বনায়ন কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | বনায়নের উপকারিতা | বনায়নের প্রকারভেদ

প্রকৃতি আমাদের জীবনের অমূল্য সম্পদ। কিন্তু ভাবো তো, যদি এই প্রকৃতি তার সবুজ হারিয়ে ফেলে, তবে পৃথিবীটা কেমন হবে? গাছপালা ছাড়া আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারব না, বৃষ্টি নামবে না, এমনকি আমাদের জীবনও অচল হয়ে যাবে। তাই পরিবেশ রক্ষার জন্য বনায়ন কতটা জরুরি — তা না জানলে আমরা নিজেরাই ক্ষতির পথে হাঁটব। আজকের এই লেখায় আমরা খুব সহজ ভাষায় জানব বনায়ন সম্পর্কে এমন কিছু বিষয়, যা সবাইকে জানা উচিত। পুরোটা পড়লে তুমি বুঝবে কেন গাছ লাগানো শুধু দায়িত্ব নয়, এক সুন্দর অভ্যাসও বটে।

বনায়ন কাকে বলে?(সহজ সংজ্ঞা)

বনায়ন কাকে বলে?

কোনো জমি থেকে একই সময়ে বা পর্যায়ক্রমিকভাবে বিভিন্ন গাছ, ফসল ও পশুপাখি উৎপাদন ব্যবস্থা কে কৃষি বনায়ন বলে।

আরো বিস্তারিত বললে, বনায়ন বলতে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে গাছপালা রোপণ করাকে বোঝায়। সহজভাবে বলতে গেলে, পতিত জমি, রাস্তার ধারে, রেললাইনের পাশে, খাল-বিলের পাড়ে বা অনাবাদী জমিতে গাছ লাগানোই হলো বনায়ন। এটি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, বায়ু বিশুদ্ধ রাখে এবং মানুষের নানা চাহিদা পূরণ করে।

বাংলাদেশ একটি কৃষিনির্ভর দেশ, যেখানে অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বাস করে এবং কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। গ্রামের মানুষ গাছ লাগাতে ভালোবাসে, কারণ কৃষির মতো বনায়নও আমাদের জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ বনের ওপর নির্ভরশীল। গাছপালা শুধু পরিবেশের সৌন্দর্যই বাড়ায় না, মানুষের জীবন ও জীবিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশও বটে। বর্তমান যুগে পরিবেশ রক্ষায় বনায়নের গুরুত্ব সত্যিই অপরিসীম।

বনায়নের গুরুত্ব

বাংলাদেশে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে হলে মোট ভূমির কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা দরকার। কিন্তু বাস্তবে আমাদের দেশে বনভূমির পরিমাণ খুবই কম—সরকারি তথ্য অনুযায়ী তা মাত্র প্রায় ১৭.০২%। বনায়ন পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে, বায়ুকে বিশুদ্ধ করে, প্রাণীদের আশ্রয় দেয়, বৃষ্টিপাত বাড়ায় এবং মানুষের জীবনে কাঠ, ফল, ওষুধ ও জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করে।

বনায়নের ইতিহাস ও নীতি

বাংলাদেশে বননীতি ঘোষণা করা হয় ১৯৯৫ সালে। এতে বনায়ন বৃদ্ধির জন্য নানা নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ যদি পৃথিবীতে বন না থাকত, তাহলে জীবজগৎ টিকে থাকতে পারত না। বনায়ন শুধু গাছ লাগানো নয়, এটি পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত একটি প্রক্রিয়া।

বনায়নের প্রকারভেদ

বনায়ন মূলত দুই প্রকার:

  • (i) প্রাকৃতিক বন
  • (ii) কৃত্রিম বন

(i) প্রাকৃতিক বন

যে বন কোনো মানুষের সহায়তা ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠে, তাকে প্রাকৃতিক বন বলা হয়। পৃথিবীর বেশির ভাগ বন প্রাকৃতিকভাবে গঠিত। যেমন — আমাজন বন, সুন্দরবন ইত্যাদি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বন হলো চট্টগ্রামের পাহাড়ি বনাঞ্চল। সাধারণত যেখানে বৃষ্টিপাত বেশি হয়, সেখানে প্রাকৃতিক বন বেশি দেখা যায়। এসব বন পুরোপুরি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়, এতে মানুষের কোনো হাত থাকে না।

(ii) কৃত্রিম বন

কৃত্রিম বন হলো মানুষের হাতে তৈরি বন। এখানে প্রাকৃতিক কোনো কারণ থাকে না, সম্পূর্ণভাবে মানুষের উদ্যোগে গাছপালা রোপণ করা হয়। আমাদের দেশে কৃত্রিম বন তৈরি করতে যথেষ্ট পরিমাণ জমি ও মূলধনের প্রয়োজন। সাধারণত অনাবাদী জমি বা পতিত জমিতে কৃত্রিম বন গড়ে তোলা হয়।

সামাজিক বনায়ন

কৃত্রিম বনায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সামাজিক বনায়ন। এটি সাধারণত গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়। গ্রামের মানুষ একত্রে গাছ লাগিয়ে বন তৈরি করে। এতে পরিবেশ রক্ষা হয় এবং মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটে। বাংলাদেশের প্রথম সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি শুরু হয় নোয়াখালী জেলায়, পরে কক্সবাজার ও অন্যান্য জেলায়ও এ কর্মসূচি ছড়িয়ে পড়ে।

কৃত্রিম বনের প্রকারভেদ

কৃত্রিম বন আবার দুই প্রকার হতে পারে:

  • (i) একক চাষ
  • (ii) বহু চাষ

(i) একক চাষ

যখন একই জমিতে একই প্রজাতির গাছের চারা লাগানো হয়, তখন তাকে একক চাষ বলা হয়। যেমন — পুরো জমিতে শুধু মেহগনি বা শুধু সেগুন গাছ লাগানো।

(ii) বহু চাষ

যে জমিতে একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়, তাকে বহু চাষ বলা হয়। যেমন — একই জমিতে মেহগনি, আম, জাম, কাঁঠাল ও নারকেল একসাথে লাগানো। এতে পরিবেশের ভারসাম্য ভালো থাকে এবং ফল, কাঠ, ছায়া—সবকিছু একসাথে পাওয়া যায়।

বনায়নের উপকারিতা

  • পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • প্রাণীদের আশ্রয় ও খাদ্য সরবরাহ করে।
  • মানুষের চাহিদা যেমন — কাঠ, ফল, জ্বালানি, ঔষধ ইত্যাদি পূরণ করে।
  • বায়ু বিশুদ্ধ করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে।
  • বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি করে।
  • মাটির ক্ষয় রোধ করে।

উপসংহার

সবশেষে বলা যায়, বনায়ন আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি পরিবেশকে রক্ষা করে, জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখে এবং মানুষের চাহিদা পূরণ করে। আমাদের দেশে বনভূমির পরিমাণ এখনও প্রয়োজনের তুলনায় কম, তাই প্রত্যেকের উচিত গাছ লাগানোর অভ্যাস তৈরি করা। সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক বন আমাদের দেশের গর্ব, যা UNESCO দ্বারা স্বীকৃত।

তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে বনায়নের কাজে এগিয়ে আসি এবং আমাদের পরিবেশকে আরও সবুজ ও সুন্দর করে তুলি। আরও শিক্ষামূলক ও তথ্যভিত্তিক লেখা পড়তে ভিজিট করুন StudyTika.com

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.