বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

এই ব্লগপোস্টে আছে একটি সুন্দর রচনা — “বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ রচনা”। Class 7, 8, 9, 10, SSC আর HSC শিক্ষার্থীদের জন্য একদম সহজ ভাষায় লেখা। রচনাটি পড়ে শেষ পর্যন্ত উপভোগ করুন।

 বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ রচনা 

ভূমিকা : বন্য পরিবেশে বন্যপ্রাণীরা তাদের প্রকৃত সৌন্দর্য বিকাশ করতে পারে, আর বন্যপ্রাণী ছাড়া বনের পূর্ণতা ও সৌন্দর্য অসম্ভব। কিন্তু কাণ্ডজ্ঞানহীন কিছু মানুষ সংকীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির জন্য অরণ্যনিধনে লিপ্ত হয়েছে। অরণ্যের পরিমাণ যত কমছে, ততই বন্যপ্রাণীরা তাদের স্বাভাবিক বিচরণের স্থান হারাচ্ছে। ফলে বন্যপ্রাণীরা শুধু বসবাসের স্থান হারাচ্ছে না, নির্বিচারে শিকার ও নিধনের কারণে অনেক প্রজাতি অবলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। অথচ মানবজাতির টিকে থাকার জন্য বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ অপরিহার্য।

বন ও বন্যপ্রাণীর সম্পর্ক : যে প্রাণী সাধারণত গৃহে পালন করা হয় না, কিন্তু অরণ্যে বা বনে স্বাধীনভাবে বিচরণ করে তাদের বন্যপ্রাণী বলে। বন ও বন্যপ্রাণীর সম্পর্ক অচ্ছেদ্য। একটির আলোচনা করতে গেলে স্বাভাবিকভাবে অপরটি এসে পড়ে। বন ছাড়া বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব নয়। আবার বন্যপ্রাণী ছাড়াও বনের সৌন্দর্যের পূর্ণতা সম্ভব নয়। তাই বন ও বন্যপ্রাণী উভয়ের অস্তিত্ব রক্ষা জরুরি।

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী : বাংলাদেশের প্রকৃতির কোলে যে প্রাণীরা স্বাধীনভাবে বিচরণ করে তাদের এদেশের বন্যপ্রাণী বলা যায়। তারা অরণ্যের শ্যামল ছায়ায় জন্মায় এবং অরণ্যের স্নেহে প্রবর্ধিত হয়। আমাদের দেশে পার্বত্য অঞ্চল ও সুন্দরবন প্রাণীদের স্বাধীন বিচরণ ভূমি | পার্বত্য অঞ্চলের প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে- হাতি, চিতাবাঘ, নেকড়ে বাঘ। আর সুন্দরবনের রয়াল বেঙ্গল টাইগার বিশ্ববিখ্যাত এবং সুখ-দর্শন হরিণ সুন্দরবনের সৌন্দর্য। তাছাড়া হায়না, চিতাবাঘ, নেকড়ে বাঘ, ওলবাঘ, শিয়াল, শূকর প্রভৃতি প্রাণী। সুন্দরবনের গাছে গাছে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। নদীতে কুমির ও মাছসহ সহস্র জলজপ্রাণী। তবে সুন্দরবনে একসময় গভার পাওয়া যেত। এখন আর দেখা যায় না। অনেক প্রাণীই আমাদের দেশ থেকে অবলুপ্তি হয়ে গেছে।

বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির কারণ : বর্তমানে প্রযুক্তিবিদ্যার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। মানুষের সংখ্যা বেড়েছে এবং নগর-সভ্যতার বিস্তার হয়েছে। চারদিকে ছোট-বড় অনেক কলকারখানা গড়ে উঠেছে। নতুন নতুন শিল্পনগরী গড়ে উঠেছে। মানুষের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে বন কেটে বসতি স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে ঘন অরণ্য অনেকটাই লোপ পেয়েছে। সুন্দরবনের অনেক সাধারণ বনভূমিও হারিয়ে গেছে। সুন্দরবন আজও মানুষের অবৈধ কার্যক্রমের কারণে অরণ্য সম্পদের লুণ্ঠন ও প্রাণী নিধনের স্থান হয়ে উঠেছে। এ কারণে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নীতি : বন্যপ্রাণী বিলুপ্তিতে প্রকৃতির ভারসাম্য নীতিতে আজ বিপর্যয়ের অশুভ ছায়াপাত মানব সভ্যতার সামনে আজ এক মহাসংকট। তাই বিশ্বের সর্বত্র বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জর্জ ক্যাটলিন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আন্দোলনে পথিকৃৎ। ইনি মার্কিন শিল্পী ও লেখক। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণার্থে জাতীয় উদ্যান ন্যাশনাল পার্ক গড়ে তোলার প্রথম প্রস্তাবক হলেন তিনি। তারপর এই আন্দোলনের ঢেউ গিয়ে প্রতিহত হয় আর্জেন্টিনায় অস্ট্রেলিয়ায় ও বিশ্বের বহু দেশে। কেননা বন্যপ্রাণী প্রকৃতির। ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা পালন করে। প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণীর সঙ্গে প্রতিটি প্রাণীর শৃঙ্খল বন্ধন। সেজন্যই সর্বত্র গৃহীত হয়েছে প্রাণী সংরক্ষণ নীতি। প্রাণী সংরক্ষণের নীতি বাস্তবায়নের ফলে অনেক প্রাণী বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অভয়ারণ্য।

বন সংরক্ষণ : আগেই বলা হয়েছে, বন ও বন্যপ্রাণীর সম্পর্ক অচ্ছেদ্য। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রথম এবং প্রধান উপায় হলো বন সংরক্ষণ। বন যেমন বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষা করে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাছপালা প্রস্বেদন প্রক্রিয়া ও বাষ্পীয়ভাবে আবহাওয়া বিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য করে। তাই বনভূমি রক্ষায় প্রয়োজন অরণ্যের অবাধ ও যথেচ্ছ উচ্ছেদ রোধ করা, নতুন চারা গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করা, অপরিণত গাছ কাটা থেকে বিরত থাকা এবং বনভূমি থেকে কাঠের অবৈধ চোরাচালান বন্ধ করা। পাহাড়ের ঢাল, সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল, নদীর তীর ও সড়কের দুপাশে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কৃত্রিম বনায়নের জন্য বিদেশি বা আগ্রাসী প্রজাতির গাছের পরিবর্তে দেশীয় অর্থকরী বৃক্ষরোপণ করতে হবে। এছাড়া সরকারকে বন গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

উপসংহার : পৃথিবীতে প্রাণী ও উদ্ভিদ মিলিয়ে ১৫ লক্ষ প্রজাতির পরিচয় মানুষের জানা। বিজ্ঞানীদের অনুমেয় জানা-অজানা মিলিয়ে প্রজাতির সংখ্যা এক কোটি অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশের অরণ্যভূমিতে এখনও বাস করে প্রায় ২০০০ প্রজাতির পাখি, ৩৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩০ হাজার প্রজাতির পোকামাকড়, প্রায় ৫০০ প্রজাতির উভচর প্রাণী, সরীসৃপ ও মাছ। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, তাদের মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ব্যবস্থা হয়েছে। অবশিষ্ট অংশ মানুষের যথেচ্ছ শিকারের বলি হচ্ছে। বনজ প্রাণী ও সম্পদ নিয়ে মানুষের শুভবোধের জাগরণ অত্যপ্ত জরুরি। এ দায়িত্ব নিতে হবে সরকারি ও বেসরকারি শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষকে।

এই ছিল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ রচনা। আপনি যদি আরও রচনা পড়তে চান, তাহলে অবশ্যই ঘুরে আসুন আমার ওয়েবসাইটে — StudyTika.com। এখানে পাবেন আরও অনেক সহজ ও সুন্দর রচনা।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.