বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

ভূমিকা: এই ব্লগপোস্টে আমরা একটি সুন্দর রচনা দিয়েছি — “বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা” নিয়ে। রচনাটি খুব সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে যেন সব ক্লাসের শিক্ষার্থীরা সহজে বুঝতে পারে। চলুন, পুরো রচনাটি পড়ে নিই।

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রচনা ১

ভূমিকা :

"We need science more
than ever before."
                                                   -Holden
শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সুপ্ত মানুষ্যত্বের জাগরণ; সৎ ও অসত্যের এবং ভালো ও মন্দের পার্থক্য নির্ণয় করে আত্মোপলব্ধি। বিজ্ঞান শিক্ষা একটি বিশেষ ধরনের শিক্ষা হলেও শিক্ষার মূল স্রোতধারা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়; বরং কোনো কিছু বিশেষরূপে জানার অর্থই যদি হয় বিজ্ঞান তো বিজ্ঞান শিক্ষার অর্থ এমন এক শিক্ষা যা মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষরূপে জানতে সহায়তা করে। আবার এই জানা ব্যাপারটি একদিকে যেমন জ্ঞানের পরিপোষক, অন্যদিকে তেমনি জ্ঞানের বিনাশক। অতএব, বিজ্ঞান শিক্ষা বলতে এমন এক শিক্ষা বোঝায়, যা আমাদের জ্ঞানান্ধকার দূর করে যথার্থ জ্ঞানের আভাস দেয় এবং মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটিয়ে আত্মোপলব্ধি তথা বিশ্বজগতের স্বরূপ উপলব্ধিতে সহায়তা করে।

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব

জীবনে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধানকল্পে মানুষ একদা বিজ্ঞানচর্চা শুরু করেছিল। বিজ্ঞানের কল্যাণ মূর্তিতে বিমুগ্ধ মানুষ সেদিন পরম বন্ধুর মতো বরণ করে নিয়েছিল তাকে। বিজ্ঞানের হাত ধরে মানুষ সেদিন পেয়েছিল জীবনের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি, পেয়েছিল জীবনের সুখ এবং স্বাচ্ছন্দ্যের আশ্বাস। মানুষ সেদিন বিজ্ঞানকে জিবনযাত্রার সহচর করে জীবনকে করে তুলছিল সহজ এবং স্বাভাবিক। বিজ্ঞানের এই গুরুত্ব ও বিশিষ্টতাকে মেনে নিলে সকল দেশে সর্বকালে এর উপযোগিতাকে মানতে হয়। যুগে যুগে মানুষ কমবেশি পরিনাণে তা মেনেও নিয়েছে। তাই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানের যেমন উন্নতি ঘটছে, বিজ্ঞান শিক্ষাও তেমনি হয়েছে সম্প্রসারিত। মানুষ শিখেছে যে, জ্ঞানজগৎ পারাবার অতিক্রমণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তরণী এবং জগৎ রহস্যের স্বরূপ অন্বেষণে আগ্রহী না হলে স্ব স্ব চৈতন্যের বিকাশও অসম্ভব। মানুষের এই গভীর গোপন অনুভূতিই তাকে বিজ্ঞান শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করেছে এবং দেশে দেশে, কালে কালে মানুষ একদিকে বাহ্যিক প্রয়োজনে অন্যদিকে অন্তর্নিহিত প্রেরণার তাগিদে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে।

বিজ্ঞান আমাদের শিক্ষা দেয়- যে শিক্ষা ধারাবাহিক বিশ্লেষণপন্থী ও বাস্তবসম্মত। একটি বাস্তব কার্যকরণ নিয়মের আবিষ্কার বিজ্ঞানের কাজ। কেন হচ্ছে, কী জন্য হচ্ছে, বিজ্ঞানই তা বলে দিতে পারে। বিজ্ঞানের ব্যাপক বিস্তারে, বিকাশে, রূপদানে যেকোনো জাতি বা দেশের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি নির্ভর করে। কেবল ছোট বড় কলকারখানা গড়ে তোলা বিজ্ঞানের কাজ নয়, কৃষির উন্নতির জন্যও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে। চাষাবাদের উন্নতির জন্য, নদীর ধারা নিয়ন্ত্রণের জন্য, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, কুসংস্কার দূরীভূত, বেকারত্বের লাঘব ইত্যাদির জন্য বিজ্ঞানের সাহায্য গ্রহণ করা হয়। কাজেই বিজ্ঞান শিক্ষার ‍গুরুত্ব অনেক।

দেশ ও জাতি গঠনে বিজ্ঞান শিক্ষা : 

দেশ ও জাতি গঠনের ক্ষেত্রে নানা ধরণের বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আছে। উন্নয়নশীল একটি দেশের জন্য প্রচুর ডাক্তার, প্রকৌশলী যেমন দরকার, তেমনি দরকার কৃষিবিজ্ঞানী ও পশুবিজ্ঞানী। তবে মনে রাখা দরকার যে, সাধারণ বিজ্ঞান শিক্ষা সবাই পারে, কিন্তু কারিগারি বিজ্ঞান শিক্ষার আয়োজন করতে হবে দেশের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ রেখে। উচ্চতর বৈজ্ঞানিক গবেষণাও এমনভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত, যাতে একদিকে তা দেশের কল্যাণ বিধানে সমর্থ হয় এবং অন্যদিকে বিদেশের কাছে স্বদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে। উপযুক্ত কাজ না পেয়ে বিজ্ঞান বিদ্যায় উচ্চ শিক্ষিত বহু ব্যক্তি আজ যে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে, বিদেশে পড়ালেখা শেষ করে আর দেশে ফিরে আসছে না, এটা দেশ এবং জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর ও ক্ষতিকর। বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষিতরা যেমন স্বদেশের কথা ভাবে না, দেশও তেমনি তাদের কথা ভাবে না। অর্থাৎ দেশের সঙ্গে তাদের আত্মিক যোগসূত্রটি যেমন, তেমনি দেশের বৈষয়িক অগ্রগতির পথটিও অবলীলাক্রমে বিঘ্নিত হয়।

সামাজিক মানুষের জীবনে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রভাব

সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জীবনে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রভব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিজ্ঞানের সঙ্গে সামান্যতম পরিচিত চাষী মাত্রই জানেন যে, সময়মত বৃষ্টি না হলে অদৃষ্টকে ধিক্কার দিতে দিতে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে লাভ নেই। তার চেয়ে কৃত্রিম উপায়ে পানি সেচের ব্যবস্থা করা বুদ্ধিমানের কাজ। সত্য বলতে কি, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের কৃষকদের মধ্যে উপযুক্ত বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে যুগান্তর আনতে পারে। উন্নত বীজ, উপযুক্ত সার, কীটনাশক ওষুধ এবং এক কথায় বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদ সম্পর্কে তারা যদি শিক্ষা পায় তাহলে প্রকৃত কৃষিবিপ্লব অচিরেই ঘটানো সম্ভব। কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের কিছুটা বিজ্ঞান শিক্ষা কাজের খাতিরেই অর্জন করতে হয়। কিন্তু সে শিক্ষার বেশিরভাগই যেহেতু যান্ত্রিক বা হাতে কলমে, তাত্ত্বিক সত্যের নিরিখে নয়, তাই প্রকৃত বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত হবার সুযোগ এদেশের অধিকাংশ শিল্পশ্রমিকই পায় না। এর ফলে এরা কখনো বা দুর্ঘটনায় সহজে শিকার হয়, আবার কখনো বা বহু বিচিত্র ভুল অভ্যাস ও ধারণাকে প্রশ্রয় দিয়ে নিজেদের সর্বনাশ নিজেরাই ডেকে আনে। বিজ্ঞান শিক্ষার উপযোগিতা মধ্যবিত্ত সমাজেও যথেষ্ট। মধ্যবিত্ত ঘরের একজন কলা বিভাগের স্নাতক পরীক্ষায় ভালো ফলই করুক না কেন বিজ্ঞান বিষয়ে অন্তত সাধারণ শিক্ষা যদি তার না থাকে তাহলে বলতে হবে, সে শিক্ষা অসম্পূর্ণ। ধনী বা উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা টাকার জোরে অনেক কিছুই করতে পারে, এমনকি দেশ-বিদেশে গিয়ে সস্তায় ডিগ্রি সংগ্রহ করাও কঠিন কিছু নয়।

বিজ্ঞান শিক্ষার নানা স্তর ও উপকারিতা

বিজ্ঞান শিক্ষার বিভিন্ন স্তর আছে—প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চতর। অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ের বিজ্ঞান জ্ঞান না থাকলে এই যুগে শিক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। বিজ্ঞান না জানলে মানুষ ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পারে না। স্বাস্থ্য রক্ষা, খাবারের গুণ, কিংবা রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে যার কোনো জ্ঞান নেই, সে ভালো নাগরিক হতে পারে না। বিজ্ঞান সম্পর্কে সাধারণ ধারণা থাকলে অনেক ভুল বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকা যায়। যেমন—রোগে পড়লে ওঝার কাছে না গিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া যায়, পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখলে ভয় পেয়ে ঘর ছেড়ে পালাতে হয় না, কিংবা শুধু তাবিজ-মাদুলিতে ভরসা করে থাকা লাগে না। যারা মাধ্যমিক পর্যায়ের বিজ্ঞান শিক্ষা পেয়েছে, তারা জগতের নিয়ম বোঝে, নানা ঘটনার কারণ খুঁজে পায় এবং জগৎ সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে পারে। যদিও উচ্চতর বিজ্ঞান শিক্ষা সবাই নিতে পারে না, তবে যারা আগ্রহী ও যোগ্য, তারাই এই সুযোগ পায়। এই উচ্চতর বিজ্ঞান শিক্ষাই মানুষকে নতুন কিছু আবিষ্কারে উৎসাহ দেয় এবং দেশ ও জাতির উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখে।

বিজ্ঞান শিক্ষার অভাবের কুফল

বিজ্ঞান শিক্ষার অভাবে যুগে যুগে সমাজ ও সভ্যতার অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। সাগরে সন্তান বিসর্জন এবং সতীদাগের কথা ছেড়ে দিলেও বর্তমান যুগে দেবীকে প্রসন্ন করার বাসনায় নরবলির কথা বা ’সজ্ঞানে গঙ্গালাভ’-এর আশায় মুমূর্ষু রোগীকে গঙ্গা তীরে নিয়ে গিয়ে বুক সমান পানিতে ডুবিয়ে রাখা, আল্লাহকে খুশি করতে নিজের সন্তানকে কোরবানি করা সবাই বিজ্ঞান শিক্ষার অভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনা। ডাইনী ভেবে কল্যাণময়ী আর্ককে একদিন পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। আজো ডাইনী সংবাদ শোনা যায়। আজো দেখা যায় ভূতপ্রেতের অস্তিত্ব স্বীকার করে ঝাড়-ফুঁকের আশ্রয় নেওয়ার দৃশ্য। বিজ্ঞান শিক্ষার অভাবেই এমন উদ্ভট ধারণা পোষণ করছে মানুষ আর ভোগ করছে তার কুফল।

বিজ্ঞানের প্রভাব ও সুফল : 

বিজ্ঞান শিক্ষা মানুষকে যুক্তিনিষ্ঠ ও বিচারশীল করে। অন্ধ আবেগ, ভুল বিশ্বাস ও সর্বনাশা মূর্খতার কবল থেকে বাঁচায়। বিজ্ঞান শিক্ষার গুণে মানুষের বুদ্ধির বিকাশ ঘটে, চিন্তা-ভাবনা ও বোধশক্তির উন্নতি হয় এবং সবচেয়ে বড় কথা, সত্যোপলব্ধির পথে সে অনেক দূর এগিয়ে যায়। বিজ্ঞান শিক্ষা কুসংস্কারের বড় শত্রু। ’নজর’ লেগে ছেলে রোগা হয় বা গাছ মরে যায়, সামান্য পরিমাণেও যারা বিজ্ঞান শিক্ষা অর্জন করেছেন, নিশ্চয় তারা এসব কুসংস্কারে কান দেন না, বিশ্বাস করেন না। এছাড়া দেহের কোন একটি স্থানে টিকটিকি পড়লে অর্থাগম, হাঁচি-কাশির সাথে উন্নত-অবনতির সম্পর্ক, স্বপ্নযোগে প্রাপ্ত বিশেষ কোন দৈবীর দৈব ক্ষমতা বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিতদের কাছে এর কোনো গুরুত্ব নেই। ধর্মের নামে গোঁড়ামিকে যারা প্রশ্রয় দেয়, প্রকৃত বিজ্ঞান শিক্ষা তাদেরও চৈতন্য জাগরণে সাহায্য করে।

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ : 

বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে সরকারের উদ্যোগ সবচেয়ে জরুরি। সরকারকে কৃষক ও শ্রমিকদের বিজ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিজ্ঞান মেলা আয়োজন করলেও এতে মানুষ উৎসাহ পায়। বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নতির জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ও সামাজিক সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।

উপসংহার

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে আগে আমাদের জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। এদেশের কোটি কোটি মানুষ এখনো জগৎসংসার সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ। আমাদের মনে রাখতে হবে, জাতির বিপুলসংখ্যক মানুষকে বাদ দিয়ে মুষ্টিমেয় লোক বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষিত হলে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই দেশের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে এবং যথাসম্ভব আর্থিক দিক থেকে সহজলভ্য করতে হবে বিজ্ঞান শিক্ষাকে।
(একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো)

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রচনা ২


ভূমিকা  

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া আধুনিক সভ্যতা অচল। বর্তমানে প্রতিমুহূর্তে আমরা বিজ্ঞানের কাছ থেকে বিভিন্ন রসদ আহরণ করছি। বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে আজ আমাদের অস্তিত্ব যেন কল্পনা করা যায় না। গত একশ বছরে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর, অকল্পনীয় ও ব্যাপক অগ্রগতির ফলে আমাদের সমাজজীবন থেকে রাষ্ট্রীয়জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভাব পড়েছে। 

একুশ শতকের পৃথিবীতে বিজ্ঞানের এই প্রভাব যে আরও ব্যাপক, বিস্তৃত, বহুমুখী ও সদূরপ্রসারী হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ফলে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনের প্রায় সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত জ্ঞান ও তার প্রয়োগ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। 

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের গুরুত্ব  

আমাদের সমাজজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিদ্যমান । এমনকি আমাদের চলন-বলন পর্যন্ত অনেক সময় বিজ্ঞানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আমরা টেলিফোন, মোবাইল ফোনে কথা বলি, বাস-মোটর গাড়ি-ট্রেনে যাতায়াত করি; টেলিগ্রাম-টেলেক্স-ফ্যাক্স মারফত দূর-দূরান্তরে বার্তা পাঠাই। এছাড়া, চিঠিপত্র না লিখলে আমাদের চলে না, যানবাহন ও যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হলে আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মেও বিপর্যয় ঘনিয়ে আসে।

উপরন্তু পথেঘাটে, অফিস- আদালতে, স্কুল-কলেজে সর্বত্র বিজ্ঞানের প্রভাব। গ্রামের পথ ধরে চলা বাঁধানো রাস্তাটি থেকে শুরু করে দূরের টেলিগ্রাম পোস্টটি পর্যন্ত বিজ্ঞানের অবদান। শহরে যানবাহনের সারি, ঘরবাড়ির ভিড়, অদূরবর্তী দোকান-বাজার ইত্যাদি সবকিছুই যেন বিজ্ঞান-শিক্ষার আশীর্বাদে পরিপুষ্ট। বিজ্ঞানের এসব নিত্যনতুন সৃষ্টি ও উপযোগিতা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জনের জন্য এবং ব্যবহারিক জীবনে তা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য বিজ্ঞান শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই ।

বিজ্ঞান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা  

বিজ্ঞানের উন্নতির কারণে মানুষের জীবন অনেক বদলে গেছে। দূরের জিনিস এখন কাছে এসে গেছে, জীবন হয়েছে আরও সুন্দর ও সহজ। মানুষের গড় আয়ুও বেড়েছে। বিজ্ঞান আমাদেরকে দূরের নক্ষত্র ও গ্রহের খবর জানার সুযোগ দিয়েছে। আমরা প্রতিদিনই পারমাণবিক জগত সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য জানতে পারছি।

বিজ্ঞানশক্তির সাহায্যে অজানার রুদ্ধ দুয়ার উন্মুক্ত করে নিত্য-নতুন জ্ঞান লাভ করছি। বিজ্ঞানের আলোকোজ্জ্বল সম্ভাবনাকে আপন উদ্ভাবনা দিয়ে আরও নতুন নতুন আবিষ্কার দ্বারা রোগ ও দারিদ্র্যকে দূরীভূত করে একটি সুন্দর বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে। এজন্যে বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। 

জীবনে বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক অবদান  

সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মানুষের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিজ্ঞান জড়িত। মানবজীবন আর বিজ্ঞান একই সূত্রে গাঁথা। যাতায়াত, কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রকৌশলসহ জীবনের হাজারো ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে বিজ্ঞান  

মুদ্রণযন্ত্র, ক্যালকুলেটর, কাগজ, জ্ঞান আহরণের জন্যে সংবাদপত্র ও পুস্তকাদি সবকিছুই বিজ্ঞানের দান । চলচ্চিত্র, বেতার যন্ত্র, টেলিভিশন প্রভৃতি যেমন মানুষকে অফুরন্ত আনন্দ দিচ্ছে, তেমনি শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছে। কম্পিউটার বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত করেছে এক নতুন দিগন্ত। 

বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা এখন কম্পিউটারেই শিখতে পারছে অসংখ্য বিষয় । তাছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন বিখ্যাত লাইব্রেরির বই, বিখ্যাত শহর- বন্দর বাণিজ্য, দেশ ইত্যাদি সম্পর্কে মুহূর্তেই সংগ্রহ করতে পারছে বিভিন্ন উপাত্ত ৷

বিজ্ঞান শিক্ষার নানা পর্যায় ও নানা উপযোগিতা  

আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিজ্ঞান শিক্ষা মোটামুটি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত। প্রাথমিক পর্যায়ে বিজ্ঞানের সাধারণ বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শিক্ষার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। 

উচ্চ পর্যায়ে চিকিৎসা, প্রকৌশলী, কারিগরি, কৃষিবিদ্যা, কম্পিউটার, রসায়নবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, ভূ-তত্ত্ববিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, সামুদ্রিক বিজ্ঞানসহ আরও অনেক বিষয় রয়েছে যা থেকে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানার্জন করে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে যেমন তাল মিলিয়ে চলতে পারছে তেমনি দেশের জন্যেও নানা বিষয় উদ্ভাবন ও কর্মক্ষেত্রে কাজ করে আমাদের জাতীয় অগ্রগতি ও উন্নয়নে অবদান রাখছে।

উপসংহার  

সত্যকে চিনে নেওয়াই বিজ্ঞানবোধের পরিচয়, আর এখানেই বিজ্ঞান শিক্ষার প্রকৃত গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিহিত। বিশ্ব পরিসরে সর্বত্র তাই জীবনঘনিষ্ঠ বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞানচর্চার গুরুত্ব বেড়েছে। বর্তমানে বিজ্ঞান শিক্ষা আরও বাস্তবমুখী হয়েছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি ।

আপনি যদি এই রচনাটি ভালোভাবে পড়ে থাকেন, তাহলে StudyTika.com–এ আরো অনেক সুন্দর ও সহজ রচনা পাবেন। দয়া করে আমাদের ওয়েবসাইটে ঘুরে দেখুন এবং আরও রচনা পড়ুন।

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.