প্রত্যয় কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | প্রত্যয়ের প্রকারভেদ | প্রত্যয় ও বিভক্তির পার্থক্য

প্রিয় পাঠক, আমাদের ভাষার সৌন্দর্য বুঝতে হলে 'প্রত্যয়' সম্পর্কে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যয় হলো এমন একটি শব্দাংশ, যা মূল শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি করে। উদাহরণ হিসেবে, 'নাচ্' এর সাথে 'অন' যোগ করে আমরা পেয়েছি 'নাচন'। 

আজকের পোস্টে আমরা প্রত্যয় ও তার প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি, আপনি পুরো পোস্টটি পড়ে জানতে পারবেন কিভাবে প্রত্যয় বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করে।

প্রত্যয় কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | প্রত্যয়ের প্রকারভেদ | প্রত্যয় ও বিভক্তির পার্থক্য

প্রত্যয় কাকে বলে?

প্রত্যয় হলো এমন কিছু ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি যা কোনো শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি করে। যেমন: নাচ্ + অন = নাচন, বড় + আই = বড়াই। প্রত্যয় যোগ হলে একটি শব্দের অর্থ বদলে যায়।

প্রত্যয়ের প্রকারভেদ

প্রত্যয়কে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়: কৃৎ প্রত্যয় এবং তদ্ধিত প্রত্যয়। কৃৎ প্রত্যয় ক্রিয়া শব্দের সাথে যুক্ত হয় আর তদ্ধিত প্রত্যয় নাম শব্দের সাথে যুক্ত হয়।

কৃৎ প্রত্যয়

যখন কোনো ক্রিয়া শব্দের শেষে প্রত্যয় যুক্ত হয়, তখন তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলা হয়। যেমন: √কৃত + তব্য = কর্তব্য। কৃৎ প্রত্যয় দুটি প্রকার—বাংলা কৃৎ প্রত্যয় এবং সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়।

বাংলা কৃৎ প্রত্যয়

বাংলা কৃৎ প্রত্যয় যেমন—অ, আ, অন, ই, ঈ ইত্যাদি। উদাহরণ: নাচন, বেচা, ঝুলন ইত্যাদি।

সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়

সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয় যেমন—ক্ত, তব্য, ইষ্ণু ইত্যাদি। উদাহরণ: দর্শন, লিখিত, উক্ত ইত্যাদি।

তদ্ধিত প্রত্যয়

নাম প্রকৃতির সাথে যুক্ত প্রত্যয়কে তদ্ধিত প্রত্যয় বলা হয়। তদ্ধিত প্রত্যয় বাক্যে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা যায়। বাংলা ভাষায় তদ্ধিত প্রত্যয় মূলত তিন প্রকার: বাংলা, বিদেশি এবং তৎসম।

বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয়

বাংলা তদ্ধিত প্রত্যয় যেমন—আ, আই, ইয়া, অনা ইত্যাদি। উদাহরণ: চোরা, পাগলামি, মিঠাই, ঢালু ইত্যাদি।

বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয়

বিদেশি তদ্ধিত প্রত্যয় যেমন—ওয়ালা, দার, বাজ ইত্যাদি। উদাহরণ: দারোয়ান, কারিগর, দেনাদার ইত্যাদি।

তৎসম তদ্ধিত প্রত্যয়

তৎসম তদ্ধিত প্রত্যয় যেমন—ইমা, তম, তা ইত্যাদি। উদাহরণ: গুণী, মেধাবী, সামাজিক ইত্যাদি।

প্রত্যয় ও বিভক্তির পার্থক্য

প্রত্যয় নতুন শব্দ গঠনে ব্যবহার হয়, আর বিভক্তি বাক্যে বিভিন্ন শব্দের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সহায়ক। উদাহরণ: স্কুল+এ = স্কুলে (বিভক্তি ‘এ’ যোগ হয়েছে)।

গুণ ও বৃদ্ধি

প্রত্যয় যোগে শব্দের রূপান্তর ঘটে। গুণ হয় তিনভাবে—ই এর স্থলে এ, উ এর স্থলে ও, ঋ এর স্থলে অর হয়। উদাহরণ: √চিন + আ = চেনা, √ধু + আ = ধোয়া। বৃদ্ধিতে শব্দের প্রথম ধ্বনি বদলায়। উদাহরণ: পচ্ + অ = পাচক।

ইৎ কি?

ইৎ হলো সংস্কৃত প্রত্যয়ের বিশেষ অংশ যা শব্দের কিছু অংশ বাদ যায়। উদাহরণ: সহচর+ষ্ণ = সাহচর্য (এখানে ‘ষ্ণ্য’ প্রত্যয়ের ‘ষ’ এবং ‘ণ’ বাদ গেছে)।

উপসংহার

এইভাবে প্রত্যয় ও প্রকৃতি একসাথে মিলিয়ে নতুন শব্দ তৈরি করে এবং ভাষার ব্যাকরণ সমৃদ্ধ করে। এগুলোর প্রয়োগ বুঝলে বাংলা ভাষার গঠন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

সুতরাং, প্রত্যয় এবং তার বৈচিত্র্য জানার মাধ্যমে আমরা বাংলা ভাষার গঠন বুঝতে পারি। প্রত্যয় নতুন শব্দ তৈরি করে এবং ভাষার ব্যাকরণকে আরো সুন্দর করে। আশা করি, আপনি এই বিষয়টি ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। আরও শিক্ষামূলক পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটে আসতে ভুলবেন না!

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.