এই ব্লগপোস্টে তোমরা পড়তে পারবে সুন্দর ও সহজ ভাষায় লেখা “কাগজ রচনা”। চলো, পুরো রচনাটি একবার ভালোভাবে পড়ে নিই।
কাগজ রচনা
উপস্থাপনা :
জ্ঞানই আলো। জ্ঞানই শক্তি। আর এই জ্ঞান বিস্তারের প্রধান উপকরণ কাগজ। মানব সভ্যতার ইতিহাসে কাগজের আবিষ্কার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কাগজ ব্যতীত সভ্যতার বাণী পরস্পর বিনিময় করে টিকিয়ে রাখা যায় না। কাগজ ব্যতীত জ্ঞানের আলো ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেবার চিন্তা করা যায় না। তাই কাগজের গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।
কাগজ আবিষ্কার :
ঠিক কখন, কে কাগজ আবিষ্কার করেছিলেন তা নিরূপণ করা যায় নাই। আমাদের এই ভারত উপমহাদেশে মুসলমান শাসকরাই প্রথম কাগজের প্রচলন করেন। ইতিপূর্বে এখানকার পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ পাথরে, পর্বত গাত্রে, মাটিতে কিংবা ধাতু নির্মিত পাত্রে অক্ষর খোদাই করে মনের ভাব লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। অনেকে গাছের বাকল, পশুর চামড়া, পোড়া মাটি ইত্যাদিতে লেখার কাজ চালাতেন। বিভিন্ন জাদুঘরে এ ধরনের লেখার নিদর্শন পাওয়া যায়।
হিন্দু ও বৌদ্ধ যুগে তালপাতা, বুজ পত্র লেখার কাজে ব্যবহৃত হত। কাগজ আরবি শব্দ। অনেকে অনুমান করেন খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে চীন দেশে প্রথম কাগজ আবিষ্কৃত হয়। আরবিয় বণিকগণ সেখান থেকে কাগজ তৈরি সম্পর্কে জেনে তা পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপের সবখানে প্রচার করেন। তাদের মাধ্যমেই তুলট কাগজ এবং চীনা কাগজ প্রচলিত হয়। ক্রমে আরও বিভিন্ন রকম কাগজ তৈরি হতে থাকে।
নামকরণ :
কাগজকে ইংরেজিতে পেপার (Paper) বলে। এ শব্দটি প্যাপাইরাস (Papyrus) শব্দ থেকে এসেছে বলে জানা যায়। প্যাপাইরাস ইউরোপীয় কোন অঞ্চলের এক রকম গাছের নাম যার বাকলে লেখার কাজ চলত। এ থেকেই পেপার নামটি প্রচলিত হয়েছে। মতান্তরে প্যাপাইরাস শব্দটি মিসরীয় এবং প্যাপাইরাস এক প্রকার তৃণ জাতীয় গাছ। যে গাছ থেকে মিসরীয়গণ প্রথম কাগজ তৈরি করেন এবং মোটামুটি এভাবেই কাগজ অর্থাৎ ইংরেজি পেপার শব্দটি এসেছে।
কাগজ তৈরির উপাদান :
খড়, তুলা, পাট, ছেড়া কাগজ, শুকনো পাতা, বাঁশ, ঘাস, গাছের ছাল ইত্যাদি দিয়ে কাগজ তৈরি হয়। তুলা দিয়ে যে কাগজ তৈরি হত তারই নাম ছিল তুলট কাগজ। এখন তার প্রচলন নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের চন্দ্রঘোণায় বৃহত্তম কাগজের কল অবস্থিত। এখানে বেশ উন্নতমানের কাগজ তৈরি হয়। খুলনায় কাগজের কল আছে। পাকশীতেও কাগজ তৈরি হয়। সাধারণত এগুলোতে খবরের কাগজ (Newspaper) উৎপাদন করা হয়।
কাগজ তৈরির পদ্ধতি :
ফরাসি আবিষ্কারক লুই রবার্ট প্রথম কাগজ তৈরির যন্ত্র আবিষ্কার করেন। তারপর থেকে এই যন্ত্রে নানা ধরনের উন্নতি হয়েছে। কাগজ তৈরি করতে প্রথমে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোকে চূর্ণ করে অল্প গরম পানিতে মিশিয়ে একটি পেস্ট বা মণ্ড তৈরি করা হয়। এরপর চুন মেশানো হয় ময়লা দূর করার জন্য। এই মণ্ডের সঙ্গে মাড়, আলু, ভাত, কচু, চীনা মাটি ইত্যাদি মিশিয়ে আবার গরম পানি দিয়ে মণ্ডকে তরল করা হয়। তরল মণ্ডটি এক ছাকনির ওপর ঢেলে পেষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পিষে পানি বের করে দেওয়া হয়। ছাকনির ওপর জমাট বাঁধা পাতলা আবরণকেই কাগজ বলা হয়। মণ্ডে রঙ মেশালে কাগজ বিভিন্ন রঙের তৈরি করা সম্ভব হয়।
কাগজের সাইজ :
নানারকম জিনিসের মত কাগজও সাইজ অনুসারে নানা রকমের হয়। যেমন- ফুলস্ক্যাপ, ডিমাই, ডবল ডিমাই, রয়েল ক্রাউন, ডবল ক্রাউন, নিউজ প্রিন্ট ইত্যাদি। তাছাড়া প্রয়োজনানুসারে কাগজ বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। যেমন-রঙ্গিন কাগজ, বিভিন্ন রকম বাক্স ও মোড়ক তৈরির কাগজ, পোস্ট বোর্ড ইত্যাদি তৈরি করা আজকাল অতি সাধারণ ব্যাপার। ইদানীং সেলুফিন কাগজের তৈরি ব্যাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
কাগজের গুরুত্ব :
মানুষ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে অসাধারণ গুণাবলীর অধিকারী। তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো একটি সুন্দর মন। এই মন ও চিন্তা-ভাবনা মানুষকে শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবিস্মরণীয় সৃষ্টি করার অনুপ্রেরণা দেয়। কাগজ আবিষ্কারের আগেও মানুষ পোড়া মাটিতে লিখে মনের কথা প্রকাশ করত। এটি প্রমাণ করে, মনের ভাব ব্যক্ত করার জন্য মানুষের আগ্রহ সীমাহীন।
মানব জীবনের এই শাশ্বত আকা ক্ষার বাহক, মানব ইতিহাসের বিশ্বস্ত ধারক এই কাগজ। কাগজ মানব সভ্যতার সঙ্গে এক হয়ে মিশে গেছে। যুগযুগান্তের বাণী বুকে ধারণ করে জ্ঞানের আলোয় মানব হৃদয় উদ্ভাসিত করে চলেছে। কোন বিষয় জানার জন্য আজ আর অজ্ঞতার অন্ধকারে হাতড়িয়ে ফিরতে হয় না। এখানেই তার গুরুত্ব ।
উপসংহার :
বর্তমানে পৃথিবীতে কাগজ ছাড়া একটি দিনও কল্পনা করা যায় না। আমাদের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাগজ বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করেছে। জ্ঞান ও বিজ্ঞানের প্রধান ভিত্তি হিসেবে কাগজের ভূমিকা অপরিসীম। অর্থনৈতিক শিল্প হিসেবেও এটি একটি মূল্যবান পণ্য। দেশ-বিদেশে উৎকৃষ্ট মানের কাগজ তৈরির প্রতিযোগিতা এ বিষয়টির প্রমাণ। সৌভাগ্যবশত আমাদের দেশও এই ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি করেছে। বাজার হিসাব থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থা এবং সরকারি কাজে কাগজের ব্যবহার অপরিহার্য। তাই কাগজই সভ্যতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন—এ কথা অস্বীকার করা যায় না।
তোমরা যদি এই রচনাটি ভালোভাবে পড়ে থাকো, তাহলে আরও অনেক রচনা পড়তে ভিজিট করো আমাদের সাইটে — StudyTika.com। এখানে ক্লাস ৭-১০ ও এসএসসি-এইচএসসি’র জন্য আছে সহজ ও নম্বরজুত রচনা। পড়ে ফেলো এখনই!