বাংলাদেশের গৃহপালিত পাখি রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

এই লেখায় বাংলাদেশের গৃহপালিত পাখি সম্পর্কে একটি সহজ ও সুন্দর রচনা রয়েছে। যারা রচনা পড়তে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি খুব উপকারী হবে।

বাংলাদেশের গৃহপালিত পাখি রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

বাংলাদেশের গৃহপালিত পাখি রচনা

ভূমিকা : পাখ-পাখালির দেশ হল বাংলাদেশ। এরা আমাদের বড় সম্পদ। পাখি বনের কিংবা খাঁচার হোক, তার একটা অর্থনৈতিক মূল্য আছে। পাখি সম্পদে ভরপুর বলেই আমাদের মাংসের অভাব হয় না। মাংস ও ডিম পুষ্টিকর খাদ্য। সেজন্য অর্থনৈতিক কারণেই লোকে পাখি পোষে। মিষ্টি মধুর ডাকাডাকি বা গান শোনার জন্যও লোকে বনের পাখি খাঁচায় বন্দী করে পোষ মানায়। ইংরেজি Poultry (পোল্ট্রি) বলতে যে গৃহপালিত বা শিকারযোগ পাখিকুল বুঝায়-বাংলায় গৃহপালিত পাখি সেগুলোই। হাঁস-মুরগি, কবুতর বাংলাদেশের প্রধান গৃহপালিত পাখি। 

প্রয়োজনীয়তা : গৃহপালিত পশুর পাশাপাশি হাঁস-মুরগির মতো গৃহপালিত পাখির গুরুত্বও কম নয়। এগুলোর প্রধানত ডিম ও মাংসের জন্য পালন করা হয়। পল্লী প্রধান বাংলাদেশে এমন বিরল কোনো পরিবার নেই, যেখানে হাঁস, মুরগি বা কবুতরের মতো গৃহপালিত পাখি দেখা যায় না। এমনকি দরিদ্র পরিবারও সামান্য কিছু হাঁস-মুরগি বা কবুতর পালন করে থাকে। কবুতর সাধারণত মাংসের জন্য পালন করা হয়, যা নিজের খাওয়ার পাশাপাশি বিক্রি করেও সহজে আয় করা যায়।

গ্রামবাংলায় অতিথি আপ্যায়নের সময় হাঁস-মুরগিই হয় প্রধান ভরসা। ঘরে ডিম থাকলে বাজারে ছুটতে হয় না। গরুর দুধ ও মোরগের মাংস ছাড়া তো জামাই আপ্যায়ন যেন অপূর্ণই থেকে যায়।

গৃহপালিত পাখির মধ্যে মোরগ-মুরগিই সবচেয়ে বেশি প্রচলিত, কারণ সংখ্যার দিক দিয়ে এগুলোর আধিক্য সবচেয়ে বেশি। এক কৃষি পরিসংখ্যানে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি মোরগ-মুরগি রয়েছে। চালের গুঁড়া, খুদ, কুড়া ও পোকা-মাকড় খেয়েই এরা বেড়ে ওঠে। সাধারণত খাসি মোরগের ওজন ৩ থেকে ৪ কেজি হয়ে থাকে। মুরগি বছরে শতাধিক ডিম দেয়, দেশি জাতের মুরগি যেখানে প্রায় ১০০টি ডিম দেয়, সেখানে বিদেশি জাতের মুরগি ২৫০ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত ডিম দিতে পারে।

সম্প্রতি হাঁস-মুরগির খামার স্থাপনের প্রবণতা বেড়েছে। তবে পালনের সঠিক পদ্ধতি জানা না থাকলে বিশেষ করে বিদেশি জাতের ক্ষেত্রে হঠাৎ রোগে সব পাখি মারা যেতে পারে। এদের রাণীক্ষেত, বসন্ত ও ডিপথেরিয়া ইত্যাদি রোগ হতে পারে। দেশি জাতের মুরগি ডিমে তা দিয়ে একসাথে প্রায় ২০টি বাচ্চা ফোটাতে পারে। এছাড়া আধুনিক ‘হ্যাচারি’ যন্ত্রের সাহায্যে ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করাও সম্ভব।

হাঁস : জলাভূমিতে হাঁস পালন করা যায় সহজে। এগুলো সারাদিন খালে-বিলে, নদীতে কিংবা পুকুরে সাঁতার কাটে। এরা ডুব দিয়ে শামুক, গুগলি, ছোট মাছ ইত্যাদি ধরে খায়। এরা দলবদ্ধ হয়ে থাকতে ও চলতে ভালবাসে। নদীর জলে মনের খেয়ালে এরা বহুদূর চলে যেতে পারে। সেজন্য বারবার ডেকে ডেকে খুদ, কুড়া ইত্যাদি দিয়ে আসতে হয়। দেশি জাতের হাঁস প্রায় তিন কেজি থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি মাদী হাঁস বছরে দু’আড়াই শ’ ডিম দেয়। বিদেশি জাতের হাঁস আকারে-প্রকারে বড় ও ভারি এবং ডিমও দেয় বেশি। এদেরও নানারোগ হয় এবং একসঙ্গে মরে যায়। তাই সুচিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা চাই। 

কবুতর : বাংলাদেশে ঘরের চালের ঠিক নিচেই কিংবা দালানের আলিশায় ছোট ছোট কাঠের ঘর বানিয়ে কবুতর পোষা হয়। বড় অভিমানী ও তেজী জাতের পাখি কবুতর। জোড়া ছাড়া থাকে না। প্রাচীনকালে কবুতরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চিঠিপত্র গলায় কিংবা পায়ে বেঁধে দিয়ে দূরদেশে পাঠানো হত। 

স্বভাব ও স্বরূপ : গৃহপালিত পাখি হাঁস-মুরগির সাধারণ স্বভাব পোষ মানা। এদের পাখা থাকলেও উড়তে উড়তে দূরে যেতে পারে না। খাঁচার জীবনে এরা খুবই অভ্যস্ত। বনের পাখির সাথে এদের কোনরূপ সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তবে কবুতর একটু ভিন্ন প্রকৃতির। সুযোগ পেলেই কবুতর উড়ে চলে যায়। 

উপসংহার : ময়না, টিয়া, তোতা ও ময়ুরকে গৃহপালিত পাখি বলা চলে না, কারণ এরা খাঁচার মধ্যে পুরোপুরি অভ্যস্ত নয়। সাধারণত গান, ডাকাডাকি শোনা বা বর্ষাকালে নাচ দেখার জন্য অনেকে শখ করে এদের পোষে। ময়ূরের পাখা কেটে কিছুটা অর্থ উপার্জন করা গেলেও ময়না, টিয়া ও তোতা পাখির কোনো উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক মূল্য নেই—না এদের ডিম খাওয়া যায়, না মাংস। সুতরাং, গৃহসম্পদ হিসেবে সত্যিকার অর্থেই হাঁস-মুরগি ও কবুতরই দীর্ঘদিন ধরে মানুষের বিশ্বস্ত ও কার্যকর গৃহপালিত পাখি হিসেবে বিবেচিত।


আপনারা আরও সুন্দর ও সহজ রচনা পড়তে আমার ওয়েবসাইট StudyTika.com-এ আসতে পারেন। আরও অনেক রচনা আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.