কলেজে প্রথম দিন রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

 ভূমিকা: এই ব্লগপোস্টে কলেজে প্রথম দিনের রচনা লেখা হয়েছে। এটি খুব সহজ ভাষায় এবং সুন্দরভাবে লেখা হয়েছে যাতে সবাই পড়তে পারেন। আপনি চাইলে পুরো রচনাটি পড়তে পারেন।

কলেজে প্রথম দিন রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

কলেজে প্রথম দিন রচনা ১

পরীক্ষার ফলাফল বের হবার পর আমি প্রায়ই কলেজের প্রথম দিনটি কেমন হবে সে কথা ভবতাম। আমার কাছে কলেজ-জীবন ছিল শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাধীনতা ও পূর্ণতার প্রতীক। এ যেন অপরিণত মানুষ থেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষে রূপান্তরিত হওয়ার পালা, আত্মশিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম পাঠ। তাই স্বাভাবিকভাবেই কালেজের প্রথম দিন আমার জন্যে ছিল জীবনের এক নতুন পথ চলা- পালাবদলের এক নতুন পর্বের সূচনা। 

কলেজের প্রথম দিনের কথা আমার বেশ ভালোভাবেই মনে হচ্ছে। দিনটি ছিল ১৬ই আগস্ট ২০০৩। সূর্যের আলোয় উজ্জ্বল আর প্রশান্তি ভরা সে এক আশ্চর্য দিন। মনের প্রশান্তিই যেন সেদিন ফুটে উঠেছিল প্রকৃতির মধ্যে। নিজের পছন্দমতো কলেজে ভর্তি হতে পারায় এবং নতুন অভিজ্ঞতা লাভের আশায় আমি উন্মুখ ছিলাম। সেই সঙ্গে ছিল এক নতুন অনাস্বাদিত শিহরণ। 

খুব ছোট আয়োজন এবং আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে আমাদের স্বাগত জানানো হলো। সিনিয়র ভাইবোনেরা রজনীগন্ধা ফুল ও চকোলেট দিয়ে আমাদের বরণ করে নিলেন। মনোযোগ দিয়ে প্রধান অধ্যক্ষের মনোমুগ্ধকর ভাষণ শুনলাম। নতুন শতকে পা রেখে আমাদের কলেজ-জীবন শুরু করায় তিনি আমাদের অভিনন্দন জানালেন। তাঁর আবেগময় বক্তৃতায় আমরা আপ্লুত হলাম। তিনি স্কুলজীবন ও কলেজ-জীবনের পার্থক্য সম্পর্কে আলোকপাত করলেন। উপদেশ দিলেন জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে। পরামর্শ দিলেন খোলা মনে, যুক্তিবাদী উদার মন নিয়ে জ্ঞান আহরণ করতে। আহ্বান জানালেন সত্যিকারের দেশব্রতী মানুষ হয়ে বিশ্ব সভায় দাঁড়াতে। 


ক্লাস শুরু করতে গিয়ে লাভ করলাম সত্যিকার মুক্তির স্বাদ। দেখলাম, স্কুলের মতো একটা নির্দিষ্ট কক্ষে সারাক্ষণ আমাদের ক্লাস করতে হচ্ছে না। এক এক শ্রেণীকক্ষে হচ্ছে এক এক বিষয়ে এক একজন শিক্ষকের ক্লাস। সে এক মজার অভিজ্ঞতা! আমরা নতুন। জানি না কোন ক্লাস কোথায়। প্রথম ক্লাস হলো এইচ-থ্রিতে। সে ক্লাস শেষ হওয়ার সাথে সাথে সবাই সিনিয়রদের জিজ্ঞেস করি এইচ-ফাইভ কোথায়? প্রায় ১০০ জন ছাত্রছাত্রী করিডর ধরে ছুটে চলি ঐ ক্লাসের দিকে। কে কার আগে সবচেয়ে পছন্দনীয় সিটটি দখল করে নেবে সেজন্যে। অবশ্য সবাই যে এই মজার প্রতিযোগিতায় যোগ দিল তা নয়। কেউ কেউ ভাবগম্ভীর, ভারিক্কি চালে ধীরে ধীরে হেঁটে হেঁটে ক্লাসে এল। যেন ওরা ফার্স্ট ইয়ার নয়, যেন এই কলেজের বনেদি ছাত্রছাত্রী। আমি কিন্তু ঐ বনেদিদের দলে নই, সবার আগে নিজের পছন্দনীয় সিট দখল করে নেওয়ার মধ্যেই যে আনন্দ। সে আনন্দ স্বাধীনতা ও ইচ্ছাপূরণের। 


কলেজে প্রথম দিন একটা বিস্ময় আমার জন্যে অপেক্ষা করছিল। দেখলাম, এখন থেকে আমাদের আর এক নাগাড়ে একটার পর একটা ক্লাস করতে হচ্ছে না, বরং একটা কি দুটো ক্লাসের পরই একটা-দুটো ক্লাসের বিরতি। সে সময়টুকু একেবারে নিজের। ঐ সময়টা ইচ্ছে করলে কমনরুমে গিয়ে গল্প করে কিংবা অন্তরঙ্গ কোনো খেলায় মেতে থাকা যায়। দুটো ক্লাস করার পর কমনরূমে উঁকি দিয়ে দেখলাম, ভইয়াদের কমনরুমে ভাইয়ারা খেলছে আর আপুদের কমনরুমে বেশির ভাগই গল্পে বিভোর। ভাবলাম, আমিও কিছুদিনের মধ্যে এদেরই একজন হব। 

পাঠশালার গণ্ডি পেরিয়ে ক্লাস করতে গিয়েও ভালো লাগলো। প্রথম দিনেই কিছু স্যারের অদ্ভুত অভিব্যক্তি নজরে পড়লো, আবার কয়েকজন স্যারের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব আর শেখানোর দক্ষতা মন ছুঁয়ে গেল। তারা সবাই ছাত্রজীবনের আদর্শ, নৈতিকতা এবং প্রকৃত শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে দিকনির্দেশনা দিলেন। সহপাঠীদের মধ্যেও দেখা গেল বিচিত্র সব চরিত্র। বেশিরভাগ ছেলেরা কোন মেয়ে সুন্দর বা কার পরিচিত – এসব নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। আর মেয়েরা ছেলেদের দিকে সরাসরি তাকাতে লজ্জা পাচ্ছে, মাঝে মাঝে লাজুক হাসি আর আড়চোখে তাকিয়ে নিচু হয়ে যাচ্ছে। চোখাচোখি হলে তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সব মিলিয়ে মনে হলো, যেন স্কুলের একঘেয়ে পরিবেশ ছেড়ে এক নতুন মুক্তির জগতে পা রাখলাম।

প্রথম দিনেই অনেক ছেলেমেয়ের সাথে পরিচয় হলো। তাদের কাউকে কাউকে আমার ভীষণ ভালো লাগল। পরবর্তীকালে এরাই আমার প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠেছিল। কলেজের প্রথম দিন সময় কেটে গেল যেন প্রজাপতির পাখায় ভর করে। একসময় অনুভব করলাম, এখানে ক্লাস করা বা না করা পুরোটাই আমার নিজের ইচ্ছার ওপর। আমাকে জোর করার বা শাসন করার মতো কেউ এখানে নেই। প্রথমে মনে হলো, এ এক আশ্চর্য স্বাধীনতা। কিন্তু একটু চিন্তা করতেই বুঝতে পারলাম, অমনোযোগিতার ও অবহেলার পরিণতি ভালো হবে না। কারণ, পরীক্ষায় খারাপ করলে তার জন্যে নিজেকে ছাড়া কাউকেই দোষারোপ করা যাবে না। এখানে পড়াশোনাটা সম্পূর্ণ নিজের ওপর নির্ভরশীল। যে ক্লাস ফাঁকি দেবে সে অনেক কিছুই হারাবে। আর যে বন্ধুদের সাথে অযথা আড্ডা আর উচ্ছৃঙ্খল জীবনের টান কাটিয়ে নিয়মিত ও ভালোভাবে পড়াশোনা করবে সে-ই ভালো ফলাফল লাভে সক্ষম হবে। এই নতুন চেতনাটা আমাকে এতটাই আলোড়িত করল সে আমার কলেজের প্রথম দিনের আনন্দের সাথে যোগ হয়ে গেল নিজেকে সথার্থভাবে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা। দেখলাম, এখানে এমন কিছু ছাত্রছাত্রীও আছে যাদের পরোচনায় যে-কোনো সময় অবচেতন মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত জগতের বেড়াজালে আটকে পড়া অসম্ভব নয়। আর সেটা কখনোই কাম্য নয়। তাই ভাবলাম, বন্ধুত্ব করার আগে আমাকে অবশ্যই সতর্ক ও সচেতন হতে হবে, ভাল-মন্দ চিনে নিতে হবে। প্রথমদিনই কয়েকজন ছাত্রের অনভিপ্রেত আচরণ দেখেই আমার মন বলল, সাবধান! এদের কাছ থেকে সাবধান। 

কলেজে আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিল চারপাশের পরিবেশ। একপাশে সবুজ গাছপালা। আদূরে তিন পাশে পাহাড় দাঁড়িয়ে। তার মধ্যে অনেকগুলো দালান ঘিরে গড়ে উঠেছে এই কলেজ। কলেজ সংলগ্ন স্কুল সেকশন মুখরিত হয়ে আছে ছেলেমেয়েদের কলকাকলিতে। কিন্তু ঠিক বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে আমাদের লাইব্রেরি আর কম্পিউটার রুমে। উচ্ছল দুষ্টু ছেলেমেয়েরাও এখানে এসে একদম চুপচাপ। সিনিয়র ভাইবোনরা বিরতির সময় দল বেঁধে বিভিন্ন জায়গায় বসে গল্প করছে। অনেকেই এসে আমাদের সাথে পরিচিত হচ্ছে। আবার ক্লাসের সময় হলেই শুরু হয়ে যাচ্ছে সেই চির নতুন দৌড় প্রতিযোগিতা। মনে হলো, এই তো, এতদিন এরকম একটা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার জন্যেই তো অপেক্ষা করেছি। 

বাসায় ফিরলাম অদ্ভুত এক অনুভূতি নিয়ে। কলেজের সব কিছুই ভীষণ ভালো লাগল। শুধু ভয় লাগল এই ভেবে, যুগের হাওয়ায় তাল মেলাতে গিয়ে আবার পড়ালেখার তাল কেটে যাবে না তো! মনে মনে ঠিক করলাম, পড়ালেখা এবং আনন্দ দুটোকেই এক সাথে উপভোগ করতে হবে। কেননা আনন্দ করতে গিয়ে পড়ালেখা নষ্ট করা আমার চলবে না।

কলেজে প্রথম দিন রচনা ২

কলেজে আমার প্রথম দিন কেটেছিল আনন্দ উচ্ছলতায়। স্কুল জীবনের দশ বছর পার করে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হওয়ায় পর থেকেই প্রথম দিনের ক্লাসে উপস্থিত থাকার অপেক্ষায় ছিলাম। সপ্তাহখানেক সময়ের ব্যবধানে বহু প্রতীক্ষিত সেই দিন উপস্থিত হলো। আমি আগেই জেনেছিলাম, ঐদিন অনানুষ্ঠানিক পরিচিতি অনুষ্ঠান হবে। সঙ্গে ক্লাস রুটিন, নবীন ছাত্রদের আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেওয়ার ঘোষণা ছাড়া বিশেষ কোন ক্লাস হবে না। হয়েছিলও তাই। আমার স্পষ্ট মনে আছে, সেদিন সকাল থেকে কলেজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। মনের আনন্দে ভালো জামা কাপড় পরে একটি নোটবুক নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলাম। কলেজের কাছাকাছি আসতেও দু একজন পরিচিত মুখ দেখলাম। সবাই কলেজের প্রথম দিনে, প্রথম ক্লাসের অপেক্ষায় আছি। একটা বড় হলরুমে বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য সব বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত। প্রথম ক্লাস হবে বাংলা। কমন ক্লাস, সবাই করবে। এটাই মূল উদ্দেশ্য নয়, মূল উদ্দেশ্য কলেজের অধ্যক্ষ মহোদয় আমাদের উদ্দেশ্য বিশেষ কিছু কথা বলবেন। অপেক্ষা করতে হলো না, অধ্যক্ষ সাহেব এলেন তাঁর সঙ্গে কয়েকজন নবীন প্রবীণ শিক্ষক। তাঁদেরকে হলরুমে ঢুকতে দেখেই আমরা সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি হাত ইশারা করে এবং মুখে আমাদের বসতে বললেন। তিনি স্থির হয়ে শিক্ষক মঞ্চে দাঁড়ালেন। পুরো হলরুমে পিনপতন নীরবতা। তিনি বললেন, 'আজ তোমাদের কলেজের প্রথম দিন। তোমরা এ কলেজের নবীন, তোমাদের আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করে নেব। তাঁর আগে আজকে অনানুষ্ঠানিকভাবে তোমাদের সঙ্গে কথা বলছি। স্কুলজীবন এবং কলেজ জীবনের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। কলেজ জীবনের আনন্দ ও স্বাধীনতা স্কুলজীবন অপেক্ষা অনেক বেশি, দায়দায়িত্ব সে কারণে অনেক বেশি। কলেজ জীবন নতুনন্ত্বের, বন্ধুর সাহচর্যে আনন্দের, পাঠের বিশাল জগতে বিচরণের। তোমরা তরুণ। তোমরা তোমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে সেই আনন্দের জগতে বিচরণ করবে, জ্ঞানের সমুদ্রে অবগাহন করে জীবন সার্থক করবে- এ প্রত্যাশা করি।' তারপর একজন শিক্ষক রবীন্দ্রনাথের 'ঐক্যতান' কবিতা আবৃত্তি করলেন। ব্যাখ্যা করে প্রকৃতির সুরের সঙ্গে আমাদেত জীবনের বন্ধন রচনা করলেন। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলাম। সংক্ষিপ্ত পরিচিতি অনুষ্ঠানের পর, আমাদের প্রত্যেকের হাতে ফুল এবং একটি করে সুন্দর কলম তুলে দেওয়া হলো। সেই কলমটি এখনও আমার উপহার বক্সে সংরক্ষিত আছে।

উপসংহার: আমাদের ওয়েবসাইট StudyTika.com এ আরও অনেক রচনা পড়তে পারেন। ভালো লাগলে আরও রচনা পড়তে ভুলবেন না।

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.