কুসংস্কার রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

এই ব্লগপোস্টে আছে একটি সুন্দর ও সহজ রচনা — “কুসংস্কার রচনা”। পুরো রচনাটি একবার পড়লে আশা করি ভালো লাগবে। তাহলে চলুন, রচনাটি পড়া শুরু করি।

কুসংস্কার রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

কুসংস্কার রচনা 

ভূমিকা : মানব জীবনে এমন কিছু সংস্কার বা বিশ্বাস দেখা যায় যার অশুভ প্রভাবে জীবনের বিকাশ রুদ্ধ হয় এবং জাতীয় জীবন নানাভাবে বিপর্যস্ত হয়ে থাকে। কুসংস্কার এমনি একটি ধারণা বা রীতি বা বিশ্বাস। জীবনকে নানা অনাচারে আঁকড়ে ধরার ক্ষমতা আছে এর এবং এর চরণে নিবেদিত হয়ে মানুষ নিজেকে ব্যক্তিত্বহীন করে তোলে। জাতিকে পেছনে ফেলে রাখার জন্য কুসংস্কারের ভূমিকা কোন অংশে উপেক্ষার নয়।

কুসংস্কারের স্বরূপ : কুসংস্কার হলো এমন একটি অন্ধবিশ্বাস যা বুদ্ধি, বিচার ও যুক্তির বাইরে অবস্থান করে। অনেক ঘটনা বা বিষয় রয়েছে যেগুলোর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই, তবুও মানুষের মনে এক বিভ্রান্তিকর বিশ্বাস জন্মায়। এই বিশ্বাসকে যুক্তি দিয়ে ভুল প্রমাণ করা যায় না কারণ মন তা সহজে মেনে নিতে চায় না। এ ধরনের বিশ্বাস কখনো সত্যের বিচার-বিবেচনায় পড়ে না, বরং অন্ধবিশ্বাসের জোরেই তা প্রতিষ্ঠিত হয়। কুসংস্কার জ্ঞান ও বিজ্ঞানের আলোকে অগ্রাহ্য, তবে দুর্বল হৃদয় ও আবেগ এতে প্রবলভাবে আকৃষ্ট হয়। এটি হৃদয়ের অন্ধবিশ্বাসের ফলাফল। যদিও বিজ্ঞান এ ধরনের বিশ্বাসকে অর্থহীন বলে দেখে, তবুও আবেগের কারণে তা জীবন্ত থাকে। যুগ যুগ ধরে প্রচলিত থাকার কারণে কুসংস্কারের ভিত্তি সন্দেহাতীত মনে হয়। কুসংস্কার বুদ্ধি ও বিজ্ঞানকে দমন করে, আর অন্ধবিশ্বাসের আধিপত্য সৃষ্টি করে। মহানবী (স.) বলেছেন, ‘শুভ বা অশুভ লক্ষণসহ সকল কুসংস্কার হারাম।’

কুসংস্কারের দৃষ্টান্ত : কুসংস্কারের প্রথম সৃষ্টি মানব সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে এবং তার ইতিহাস বর্জন-সংযোজনের ইতিহাস। সেজন্য কুসংস্কারের দৃষ্টান্তের তালিকা বৈচিত্র্যধর্মী ও দীর্ঘাকৃতির হতে পারে। আবার যুগে যুগে তার পরিবর্তন, সংযোজন ও বিয়োজন ঘটেছে। কুসংস্কারের ভিন্নতা ঘটে বয়সের জন্য। আবার নারী-পুরুষের ব্যবধানের প্রেক্ষিতে কুসংস্কারের ভিন্নতা দেখা দেয়। কুসংস্কার ছোট ছোট বিষয়ে যেমন আছে, তেমনি বড় বড় ব্যাপারেও কুসংস্কার লক্ষ করা যায়। এক সময় ইংরেজদের আগমনের পরে ইংরেজি শিক্ষার ব্যাপারে অনীহা সৃষ্টিকারী এক ধরনের কুসংস্কার সৃষ্টি হয়েছিল। ইংরেজি শিক্ষার প্রতি বিতৃষ্ণার এ দেশবাসীর জীবনে যে পশ্চাদমুখিতা দেখা দিয়েছিল তা কুসংস্কারেরই ফল। এক সময় নারী শিক্ষার প্রতি সমাজ বিরূপ ছিল এবং এখনও কিছুটা আছে -নারী শিক্ষাকে উদারভাবে গ্রহণ করা যায়নি। ফলে শিক্ষাদীক্ষায় মেয়েরা পিছিয়ে থেকে জাতীয় জীবনে অনগ্রসরতা সৃষ্টি করে কুসংস্কারের নিদর্শন রাখছে। এক সময় হিন্দু সমাজে সতীদাহ প্রথা প্রচলিত ছিল। কি নির্মম ছিল সে কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ! কৌলিন্য প্রথা আর যৌতুকের রাহু গ্রাস এখনও সমাজকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ব্যক্তি জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরে কুসংস্কারের অন্ত নেই। ‘আজকের দিনটি কেমন যাবে’ -পত্রিকার এই কলামটিতে চোখ না বুলিয়ে অনেক শিক্ষিত লোক ঘর থেকে বের হন না। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় চৌকাঠে মাথা ঠেকলে, হোঁচট খেলে, শূন্য কলসী দেখলে, হাঁচি পড়লে, টিকটিকি ডাকলে -কেউ কেউ খানিকটা বসে তারপর যাত্রা করেন। এভাবে অসংখ্য কুসংস্কার মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ছড়িয়ে আছে। অনেকে পাথর ব্যবহার করেন। প্রত্যাশিত ফলের চেয়ে বিশ্বাস প্রবণতা সেখানে বেশি। তের সংখ্যা দুর্ভাগ্যের, ঊনপঞ্চাশ সংখ্যা মস্তিষ্কবিকৃতির, চার শ’বিশ সংখ্যা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে লোকে বিশ্বাস করে। অমাবস্যার রাতে শেওড়া গাছের নিচ দিয়ে যেতে আধুনিক শিক্ষিত লোকও ভীত হয়ে ওঠে ভূতের ভয়ে।

কুসংস্কারের প্রভাব : কুসংস্কার ব্যাপকভাবে মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সকল মানুষই কুসংস্কারের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। তবে অশিক্ষিত লোকের মধ্যে কুসংস্কার বেশি। কিন্তু শিক্ষিত লোকের মধ্যে কম হলেও তারা একেবারে কুসংস্কারমুক্ত নয়। এমন কি শিক্ষা সভ্যতায় সমৃদ্ধ জাতিসমূহের মধ্যেও কুসংস্কারের অস্তিত্ব রয়েছে। দেশে দেশে অবশ্য কুসংস্কারের পার্থক্য আছে। কুসংস্কারের প্রভাবে মানব জীবনের অনেক ক্ষতি হয়। ছোট-খাট বিষয়ে যেসব কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে তাতে আপাতদৃষ্টিতে কোন ক্ষতি প্রত্যক্ষ করা না গেলেও তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে মানব জীবনে। কুসংস্কারের প্রভাবে মনে যে সংকীর্ণতা দেখা দেয় তা প্রতিফলিত হয় তার আচরণে, তার কাজে কর্মে। ফলে অতীতমুখিতা, অন্ধ বিশ্বাস, বিনা কারণে আতঙ্ক ইত্যাদি জীবনের গতিশীলতায় বাধা আনে এবং জীবনের সুষ্ঠু বিকাশে অন্তরায় সৃষ্টি হয়।

কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তি মুক্ত বুদ্ধি ও মুক্ত চিন্তার অধিকারী হয় না। তার মন আটকে থাকে পুরানো সংস্কারের মধ্যে। ফলে জীবনের সাধনা বাধাগ্রস্ত হয় এবং সমাজ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। ইংরেজি শিক্ষা ও নারী শিক্ষা সম্পর্কিত কুসংস্কার জাতির জন্য ভয়ানকভাবে ক্ষতি সাধন করেছে। সমাজে আভিজাত্যবোধ সমাজকে পঙ্গু করে রেখেছে।

বর্তমান অবস্থা : বর্তমানে কুসংস্কার সম্পর্কিত সমস্যার অনেক লাঘব ঘটেছে। এ যুগে শিক্ষার সম্প্রসারণ হয়েছে, নাগরিক জীবনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। রেডিও, টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত জনগণ বিভিন্ন কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে পারছে। নিজেদের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে ধারণা হচ্ছে। ফলে কুসংস্কারের প্রভাব অনেকাংশে কমেছে। তাছাড়া মানুষের জীবন ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে; অর্থনৈতিক সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জটিল সমস্যাময় জীবনে পুরানো সব কুসংস্কার আঁকড়ে বসে থাকলে জীবনের সার্থকতা আশা করা চলে না। জীবনের প্রয়োজন যেখানে বেশি সেখানে কুসংস্কারের গুরুত্ব বেশি বলে মনে হবে না।

কুসংস্কার দূর করার উপায় : হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, ‘টিকটিকির ডাক, কাকের বা অন্য কোনো প্রাণীর ডাকের মধ্যে শুভ বা অশুভ কিছু নেই।’ কুসংস্কার ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি ব্যক্তির উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং জাতির অগ্রগতিও রোধ করে। তাই কুসংস্কার থেকে মুক্তি পাওয়া জরুরি। শিক্ষার ব্যাপক প্রসারে কুসংস্কার ধীরে ধীরে দূর হবে, কারণ শিক্ষা মনকে উজ্জ্বল ও উদার করে। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হলে মানুষ কুসংস্কার থেকে মুক্তি পায়। পত্র-পত্রিকায় কুসংস্কার ছড়ানো উচিত নয়। সমাজকে কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে সচেতন প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। মুক্ত চিন্তার চর্চাই কুসংস্কারের অন্যতম প্রতিকার। মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলে কুসংস্কারের মাত্রাও কমে। কুসংস্কারের অপকারিতা নিয়ে বই ও আলোচনায় গুরুত্ব দেয়া উচিত। বিভিন্ন মাধ্যমে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো আবশ্যক। ধর্মীয় কুসংস্কার দূর করতে হলে ধর্মীয় জ্ঞানের প্রসার ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ধর্মের সত্যতা ও ন্যায়পরায়ণতা জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরলেই মানুষ কুসংস্কারাচ্ছন্ন মন থেকে মুক্তি পাবে।

উপসংহার : মানব জীবন প্রতিনিয়ত গতিশীলতার পরিচয় দেয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে মানুষের তাল মিলিয়ে চলতে হয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গেও সঙ্গতি রাখা দরকার। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে কুসংস্কারমুক্ত জীবনেই আধুনিকতার উজ্জীবন সম্ভব। মানব জীবনকে সফল ও সার্থক করে তোলার জন্য মুক্ত মানসিকতাসম্পন্ন শিক্ষিত বিজ্ঞানমনস্ক জনতার প্রয়োজন। তাই শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়কে জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত করে কুসংস্কারের অস্তিত্বকে বিলুপ্ত করতে হবে এবং সংস্কারমুক্ত চিত্তে বলতে হবে:
মঙ্গল প্রভাতে,

মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে,
উদার আলোক মাঝে, উন্মুক্ত বাতাসে।

রচনাটি যদি ভালো লাগে, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট StudyTika.com এ আরও অনেক সুন্দর ও সহজ রচনা আছে। দয়া করে সেগুলোও একবার পড়ে দেখো!

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.