নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

এই ব্লগপোস্টে “নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা” নিয়ে একটি সুন্দর ও সহজ ভাষার রচনা দেওয়া হয়েছে। আশা করি, আপনি পুরো রচনাটি পড়ে উপকার পাবেন।

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা রচনা ১

ভূমিকা :

শিক্ষাই জাতির মেরাদণ্ড এবং নিরক্ষরতা দুর্ভাগ্যের প্রসূতিস্বরূপ।

শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীতে শিক্ষা বা জ্ঞানই একমাত্র সম্পদ যা জীবনের মতো মহামূল্যবান। এ থেকেই অনুমান করা যায়, নিরক্ষরতা যেকোনো জাতির জন্য কতটা হুমকিস্বরূপ। নিরক্ষরতা প্রতিটি জাতির জন্যই অভিশাপ। মেরুদণ্ডহীন ব্যক্তি যেমন অন্যের গলগ্রহ হয়ে জীবনযাপন করে, নিরক্ষর ব্যক্তিকেও সমাজে তাই করতে হয়। নিরক্ষর ব্যক্তি অন্ধের সমান। অন্ধের মতোই তাকে অগ্রসর হতে হয়। তাই কোনো জাতির কাছেই নিরক্ষরতা কাম্য নয়। শিক্ষাই আলো- নিরক্ষরতা অন্ধকার। নিরক্ষরতার অন্ধকার ব্যক্তিজীবনকে আচ্ছন্ন করে রাখে, জীবনের বিকাশের কোনো পথ সেখানে নেই। প্রাণহীন জীবনের যেমন কোনো মূল্য থাকে না, তেমনি শিক্ষা ছাড়া জীবনের কোনো মূল্য নেই। তাই প্রতিটি মানুষকে নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশে নরক্ষরতার অবস্থা : বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (স.) শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে গভীরভাবে অবহিত করেছেন। তিনি এমনকি জ্ঞানার্জনের জন্য সুদূর চীনদেশে যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন। এই জ্ঞানার্জনের প্রধান মাধ্যমই হলো শিক্ষা। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে শিক্ষা। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের মানুষের জীবনে চরম দারিদ্র্য ও পশ্চাৎপদতার অন্যতম কারণ হলো ব্যাপক নিরক্ষরতা। বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও শোচনীয়—এখানে নিরক্ষরতার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। দেশের প্রায় ১৪ কোটির বেশি মানুষের মধ্যে মাত্র ৬৩ ভাগ তথাকথিত শিক্ষিত, যাদের অক্ষরজ্ঞান থাকলেও প্রকৃত শিক্ষার অভাব রয়েছে। ফলে প্রকৃত শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা অত্যন্ত কম। অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী শুধু নিজেদের এবং পরিবারের জীবনেই দুর্ভোগ বয়ে আনছে না, বরং সমগ্র জাতির জন্য একটি ভয়ংকর বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরক্ষরতার ফলে দেশের অর্থনীতি আজও পেছনে পড়ে আছে, উন্নয়নের গতিধারাও অনেকটা স্তব্ধ। মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে একটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের স্বাদ থেকে। “জ্ঞানই শক্তি”—এই সত্য আজ প্রমাণিত হলেও আমাদের সমাজে এখনো সেই শক্তিকে গ্রহণের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়নি। পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে এলেও আমরা আমাদের ভাগ্যোন্নয়নে সঠিক পথে এগোতে পারিনি। বরং শোষণ ও অবহেলার শিকার হয়ে জাতি আজ নেমে এসেছে অন্ধকারের অতলে। যুগে যুগে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হলেও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে বাংলাদেশ এখনো নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়নি।

নিরক্ষরতা দূরীকরণের প্রয়োজনীয়তা : নিরক্ষরতার অভিশাপ মাথায় নিয়ে কোনো জাতি উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। নিরক্ষরতা ব্যক্তিজীবনকে যেমন পঙ্গু করে, দেশ ও জাতিকেও তেমনি নিমজ্জিত করে অবনতির অন্ধকারে। তাই আমাদের জাতীয় জীবন থেকে এই নির্মম অভিশাপ দূর করতে হবে বিশ্বের বহু দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও একসময় নিরক্ষরতার অভিশাপ ছিল। ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টার সাহায্যে তারা তাদের জাতীয় জীবন থেকে এ নিরক্ষরতার দুঃখ দূর করতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের জীবনে অবহেলার জন্য এ সমস্যা এখনো প্রকট। অবশ্য নিরক্ষরতা দূরীকরণ খুব সহজ কাজ নয় এবং তাতে সমগ্র জাতি অংশগ্রহণ না করলে এর রাহুগ্রাস থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না। তাই এমন কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা বা ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, যার কার্যকারিতায় আমাদের জীবন থেকে নিরক্ষরতার অভিশাপ দূর করা যায়। ইউরোপ ও আরমেরিকার অধিকাংশ দেশেই শিক্ষার হার শতকরা শতভাগে উন্নীত হয়েছে। তাই তাদের দেশ হয়েছে এতটা উন্নত। আমরাও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে পারি। তা না হলে জাতি হিসেবে আমরা কখনোই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব না। নিরক্ষরমুক্ত হলেই আমাদের দেশ উন্নত হবে। কাজেই নিরক্ষরতা দূরীকরণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

নিরক্ষরতা দূরীকরণে গৃহীত পদক্ষেপ : বাংলাদেশের মানুষ শুরু থেকেই সংগ্রামী। ১৯৭১ সালে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে তারা অর্জন করে স্বাধীনতা। স্বাধীন দেশকে উন্নত ও শক্তিশালী করতে হলে শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলা অপরিহার্য। এই উদ্দেশ্যে বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়েছে। নিরক্ষরতা দূর করতে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কার্যকর উদ্যোগ। স্বাধীনতার আলো আমাদের জাতীয় জীবনে নতুন চেতনার সঞ্চার করেছে, যার ফলেই আমরা আত্মসচেতন হয়েছি এবং জাতিকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এই প্রক্রিয়ায় ১৯৮০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নিরক্ষরতা দূরীকরণ অভিযান শুরু হয়, যাকে জাতীয় জীবনের দ্বিতীয় বিপ্লব বলা যায়। লক্ষ্য ছিল ১৯৮৫ সালের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করা। সে লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে ২০০০ সালের মধ্যে সর্বজনীন শিক্ষা নিশ্চিত ও নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে গণশিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষা অন্যতম। মেয়েদের শিক্ষায় আগ্রহ বাড়াতে ধাপে ধাপে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করা হয়েছে। এই সব উদ্যোগ ইতোমধ্যে ইতিবাচক ফলাফল এনেছে। জাতিকে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে আরও বহু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে নতুন করে সরকারি পর্যায়ে নিরক্ষরতা দূরীকরণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, যা আমাদের আশাবাদী করে তুলছে। যদিও ২০০৬ সালের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জিত হয়নি, তবুও এতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

বয়স্ক শিক্ষা চালু : আমাদের অনেকেরই ধারণা শিক্ষার একটা নির্দিষ্ট বয়স আছে, আর তা হলো শৈশবকাল। এ সময় পার হলে শিক্ষা গ্রহণ করা যায় না। কিন্তু এ ধারণা যে ঠিক নয়, তা আজ নানাভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আজ থেকে চৌদ্দ শ বছর আগে বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছিলেন ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষার সময়।’ তাই আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, শিক্ষার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। সব সময়ই শিক্ষা গ্রহণ করা যায়। তবে শিক্ষার একটা পর্যায়কে ধরে রাখতে হলে অবশ্যই শৈশবকাল থেকে শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত। কিন্তু যারা শৈশবে শিক্ষাগ্রহণ করে নি এবং বয়স্ক, তাদেরকে যে নিরক্ষরতার হাত থেকে মুক্ত করা যাবে না- তা নয়। তবে তাদের আগ্রহ থাকতে হবে। এই বয়স্কদের নিরক্ষরমুক্ত করার জন্যই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের বয়স্ক লোকেরা নিজের বেলায় কাজকর্ম সেরে রাতের বেলায় এসব কেন্দ্রে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এলাকার শিক্ষিত লোকদের সহযোগিতায় এ কার্যক্রম নিরক্ষরতা দূরীকরণের ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনতে পারে।

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা : ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ। যুগে যুগে তারা দেশের জন্য, জাতির জন্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সফলতা এনেছে। আমাদের জাতীয় জীবনে আজ নানা সমস্যা বিরাজমান। তার মধ্যে নিরক্ষরতা একটি ভয়াবহ জটিল সমস্যা। এ সমস্যার কারণে দেশ এবং জাতি আজ মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। শিক্ষা ছাড়া যেকোনো কাজ ভালোভাবে করা যায় না। মাঠে যে কৃষক কাজ করে তারও লেখাপড়া জানা দরকার। বাংলাদেশকে নিরক্ষরমুক্ত করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা যাতে সরাসরি নিরক্ষরতা দূরীকরণের কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে সে জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের ছাত্রসমাজ জাতির উন্নয়ন কাজে একটি উপযোগী মাধ্যম হতে পারে। ছাত্রদের লেখাপড়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। তবে সারাক্ষণ তারা লেখাপড়ায় মগ্ন থাকে না। তাদের অবসর সময় নিয়ে যদি এমন কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়, যেখানে তাদের নিরক্ষরতা দুরীকরণের কাজে লাগানো যাবে, তাহলে দেশের এই ভয়াবহ সমস্যা দূর করা তেমন কঠিন হবে না। আর যদি ব্যাপকভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে দেশের এই সমস্যা দূরীকরণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা বিশেষভাবে স্বীকৃতি পাবে।

ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে কিছু অবসর সময় থাকে। এই অবসরটুকু যদি নিরক্ষরদের লেখাপড়ার জন্য ব্যয় হয় তবে বেশ বড় কাজ হতে পারে। প্রত্যেক বাড়িতেই কিছু নিরক্ষর লোক থাকে। নিজের পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বা ফাঁকে ফাঁকে তাদের লেখাপড়া শেখানো যায়। পাড়াপ্রতিবেশীদের মধ্যে অনেকেরই লেখাপড়া জানা নেই। পাড়ার ছাত্ররা যদি মিলিতভাবে লেখাপড়া শেখানোর কাজে লাগে, তবে খুব কম সময়ে সবাইকে শিক্ষিত করে তোলা যাবে।

বিভিন্ন সমাজসেবামূলক সংগঠন জাতীয় জীবনে নিরক্ষরতার অভিশাপ দূর করতে নানা কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে, আর এসব কার্যক্রমে ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণও লক্ষ্য করা যায়। তবে এই অংশগ্রহণ আরও ব্যাপক ও ফলপ্রসূ হওয়া উচিত। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—তাদের ছুটির দিনগুলো। সাপ্তাহিক ছুটির পাশাপাশি রয়েছে গ্রীষ্মকালীন, রমজানের ও শীতকালীন ছুটি, যা তারা সমাজের কল্যাণে কাজে লাগাতে পারে। এই সময়গুলোতে তারা নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পারে। বর্তমানে দেশে অনেক গণশিক্ষা কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। ছুটির দিনে ছাত্ররা যদি এসব কেন্দ্রে সক্রিয়ভাবে কাজ করে, তবে অচিরেই আমাদের জাতীয় জীবনে নিরক্ষরতার অভিশাপ চিরতরে দূর করা সম্ভব হবে।

উপসংহার : নিরক্ষরতার মতো এত বড় অভিশাপ আর নেই। আমাদের জাতীয় জীবন থেকে এই অভিশাপ দূর করতে হলে সুপরিকল্পিতভাবে ছাত্রসমাজকে কাজে লাগাতে হবে। ছাত্ররাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। তাদের মধ্যে যদি আগ্রহ সৃষ্টি করা যায়, তবে যেকোনো সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব।

নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা রচনা ২

ভূমিকা : 

‘অজ্ঞান, অন্ধকারে ওত পেতে থাকে মহাপাপ, 
নিরক্ষরতা তাই জাতির জীবনে এক অভিশাপ।’

অক্ষরজ্ঞান যার নেই, সেই তাে নিরক্ষর। সে তাে চোখ থাকতেও অন্ধ। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন—“মানুষের অন্ধত্বের মতাে নিরক্ষরতা এই দুর্ভাগা দেশের হতভাগ্য জনগণের সর্বাপেক্ষা নিষ্ঠুরতম অভিশাপ।” সমস্যাসংকুল ভারতবর্ষে এই সমস্যা অভিশাপের মতাে চেপে বসেছে। তাই, নিরক্ষরতা দূরীকরণে সকলের সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে ছাত্রসমাজকে।

নিরক্ষরতার পিছনে স্বার্থবাদী মানুষ: সমাজের এক শ্রেণির স্বার্থপর মানুষের চক্রান্তে যুগ যুগ ধরে জনগণ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। দীর্ঘকাল অশিক্ষার অন্ধকারে থাকতে থাকতে এরা মানুষের পরিচয় হারিয়ে ভারবাহী পশুতে রূপান্তরিত হয়েছে। এরা জানে না, সমাজে তাদেরও বেঁচে থাকার সমান অধিকার বর্তমান। বড়াে দুঃখে কবি বলেছেন—“ওই সব মূঢ় ম্লান মূক মুখে দিতে হবে ভাষা।” নিরক্ষরতার অন্ধকারে ডুবে থাকা শােষিত মানুষের নিদারুণ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে কবি এ কথা বলেছেন। 

স্বাধীন ভারতে নিরক্ষরতার স্বরুপ : দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় অর্ধশতাব্দী কাল। জনসংখ্যার দিক থেকে আমরা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। তবু ভারতে আজ প্রায় ১১০ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ৪০ কোটি মানুষ এখনও অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অনেক বেড়েছে, কিন্তু সে তুলনায় সাক্ষর মানুষের সংখ্যা বাড়েনি। ফলে গণতন্ত্রের ভিত সুদৃঢ় হয়নি। পরাধীনতার অবসানে আমাদের দুয়ারে পশ্চিমের গণতন্ত্রের রথ ভিড়লেও, সে নবযুগের রথকে মূঢ়, নিরক্ষর, অন্ধ জনগণ অন্যের নির্দেশে টেনে নিয়ে চলেছে।

সাক্ষরতার প্রয়ােজনীয়তা: গণতন্ত্রের সাফল্যের প্রয়ােজনে দেশব্যাপী নিরক্ষরতা দূরীকরণ আবশ্যক। নবযুগ এসেছে। চিন্তাভাবনায় বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটেছে। অথচ কৃষিপ্রধান আমাদের দেশের কৃষকরা নিরক্ষরতার জ্ঞানহীন আঁধারে বসে মান্ধাতা আমলের পদ্ধতিকে অবলম্বন করে চলেছে। তাদের নানা পদ্ধতি, তথ্য সম্পর্কে অবহিত করতে হলে ‘সাক্ষরতার জিয়নকাঠি স্পর্শ ছাড়া আর কোনাে জাদুমন্ত্র নেই। 

সাক্ষরতার প্রথম ধাপ : নিরক্ষরতার অন্ধকার দূর করতে হলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, উচ্চ-নীচ নির্বিশেষে সকলের মধ্যে শিক্ষার আলাে ছড়িয়ে দিতে হবে। এজন্য চাই গণশিক্ষা, সর্বজনীন শিক্ষা। প্রথম কথা অক্ষরজ্ঞান, রবীন্দ্রনাথের কথায়—“লেখাপড়া শেখাই সেই রাস্তা।” দেশের সকল নিরক্ষরকে সাক্ষর করার জন্য বিভিন্ন স্থানে নৈশ বিদ্যালয়, বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র, পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, পাঠ্যবই বিতরণ ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

নিরক্ষরতা এবং ছাত্রদের দায়িত্ব ও দিকনির্দেশনা: দেশের সামাজিক সংকট দূরীকরণে ছাত্রসমাজ সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সমাজকে নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে মুক্ত করতে ছাত্ররাই সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তারা তাদের অবসর সময় কাজে লাগিয়ে নিজের পরিবার, প্রতিবেশী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাক্ষরতার আলো ছড়িয়ে দিতে পারে। এজন্য তারা বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে পারে। পাশাপাশি, টেলিভিশন, রেডিওসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের সহায়তাও নিতে পারে। সরকার যদি সাক্ষরতা কার্যক্রমকে শিক্ষাক্রমের অংশ করে, তবে দেশের প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী এই মহৎ উদ্যোগের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে পারবে।

উপসংহার: সমাজকে নিরক্ষরমুক্ত করার মহান কর্মযজ্ঞে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে সকল শিক্ষিত মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে এবং সকলকেই যােগ দিতে হবে সাক্ষরতা আন্দোলনে। এজন্য ছাত্রসমাজ থেকে শুরু করে দেশের সকলকেই দায়িত্ব নিতে হবে আর বলতে হবে–“নিরক্ষর মানুষের হাতে ধরিয়ে দাও বই, সেই হবে তার জীবনযুদ্ধের হাতিয়ার।”

 এই রচনাটি পড়ে যদি ভালো লাগে, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট StudyTika.com এ আরও অনেক সহজ ভাষার রচনা রয়েছে—অবশ্যই দেখে আসবেন।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.