এই পোস্টে রয়েছে একটি চমৎকার ভাবসম্প্রসারণ — “দুঃখ যে পাপের ফল তাহা কে বলিল, পুণ্যের ফলও হইতে পারে...”। সহজ ভাষায় লেখা এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়লে মন ছুঁয়ে যাবে। পুরোটা পড়লেই এর সৌন্দর্য বোঝা যাবে।
তাই আজ প্রকৃতির উপর আধিপত্য নয়,মানুষ গড়ে তুলতে চাইছে প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্বন্ধ
ভাব-সম্প্রসারণ : মানুষের অস্তিত্ব প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে মানুষ যে নিজের ধ্বংস ডেকে আনছে। মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে যে, প্রকৃতির সঙ্গে শত্রুতা করে নয় তার সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তুলেই মানব-অস্তিত্বকে রক্ষা করতে হবে।
মানুষ প্রকৃতির সন্তান। একসময় প্রকৃতির কোলেই তার জন্ম। কিন্তু কাল পরিক্রমায় সংগ্রামশীল মানুষ একসময় প্রকৃতিকে নিয়ে এসেছে তার হাতের মুঠোয়। জয় করেছে সাগর, মাটি, আকাশ এমনকি মহাশূন্যও। প্রকৃতিকে ইচ্ছে মতো ব্যবহার ও পরিবর্তন করে সে গড়ে তুলেছে মানব সভ্যতা। এ জন্যে সে পাহাড়কে কেটে করেছে সমতল ভূমি, জলাভূমিকে করেছে ভরাট, বন উজাড় করে গড়েছে বসত, নদীর গতিপথকে নিয়ন্ত্রণ করেছে বাঁধ দিয়ে। জগতে প্রতিটি কাজেরই এক ধরনের প্রতিক্রিয়া রয়েছে। মানুষ যখন নিজের স্বার্থে প্রকৃতির সম্পদকে সীমাহীনভাবে ব্যবহার করতে শুরু করে, তখন নষ্ট হয়ে যায় প্রকৃতির ভারসাম্য। দূষিত হয় বায়ু, পানি ও মাটি। আজ মানুষের নিজের কাজের জন্যই মানব সভ্যতা হুমকির মুখে পড়েছে। এই সংকট এখন শুধু কোনো একটি দেশের নয়, বরং সারা পৃথিবীর। তবে আশার কথা হলো, মানুষ এখন এই সংকট সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। মানুষ বুঝতে পেরেছে যে, প্রকৃতির ওপর দখল প্রতিষ্ঠা করে ও তা নির্বিচারে ব্যবহার করলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হতে হবে। তাই মানুষ এখন প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়তে চায়। বন ধ্বংস না করে এখন মানুষ বন তৈরি করছে। প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করছে। বিশ্বব্যাপী এখন মানুষ সচেতনভাবে প্রকৃতিকে ঠিকভাবে ব্যবহারের পথ খুঁজছে, যাতে প্রকৃতি ও মানুষ একসঙ্গে টিকে থাকতে পারে।
বস্তুত, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে হলে চাই প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা এবং তার পরিবেশ-সহায়ক ব্যবহার।
বিকল্প ১
ভাব-সম্প্রসারণ : প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে সহযোগিতা করে তা থেকে উপকৃত হতে হবে।
পরিবেশ মানবসভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সভ্যতার ক্রমবিকাশ থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে তার পরিবেশ। মানুষের রচিত পরিবেশ তারই সভ্যতার বিবর্তন ফসল। পরিবেশই প্রাণের ধারক, জীবনীশক্তির যোগানদার। যুগে যুগে পরিবেশ বা পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে প্রাণীর মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার ওপরেও তার অস্তিত্ব নির্ভরশীল। পরিবেশ প্রতিকূল হলে তার ধ্বংস ও সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী। পরিবেশের বিরুদ্ধতা বেঁচে থাকার পথকে অবলীলাক্রমে রুদ্ধ করে। পরিবেশের ওপর সম্পৃক্ত হয়ে মানুষ, অন্যান্য উদ্ভিদ ও প্রাণী-জীবনের বিকাশ ঘটে। তাই পরিবেশ ও মানুষের মধ্যে রয়েছে এক নিবিড় যোগসূত্র। মানুষ একদিন প্রকৃতিকে জয় করার নেশায় মেতেছিল। প্রকৃতিকে জয় করেও মানুষের সেই নেশার অবসান হল না।বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষ জলে, স্থলে ও আকাশে আধিপত্য বিস্তার করেছে। কিন্তু এই বিজয় মানুষকে এক ভয়ঙ্কর সংকটের মুখে ফেলেছে। এই সংকট কোনো একটি দেশের নয়, এটি আজ সারা বিশ্বের সমস্যা। পৃথিবীর পরিবেশ দূষণের ফলে মানবজাতি এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ প্রকৃতিকে জয় করার জন্য বন কেটেছে, নদীর গতি রোধ করেছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে এবং মানুষেরই ক্ষতি হয়েছে। তবে মানুষ এখন এই ভুল বুঝতে পেরেছে। তাই আজ মানুষ পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হচ্ছে। বন ধ্বংস না করে বনায়নের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। মানুষ এখন আর প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়, বরং সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে, যেন প্রকৃতি থেকে টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় উপকার পেতে পারে।
প্রকৃতির দুর্যোগ মানবজাতিকে বিপর্যস্ত করে ফেলে। তার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এর জন্যে মানুষ প্রকৃতি থেকে সহযোগিতা লাভের চেষ্টা করলে যথার্থই উপকৃত হবে।
বিকল্প ২
মূলভাব : প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক নিবিড় ও গভীর। প্রকৃতি মানুষের চিরন্তন বন্ধু।
সম্প্রসারিত ভাব : আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রকৃতিই মানুষকে খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রকৃতিকে দেখে মানুষ নানা কিছু শিখেছে, আবিষ্কার করেছে। পারস্পরিক সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, সাহায্য-সহযোগিতা, মায়া-মমতা ভালোবাসা প্রভৃতি মানুষ প্রকৃতির কাছ থেকেই শিখেছে। ক্রমশ মানুষ সচেতন হয়েছে, নিজের শক্তি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে জেনেছে। সত্য, ন্যায় ও সুন্দরকে ধারণ করতে শিখেছে, ক্রমশ গড়ে তুলেছে সভ্যতার নতুন নতুন সোপান। প্রকৃতির অকৃপণ দান গ্রহণ করে এবং নানা উপাদান কাজে লাগিয়েই মানুষ নিজেকে নির্মাণ করেছে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে। মানুষের অস্তিত্ব ও বিকাশ প্রকৃতির অনুগ্রহেরই দান। এমন উপকারী ও ত্যাগী বন্ধুর সঙ্গে কোনো বিরোধ বা শত্রুতা করা নিতান্তই অন্যায় কাজ। আমাদের টিকে থাকার স্বার্থে প্রকৃতির সঙ্গে গভীর ও চিরন্তন মৈত্রীর সম্পর্ক অব্যাহত রাখাই কর্তব্য। আধিপত্য শব্দটি জোর-জবরদস্তিরই নামান্তর। এর লক্ষ্য যদি যথার্থ উপকার বা কল্যাণ হয় তাহলে তা অবশ্যই সাদরে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা হয় অকল্যাণ বা ধ্বংসের উৎস, চূড়ান্ত ক্ষতির কারণ। কারণ আধিপত্যের পেছনে সক্রিয় থাকে মানুষের অফুরন্ত লোভ লালসা, হিংসা, স্বার্থপরতা, নীচ মানসিকতা। আধিপত্য কেবল হত্যা, লুটপাট, ধ্বংসকেই উস্কে দেয়। অতীত ইতিহাস আর বর্তমান ঘটনাবলি তারই সাক্ষ্য দেয়। নির্বোধ, অপরিণামদর্শী মানুষ প্রকৃতিকে কাজে লাগাতে গিয়ে ধ্বংস করছে। নির্বিচারে গাছ কেটে বৃক্ষ নিধন করে সবুজ প্রকৃতিকে নষ্ট করছে। রুপালি নদী-জলাশয়, উর্বর মাটি পরিবর্তিত হচ্ছে। মানুষ নানা ভাবে পরিবেশ দূষণ করে ওজোন স্তরের ক্ষতি করছে। এর ফলে প্রকৃতির প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। অনেক গাছ, পশু-পাখি, নদী ও পাহাড় হারিয়ে যাচ্ছে। মাটি, পানি ও বাতাসও বিপর্যস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি যুদ্ধ, পারমাণবিক বিস্ফোরণ, উপগ্রহ উৎক্ষেপণ এবং নানা যন্ত্র-প্রযুক্তির ব্যবহার পৃথিবীর স্বাভাবিক পরিবেশকে অস্থির করে তুলছে। এসবের ফলে প্রকৃতি মানুষের বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়াচ্ছে। মানুষ বুঝতেই পারছে না, সে নিজেই নিজের ক্ষতি করছে। আজ প্রকৃতির অস্তিত্ব হুমকির মুখে। যে প্রকৃতি মানুষকে জীবন দিয়েছে, মানুষ সেই প্রকৃতিকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। তাই সময় এসেছে প্রকৃতিকে ভালোবাসার, তাকে রক্ষা করার। না হলে একদিন প্রকৃতি মানুষকেই নির্মম শাস্তি দেবে।
সিদ্ধান্ত : তাই প্রকৃতির ওপর আধিপত্য নয়, প্রকৃতির সঙ্গে মৈত্রী গড়ে তোলাই মানুষের জন্য কল্যাণকর।
ভাবসম্প্রসারণটি ভালো লাগলে StudyTika.com-এ আরও সহজ ও সুন্দর ভাবসম্প্রসারণ পড়ে দেখতে পারেন। প্রতিটি লেখা বানানো হয়েছে আপনাদের জন্য, একেবারে সহজভাবে। ক্লাস ৬ থেকে এইচএসসি—সবার জন্য!