাডুডু খেলার প্রচলন আছে। বছরের যে-কোনো সময়ে যে-কোনো জায়গায় এ খেলা অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে বর্ষা বা বর্ষার পর একটু নরম মাটিতে এই খেলা বিশেষ উপযোগী বলে বিবেচিত হয়। মেলা ও উৎসবের অনুষ্ঠানে আমোদ-প্রমোদের অংশ হিসেবে হাডুডু প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত মুহররম, ঈদ-উৎসব, পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস উপলক্ষে হাডুডু প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হাডুডু : ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে জাতীয় কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়। ঐ সময় থেকে জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে ছাড়াও আনসার, বিডিআর, আন্তঃস্কুল পর্যায়ে কাবাডি প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ‘শহীদ স্মৃতি কাবাডি প্রতিযোগিতা’ নামে পৃথক প্রতিযোগিতাও প্রতি বৎসর অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটানে এই খেলা শেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ খেলাটি সাফ গেমস ও এশিয়ান গেমস-এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এর ব্যাপক অনুশীলন ও উৎকর্ষ বিধানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
হাডুডুর বৈশিষ্ট্য : হাডুডু বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জীবন পরিবেশের উপযোগী আনন্দজনক খেলা। দুটো দলের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক এই খেলার জন্যে খুব বেশি জায়গার দরকার পড়ে না। কোর্ট তৈরির জন্য মাত্র ১২.৫ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার চওড়া জায়গার দরকার হয়। মাঝখানে মধ্যরেখা টেনে কোর্টকে সমান দু’ভাগে ভাগ করে নেওয়া হয়। এই খেলার জন্যে কোনো উপকরণের দরকার হয় না। খেলায় প্রতি দলে ১২ জন খেলোয়াড় থাকলেও ৭ জন খেলায় অংশ নেয়। বাকি ৫ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে থাকে। সাধারণভাবে যে কেউ খেলায় অংশ নিতে পারে। এই খেলার নিয়ম-কানুন বেশ সহজ। আয়োজন সহজ বলে এ খেলায় কোনো খরচ হয় না বললেই চলে। অথচ দর্শক ও খেলোয়াড়রা নির্মল আনন্দ লাভ করে থাকেন।
হাডুডু খেলার নিয়ম : খেলা শুরুর আগে দুই দল নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখে মাঠের দুই প্রান্তে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ে। খেলা শুরু হতেই একটি দলের একজন খেলোয়াড় দম বন্ধ করে শ্রুতিগ্রাহ্য ছড়া বা বোল বলতে বলতে মাঝরেখা পার হয়ে প্রবেশ করে বিপক্ষ দলের কোর্টে। সেখানে গিয়ে সে চেষ্টা করে একজন বা একাধিক খেলোয়াড়কে ছুঁয়ে আবার নিজ কোর্টে নিরাপদে ফিরে আসতে। যদি সে দম ধরে রাখার সময়ের মধ্যেই কাউকে ছুঁয়ে নিজ কোর্টে ফিরে আসতে পারে, তাহলে যাদের ছুঁয়ে এসেছে, তারা ‘মরা’ হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু যদি সে কাউকে ছোঁয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের দ্বারা ধরা পড়ে এবং তার দম ফুরিয়ে যায়, তাহলে সে নিজেই ‘মরা’ বলে বিবেচিত হবে এবং তার দল এক খেলোয়াড় হারাবে।
একের পর এক খেলোয়াড় পালাক্রমে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে ‘মরা’ করার চেষ্টায় থাকে। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে ‘মরা’ করে আবার নিজের পক্ষের ’মরা’ খেলোয়াড়কে জেতানো যায়। এই প্রক্রিয়ায় কোনো একটি দলের সকল খেলোয়াড়কে সম্পূর্ণ জয়-পরাজয় নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত খেলা চলতে থাকে। তাছাড়া পরপর কয়েকবার খেলার সংখ্যাধিক্য জয় পরাজয় গণনা করেও চুড়ান্ত ফলাফল করা যেতে পারে। হাডুডু খেলার কিছু প্রকারভেদ আছে। নিয়ম-কানুনেও কিছু কিছু ভিন্নতা দেখা যায়। আজকাল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে কাবাড়ি খেলা হয় তাতে ৮০ কেজির বেশি ওজনের খেলোয়াড়কে খেলতে দেওয়া হয় না। খেলার সময়ও নির্ধারিত থাকে। খেলা চলে মোট ৪৫ মিনিট। প্রথম পর্বে ২০ মিনিট খেলা চলার পর ৫ মিনিটের বিরতি। তারপর দ্বিতীয় পর্বে আরো ২০ মিনিট খেলা চলার পর প্রতিযোগিতা শেষ হয়। মোট ৭ জন লোক খেলা পরিচালনা ও বিচারের দায়িত্ব পালন করেন। এদের মধ্যে থাকেন একজন রেফারি, দুজন আম্পায়ার, একজন স্কোরার ও দুজন সহকারী স্কোরার। খেলায় পয়েন্টের ভিত্তিতে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়।
হাডুডু বা কাবাডির উপযোগিতা : হাডুডু একটি প্রতিযোগিতামূলক ও অত্যন্ত আনন্দদায়ক খেলা। এই খেলায় বিশেষ কোনো উপকরণের প্রয়োজন হয় না, তাই খরচও নেই বললেই চলে। খোলা জায়গায়, যেকোনো সময়েই এই খেলা আয়োজন করা সম্ভব—even শুকনো মৌসুমের জ্যোৎস্না রাতেও এটি অনায়াসে খেলা যায়। দুই দলের আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার কৌশল, সঙ্গে দম ধরে রঙ্গ-রসাত্মক ছড়া আওড়ানোর কারণে খেলাটি দর্শকদের কাছে অত্যন্ত মজাদার ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। শরীরচর্চা ও সুস্থ থাকার দিক থেকেও হাডুডু একটি উপযোগী খেলা। এটি ফুসফুসের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং খেলোয়াড়দের শারীরিক ক্ষমতা, উপস্থিত বুদ্ধি ও আত্মরক্ষা কৌশল উন্নয়নের সুযোগ দেয়। তবে এই খেলায় ঝুঁকি কিছুটা থাকায়, আকস্মিক দুর্ঘটনা এড়াতে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
উপসংহার : হাডুডু উপস্থিত বুদ্ধি, ক্ষিপ্রতা, শক্তি, সাহস, দম ও কায়দার খেলা। নানা সুবিধা ও উপযোগিতার জন্যে এই খেলা বাংলাদেশের লোকসমাজে এককালে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। অধুনা ফুটবল-ক্রিকেটের ব্যাপক জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও এই খেলা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতার বিষয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খেলা বলে এই খেলার চর্চা ও দক্ষতা অর্জনের জন্যে ব্যাপকভাবে খেলার আয়োজন করা দরকার। তা না হলে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খেলায় আমাদের সাফল্য অর্জিত হবে না।
আপনি যদি আরও এমন সহজ ও সুন্দর রচনা পড়তে চান, তাহলে অবশ্যই ঘুরে আসুন আমার ওয়েবসাইট StudyTika.com এ। আরও অনেক ভালো রচনা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে!