আপনি কি কখনও ভেবেছেন, সমাজে এমন শিশুরা রয়েছে যারা বাবা হারিয়েছে এবং একাকী বড় হচ্ছে? তারা আমাদের সবার জন্য বিশেষ দায়িত্বের দাবিদার। এই ছোট্ট প্রাণগুলো আমাদের স্নেহ, সহানুভূতি এবং সহায়তার অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু কেন এতিমদের যত্ন নেওয়া এত গুরুত্বপূর্ণ, ইসলামে তাদের মর্যাদা কী, এবং আমরা কীভাবে তাদের সহায়তা করতে পারি—এই সব বিষয়ই আজকের আলোচনার মূল অংশ। চলুন, ধীরে ধীরে জানি এবং বুঝি কতটা মহৎ কাজ এটি।
এতিম কাকে বলে?
এতিম বলতে আমরা সাধারণত বুঝি সেই শিশুকে যার পিতা মারা গেছেন।
ইসলামও একইভাবে এমন শিশুদেরকে এতিম বলে বিবেচনা করে। তবে, শিশুর বয়স যখন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন তাকে আর এতিম বলা হয় না। মুসলিমদের জন্য জানা জরুরি যে, এই বয়সের পরে শিশুর উপর বিশেষ নজরদারি আর ইসলামের দৃষ্টিতে এতিমের মর্যাদা থাকে না।
এতিমের বয়স ও প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া
হানযালা ইবনে হুযাইম আল হানাফী রা. বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ছেলেদের স্বপ্নদোষ এবং মেয়েদের ঋতুস্রাব হলে তারা প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে গণ্য হবে। আমাদের দেশে সাধারণত মেয়েরা ৯–১০ বছর এবং ছেলেরা ১০–১১ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়, তবে ব্যক্তিভেদে পার্থক্য হতে পারে।
যদি শিশুর মা মারা যায় কিন্তু বাবা বেঁচে থাকে, তাকে ইসলামের দৃষ্টিতে এতিম বলা হয় না।
এতিমের দায়িত্ব নেওয়ার গুরুত্ব
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যারা এতিমের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তারা জান্নাতে তাঁর সাথে পাশাপাশি অবস্থান করবেন। এটি এতিমের দেখাশোনা করার এক বিশাল মর্যাদা।
এতিমের জন্য অর্থ খরচের গুরুত্ব
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, যে কোনো সৎ খরচ, বিশেষ করে পিতৃহীন, অসহায় ও মুসাফিরদের জন্য করা, তা আল্লাহর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাপ্তির যোগ্য। অতএব, এতিমদের জন্য অর্থ ব্যয় করা একটি মর্যাদাপূর্ণ কাজ।
এতিমের সম্পদ গ্রাস করার ভয়
যারা এতিমদের অর্থ অন্যায়ভাবে খায়, তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা বলেন যে, তাদের পেটে আগুন পূর্ণ হবে। এজন্য ইসলামে এতিমদের সম্পদ রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গরিব দায়িত্বগ্রহীতার পারিশ্রমিক
যদি কেউ আর্থিকভাবে দুর্বল হয়, তবে তিনি যুক্তিসঙ্গত পরিমাণে পারিশ্রমিক নিয়ে এতিমের দেখাশোনা ও সম্পদ রক্ষা করতে পারেন। তবে সম্পদ খরচের সময় সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাদের সম্পদ তাদের হাতে দিতে হবে।
মোটকথা
পিতৃহীন শিশুদের দেখাশোনা করা, তাদের দায়িত্ব নেওয়া, স্নেহমমতা দেখানো এবং তাদের সম্পদ রক্ষা করা ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ। এটি জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম। অন্যদিকে, তাদের সম্পদ লুটে খাওয়া বা অন্যায় আচরণ করা গুরুতর পাপ এবং জাহান্নামে প্রবেশের কারণ। আল্লাহ আমাদের এতিমদের প্রতি যত্নশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
উত্তর প্রদান করেছেন: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী, দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ, সৌদি আরব।
এতিমদের দেখাশোনা করা এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো কেবল তাদের জন্য নয়, বরং আমাদের সবার জন্য আল্লাহর প্রিয় কাজ। আশা করি, এই ব্লগ পোস্টটি পড়ে আপনি জানতে পেরেছেন কতটা গুরুত্বপূর্ণ তাদের মর্যাদা ও যত্ন নেওয়া। আরও এমন শিক্ষামূলক এবং সহজে বোঝার মতো পোস্ট পড়তে StudyTika.com ভিজিট করুন এবং আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।