বন্যা কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | বন্যার প্রভাব | বন্যার কারণ | বন্যার প্রকারভেদ

 পৃথিবীতে কিছু প্রাকৃতিক ঘটনা আছে যেগুলো আমাদের জীবনে একদিকে যেমন ভয় ও কষ্ট নিয়ে আসে, অন্যদিকে শেখায় অনেক কিছু। এর মধ্যে “বন্যা” এমন একটি বিষয়, যা আমরা প্রায়ই খবরের কাগজে দেখি, টেলিভিশনে শুনি, কিংবা নিজের চোখে দেখি। কিন্তু আসলে বন্যা কাকে বলে? কেন এটি ঘটে? আর এর প্রকারভেদ কত রকম হতে পারে? 🤔 এই পোস্টে আমরা খুব সহজ ভাষায় জানব বন্যা সম্পর্কে সবকিছু — যেন আপনি একবার পড়লেই পুরোটা বুঝতে পারেন। তাই চলুন ধীরে ধীরে জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের জীবন ও প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত।

বন্যা কাকে বলে?(সহজ সংজ্ঞা)

বন্যা কাকে বলে?

পৃথিবীর স্থলভাগ জলপ্লাবিত হলে তাকে বন্যা বলে।

আরো বিস্তারিত বললে, বন্যা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এটি এমন একটি অবস্থা যখন নদী, খাল, বিল বা অন্যান্য জলাশয়ের পানি স্বাভাবিক মাত্রা অতিক্রম করে আশেপাশের এলাকা প্লাবিত করে ফেলে। প্রতি বছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই বন্যা সংঘটিত হয় এবং এতে মানুষ, প্রাণী, ফসল ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

বন্যার সংজ্ঞা

বন্যা হলো এমন একটি অবস্থা যখন নদী বা খালের পানি স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে বেশি হয়ে আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করে ফেলে। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে অন্যতম। বন্যার কারণে ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, রাস্তা-ঘাট, ও জীবজগৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের মতে বন্যার সংজ্ঞা

  • Chow (১৯৫৬): বন্যা হলো তুলনামূলকভাবে উচ্চতর পানি প্রবাহ যা প্রাকৃতিক নদী বা চ্যানেলের পাড় প্লাবিত করে।
  • Word: বন্যা হলো এমন পানি প্রবাহ যা স্বাভাবিক অবস্থায় প্লাবনমুক্ত ভূমিকে প্লাবিত করে।
  • Rostredt: বন্যা হলো অস্বাভাবিক পানি প্রবাহ যা প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম পানি প্রবাহের চ্যানেল প্লাবিত করে।

সুতরাং, বন্যা এমন একটি প্রক্রিয়া যা অতিরিক্ত পানি প্রবাহের মাধ্যমে শুকনো ভূমিকে প্লাবিত করে দেয়। নদী, খাল, বিল কিংবা সমুদ্রের পানি বৃদ্ধির কারণেও বন্যা সৃষ্টি হয়।

বন্যার প্রভাব

বন্যার কারণে মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে যায়। কৃষিজমি ও ফসল নষ্ট হয়, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়, খাদ্য সংকট দেখা দেয় এবং মানুষকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হতে হয়। বন্যার কারণে পানি, মাটি ও বায়ু দূষিত হয় এবং সমাজে অর্থনৈতিক ক্ষতি ঘটে।

বন্যার কারণ

বন্যা সাধারণত অতিবৃষ্টি, নদী ভরাট, বাঁধ ভাঙা, ঘূর্ণিঝড়, সুনামি এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে ঘটে। এছাড়াও মানুষের অজ্ঞতাপূর্ণ কার্যকলাপ যেমন বন ধ্বংস, নদীর তীর দখল, ও জলাধার ভরাট করাও বন্যার কারণ হয়ে থাকে।

বন্যার প্রকারভেদ

বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে বন্যাকে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –

  • স্বাভাবিক বন্যা
  • অস্বাভাবিক বন্যা

স্বাভাবিক বন্যা

বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে যে বন্যা সৃষ্টি হয় তাকে স্বাভাবিক বন্যা বলে। এতে সাধারণত ক্ষয়ক্ষতি খুব বেশি হয় না। বরং কৃষিকাজে উপকার পাওয়া যায়, কারণ এ ধরনের বন্যা কৃষিজমিতে উর্বরতা বৃদ্ধি করে।

অস্বাভাবিক বন্যা

স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি পানি প্রবাহের ফলে যে বন্যা হয়, তা অস্বাভাবিক বন্যা নামে পরিচিত। এই বন্যায় ঘরবাড়ি, রাস্তা, ফসলের ক্ষেত, পশুপাখি সবকিছু ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অস্বাভাবিক বন্যার উপপ্রকার

  • নদী বন্যা
  • আকস্মিক বন্যা
  • বৃষ্টিজনিত বন্যা
  • ঘূর্ণিঝড় বা সাগর বন্যা

নদী বন্যা

নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে যখন আশেপাশের এলাকা প্লাবিত করে, তখন তাকে নদী বন্যা বলে। এটি বর্ষা মৌসুমে বেশি দেখা যায়।

আকস্মিক বন্যা

হঠাৎ ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্টি হওয়া বন্যাকে আকস্মিক বন্যা বলে। সাধারণত বর্ষা শুরু হওয়ার আগে উত্তরাঞ্চল ও সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় এটি ঘটে।

বৃষ্টিজনিত বন্যা

অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে নদী, খাল, বিল ও মাঠ-ঘাটে পানি জমে বন্যা সৃষ্টি হলে তাকে বৃষ্টিজনিত বন্যা বলে।

ঘূর্ণিঝড় বা সাগর বন্যা

ঘূর্ণিঝড়, সুনামি বা সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে উপকূলীয় এলাকায় যে বন্যার সৃষ্টি হয়, তাকে সাগর বন্যা বলে। বাংলাদেশে ১৯৭০, ১৯৯১ এবং ২০০০ সালে ভয়াবহ সাগর বন্যা হয়েছিল।

স্থায়িত্ব অনুযায়ী বন্যার প্রকার

  • স্বল্পমেয়াদি বন্যা
  • দীর্ঘমেয়াদি বন্যা
  • আকস্মিক বন্যা

স্বল্পমেয়াদি বন্যা

যে বন্যা ১ থেকে ২ দিন স্থায়ী থাকে, তাকে স্বল্পমেয়াদি বন্যা বলে। এতে জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হয়।

দীর্ঘমেয়াদি বন্যা

যে বন্যা এক থেকে দুই সপ্তাহ বা তার বেশি স্থায়ী হয়, তাকে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা বলে। এতে জনজীবন সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যায়।

আকস্মিক বন্যা

হঠাৎ ভারী বর্ষণ বা বাঁধ ভেঙে কয়েক ঘণ্টার জন্য সৃষ্ট বন্যাকে আকস্মিক বন্যা বলা হয়।

প্লাবিত এলাকার ভিত্তিতে বন্যার প্রকার

  • উপকূলীয় বন্যা
  • শুষ্ক নদীর বন্যা
  • নদী বন্যা
  • শহর বন্যা

উপকূলীয় বন্যা

সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় সাগরের পানি বৃদ্ধি বা সুনামির কারণে যে বন্যা সৃষ্টি হয়, তাকে উপকূলীয় বন্যা বলে।

শুষ্ক নদীর বন্যা

নদীর তলদেশে পলি জমে পানি ধারণক্ষমতা কমে গেলে সামান্য বৃষ্টিতেই বন্যা দেখা দেয়।

নদী বন্যা

নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আশপাশের এলাকা প্লাবিত করলে তাকে নদী বন্যা বলা হয়। এটি সবচেয়ে সাধারণ বন্যা।

শহর বন্যা

অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাব, ও নর্দমা বন্ধ থাকলে শহরে পানি জমে বন্যা দেখা দেয়। এটি মূলত মানুষের তৈরি একটি সমস্যা।

বাংলাদেশে সংঘটিত বন্যার ধরন (বাংলাপিডিয়া, ২০০৩ অনুযায়ী)

  • মৌসুমী বন্যা: বর্ষাকালে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট বন্যা।
  • আকস্মিক বন্যা: হঠাৎ ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট বন্যা।
  • জোয়ার সৃষ্ট বন্যা: নদীর জোয়ারের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যা।

উপসংহার

বন্যা আমাদের জীবনের এক অনিবার্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটি মানুষের জীবনে কষ্ট, ক্ষতি এবং দুর্ভোগ বয়ে আনে। তবে আমরা সচেতনতা, পরিকল্পনা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর ক্ষতি অনেকাংশে কমাতে পারি।

আপনি যদি এমন আরও শিক্ষামূলক ও সহজ ভাষার লেখা পড়তে চান, তাহলে অবশ্যই ভিজিট করুন StudyTika.com — এখানে আপনি পাবেন শিক্ষার জন্য দরকারি নানা তথ্য সহজভাবে।

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.