প্রতিধ্বনি কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | প্রতিধ্বনি শুনবার জন্য ন্যূনতম দূরত্ব

আপনি কি কখনো ভেবেছেন, আমাদের চারপাশের শব্দগুলো কিভাবে আবার আমাদের কানে ফিরে আসে? কখনো পাহাড়ের পাশে চিৎকার করলে কি আপনিও সেই প্রতিধ্বনি শুনেছেন? প্রতিধ্বনি এমন একটি রহস্যময় বিষয় যা শব্দকে আরও মজাদার এবং শিক্ষণীয় করে তোলে। আজ আমরা জানব প্রতিধ্বনি কী, কিভাবে এটি কাজ করে এবং কোথায় এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করা হয়। এটি পড়ে আপনি শব্দের জগতে এক নতুন দৃষ্টিকোণ পাবেন। 

প্রতিধ্বনি কাকে বলে?(সহজ সংজ্ঞা)

প্রতিধ্বনি কাকে বলে?

যখন কোনো শব্দ মূল শব্দ থেকে আলাদা হয়ে আবার মূল শব্দের মতো শোনা যায়, তখন সেই শব্দকে প্রতিধ্বনি বলে। 

অন্যভাবে বললে, শব্দ কোনো কঠিন পৃষ্ঠে এসে প্রতিফলিত হয়ে আবার শব্দের উৎসে ফিরে আসে, তখন সেই প্রতিফলিত শব্দকে প্রতিধ্বনি বলা হয়।

প্রতিধ্বনি শুনবার জন্য ন্যূনতম দূরত্ব

ধরা যাক, একজন ব্যক্তি পাহাড়ের পাশে দাঁড়িয়ে জোরে চিৎকার করলেন। তিনি স্পষ্ট প্রতিধ্বনি শুনতে পারবেন কি না তা নির্ভর করবে তার এবং পাহাড়ের মধ্যবর্তী দূরত্বের ওপর। 

মানুষের মস্তিষ্ক প্রায় ১/১০ সেকেন্ড পর্যন্ত শব্দ মনে রাখতে পারে। এই সময়কে শব্দ অনুভূতির স্থায়িত্বকাল বা শ্রুতি রেশ বলা হয়। প্রতিধ্বনি স্পষ্টভাবে শোনা যায় তখনই, যখন শব্দের উৎস থেকে প্রতিফলক পর্যন্ত দূরত্ব এমন হয় যে শব্দটি ১/১০ সেকেন্ডের মধ্যে ফিরে আসে।

দূরত্বের হিসাব

ধরি, শব্দের বেগ v এবং ব্যক্তির দূরত্ব d। শব্দ যেতে এবং ফিরে আসতে মোট দূরত্ব 2d। ২d অতিক্রম করতে সময় = ১/১০ সেকেন্ড।

অর্থাৎ, 2d = v × ১/১০

d = (১/২) × v × (১/১০)

বায়ুতে শব্দের বেগ v = ৩৩১ মিটার/সেকেন্ড।

সুতরাং, d = (১/২) × ৩৩১ × (১/১০) = ১৬.৫ মিটার

অর্থাৎ স্পষ্ট প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শ্রোতা এবং প্রতিফলকের মধ্যে দূরত্ব অন্তত ১৬.৫ মিটার হতে হবে।

হল ঘরের আর্কিটেকচারে প্রতিধ্বনি

আজকাল বড় বড় ঘরগুলো বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনায় তৈরি করা হয়। ছাদ এবং মঞ্চের পেছনের দেয়াল আর্কাকৃতিতে করা হয়, যাতে বক্তার কণ্ঠস্বর সুন্দরভাবে প্রতিফলিত হয়ে সকল দর্শকের কানে পৌঁছায়। অন্য দেয়ালগুলোতে নরম বা অসমতল উপকরণ ব্যবহার করা হয়, যাতে শব্দ অতিরিক্ত প্রতিফলিত না হয়। কারণ বেশি প্রতিধ্বনি মূল শব্দের সাথে মিলেমিশে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।

শব্দের প্রতিধ্বনির ব্যবহার

শব্দের প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে সমুদ্রের গভীরতা, কুয়ার গভীরতা, খনিজ পদার্থের সন্ধান, উড়োজাহাজের উচ্চতা নির্ণয় এবং আরও অনেক কাজে সাহায্য করা যায়।

সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয়

একটি জাহাজ থেকে পানির মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। জাহাজের অন্য প্রান্তে হাইড্রোফোন রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর হাইড্রোফোনে দুটি শব্দ পাওয়া যায় - প্রথমটি বিস্ফোরণের শব্দ, দ্বিতীয়টি প্রতিধ্বনি।

মধ্যবর্তী সময় t সেকেন্ড ধরে শব্দ যাত্রা করে। সমুদ্রের গভীরতা d = (v × t) ÷ 2

খনিজ পদার্থের সন্ধান

মাটির নিচে গর্ত করে শব্দ প্রেরণ করা হয়। শব্দ মাটির ভেতর শিলাস্তর থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। হাইড্রোফোন এই প্রতিধ্বনি গ্রহণ করে।

গ্রাহকযন্ত্র শব্দ ও প্রতিধ্বনির সময় গণনা করে শিলার অবস্থান ও গঠন নির্ণয় করে। এর মাধ্যমে খনিজ পদার্থের অস্তিত্ব ও অবস্থান বোঝা যায়।

প্রতিধ্বনি কেবল একটি শব্দের জাদু নয়, এটি আমাদের জীবন ও প্রযুক্তিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। আশা করি, এই লেখাটি পড়ে আপনি প্রতিধ্বনির রহস্য এবং ব্যবহার সম্পর্কে সহজভাবে বুঝতে পেরেছেন। আরও এমন আকর্ষণীয় ও সহজে পড়ার যোগ্য বিষয় জানতে StudyTika.com ভিজিট করতে ভুলবেন না। নতুন নতুন তথ্য, উপকারী জ্ঞান এবং মজার বিষয় নিয়ে আমাদের আরও অনেক পোস্ট আছে, যা আপনাকে অবশ্যই পছন্দ হবে!

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.