তুমি কি কখনও ভেবেছ, আলো কেন রঙিন হয়? অথবা কেন একেকটা মৌল উত্তপ্ত করলে একেক রঙের শিখা দেখা যায়? এগুলোর পেছনে আছে এক দারুণ বৈজ্ঞানিক রহস্য — পারমাণবিক বর্ণালী! শুনতে কঠিন লাগলেও চিন্তা কোরো না, আজ আমরা একদম সহজভাবে জানবো এই বিষয়টি। শুধু একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ো, তাহলেই বুঝে যাবে বিজ্ঞান কত সুন্দরভাবে কাজ করে আমাদের চারপাশে।
পারমাণবিক বর্ণালী কাকে বলে?
পরমাণুর ইলেকট্রন শক্তি শোষণ বা বিকিরণ করে উচ্চ বা নিন্ম কক্ষপথে আসে। আর এর জন্য ইলেকট্রন হতে এক প্রকার বর্ণালি সৃষ্টি হয়। যা পারমানবিক বর্ণালি নামে পরিচিত।
আরো বিস্তারিত বললে, পারমাণবিক বর্ণালী হলো এমন এক ধরনের বর্ণালী যা পরমাণু থেকে উৎপন্ন হয়। যখন কোনো গ্যাস বা বাষ্পকে খুব বেশি তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করা হয় বা তার মধ্য দিয়ে বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ প্রবাহিত করা হয়, তখন সেই পদার্থ থেকে আলো নির্গত হয়। কিন্তু এই আলোতে সব ধরনের স্পন্দন-সংখ্যার আলো থাকে না।
যদি এই আলোকে প্রিজম বা অন্য কোনো অনুরূপ যন্ত্রের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়, তাহলে যে বর্ণালী তৈরি হয় তাতে কিছু নির্দিষ্ট রেখা দেখা যায়। এই রেখাগুলোর অবস্থান বা স্পন্দন সংখ্যা সবসময় নির্দিষ্ট থাকে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই একক রেখাগুলো মূলত পরমাণু থেকেই উৎপন্ন হয়। তাই একে বলা হয় পারমাণবিক রেখা বর্ণালী বা সহজভাবে পারমাণবিক বর্ণালী (Atomic Spectrum)।
আণবিক বর্ণালী (Molecular Spectrum)
অন্যদিকে, বর্ণালীতে কিছু ক্ষেত্রে যৌথ রেখা বা band spectra দেখা যায়। এগুলো আসলে খুব কাছাকাছি অবস্থান করা অনেকগুলো একক রেখার সমষ্টি। এগুলো অণু থেকে উৎপন্ন হয়, তাই একে বলা হয় আণবিক বর্ণালী (Molecular Spectrum)।
সাধারণত যৌগের বর্ণালী এভাবে নেওয়া হয় না। তবে বিদ্যুৎচৌম্বকীয় বিকিরণের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে যৌগের বর্ণালী গ্রহণ করা হয়। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে, প্রতিটি মৌলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রেখা বর্ণালী রয়েছে।
বর্ণালীর রঙিন রেখা ও শক্তির সম্পর্ক
বর্ণালীর প্রতিটি রঙিন রেখা নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য বা কম্পাঙ্কের আলো শক্তির সাথে সম্পর্কিত। এজন্য বিভিন্ন মৌল উত্তপ্ত করলে তাদের আয়ন থেকে আলাদা রঙের শিখা দেখা যায়। যেমনঃ
- সোডিয়াম আয়ন → সোনালী হলুদ শিখা
- পটাশিয়াম আয়ন → হালকা বেগুনি শিখা
- ক্যালসিয়াম আয়ন → ইটের মতো লাল শিখা
পরমাণুতে কীভাবে বর্ণালী সৃষ্টি হয়
বর্ণালী হলো বিভিন্ন রঙের আলোর একটি সমষ্টি। যখন কোনো পরমাণুর উপর অতিবেগুনি, দৃশ্যমান বা অবলোহিত আলোর শক্তি পড়ে, তখন সেই পরমাণুর ইলেকট্রন এক শক্তিস্তর থেকে অন্য শক্তিস্তরে সরে যায়। ইলেকট্রন যদি নিচের স্তর থেকে উপরের স্তরে ওঠে, তাহলে এটি শক্তি শোষণ করে।
আবার যদি উপরের স্তর থেকে নিচের স্তরে নামে, তখন এটি শক্তি বিকিরণ করে। ইলেকট্রন যখন উচ্চ শক্তিস্তর থেকে নিচের স্তরে ফিরে আসে, তখন যে আলো বিকিরণ হয়, সেটিকে প্রিজমের মাধ্যমে পাঠালে আমরা পারমাণবিক বর্ণালী দেখতে পাই।
সহজভাবে বলা যায়
যখন পরমাণুর ইলেকট্রন শক্তি পরিবর্তনের কারণে আলো নির্গত বা শোষণ করে, তখন যে নির্দিষ্ট রেখাযুক্ত আলো দেখা যায়, সেটিই হলো পারমাণবিক বর্ণালী।
বিজ্ঞান সব সময়ই আমাদের আশ্চর্য করে তার নতুন নতুন রহস্য দিয়ে। পারমাণবিক বর্ণালীও এমনই এক চমৎকার বিষয়, যা আমাদের জানায় পরমাণুর ভেতরের রঙিন জগতের গল্প। আশা করি, এই পোস্ট থেকে বিষয়টি তোমার কাছে অনেক সহজ হয়ে গেছে। 💡 আরও এমন সহজ ও মজার শিক্ষামূলক পোস্ট পড়তে অবশ্যই ভিজিট করো আমাদের ওয়েবসাইট StudyTika.com — যেখানে শেখা হয় মজা করে! 🌟