যুক্তি ও দর্শনের জগতে "বিরোধিতা" শব্দটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুটি বচনের মধ্যে যখন উদ্দেশ্য ও বিধেয় একই হয়, কিন্তু গুণ বা পরিমাণে পার্থক্য দেখা যায়, তখন তাকে বিরোধিতা বলা হয়। দর্শনের ইতিহাসে এর দুটি বিশিষ্ট রূপ পাওয়া যায়— সাধারণ বিরোধিতা এবং এরিস্টটলের বিরোধিতা। এই দুটি ধারণা দেখতে একরকম হলেও তাদের প্রকৃতি, প্রকারভেদ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ভিন্নতা রয়েছে। চলুন বিস্তারিতভাবে বিষয়টি আলোচনা করা যাক।
সাধারণ বিরোধিতা
সাধারণ বিরোধিতা মূলত তখন ঘটে যখন দুটি বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় একই থাকে কিন্তু তাদের গুণ, পরিমাণ অথবা উভয়ের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। এই পার্থক্যের ভিত্তিতে সাধারণ বিরোধিতা আবার চার প্রকারে বিভক্ত হয়েছে— বিপরীত বিরোধিতা, অধীন বিপরীত বিরোধিতা, অসম বিরোধিতা এবং বিরুদ্ধ বিরোধিতা। সাধারণ বিরোধিতার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি কিভাবে দুটি ভিন্ন ধরণের বচন একে অপরের বিপরীতে অবস্থান করতে পারে এবং কখন তারা একসঙ্গে সত্য বা মিথ্যা হতে পারে না।
এরিস্টটলের বিরোধিতা
এরিস্টটল যুক্তির জগতে বিরোধিতাকে আরও নির্দিষ্ট ও পদ্ধতিগতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি মূলত দুটি প্রকারের বিরোধিতার কথা বলেছেন— বিপরীত বিরোধিতা ও বিরুদ্ধ বিরোধিতা। এরিস্টটলের ব্যাখ্যায় (A+E) বচনের মধ্যে বিপরীত বিরোধিতা এবং (A+O) বচনের মধ্যে বিরুদ্ধ বিরোধিতা স্বীকৃত হয়েছে। তবে তার দৃষ্টিতে অধীন বিপরীত ও অসম বিরোধিতার স্থান ছিল না। এরিস্টটলের এই ধারণা যুক্তিবিদ্যায় একটি বিশেষ কাঠামো তৈরি করে দিয়েছে, যা আজও আলোচিত।
Quick Summary Cards
সাধারণ বিরোধিতা
গুণ বা পরিমাণের পার্থক্যের ভিত্তিতে গঠিত বিরোধিতা। এর চারটি ধরন আছে— বিপরীত, অধীন বিপরীত, অসম ও বিরুদ্ধ।
এরিস্টটলের বিরোধিতা
তিনি কেবল দুটি ধরনের বিরোধিতা স্বীকার করেছেন— বিপরীত (A+E) এবং বিরুদ্ধ (A+O)। অধীন বিপরীত ও অসম বিরোধিতা তার কাঠামোয় স্বীকৃত নয়।
সাধারণ বিরোধিতা ও এরিস্টটলের বিরোধিতার মধ্যে পার্থক্য
| সাধারণ বিরোধিতা | এরিস্টটলের বিরোধিতা |
|---|---|
| দুটি বচনের একই উদ্দেশ্য ও বিধেয় থাকলেও গুণ বা পরিমাণ বা উভয়ের পার্থক্যের কারণে সাধারণ বিরোধিতা গঠিত হয়। | এরিস্টটলের বিরোধিতায় উদ্দেশ্য ও বিধেয় একই থেকে কেবল গুণ ও পরিমাণ উভয় দিকের পার্থক্যের কারণে বিরোধিতা তৈরি হয়। |
| এটি চার প্রকার— বিপরীত, অধীন বিপরীত, অসম ও বিরুদ্ধ বিরোধিতা। | এটি দুই প্রকার— বিপরীত বিরোধিতা এবং বিরুদ্ধ বিরোধিতা। |
| সাধারণ বিরোধিতায় (A+E) বচনের মধ্যে বিপরীত বিরোধিতা স্বীকৃত। | এরিস্টটলের বিরোধিতায় (A+O) বচনের মধ্যে বিরুদ্ধ বিরোধিতা স্বীকৃত। |
| এখানে অধীন বিপরীত ও অসম বিরোধিতা আলাদাভাবে গুরুত্ব পায়। | এখানে অধীন বিপরীত ও অসম বিরোধিতাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। |
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
সাধারণ বিরোধিতা কত প্রকার?
সাধারণ বিরোধিতা মোট চার প্রকার— বিপরীত বিরোধিতা, অধীন বিপরীত বিরোধিতা, অসম বিরোধিতা এবং বিরুদ্ধ বিরোধিতা।
এরিস্টটল কত প্রকার বিরোধিতা স্বীকার করেছেন?
এরিস্টটল মূলত দুটি প্রকার বিরোধিতা স্বীকার করেছেন— বিপরীত বিরোধিতা এবং বিরুদ্ধ বিরোধিতা।
সবশেষে বলা যায়, সাধারণ বিরোধিতা ও এরিস্টটলের বিরোধিতা উভয়ই যুক্তিবিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও তাদের পরিসর ও ধরন আলাদা। সাধারণ বিরোধিতা যেখানে চারটি ভাগে বিভক্ত, এরিস্টটল সেখানে কেবল দুটি ভাগকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। দর্শনের শিক্ষার্থীদের জন্য এ পার্থক্য বোঝা অত্যন্ত জরুরি। আরও শিক্ষামূলক ও তথ্যবহুল বিষয় পড়তে ভিজিট করুন studytika.com।