ভাবসম্প্রসারণঃ যে সহে সে রহে [Class 6 7 8 9 10 ‍SSC HSC]

 ভূমিকা এই ব্লগপোস্টে রয়েছে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ভাবসম্প্রসারণ — "যে সহে সে রহে"। ছোট হলেও এই ভাবসম্প্রসারণটি আমাদের জীবনের জন্য অনেক বড় শিক্ষা দেয়। চলুন, সহজ ভাষায় সুন্দরভাবে এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নিই।

ভাবসম্প্রসারণঃ যে সহে সে রহে [Class 6 7 8 9 10 ‍SSC HSC]

যে সহে সে রহে 

মূলভাব : যারা সহিষ্ণু ও ধৈর্যশীল তারাই কেবল এ জগৎ সংসারে সফলকামী হতে পারে। 

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের জীবন শুরু হয় দুঃখ ও কষ্টের মাঝ দিয়ে। জীবনের পথচলায় তাকে অনেক প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে লড়াই করতে হয়—শীত-তাপ, রোগ-শোক, দারিদ্র্য ও নানা বিপদ। এসব জয় করতে হলে প্রয়োজন হয় শক্তি, অধ্যবসায় ও সহিষ্ণুতা। প্রকৃত মানুষ সে-ই, যে এই কষ্টগুলো ধৈর্যের সঙ্গে সহ্য করে এগিয়ে যেতে পারে। জীবনে জয়-পরাজয় থাকবেই, কিন্তু যে পরাজয় মেনে নিয়ে আবার নতুন করে চেষ্টা করে এবং সফল হয়, সেই হয় সত্যিকারের বীর। সহিষ্ণুতা হচ্ছে সকল শক্তির মূল ভিত্তি। স্কটল্যান্ডের বীর রবার্ট ব্রুস বারবার পরাজিত হয়েও ধৈর্য হারাননি—শেষ পর্যন্ত তিনি দেশ জয় করেছিলেন। তাই জীবনে বড় হতে হলে সহিষ্ণু হতে হয়। যে ধৈর্য ধরতে জানে না, সে বড় কিছু করতে পারে না। ধৈর্য আর ত্যাগই মানুষের জীবনে সাফল্য ও শান্তি এনে দেয়।
আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে
আসে নাই কেহ অবণী পরে,
সকলের তরে সকলে আমরা
প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

এ উপলব্ধিকে জগতে ধারণ করেছেন বিভিন্ন ধর্মের মহান পুরুষরা। হযরত মহাম্মদ (স.), যীশু খ্রিস্ট, বুদ্ধদেব প্রমুখ ধর্ম প্রবক্তারা এ উপলব্ধিকেই লালন করেছেন এবং লালন করতে বলেছেন তাঁদের অনুসারীদের। মানুষের সব সৃষ্টিকর্ম ও সম্পদ বৃহৎ জগতের কাছে নিয়োজিত করতে পারলেই সেগুলো স্বার্থক হয়। মানুষের জীবনও সফলতায় ভরে উঠে।

এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো

মানুষের মতো বাঁচতে হলে বা আপনার অস্তিত্ব বজায় রাখতে হলে এবং জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন সহনশীলতা। প্রকৃতিবিজ্ঞানী ডারউইন-এর তত্ত্ব Survival of the fitter অনুযায়ী পৃথিবীতে যোগ্যরাই বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাই বিশ্ব সংসারে সহ্য করার শক্তি ও যোগ্যতা যার আছে সেই কেবল বেঁচে থাকার অধিকারী।

সহনশীলতা মানব জীবনের অন্যতম সাম্যনীতি। পৃথিবীতে অবিমিশ্র সুখ-দুঃখ বলে কিছু নেই। সুখ-দুঃখ আসলে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বিপদাপদের মধ্য দিয়েই মানুষের যাত্রা শুরু হয়। তাকে সংগ্রাম করতে হয় নানা প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে। রোগ, শোক, দুঃখ-দারিদ্র্য, অন্যায়-অবিচার এসবের চাপে মানব পর্যুদস্ত হয়। চোখে বিভীষিকা দেখে। কিন্তু এসব প্রতিরোধ করার জন্য চাই শক্তি, অধ্যবসায় ও সহিষ্ণুতা। যুদ্ধে জয়-পরাজয় আছেই কিন্তু যে মানুষ পরাজয়কে অম্লান বদনে মাথা পেতে নিয়ে পরবর্তী বিজয়ের জন্য ব্রতী হয় এবং বিজয় অর্জন করতে পারে, সেই যথার্থ বীর।

ইতিহাসের পাতায় এরূপ বহু দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায়। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ড-এর সাথে ছয়বার যুদ্ধে পরাস্ত হয়েও ধৈর্য ধারণ করেছিলেন এবং সহিষ্ণুতার গুণে পুনরায় যুদ্ধ করে সপ্তমবারের প্রচেষ্টায় শত্রুর কবল থেকে স্বদেশ উদ্ধার করেন। দারিদ্রের ঘরে জন্মগ্রহণ করেও একমাত্র ধৈর্য সহিষ্ণুতার কারণে জন ব্রিটন ল্যান্ডেন, স্যামুয়েল হয়েছিলেন জগৎ বিখ্যাত। রুটিওয়ালার ছেলে জন ব্রিটন প্রসিদ্ধ সাহিত্যিকরূপে জীবনে মোট ৮৭টি গ্রন্থ রচনা করে গেছেন। ল্যান্ডেন ছিলেন কৃষকের ছেলে আর স্যামুয়েল মুচির ছেলে। বিদ্রোহী কবি নজরুল আজীবন দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন; সহ্য করেছেন দারিদ্র্যের কষাঘাত। তাঁর সহনশীলতাই তাঁর প্রতিভাকে বিকশিত করেছে। যীশু খ্রিস্টকে যখন ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, তখনও তিনি কারও প্রতি রাগ প্রকাশ করেননি। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনও সহনশীলতার উজ্জ্বল উদাহরণ। মক্কা বিজয়ের সময় তিনি শত্রুদের প্রতিশোধ না নিয়ে তাদেরকে নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমরা সবাই মুক্ত, স্বাধীন।’ তাঁর এই মহানুভব আচরণে অনেকেই মুগ্ধ হয়েছিলেন। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ম্যূর বিস্ময়ভরে বলেছিলেন, ‘যারা তাঁকে এতদিন ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যান করেছে, সেই লোকদের প্রতি মুহাম্মদের উদারতা সত্যিই প্রশংসনীয়।

উপসংহার আশা করি, আপনি "যে সহে সে রহে" ভাবসম্প্রসারণটি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। আরও এমন সহজ ও সুন্দর ভাবসম্প্রসারণ পড়তে চাইলে ঘুরে আসুন আমাদের ওয়েবসাইট — StudyTika.com। এখানে ক্লাস ৬ থেকে এইচএসসি পর্যন্ত সব ভাবসম্প্রসারণ একসাথে পাবেন।

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.