এই ব্লগপোস্টে বাংলাদেশের নদ-নদী নিয়ে একটি রচনা আছে। যারা ক্লাস ৭ থেকে ১০, এসএসসি বা এইচএসসির পড়ুয়া, তাদের জন্য উপযোগী হবে।
বাংলাদেশের নদ-নদী রচনা ১
সূচনা :
আমি বাংলার, বাংলা আমার জন্মভূমি
বাংলা আমার, গঙ্গা ও যমুনা
বহিছে যাহার চরম ভূমি, পদ্মা ও মেঘনা
[কায়কোবাদ]
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্য নদনদী এদেশের বুকের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে। নদীগুলো আমাদের দেশের মাটিকে উর্বর করেছে। সাধারণ মানুষের জীবিকা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা রেখেছে। নদীই যেন এদেশের প্রাণ । এদেশের অর্থনীতি নদীগুলোর ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
বাংলাদেশের প্রধান নদনদী
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের প্রধান নদনদী। এছাড়াও রয়েছে ধলেশ্বরী, বুড়িগঙ্গা, তিস্তা, কুশিয়ারা, শীতলক্ষ্যা, আত্রাই, গড়াই, কর্ণফুলী, মাতামুহুরী, মধুমতি, অড়িয়াল খাঁ এবং আরও অনেক নদ-নদী। পদ্মা বাংলাদেশের প্রধান নদী। এটি উত্তর ভারতের হিমালয়ের গঙ্গোত্রী নামক হিমবাহ থেকে উৎপত্তি হয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাজশাহী জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে এসে পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পদ্মা নদী আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
মেঘনা নদী
মেঘনা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী। এ নদী নাগা মনিপুর জলবিভাজিকা থেকে উৎপন্ন হয়ে সিলেট সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পদ্মা ও যমুনার সাথে মিলিত হয়ে মেঘনা নামেই বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
যমুনা নদী
যমুনা বাংলাদেশের একটি প্রধান নদী। এ নদী উৎপত্তির স্থান থেকে আসামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যমুনা গোয়ালন্দের কাছে এসে পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। ধলেশ্বরী যমুনার প্রধান শাখানদী ।
কর্ণফুলী নদী
বাংলাদেশের খরস্রোতা নদী কর্ণফুলী। এটি লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপাসাগরে পড়েছে। কর্ণফুলী নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৭৪ কিলোমিটার। হালদা, বোয়ালখালী ও কাসালং এর প্রধান উপনদী।
ব্রহ্মপুত্র নদ
হিমালয় পর্বতের কৈলাশ শৃঙ্গের হিমবাহ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ উৎপন্ন হয়েছে। তিব্বত ও আসামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রংপুর জেলার কুড়িগ্রামের কাছে এসে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর একটি শাখা দক্ষিণ যমুনা নামে প্রবাহিত হয়ে পদ্মার সাথে মিলিত হয়েছে। অন্য শাখাটি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নামে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদীর সাথে মিশেছে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নদনদীর প্রভাব
নদীর সঙ্গে রয়েছে আমাদের গভীর সম্পর্ক। এক সময় যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল নদী পথ। বর্তমানে নদী পথে নানা পণ্য সরবরাহ করা হয়। কৃষিকাজে সেচব্যবস্থার জন্য নদীর প্রয়োজন হয়। আমাদের দেশে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নানা বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এছাড়া জেলে সম্প্রদায় নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে । এদেশের শিল্প-সাহিত্যের অনেকাংশ জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের নদী।
নদনদীর উপকারিতা
নদী আমাদের জীবনের অঙ্গ এবং নানা দিক থেকে উপকার করে। যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনে নদীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। নদীপথে নৌকা, লঞ্চ ও স্টিমারে সহজে যাতায়াত করা যায়, যা অনেক সময় ও খরচ বাঁচায়। অনেক জেলে পরিবার নদীতে মাছ ধরে সংসার চালায়। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে নদীর পানি বহুমাত্রায় ব্যবহৃত হয়। নদীতে পাওয়া মাছ আমাদের প্রোটিনের প্রধান উৎস। শুষ্ক মৌসুমে নদী থেকে জল সেচের মাধ্যমে শস্য উৎপাদন করা হয়। নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনও সম্ভব হয়। তাই আমাদের দৈনন্দিন জীবন ও দেশের অর্থনীতিতে নদ-নদীর গুরুত্ব অপরিসীম।
নদনদীর অপকারিতা
উপকারিতার পাশাপাশি নদীর কিছু অপকারিতা রয়েছে। বর্ষাকালে নদীগুলো জলে টুইটম্বুর হয়ে যায়। নদী উপচে বানের জলে ভাসিয়ে দেয় রাস্তাঘাট, বাড়িঘর। ফসলি জমিতে জল উঠে নষ্ট করে দেয় ফসল। কখনো কখনো নদীর প্রবল স্রোতে ভাঙন সৃষ্টি করে। নদীভাঙনের প্রবণতা মাঝে মাঝে এত তীব্র হয় যে একটি এলাকা সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মানুষ। মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিয়ে হয়ে যায়। নদীর প্রবল স্রোত প্রাণহানিও ঘটায়। প্রতিবছর নদীভাঙনে বাংলাদেশের অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
উপসংহার
অপকারিতার তুলনায় নদীর উপকারিতা অনেক বেশি। বাঙালি জীবনের সাথে একাত্ম হয়ে আছে নদনদী; আমাদের ভূমি হয়েছে সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা, অন্যদিকে তেমনি এদেশের মানুষের জীবনজীবিকার পথ হয়েছে সুগম।
বাংলার নদী কি শোভাশালিনী/কি মধুর তার কুল কুল ধ্বনি
দু ধারে তাহার বিটপীর শ্রেণী/হেরিলে জুড়ায় হিয়।
-[কায়কোবাদ]
বাংলাদেশের নদ-নদী রচনা ২
ভূমিকা : সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের খ্যাতির পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রয়েছে নদীর। অসংখ্য ছোট-বড় নদ-নদী এই দেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে, যা দেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। এসব নদী থেকে আসা পলি, বালি, কাঁকরসহ নানা উপাদানের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে সমৃদ্ধ বাংলা অববাহিকা। বাঙালির জীবন-যাত্রা ও সংস্কৃতিতে নদ-নদীর প্রভাব অমসৃণ এবং অপরিসীম।
নদীর জন্ম ও প্রবাহ : অধিকাংশ নদীর জন্ম হয় হিমবাহ থেকে। এ ছাড়া হ্রদ বা ঝরণা এবং প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের অঞ্চল থেকেও নদীর জন্ম হতে পারে। যেখান থেকে নদীর জন্ম হয় তাকে বলে নদীর উৎস। নদী যেখানে সাগরের সাথে মেশে সে অংশকে বলা হয় মোহনা। চলার পথে দুপাশ থেকে কিছু কিছু ছোট ও মাঝারি নদী বড় নদীর জল প্রবাহের সাথে মেশে, সেগুলো উপনদী হিসেবে পরিচিত। আবার নদী থেকে বেরিয়ে এসে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যেসব নদী সাগরে মেশে সেগুলো শাখা নদী। বাংলাদেশে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সাঙ্গু, কর্ণফুলী, মাতামুহুরী, কপোতক্ষ, ধলেশ্বরী এবং এদের উপনদী ও শাখানদীগুলো জালের মতো বিস্তৃত রয়েছে সারা বাংলাদেশ জুড়ে। তাই এ দেশকে বলা হয় নদী-মাতৃক দেশ।
বাংলাদেশের নদ-নদী : পদ্মা, মেঘনা, যমুনা- এই প্রধান তিনটি নদীই বাংলাদেশের প্রাণ। এ ছাড়া ছোট-বড় অসংখ্য নদ-নদী এ দেশের ভূ-প্রকৃতি, মানুষের জীবন ও অস্তিত্বের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশে প্রবাহিত সব নদ-নদীই আন্তর্জাতিক। অর্থাৎ উৎস বাংলাদেশের বাইরে। কিন্তু সবগুলো নদীই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। কিছু কিছু নদীর উৎপাত্তি হিমালয় পর্বত থেকে, কিছু কিছু নদী অ-হিমালীয়। মিমালীয় নদীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদ্মা, যমুনা। আর অ-হিমালীয় নদীগুলো মধ্যে কর্ণফুলী, মেঘনা, মাতামুহুরী আর সাঙ্গু উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোর বেশ কিছু শাখা ও উপনদী রয়েছে। যেমন, যমুনা নদীর একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো ব্রহ্মপুত্র। ব্রহ্মপুত্রের প্রধান উপনদীগুলোর মধ্যে তিস্তা, করতোয়া, ধরলা ও আত্রাই উল্লেখযোগ্য। পদ্মা নদীর প্রধান উপনদী মহানন্দা ও পুনর্ভবা। পদ্মার শাখা নদীগুলোর মধ্যে অড়িয়াল খাঁ, কুমার, গড়াই ও মাথাভাঙ্গা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অ-হিমালয় উৎসবর্তী নদীগুলোর মধ্যে কর্ণফুলী ও মেঘনা নদীর উৎপত্তি ভারতের মিজোরাম রাজ্যের লুসাই পাহাড় থেকে। কর্ণফুলীর প্রধান উপনদী হলো মাইনি, কাসালং, চিংড়ি ও রানখিয়াং। মেঘনার উপনদীর মধ্যে কংস, সোমেশ্বরী ও গোমতি এবং শাখা নদীর মধ্যে তিতাস ও ডাকাতিয়া উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর মধ্যে বুড়িগঙ্গা, ভেরব, ধলেশ্বরী, রূপসা, চিত্রা, গোমতি ও পুনর্ভবা অন্যতম।
জননীবনে নদীর ভূমিকা : বাংলার অপরূপ প্রাকৃতি আর উর্বর ভূমি অজস্র নদীরই দান। বাংলাদেশকে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ ব-দ্বীপ সমভূমি বলা হয়ে থাকে। এই ব-দ্বীপ নদী দ্বারাই সৃষ্ট। নদীতীরে গড়ে উঠেছে বড় বড় নগর বা বন্দর। এদেশের মানুষের খাদ্য, পোশাক সর্বোপরী সংস্কৃতি নদীকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে। বাংলাদেশে নদী-তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য শহর, বন্দর ও বাণিজ্য স্থানের মধ্যে রয়েছে বাহাদুরাবাদ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, গোয়ালন্দ, সিলেট, ভৈরব, চাঁদপুর, ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা, পাবনা, কুষ্টিয়া, খুলনা, মংলা, চট্টগ্রাম, চন্দ্রঘোনা, কাপ্তাই, লামা প্রভৃতি।
নদীর জল একদিকে বাংলার মাটিকে সরস ও উর্বর করেছে, সেই সাথে মাটির নিচের জলাধার রেখেছে ভরপুর করে। বৃষ্টি আর নদীর জলেই বাংলার প্রকৃতি এতো সবুজ, এতো সজীব। নদীর জল থেকেই বিশেষ প্রক্রিয়ায় পানীয় জল তৈরি করা হয়। নদীর দুরন্ত গতিপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে তৈরি হচ্ছে বিদ্যুৎ যা ছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবন আচল। চাষাবাদের জলেরও অনেকটাই আমরা পাই নদী থেকে। এ দেশের মৎস সম্পদের অন্যতম প্রধান উৎস নদী। আর বাংলা সাহিত্যে গল্প-উপন্যাস, কবিতা আর গানে এক বড় অংশ জুড়ে রয়েছে নদী। তাই বলা চলে, বাঙালির জীবনের পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে এ দেশের নদ-নদী।
নদী যখন দুঃখের কারণ : শ্যাম-স্নিগ্ধ নদী কখনো কখনো দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভাঙনের বিধ্বংসী বিপর্যয় নিয়ে গ্রাস করে মানুষের ভিটেমাটি। কখনো আবার প্রবল গতিতে ভয়ংকর মূর্তিতে এগিয়ে চলে। ডুবে যায় গ্রামের পর গ্রাম, জনপদ। দেখা দেয় বন্যা। বন্যার ভয়াবহতা অনেক প্রাণহানী ঘটে। অনেকে সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রয়োজন ড্রেজিং করে নদীর গভীরতা বাড়ানো এবং নদী তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি।
নদী দূষণ : বাংলাদেশের অনেক শহরের কোলঘেঁষা নদীগুলো বর্তমানে মারাত্মক দূষণের সম্মুখীন। শহরের ময়লা আবর্জনা, শিল্পবর্জ্য এবং বসতবাড়ির ফেলা বর্জ্য নদীগুলোকে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত বর্জ্যের আধারে পরিণত করছে। তদুপরি, নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে নদীগুলো ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে নদীর পানি ব্যবহার উপযোগী থেকে যাচ্ছে না এবং মাছসহ অন্যান্য জলজ সম্পদ বিপন্ন হওয়ার মুখে পড়েছে। সর্বোপরি, নদীগুলো তাদের নিজস্ব নাব্যতা হারাচ্ছে। এ ধরনের দূষণ রোধের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যাবশ্যক।
উপসংহার : বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো স্নেহময়ী মায়ের মতোই। নদীর অকৃত্রিম ভালোবাসার দানে এ দেশ পরিপূর্ণ। ‘মাছে-ভাতে’ বাঙালি বলে যে কথাটি চালু হয়েছে তা-ও এই নদীর দানেই। তাই এইসব নদীর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। কেননা নদী বিপর্যস্ত হলে বাংলার প্রকৃতিও বিপর্যস্ত হবে। আর এর নিষ্ঠুর প্রভাব পড়বে এ দেশের মানুষের ওপর।
আমার ওয়েবসাইট StudyTika.com-এ আরও অনেক রচনা পড়তে পারেন। আশা করি এখান থেকে আপনি ভালো কিছু শিখবেন।