🌼 ভূমিকা: আজকের এই ব্লগপোস্টে রয়েছে একটি চমৎকার ভাবসম্প্রসারণ — "সঙ্গদোষে লোহা ভাসে"। সহজ ভাষায় লেখা এই লেখাটি তোমার পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অনেক সাহায্য করবে। পুরোটা পড়লে ভালোভাবে বুঝতে পারবে।
সঙ্গদোষে লোহা ভাসে
মূলভাব : শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত হলেই তাকে শিক্ষিত বলা যাবে না। সুশিক্ষিত হতে হলে তার মধ্যে সৃজনশীল অনুভূতি থাকা প্রয়োজন।
সম্প্রসারিত ভাব : শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে মানুষ শিক্ষিত হয়ে উঠে। মানব জীবন সুগঠন ও সুন্দর বিকাশের জন্য শিক্ষা একটি অপরিহার্য বিষয়। শিক্ষা ব্যবস্থার অবকাঠামোর ভিতর দিয়ে শিক্ষা অর্জনের রীতি প্রচলিত রয়েছে। আর এ শিক্ষা অর্জন করেই শিক্ষিত মানুষ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে শিক্ষা অর্জিত হলেও শিক্ষার সীমা সেখানে শেষ হয়ে যায় না। শিক্ষার পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হতে হলে মানুষকে নিজস্ব প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হয়। স্বশিক্ষা বা নিজে নিজে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হয় বেশি জ্ঞানের জন্য।
শিক্ষা লাভের জন্য আমাদের চারপাশে অনেক ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ধাপে ধাপে এগিয়ে সেইসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি অর্জন করে এবং শিক্ষিত হিসেবে পরিচিত হয়। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের একটি সীমাবদ্ধতা আছে—তারা শুধু নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষা দিয়ে ডিগ্রি প্রদান করে, তারপর তাদের দায়িত্ব শেষ। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার পরিধি অনেক বড়। এই বিশাল জ্ঞানের জগৎকে শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের গণ্ডিতে আটকে রাখা যায় না। কারণ, জ্ঞান সীমাহীন এবং তা কোনো নির্দিষ্ট পাঠ্যক্রমের মধ্যে পুরে দেওয়া যায় না। এই কারণে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ হওয়ার পরও একজন মানুষকে জ্ঞানের রাজ্যে নিজ উদ্যোগে চলতে হয়। কেউ যদি সত্যিকারের শিক্ষিত হতে চায়, তবে তাকে নিজে থেকেই শিখতে হবে, জানতে হবে, বুঝতে হবে। এই স্ব-শিক্ষাই একজন মানুষকে প্রকৃত শিক্ষিত করে তোলে। বলা হয়, “বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পরই আসল শিক্ষা শুরু হয়।” তাই নিজে থেকে চেষ্টা করে, পড়াশোনা করে, অভিজ্ঞতা নিয়ে জীবনভিত্তিক শিক্ষা অর্জন করতে হয়। আর এভাবেই একজন ব্যক্তি প্রকৃতভাবে শিক্ষিত হয়ে ওঠে—শুধু ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে নয়, বরং নিজের চেষ্টায় সারাজীবন শেখার মাধ্যমে।
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো
ভাব-সম্প্রসারণ : প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং বাস্তব জীবনের প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি থেকে অর্জিত শিক্ষা-এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কারণ সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ হয়ে যায়, কিন্তু শিক্ষার কোনো সীমা বা পরিসীমা নেই। শিক্ষার পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হতে হলে মানুষকে নিজস্ব প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এবং সুশিক্ষিত হওয়ার জন্যে স্বশিক্ষা বা নিজে নিজে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হল জ্ঞানশক্তি অর্জন করা।
শিক্ষা একটি অর্জননির্ভর প্রক্রিয়া। এটি লাভ করতে হলে প্রয়োজন নিরলস প্রচেষ্টা ও অনুশীলনের। শিক্ষালাভের জন্য আমাদের সমাজে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা ধাপে ধাপে পড়াশোনা করে ডিগ্রি অর্জন করে এবং শিক্ষিত হিসেবে পরিচিত হয়। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সাধারণত নির্দিষ্ট ডিগ্রি প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে জ্ঞানের পূর্ণতা অর্জন সম্ভব নয়। জ্ঞানকে সত্যিকারে আত্মস্থ করতে হলে নিজের উদ্যোগ, চর্চা ও সাধনার বিকল্প নেই। কারণ, শিক্ষার পরিধি বিশাল—এটি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলমান। আমাদের সমাজে অনেকেরই উচ্চ ডিগ্রি রয়েছে, কিন্তু তারা দেশ ও জাতির কোনো উপকারে আসেননি। কারণ, তাদের মাঝে মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটেনি; তারা সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে পারেননি। অন্যদিকে, এমন অনেক স্বশিক্ষিত মানুষ আছেন, যাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না থাকলেও জ্ঞান, চিন্তা ও কর্মে পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন। যেমন—সক্রেটিস, এরিস্টটল, প্লেটো, নিউটন, গ্যালিলিও, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নজরুল ইসলাম—তাঁরা সবাই আত্মশিক্ষার মাধ্যমে মহান হয়েছেন এবং মৃত্যুর পরও স্মরণীয় রয়েছেন। একজন সুশিক্ষিত মানুষ মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাসী, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক হন। তিনি হন উদার, ভদ্র ও রুচিশীল। সব দিক মিলিয়ে, সুশিক্ষিত মানুষই প্রকৃত অর্থে আলোকিত মানুষ। তাই একটি দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য স্বশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত মানুষের কোনো বিকল্প নেই।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে যথার্থ জ্ঞানার্জনের জন্যে জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করতে হয়। সুশিক্ষার জন্যে নিজের উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। একমাত্র স্বশিক্ষার মাধ্যমেই সুশিক্ষিত হয়ে ওঠা সম্ভব। সেজন্যে সারা জীবন ধরে মানুষের জ্ঞানসাধনা চলে।
🍀 উপসংহার: ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে যদি ভালো লাগে, তাহলে আমাদের সাইট StudyTika.com-এ আরও অনেক সহজ ভাবসম্প্রসারণ আছে। তুমি চাইলে সেগুলোও পড়ে নিতে পারো — পড়তে থাকো, শিখতে থাকো!