দাইয়ুস কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | দাইয়ুসের বৈশিষ্ট্য | দাইয়ুসের সংক্ষিপ্ত অর্থ

আপনি কি কখনো ভেবেছেন, কেন কিছু পুরুষ পরিবারের নারীদের অশালীন আচরণে উদাসীন থাকে? বা কেন কিছু ব্যক্তি নিজের পরিবারের সম্মান রক্ষায় সচেতন থাকে না? এই বিষয়টি কেবল ব্যক্তিগত নয়, এটি আমাদের সমাজ ও ধর্মের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। আজ আমরা এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যা অনেকেই জানে না, কিন্তু জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুরো পোস্টটি পড়লেই আপনি বুঝতে পারবেন দাইয়ুস কাকে বলে এবং কেন এটি ইসলামে গুরুতর বিবেচিত।

দাইয়ুস কাকে বলে?(সহজ সংজ্ঞা)

দাইয়ুস কাকে বলে?

দাইয়ুস বা দাইউস (আরবি: دَيُّوث) একটি আরবি শব্দ। এর দ্বারা এমন পুরুষকে বোঝানো হয়, যে তার পরিবারের নারীদের অশালীন আচরণে উদাসীন থাকে বা তা মেনে নেয়। অর্থাৎ, যার মধ্যে তার পরিবারের নারী সদস্যদের সম্মান রক্ষার অনুভূতি ও দায়িত্ববোধের অভাব রয়েছে।

দাইয়ুসের সংক্ষিপ্ত অর্থ

দাইয়ুস হলো সেই ব্যক্তি, যে নিজের পরিবারে অশ্লীলতা, ব্যভিচার বা বেহায়াপনার কাজকে প্রশ্রয় দেয় বা তা নিয়ে উদাসীন থাকে। সে নিজ স্ত্রী বা পরিবারের নারীদের সম্ভ্রম রক্ষায় যত্নবান নয়, বরং এসব কাজকে সহ্য করে বা মেনে নেয়।

দাইয়ুসের বৈশিষ্ট্য

  • সে নিজের স্ত্রী বা পরিবারের নারীদের অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার সুযোগ দেয়।
  • স্ত্রী-সন্তানদের পবিত্র জীবনযাপনের প্রতি তার কোনো যত্ন থাকে না।
  • সে এমন এক ব্যক্তি, যার মনে লজ্জা ও আত্মসম্মানবোধের অভাব রয়েছে।
  • নিজ পরিবারের সদস্যদের ভুল বা অন্যায় কাজ দেখে প্রতিবাদ করে না।

ইসলামে দাইয়ুসের অবস্থা

ইসলামে দাইয়ুস হওয়া একটি গুরুতর পাপ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দাইয়ুস ব্যক্তিকে জাহান্নামী বলে ঘোষণা করেছেন। কারণ, যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রী বা পরিবারের নারীদের অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের সুযোগ দেয়, সে বড় গুনাহগার।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন —

“তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন: ১) যে মদ তৈরি করে, ২) যে মাতা-পিতার অবাধ্য, ৩) এবং যে ব্যক্তি (দাইয়ুস) নিজের স্ত্রীকে ব্যভিচারের সুযোগ দেয়।” (আহমাদঃ ৫৮৩৯)

দাইয়ুসদের পরিণতি

যে ব্যক্তি তার স্ত্রী বা পরিবারের নারী সদস্যদের অশালীন কাজে জড়াতে দেয়, অথচ সে কিছুই মনে করে না, তাকে দাইয়ুস বলা হয়। এমন ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ঘৃণিত। ইমাম যাহাবী (রহঃ) বলেছেন —

“দাইয়ুস সেই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর অন্যায় কাজ সম্পর্কে জানে, কিন্তু ভালোবাসা, ঋণ বা ভয়ের কারণে কিছু বলে না। যার মধ্যে আত্মসম্মানবোধ নেই, সে প্রকৃত অর্থে দুর্বল ঈমানের অধিকারী।” (যাহাবী, কিতাবুল কাবায়েরঃ ১/৫০)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরও বলেছেন —

“দাইয়ুস কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (নাসাঈঃ ২৫৬২, আহমাদ, মিশকাতঃ ৩৬৫৫; সহীহুল জামেঃ ৩০৫২)

দায়িত্বশীলতা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলামে প্রত্যেক মানুষকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্র — প্রত্যেকেই তাদের অধীনস্থদের ব্যাপারে জবাবদিহি করবে।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন —

“প্রত্যেক মানুষই দায়িত্বশীল। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল। একজন পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, আর স্ত্রী তার স্বামী ও সন্তানের দায়িত্বশীল। তাই প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।” (বুখারীঃ ৮৯৩)

আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর সতর্কবাণী

রাসূল (সাঃ) বলেছেন —

“তিন প্রকার লোকদের জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন: ১) অনবরত মদ পানকারী, ২) পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি, ৩) দাইয়ুস ব্যক্তি — যে নিজের পরিবারের অশ্লীলতাকে মেনে নেয়।” (আহমাদ, সহীহুল জামেঃ ৩০৪৭)

আরও এক হাদীসে এসেছে —

“তিনজন ব্যক্তির দিকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকাবেন না — ১) যে পিতা-মাতার অবাধ্য, ২) যে নারী পুরুষদের অনুকরণ করে সাজে, ৩) এবং দাইয়ুস ব্যক্তি।” (নাসায়ীঃ ২৫৬২)

উপসংহার

দাইয়ুস হওয়া ইসলামে অত্যন্ত বড় গুনাহ। একজন মুসলমানের উচিত নিজের পরিবারের নারী সদস্যদের ইজ্জত ও চরিত্র রক্ষা করা এবং অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখা। যে ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করে না, সে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করবে। তাই আমাদের সবার উচিত নিজেদের পরিবারকে ইসলামের নিয়মে পরিচালিত করা এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখা।

দাইয়ুস হওয়া ইসলামে একটি গুরুতর পাপ এবং এটি পরিবারের নারীদের সম্মান রক্ষার গুরুত্বকে তুলে ধরে। প্রতিটি মুসলমানের উচিত নিজের পরিবারের নারীদের সম্মান রক্ষা করা এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখা। আপনি যদি আরও ইসলামিক শিক্ষা, সহজ ব্যাখ্যা এবং গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় বিষয় জানতে চান, তবে ভিজিট করুন StudyTika.com — এখানে পাবেন সবকিছু সহজ ও সুন্দর ভাষায়। আরও অনেক পোস্ট পড়ে আপনার জ্ঞান বাড়ান এবং নিজের জীবনকে আরও সুন্দর করুন।

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.