ভূমিকা: এই ব্লগপোস্টে তোমরা পড়বে একটি সুন্দর ভাবসম্প্রসারণ — “হাস্যমুখে অদৃষ্টেরে, করব মোরা পরিহাস”। সহজ ভাষায় লেখা এই ভাবসম্প্রসারণটি তোমাদের স্কুল, ক্লাস টেস্ট কিংবা পরীক্ষার জন্য খুবই উপকারী হবে। একবার পড়লে পুরোটা পড়ে ফেলতে মন চাইবে। তাহলে চল শুরু করি!
হাস্যমুখে অদৃষ্টেরে,করব মোরা পরিহাস
মূলভাব : ভারতবর্ষের মানুষ একসময় বিশ্বাস করত, পূর্ব জন্মের কর্মফল এ জন্মে সমস্ত কর্মফল নিয়ন্ত্রণ করে। শুধু ভারতবর্ষ নয়, প্রাচীন গ্রীস ও অন্যান্য কয়েকটি দেশের মানুষও এ মনোভাব পোষণ করত।
সম্প্রসারিত ভাব : যা দেখা যায় না, তাই অদৃষ্ট। বিংশ শতাব্দীর শেষে বিজ্ঞানের কল্যাণে অনেক অজানা জানা গেছে, অনেক রহস্য ভেদ হয়েছে। অতীত বিশ্বের বহু তথ্য অজানা রয়ে গেছে। যতদিন না সেগুলোর রহস্য উন্মোচিত হয় ততদিন অদৃষ্ট কথাটি থেকেই যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও এ কথা সত্য আজকের মানুষ অনেক এগিয়েছে, সে এখন পুরষ্কারের পূজারী। তাই আমাদের কবি কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে,
‘অদৃষ্টেরে শুধালেম, চিরদিন পিছে
অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে।
সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।’
জীবন মরণের সূত্রে জগৎ আমাদের ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে জগতের এত রহস্য সব সময় উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয় না বলেই আমরা ভাগ্যের লিখন বা কপালের দোহাই বলে থাকি। বর্তমানকালের মানুষ ক্রমশ যুক্তি নির্ভর হয়ে উঠছেন অজ্ঞাত অবোধ্য কোন কাজে সে আর পিছপা নয়। বুদ্ধি আর মেধার দৌলতে অলৌকিক ক্রমশ তার কাছে লৌকিক রূপে ধরা দিচ্ছে। তাই অদৃষ্ট আজ মানুষের কাছে ভয়ের কারণ নয়, উপহাসের পাত্র। জগতে যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে মানুষই শ্রেষ্ঠ। কারণ সে শক্তির রহস্য ভেদ করতে পেরেছে, শক্তিকে আয়ত্ত করতে পেরেছে। অথচ সৃষ্টির ঊষালগ্নে মানুষ নিজ শক্তিকেই উপলব্ধি করতে পারেনি। ফলে অসহায় মানুষ অদৃষ্টের দোহাই দিয়ে পড়ে পড়ে মার খেয়েছে। তখন ভয় ছিল জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে। তারপর ক্রমশ নিজেকে চিনতে শিখল, জগতের কর্মযজ্ঞে নিজেকে সঁপে দিল। শুরু হল তার নতুন মানবসত্ত্বা। অসাফল্য আর ব্যর্থতা তাকে আরও বেশি নিষ্ঠা এনে দিল।
যারা ভীরুতার দুঃখে কাতর। অসাফল্যে, ব্যর্থতায় তারা কর্মবিমুখ হয়ে পড়ে। ভাগ্যের দোহাই দিয়ে কর্মের পথ থেকে সরে যায়। আর যারা সাহসী, তারা ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে আশার আলোর সন্ধান পায়। আত্মবিশ্বাসী মানুষ কখনও অদৃষ্টের দোহাই দেন না। অলীক অদৃষ্টকে তুচ্ছ করে জীবন পথে এগিয়ে চলেন। তাদের কাছে, সংগ্রামই হল জীবন, আর অদৃষ্টের দোহাই দিয়ে সংগ্রামহীনতার নামই হল মৃত্যু।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
ভাব-সম্প্রসারণ : মানুষ তার নিজের ভাগ্যের নির্মাতা। যারা ভীরু, দুর্বল; যাদের আত্মবিশ্বাস কম, শুধু তারাই অদৃষ্টবাদী। মানুষ অধ্যবসায় ও একনিষ্ঠ শ্রমের দ্বারা তার নিজ ভাগ্যকে সার্থক করে তোলে।
জীবনসংগ্রামে পরাজিত মানুষ নিজেকে দুর্ভাগ্যবান ও দৈবশক্তির হাতে ক্ষমাহীন মনে করে। তার ধারণা, কোনো অদৃশ্য শক্তি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত নিয়ন্ত্রণ করছে। আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ এই অন্ধ দৈবশক্তির নাম দিয়েছে ‘অদৃষ্ট’। কিন্তু এই অদৃষ্টের শৃঙ্খলে বন্দী মানুষ কখনো প্রমিথিউসের মতো বিদ্রোহী হতে পারেনি, তার অন্তরে ব্যক্তিত্বের স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠেনি। বিজ্ঞানের যুগে থেকেও অনেকেই বিপদে পড়ে নিজেকে সেই অলীক অদৃষ্টের হাতে ছেড়ে দেয়। কিন্তু যারা যুবশক্তির দুর্বার গতিতে প্রাণবন্ত, তারা সংগ্রামের তীক্ষ্ণ পথে হাঁটতেই ভালোবাসে। তারা বিশ্বাস করে না কোনো অদৃশ্য দৈবশক্তিতে, তাদের লক্ষ্য জীবনের সেরা ফল সংগ্রহ করা সংগ্রাম ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস, ভাগ্য মানুষকে চালিত করে না, মানুষ নিজেই ভাগ্য গঠন করে। কর্মই সৌভাগ্যের জনক। অদৃষ্টের দোহাই দিয়ে কাজ থেকে পলায়ন করাকে বলা যায় নিজের শক্তি থেকে পালানো। কর্মঠ মানুষই সৌভাগ্যের সোনালী শিখরে পৌঁছায়। অন্যদিকে, অদৃষ্টের উপর নির্ভরশীল ব্যক্তি তার অলসতার কারণে বার বার পরাজয়ের সম্মুখীন হয় এবং জীবনভর হতাশা ও নৈরাশ্যে ভুগতে হয়।
যাঁরা আত্মশক্তিতে বীর্যবান তাঁরা দুর্দমনীয় যৌবনশক্তির আবেগে সদা কম্পমান। তাদের গতিবেগ ঝড়ের মতো, তাদের জীবনের চলার পথ বাধা-বিপত্তি যত দুর্লঙ্ঘই হোক না কেন অদৃষ্টের কাছে তারা নতজানু না হয়ে দুর্জয় আত্মশক্তিতে তা অতিক্রম করে।
উপসংহার: আশা করি ভাবসম্প্রসারণটি তোমাদের ভালো লেগেছে। এমন আরও সহজ ও সুন্দর ভাবসম্প্রসারণ পড়তে চাইলে ভিজিট করো আমার ওয়েবসাইট – StudyTika.com। এখানে ক্লাস ৬ থেকে HSC পর্যন্ত অনেক ভাবসম্প্রসারণ একসাথে পাবে। এখনই দেখে আসো!