গড় একটি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক ধারণা যা আমাদের বিভিন্ন সমজাতীয় রাশির মোট যোগফলকে রাশির মোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে একটি সাধারণ মান নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। এটি পরিসংখ্যান ও দৈনন্দিন জীবনে বিশ্লেষণের জন্য অপরিহার্য। এই ব্লগপোস্টে আমরা গড়ের সংজ্ঞা, উদাহরণ এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে সহজভাবে আলোচনা করব।
গড় কাকে বলে?
গড় একটি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক পদ্ধতি, যা আমাদের বিভিন্ন সমজাতীয় রাশিগুলোর মোট যোগফলকে রাশির মোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে প্রাপ্ত মান বুঝতে সহায়তা করে। এর ফলে আমরা একটি সাধারণ মান নির্ধারণ করতে পারি, যা আমাদের বিভিন্ন গাণিতিক ও পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণে সাহায্য করে।
গড় এর উদাহরণ
সুমি, নয়ন, মাহি, সুমন ও রিনার বয়স যথাক্রমে ১০, ১২, ১৩, ১১, ও ১৪ বছর। তাদের গড় বয়স কত ?
সমাধান:
এখানে রাশিগুলোর যোগফল = (১০+১২+১৩+১১+১৪) বছর = ৬০ বছর
রাশিগুলোর সংখ্যা = ৫
সুতরাং বয়সের গড় = ৬০ বছর ÷ ৫ = ১২ বছর।
গড় বয়স ১২ বছর।
গড়ের ব্যবহার
পরিসংখ্যানের বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা যথাক্রমে Standard Deviation, Coefficient of Correlation নির্ণয় করতে গড় ব্যবহৃত হয়। Z স্কোর, T স্কোর নির্ণয়ের জন্য গড় ব্যবহৃত হয়। প্রকৃত কেন্দ্রীয় প্রবণতা গড়ের দ্বারা নির্ণয় করা যায়। নর্মাল বন্টনের ক্ষেত্রে গড়ের ব্যবহার হয়। স্কোরগুলি গড় মানের চারদিকে প্রতিসমভাবে বিন্যস্ত হয়।
গড় এর প্রকারভেদ
গড় তিন প্রকার। যথা:
- গাণিতিক গড় (Arithmetic mean)
- গুণিতক গড় (Geometric mean)
- তরঙ্গ গড় (Harmonic mean)
গড় ব্যবহারের সুবিধা
(১) নির্ভরযোগ্যতা বেশি: যেহেতু গড় নির্ণয় করার সময় বন্টন সমস্ত স্কোর ব্যবহার করা হয়, তাই গড়ের নির্ভরযোগ্যতা অনেক বেশি।
(২) সহজে নির্ণয় করা যায়: সমজাতীয় স্কোরগুলি যােগ করে যোগফলকে মােট স্কোর সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে সহজে গড় নির্ণয় করা যায়।
(৩) স্কোরগুলো ক্রমানুযায়ী সাজানো প্রয়োজন হয় না: গাণিতিক গড় নির্ণয় করার সময় স্কোর গুলিকে তাদের ক্রমানুযায়ী সাজানো প্রয়ােজন হয় না।
(৪) তুলনামূলক আলোচনা করতে: গড়ের মধ্যে যেন কোনো দলের দুজন শিক্ষার্থীর মধ্যে তুলনা করা যায় ঠিক তেমনি দুটি বা তার বেশি দলের মধ্যে তুলনা করা যায়।
(৫) প্রতিনিধিত্ব: একটি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে রাশিই তথ্য মালার প্রতিটি রাশি ব্যবহৃত হয়। এজন্য গড়কে রাশিতথ্য মালার প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য করা যায়।
(৬) অন্যান্য গাণিতিক সমাধান: আদর্শ বিচ্যুতি, সহ-সংগতি ইত্যাদির মান নির্ণয় করতে গড়ের ব্যবহার হয়।
গড় ব্যবহারের অসুবিধা
(১) স্কোরের প্রতিটি মানুষের দ্বারা প্রভাবিত: কোন রাশিমালা একটি তথ্য অনুপস্থিত থাকলে গড় বা গাণিতিক গড় নির্ণয় করা যায় না।
(২) সময়সাপেক্ষ পদ্ধতি: গাণিতিক গড় নির্ণয় করতে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগে।
(৩) পর্যবেক্ষণ দ্বারা গড় নির্ণয় করা যায় না: শুধুমাত্র তথ্যের পর্যবেক্ষণের দ্বারা গড় নির্ণয় করা যায় না।
(৪) অস্বাভাবিক বণ্টনে গড় সঠিক পদ্ধতি নয়: যখন বণ্টনটি অধিক মাত্রায় অস্বাভাবিক হয় তখন কেন্দ্রীয় প্রবণতার সঠিক পরিমাপ পদ্ধতি গাণিতিক গড় নয়।
(৫) মুক্ত শ্রেণীর ক্ষেত্রে: Open Ended Class বা মুক্ত প্রান্ত শ্রেণিযুক্ত পরিসংখ্যা বিভাজনের ক্ষেত্রে গড়ের মান সঠিক রূপ নির্ধারণ করা যায় না।
গড় এর সংজ্ঞা
গড় কাকে বলে: ’’সমজাতীয় রাশিমালা অন্তর্ভুক্ত রাশিগুলোর সমষ্টিকে রাশির মােট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে প্রাপ্ত ভাগফলকে গড় বলে।’’
আবার, এক জাতীয় একাধিক রাশির সমষ্টিকে উক্ত রাশিগুলোর মোট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাকে ঐ রাশিগুলোর গড় বলে।
যেমন, সুজন এর বয়স ৩২ বছর। মিরাজ এর বয়স ২৭ বছর এবং সোহান এর বয়স ২৮ বছর। তাহলে এই তিনজনের = ৩২+২৭+২৮=৮৭ বছর।
অতএব এই তিনজন বেক্তির বয়সের গড় = ৮৭ / ৩ = ২৯ বছর।
গড় আমাদের জীবনে সিদ্ধান্ত নিতে, তুলনা করতে এবং গাণিতিক বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে। গড়ের আরো বিষয়বস্তু ও গণিতের বিভিন্ন ধারণা সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের অন্য পোস্টগুলো পড়ুন।