গণিত শব্দটা শুনলেই অনেকের মনে ভয় লাগে, আবার কারও কাছে এটি আনন্দের এক দুনিয়া। কেউ ভাবে শুধু সংখ্যা আর হিসাব, কিন্তু আসলে গণিতের জগৎ তার চেয়েও অনেক বড় ও মজার! আমাদের চারপাশের প্রতিটি জিনিসে, প্রতিটি কাজে, এমনকি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে গণিতের ছোঁয়া আছে। তুমি যদি জানতে চাও আসলে গণিত কী, এর কত রকম শাখা, সূত্র আর চিহ্ন আছে— তাহলে এই লেখাটি তোমার জন্যই। আসো, সহজ ভাষায় মজারভাবে জেনে নিই গণিতের গল্প।
গণিত কাকে বলে
আরো বিস্তারিত বললে, গণিত হলো এমন একটি বিদ্যা, যার মাধ্যমে আমরা সংখ্যা ও পরিমাণের হিসাব-নিকাশ করতে পারি। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কাজে ব্যবহার হয়।
গণিত শব্দটি শুনলেই আমাদের মাথায় ভেসে ওঠে সংখ্যা, যোগ, বিয়োগ, গুণ আর ভাগের মতো বিষয়। আসলে এই বিষয়গুলোই গণিতের মূল অংশ। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল বলেছিলেন— “পরিমাণের বিজ্ঞানই হলো গণিত।” আর জার্মান গণিতবিদ কার্ল ফ্রেডরিক গাউস গণিতকে বলেছেন— “সব বিজ্ঞানের রানী।” সহজভাবে বলতে গেলে, যে শাস্ত্রে সংখ্যা, পরিমাণ, আকার, পরিবর্তন ও গঠন নিয়ে গবেষণা করা হয়, সেটিই গণিত। আর যারা এই বিষয়ে গবেষণা করেন, তারা হলেন গণিতবিদ।
গণিতের জনক কে?
গণিতের নির্দিষ্ট কোনো জনক নেই। তবে ইতিহাস অনুযায়ী, প্রথম গণিতের ব্যবহার দেখা যায় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ সালে সুমেরীয় ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতায়। অনেকে মনে করেন, গ্রিক গণিতবিদ আর্কিমিডিস (খ্রিঃপূঃ ২৮৭–২১২) গণিতের জনক।
বিভিন্ন শাখার গণিতের জনকরা নিচে দেওয়া হলো:
- গণিতের জনক – আর্কিমিডিস
- বীজগণিতের জনক – আল খোয়ারিজমি
- পাটিগণিতের জনক – আর্যভট্ট (ভারত)
- ক্যালকুলাস – স্যার আইজ্যাক নিউটন
- গণনা যন্ত্র – চার্লস ব্যাবেজ
- ত্রিকোণমিতি – হিপ্পারকাস
- জ্যামিতির জনক – ইউক্লিড (গ্রিস)
- পাই (π) – উইলিয়াম জোন্স
- লগারিদম – জন নেপিয়ার
- সংখ্যাতত্ত্ব – পিথাগোরাস
- ম্যাট্রিক্স – কেইলে
গণিতের ইংরেজি ও পূর্ণরূপ
গণিতের ইংরেজি শব্দ হলো Mathematics। এর কোনো নির্দিষ্ট পূর্ণরূপ নেই। এটি গননা বা হিসাব করার বিদ্যা হিসেবে পরিচিত।
গণিতের সূত্র
গণিতের সূত্র না জানলে কোনো হিসাব-নিকাশ ঠিকভাবে করা যায় না। নিচে বিভিন্ন শাখার গুরুত্বপূর্ণ সূত্র সহজভাবে দেওয়া হলো:
পাটিগণিতের সূত্র:
গুণের সূত্র:
- গুণফল = গুণ্য × গুণক
- গুণক = গুণফল ÷ গুণ্য
- গুণ্য = গুণফল ÷ গুণক
বিয়োগের সূত্র:
- বিয়োজন - বিয়োজ্য = বিয়োগফল
- বিয়োজন = বিয়োগফল + বিয়োজ্য
- বিয়োজ্য = বিয়োজন - বিয়োগফল
ভাগের সূত্র:
যদি নিঃশেষে বিভাজ্য না হয়:
- ভাজ্য = ভাজক × ভাগফল + ভাগশেষ
- ভাগফল = (ভাজ্য – ভাগশেষ) ÷ ভাজক
- যদি নিঃশেষে বিভাজ্য হয়:
- ভাজ্য = ভাজক × ভাগফল
ভগ্নাংশের সূত্র:
- গ.সা.গু = লবের গ.সা.গু ÷ হরের ল.সা.গু
- ল.সা.গু = লবের ল.সা.গু ÷ হরের গ.সা.গু
গড় নির্ণয়ের সূত্র:
- গড় = মোট যোগফল ÷ মোট সংখ্যা
সুদের সূত্র:
- সুদ = (সুদের হার × আসল × সময়) ÷ ১০০
- সুদাসল = আসল + সুদ
লাভ-ক্ষতির সূত্র:
- লাভ = বিক্রয়মূল্য – ক্রয়মূল্য
- ক্ষতি = ক্রয়মূল্য – বিক্রয়মূল্য
বীজগণিতের সূত্র
- (a + b)² = a² + 2ab + b²
- (a - b)² = a² - 2ab + b²
- a² - b² = (a + b)(a - b)
- (a + b + c)² = a² + b² + c² + 2(ab + bc + ca)
জ্যামিতির সূত্র
বৃত্ত:
- ক্ষেত্রফল = πr²
- পরিধি = 2πr
ঘনক:
- ঘনফল = বাহু³
- পৃষ্ঠতল ক্ষেত্রফল = 6 × বাহু²
বর্গক্ষেত্র:
- ক্ষেত্রফল = বাহু²
- পরিসীমা = 4 × বাহু
আয়তক্ষেত্র:
- ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্য × প্রস্থ
- পরিসীমা = 2(দৈর্ঘ্য + প্রস্থ)
ত্রিভুজ:
- ক্ষেত্রফল = ½ × ভূমি × উচ্চতা
ত্রিকোণমিতির সূত্র
- sinθ = লম্ব ÷ অতিভূজ
- cosθ = ভূমি ÷ অতিভূজ
- tanθ = লম্ব ÷ ভূমি
- sin²θ + cos²θ = 1
গণিতের চিহ্ন ও অর্থ
| চিহ্ন | ইংরেজি | বাংলা অর্থ |
|---|---|---|
| + | Plus | যোগ |
| − | Minus | বিয়োগ |
| × | Multiplication | গুণ |
| ÷ | Division | ভাগ |
| = | Equal | সমান |
| ≠ | Not Equal | সমান নয় |
| < | Less Than | ছোট |
| > | Greater Than | বড় |
| ∞ | Infinity | অসীম |
| % | Percent | শতকরা |
| ∠ | Angle | কোণ |
| ∩ | Intersection | ছেদ সেট |
| ∪ | Union | সংযোগ সেট |
| π | Pi | পাই |
| √ | Square Root | বর্গমূল |
এছাড়াও α (আলফা), β (বিটা), δ (ডেল্টা), θ (থিটা), σ (সিগমা) ইত্যাদি চিহ্ন গণিতে ব্যবহৃত হয়।
উপসংহার
গণিত শুধু একটি বিষয় নয়, এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত—বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ব্যবসা, এমনকি দৈনন্দিন জীবনেও। তাই গণিত শেখা মানে হলো যুক্তিবিদ্যা ও চিন্তাশক্তি বাড়ানো।
আরও এমন সহজ ও শিক্ষামূলক লেখা পড়তে ভিজিট করুন StudyTika.com 🌿
গণিত শুধু পরীক্ষার জন্য পড়ার বিষয় নয়, এটি জীবনের প্রতিটি অংশে আমাদের চিন্তা ও বোঝার ক্ষমতা বাড়ায়। যত বেশি আমরা গণিতকে বুঝব, তত বেশি আমরা যুক্তি ও বুদ্ধিতে শক্তিশালী হবো। তাই প্রতিদিন একটু করে গণিতের সাথে বন্ধুত্ব করো। 🌿