মৃতকে কবরে রাখার দোয়া ও দাফনের শেষ পর্যন্ত যেসব সুন্নতঃ মৃত্যু আমাদের জীবনের এক অনিবার্য সত্য। এটি এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে আমরা অনেক সময় চিন্তা করি না, কিন্তু এটি আমাদের সবার জন্যই অবশ্যম্ভাবী। প্রতিটি প্রাণীকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। পবিত্র কোরআনের আয়াতে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে মৃত্যুর গুরুত্ব এবং এর পরবর্তী করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই ব্লগে আমরা জানবো, একজন মুসলমানের মৃত্যুর পর তার প্রতি জীবিতদের কী কী দায়িত্ব থাকে এবং দাফন প্রক্রিয়া কীভাবে সুন্নত মোতাবেক সম্পন্ন করতে হয়। তাই পুরো ব্লগটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, যাতে আপনি এই বিষয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।
মৃত্যু: অবধারিত সত্য
মৃত্যু এক অবধারিত সত্য, যা থেকে কেউ পালাতে পারবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা যেখানেই থাকো (একদিন না একদিন) মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, চাই তোমরা সুরক্ষিত কোনো দুর্গে থাকো না কেন।” (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৮)
মৃত ব্যক্তির প্রতি মুসলমানদের দায়িত্ব
কোনো মুসলমান মারা গেলে অপর মুসলমানের ওপর তার গোসল, কাফন, জানাজা, জানাজা বহন ও দাফন করানোর দায়িত্ব আরোপিত হয়। এটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য হাদিসে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত আলী রা.-কে বলেছেন, “হে আলী! তিনটি ক্ষেত্রে বিলম্ব করো না—(১) নামাজের সময় হলে তা আদায় করতে দেরি করো না, (২) মৃত ব্যক্তির জানাজা সম্পন্ন করতে দেরি করো না, (৩) কোনো অবিবাহিত মেয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র পেলে তার বিয়ে দিতে দেরি করো না।” (তিরমিজি: ১/২০৬)
মুসলমানের অধিকার
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, “এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ছয়টি অধিকার রয়েছে—
- দেখা হলে সালাম দেবে।
- ডাকলে সাড়া দেবে।
- সৎ পরামর্শ চাইলে তা দেবে।
- হাঁচি দিলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে।
- অসুস্থ হলে সেবা করবে।
- মৃত্যুবরণ করলে তার জানাজায় শরিক হবে।” (মুসলিম: ২১৬২)
জানাজা এবং দাফনের নিয়ম
মৃতের জানাজার সময় খাটিয়া বহন করে চুপচাপ থেকে আখিরাতের কথা চিন্তা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই সময় কোনো আওয়াজ বা শব্দ করা পছন্দ করতেন না।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, “নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জানাজার পেছনে শব্দ করা উচিত নয় এবং আগুন নেওয়া উচিত নয়।” (সুনানে আবু দাউদ: ৩১৬৩)
কবরস্থ করার সময় দোয়া
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখার সময় পড়তে হয়:
আরবি: بِسْمِ اللَّهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللَّهِ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ।
মাটি দেওয়ার সময় তিনবার দোয়া করতে হয়:
- প্রথম মুঠ মাটি দেওয়ার সময়: مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ (আমরা তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি)।
- দ্বিতীয় মুঠ মাটি দেওয়ার সময়: وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ (মাটিতেই তোমাদের পুনরায় ফিরিয়ে দেব)।
- তৃতীয় মুঠ মাটি দেওয়ার সময়: وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى (এ মাটি থেকে পুনরায় তোমাদের উঠিয়ে আনব)।
দোয়ার পর্যায়
আরবি
উচ্চারণ
বাংলা অর্থ
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা
بِسْمِ اللَّهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللَّهِ
বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ
আল্লাহর নামে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ধর্ম অনুযায়ী।
প্রথম মুঠ মাটি দেওয়ার সময়
مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ
মিনহা খালাকনাকুম
আমরা তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।
দ্বিতীয় মুঠ মাটি দেওয়ার সময়
وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ
ওফিহা নুঈদুকুম
মাটিতেই তোমাদের পুনরায় ফিরিয়ে দেব।
তৃতীয় মুঠ মাটি দেওয়ার সময়
وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى
ওয়ামিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা
এ মাটি থেকে পুনরায় তোমাদের উঠিয়ে আনব।
দাফনের পর
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَثَبِّتْهُ
আল্লাহুম্মা গফির লাহু ওয়া সাব্বিতহু
হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন এবং তাকে দৃঢ় রাখুন।
দোয়ার পর্যায় | আরবি | উচ্চারণ | বাংলা অর্থ |
---|---|---|---|
মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখা | بِسْمِ اللَّهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللَّهِ | বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ | আল্লাহর নামে এবং রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ধর্ম অনুযায়ী। |
প্রথম মুঠ মাটি দেওয়ার সময় | مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ | মিনহা খালাকনাকুম | আমরা তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। |
দ্বিতীয় মুঠ মাটি দেওয়ার সময় | وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ | ওফিহা নুঈদুকুম | মাটিতেই তোমাদের পুনরায় ফিরিয়ে দেব। |
তৃতীয় মুঠ মাটি দেওয়ার সময় | وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى | ওয়ামিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা | এ মাটি থেকে পুনরায় তোমাদের উঠিয়ে আনব। |
দাফনের পর | اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَثَبِّتْهُ | আল্লাহুম্মা গফির লাহু ওয়া সাব্বিতহু | হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন এবং তাকে দৃঢ় রাখুন। |
দাফনের পরের আমল
দাফন শেষে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও মাগফিরাত করতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, “তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তার স্থিরতার জন্য দোয়া করো, কারণ এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে।” (সুনানে আবু দাউদ: ৩২২১)
কবরে শোয়ানোর সুন্নত পদ্ধতি
মৃত ব্যক্তিকে ডান কাতে কিবলামুখী করে শোয়ানো সুন্নত। শুধু চেহারাকে কিবলামুখী করে চিৎ করে শোয়ানো সুন্নাহসম্মত নয়। এটি সুন্নাহবিরোধী এবং পরিবর্তন করা উচিত।
মাটি দেওয়ার পরে দোয়া
দাফনের পরে মৃত ব্যক্তির মাথার কাছে দাঁড়িয়ে সুরা বাকারার প্রথম কয়েকটি আয়াত এবং পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে শেষ দুটি আয়াত পড়া মুস্তাহাব। তবে এটি আবশ্যক নয়।
FAQ - মৃতের দাফন প্রক্রিয়া
উপসংহার
মৃত্যু একটি অবধারিত সত্য, আর মৃত ব্যক্তির প্রতি আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালন করে আমরা শুধু আমাদের ঈমানের প্রমাণ দিই না, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জন করি। তাই আসুন, আমরা সবাই এই দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করি।
আপনারা যদি ইসলামিক বিষয়, জীবনধারা এবং শিক্ষা সম্পর্কিত আরো দারুণ তথ্য পেতে চান, তাহলে StudyTika.com-এ ঘুরে দেখুন। এখানে আরও অনেক শিক্ষণীয় আর উপকারী বিষয় রয়েছে। নিয়মিত পড়ুন এবং নিজের জ্ঞান বাড়ান।
FAQ - মৃতের দাফন প্রক্রিয়া
উপসংহার
মৃত্যু একটি অবধারিত সত্য, আর মৃত ব্যক্তির প্রতি আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালন করে আমরা শুধু আমাদের ঈমানের প্রমাণ দিই না, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জন করি। তাই আসুন, আমরা সবাই এই দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করি।
আপনারা যদি ইসলামিক বিষয়, জীবনধারা এবং শিক্ষা সম্পর্কিত আরো দারুণ তথ্য পেতে চান, তাহলে StudyTika.com-এ ঘুরে দেখুন। এখানে আরও অনেক শিক্ষণীয় আর উপকারী বিষয় রয়েছে। নিয়মিত পড়ুন এবং নিজের জ্ঞান বাড়ান।