লঞ্চ দুর্ঘটনা : কারণ ও প্রতিকার রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

ভূমিকা: লঞ্চ দুর্ঘটনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আমাদের জানা দরকার। এই ব্লগে "লঞ্চ দুর্ঘটনা: কারণ ও প্রতিকার" সম্পর্কে একটি সুন্দর রচনা দেওয়া হয়েছে। আশা করি, এটি পড়ে আপনি অনেক কিছু জানতে পারবেন।

লঞ্চ দুর্ঘটনা : কারণ ও প্রতিকার রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

লঞ্চ দুর্ঘটনা : কারণ ও প্রতিকার রচনা 

ভূমিকা : বাংলাদেশের মানুষের জন্য নৌপথ এখনো একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। স্বাধীনতার পর এ যাবৎ দেশের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। তারপরও নৌপথের গুরুত্ব এতটুকুও কমে নি। দেশের মোট যাত্রীর ১৪-১৫ শতাংশ নৌ-পথে চলাচল করে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বলা চলে দিনের পর দিন কিংবা বর্তমানে লঞ্চ দুর্ঘটনা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে অসংখ্য জানমালের যেমন ক্ষতি হয়েছে তেমনি হাজার হাজার প্রাণহানির ঘটনায় কেবল আমাদের দেশেই নয় বহির্বিশ্বেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাই এ বিষয়ে এখনই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। 

লঞ্চ দুর্ঘটনার কারণ : লঞ্চ দুর্ঘটনার জন্য আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগকে প্রধানত দায়ী করি, কিন্তু সার্বিকভাবে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ও যাত্রীসাধারণ উভয়ের গণসচেতনতার অভাব, নৌ-পথের উন্নয়ন ও সংস্কারের অভাব, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, নৌ-পথের প্রতি সরকারের অবহেলা সহ অনেক ছোট-বড় কারণ নিহিত রয়েছে। যা আলোচনার দাবি রাখে। 

নৌ-পথের উন্নয়ন ও সংস্কারের অভাব : একটি বিষয় সত্য যে, গুরুত্বপূর্ণ এই নৌ-পথের উন্নয়ন ও সংস্কারের প্রতি সরকারগুলোর তেমন নজর দেওয়া হয়নি। সড়ক ও রেলপথের তুলনায় এ খাতে বাজেট বরাদ্দ ক্রমেই কমে যাচ্ছে। অথচ নদীপথ প্রকৃতির দান, যার নির্মাণে বাড়তি ব্যয় প্রয়োজন হয় না। তবে, এখানে সরাসরি লাভের সুযোগ কম থাকায় এটি উপেক্ষিত থেকে গেছে। এর পাশাপাশি, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘রোড লবি’ অত্যন্ত শক্তিশালী। এই লবির সঙ্গে জড়িত রয়েছে মোটরযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো, যাদের স্বার্থ সড়ক পথের সম্প্রসারণের সঙ্গে যুক্ত, কারণ তাতে তাদের যানবাহনের বিক্রি বাড়ে। সড়ক নির্মাণে সংশ্লিষ্টরাও কম প্রভাবশালী নন। অপরদিকে, নদীপথে তাৎক্ষণিক লাভের নিশ্চয়তা না থাকায় এটি তেমন গুরুত্ব পায়নি। এসব কারণেই দেশের নৌ-পথ সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, ফলে নৌ-পথের যাত্রীরা বছরের পর বছর অবহেলার শিকার হয়ে আসছে।

নৌ-পরিবহণ ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা ও ত্রুটি : আমাদের দেশে যাত্রীবাহী লঞ্চসহ বিভিন্ন শ্রেণীর নিবন্ধীকৃত নৌ যানের সংখ্যা প্রায় ৭,৫০০। এর মধ্যে যাত্রীবাহী লঞ্চের সংখ্যা প্রায় দু হাজার। সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ও চট্টগ্রাম দপ্তর থেকে অভ্যন্তরীণ নৌযানের সার্ভে করেন। ঐ সকল দপ্তরে সার্ভেয়রের সংখ্যা মাত্র এক জন। একটি জাহাজের বহুমুখী বৈশিষ্ট্য থাকে। জাহাজটির ইঞ্জিন পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়, জাহাজটির ডেক পরিচালনা, স্থাপত্য বা নির্মাণ কৌশল সম্পর্কিত বিষয় প্রভৃতি। এ জন্য পৃথক পৃথক কতকগুলো ধাপ বা পর্যায় রয়েছে। সুতরাং সার্ভের বিষয়টি টিম ওয়র্ক বা যৌথ পরিদর্শন ব্যবস্থা থাকা উচিৎ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌযানের তুলনায় সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তরের অফিস কাঠামো বা জনবল অত্যন্ত অপ্রতুল। অতএব সার্ভেয়রের উপর প্রবল চাপ। একজন সার্ভেয়র বছরে যে সংখ্যক জাহাজ সার্ভে করতে হয় তা যৌক্তিকভাবে করা সম্ভব না হলেও সার্ভে সার্টিফিকেট ইস্যু করা হচ্ছে। অতএব সার্ভের সময় সুনিরাপত্তা বিধানের জন্য সতর্কতা বা সাধারণ মান বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। 

নৌ-পথের টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটি : নৌ-পথের টার্মিমালগুলো সার্বিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। অধিকাংশ সময় দেখা যায় যে, কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট ঘাটে পৌঁছে দিয়ে দায়িত্ব সারেন। ঐ টার্মিনালে উঠা-নামার ব্যবস্থার জন্য সিঁড়ি আছে কিনা, নাকি জল-কাদার মধ্য দিয়ে যাত্রীরা আদৌ নিরাপদ কিনা তা ভেবে দেখা হয় না। 

ঘাট ব্যবস্থাপনা ও যাত্রী নিয়ন্ত্রণে ত্রুটি : ঘাট ব্যবস্থাপনা ও যাত্রী নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত দুরূহ ও জটিল কাজ। তদুপরি গুরুত্বপূর্ণ লঞ্চঘাট যেমন, ঢাকা নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী প্রভুতি ঘাটসমূহে ঘাট ব্যবস্থাপনার জন্য প্রচুর পুলিশ এ সকল ঘাটে নিয়োজিত নেই। ফলে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম থেকে যায়। 

নৌপথের নাব্যতা সংক্রান্ত জটিলতা : অভ্যন্তরীণ নৌপথের নাব্যতা উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ড্রেজারের সংখ্যা এবং সংরক্ষণ ড্রেজিংয়ের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজার বহরে মাত্র ৭টি ড্রেজার রয়েছে, যার মধ্যে ৪টি তুলনামূলকভাবে কার্যকর, আর বাকি ৩টি প্রায়ই বড় ধরনের মেরামতের মাধ্যমে সচল রাখতে হয়।

ওভারলোডিং : সীমিতসংখ্যক যাত্রীবাহী লঞ্চের কারণে প্রতিনিয়ত লঞ্চে ওভারলোডিং হয়ে থাকে। এই ওভারলোডিং থেকে যাত্রীদেরকে বিরত রাখা অত্যন্ত কঠিক। এ ক্ষেত্রে যে আইন রয়েছে তা অত্যন্ত দুর্বল। এ পর্যন্ত যেসব বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশেই ঘটেছে ওভারলোডিং এর কারণে। 

নৌ-যান পরিচালকবৃন্দের অদক্ষতা : কেবল ঝড় চরের কারণেই নয়, নৌযান পরিচালক, সারেং, সুকানীদের অদক্ষতা, দায়িত্বহীনতা, নৌপথে সিগনাল ব্যবস্থার ত্রুটি ইত্যাদিও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। 

নৌযানসমূহের ত্রুটিপূর্ণ নকশা ও লঞ্চ দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্টে ত্রুটি : সম্প্রতি সময়ে নৌ-পথে চলাচলকারী নৌযানসমূহের ত্রুটিপূর্ণ নকশা, অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী না করার গুরুতর অভিযোগও উত্থাপিত হয়েছে। দেখা গেছে যে, প্রতিটি নৌ-দুর্ঘটনার পর সরকার দুর্ঘটনার তদন্ত কমিটি করেছেন। কিন্তু এখানেও দুর্ঘটনার মূল কারণসমূহ উদ্ঘাটন না হয়ে প্রতিটি নৌ-দুর্ঘটনার পর সরকার দুর্ঘটনার তদন্ত কমিটি করেছেন। কিন্তু এখানেও দুর্ঘটনার মূল কারণসমূহ উদ্ঘাটন না হয়ে নৌ-পরিবহণের বিভিন্ন অংশ পরস্পর পরস্পরের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে এক্ষেত্রে এমন সব রিপোর্ট পেশ করছেন, যাতে ঐ সকল তদন্তের মুখ্য উদ্দেশ্য পূরণ হয় নি। এছাড়া লঞ্চের বিমা, ফিটনেস, রুট পারমিট ইত্যাদির বিষয়েও চরম অনিয়ম লক্ষ্য করা যায়। 

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও গণসচেতনতার অভাব : লঞ্চ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো দুর্যোপূর্ণ আবহাওয়া। ১৯৮৫ সালে কালবৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ে মুন্সিগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় প্রায় ৫০০ যাত্রী নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের একটি লঞ্চ সম্পূর্ণ উল্টে যায়। ১৯৯০, ২০০১, ২০০৩ সালে পর পর কয়েকবার চাঁদপুর মোহনায় দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনা ছিল স্মরণকালে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা যাতে হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এতসব দুর্ঘটনার পরেও সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে যথেষ্ট সচেতনতার অভাব লক্ষ করা যায়। ফলে হাজার সমস্যা ও ভিড় ঠেলে ধারণ ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। 

লঞ্চ দুর্ঘটনার প্রতিকার : লঞ্চ দুর্ঘটনা এড়াতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ নেওয়া যেতে পারে। 

(১) দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় লঞ্চ চলাচল না করা। এ ক্ষেত্রে রেডিও-টিভির আবহাওয়া বার্তা মেনে চললে দুর্ঘটনার সমূহ সম্ভাবনা এড়ানো যাবে। 
(২) যাত্রীবাহী লঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। 
(৩) উন্নততর লঞ্চ সার্ভিস চালু করতে হবে। 
(৪) নৌ-পরিবহণের উন্নয়নের জন্য এই খাতে বরাদ্ধ বৃদ্ধি করতে হবে। 
(৫) নদীপথে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো আধুনিক করতে হবে। 
(৬) বিআইডব্লিটিসির উপকূলীয় দ্বীপসমূহে সার্ভিসের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। 
(৭) দেশের অভ্যন্তরে নৌপথে সার্বিক দায়িত্ব পূর্বের ন্যায় বিআইডক্লিউটিএ’র উপর ন্যস্ত করা হোক এবং উপকূলীয় ও সমুদ্রপথে সার্বিক দায়িত্ব সমুদ্র পরিবহণ অধিদপ্তরের উপর পুনর্বহাল করা হোক। 

উপসংহার : নৌ-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নৌ-নিরাপত্তা আইনের সংশোধন করে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নৌখাতের সর্বাধিক উপযুক্ত ব্যবহার এবং সেই লক্ষ্যে আর্থিক, প্রশাসনিক, কারিগরি ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

উপসংহার: আপনি যদি আরও ভালো রচনা পড়তে চান, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট StudyTika.com ঘুরে দেখুন। এখানে বিভিন্ন বিষয়ে আরও অনেক রচনা রয়েছে, যা আপনার কাজে আসবে!

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.