প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

 Introduction: প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের সামাজিক দায়িত্ব নিয়ে আজকের এই রচনাটি পড়ুন। সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে, প্রতিবন্ধীরা আমাদের সহানুভূতি এবং সাহায্য পাওয়ার প্রাপ্য। আসুন, এই রচনায় জানি কিভাবে আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি এবং আমাদের সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে পারি।

প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

প্রতিবন্ধীদের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব রচনা 

ভূমিকা : আমাদের সবারই প্রতিবন্ধীদের প্রতি কর্তব্য ও দায়িত্ব আছে। একইভাবে পারিবারের, সমাজের এবং রাষ্ট্রেরও তাদের প্রতি কর্তব্য আছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করি যে, বিশ্বের অনেক দেশই প্রতিবন্ধীদের প্রতি অত্যন্ত উদাসীন এবং কোথাও কোথাও নিষ্করুণ। যা খুবই বেদনাদায়ক এবং মানবতাবিরোধী কাজ। ১৯৮১ সাল হল আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী-বর্ষ হিসেবে চিহ্নিত। 

প্রতিবন্ধী শব্দের তাৎপর্য : মানুষের জন্ম দৈবের অধীন। কারো কারো জীবন তাই জন্ম মুহূর্তেই বিধাতার অভিশাপ-কলঙ্কিত। কেউ কেউ আবার দুরারোগ্য ব্যাধি, দুর্ঘটনা বা যুদ্ধ-কবলিত হয়ে প্রতিবন্ধী। দৈহিক বা মানসিক দিক দিয়ে যার জীবনে স্বাভাবিক বিকাশের অপূর্ণতা, প্রতিবন্ধকতা বা বাধা-সেই প্রতিবন্ধী। কেউ কেউ জন্মাধি প্রতিবন্ধী। কারো বা বায়োবুদ্ধির সাথে সাথে বোধশক্তির দীনতা ধরা পড়ে। সমাজে মূক বধির বিকলাঙ্গ জড়বুদ্ধি এরা সবাই প্রতিবন্ধী। 

এদের সমস্যা : এদের জীবনে পদে পদে বাধা। এরা পৃথিবীর রঙ রূপ রসের বিলাস-বৈচিত্র্য অনেক কিছু উপভোগে অক্ষম। এরা সুস্থ মানুষের মতন হেঁটে চলে বেড়াতে অপটু। দিকে দিকে যে বিচিত্র কর্মধারা নিত্য প্রবাহিত, সেখানে যোগ দিতে অপটু। ধীরে ধীরে এদের জীবনে আসে হতাশা। অনিশ্চয়তার অন্ধকারে জীবন চলে ভেসে। জন্ম মুহূর্তেই এরা অভিশপ্ত। কর্মের জগতেও এদের অনাদর, উপেক্ষা। শুধু দেহ-মনেই যে এরা পঙ্গু তা নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও। আরো নানাভাবে এদের জীবন বিপর্যস্ত। ভালবাসার মানবিক উষ্ণ স্পর্শ থেকে এরা বঞ্চিত। সামাজিক আনন্দ-অনুষ্ঠানে, মানুষের বিচিত্র কর্মযজ্ঞে এদের কুণ্ঠিত প্রবেশ। আসলে এরা যে আমাদেরই স্বজন, আত্মীয়-পরিজন একথাটা আমরা বিস্মৃত হই। যে জন্ম দৈবের অধীন, যে পঙ্গুতা নিয়তির বিধান, তাকে কর্মের মহিমায় বরণ করার সহৃদয়তা কোথায়? অতি দরদও এদের জীবনের সহজ বিকাশকে করে তুলেছে আরো অসহায়। এরা আত্ম-নির্ভর হতে শিখল না। আত্ম-বিশ্বাসও ফেলল হারিয়ে। 

বিশ্ব প্রতিবন্ধী-বর্ষ, ১৯৮১ : জাতিসংঘ বিংশ শতাব্দীর অপরাহ্ন-প্রহরে প্রতিবন্ধীদের প্রতি পৃথিবীর সমাজ ও রাষ্ট্রসমূহকে দায়িত্বশীল করার জন্য ১৯৮১ সনকে ‘বিশ্ব প্রতিবন্ধী-বর্ষ’ রূপে ঘোষণা করে। জাতিসংঘের উদ্যোগেই প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর বিশ্বের আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উদ্‌যাপিত হয়। ফলে মানবজাতির একটি উপেক্ষিত দিক বিশ্ব মানবের দৃষ্টির সম্মুখে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠার সুযোগ পায়। এই সিদ্ধান্ত বিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত। প্রতিবন্ধীরা দেশ, জাতি ও পরিবারের বোঝা নয়। নয় সমাজের অগ্রগতি বিচিত্র ধারাপথের অন্তরায়। বরং, তাদের অংশ গ্রহণে, সেই সমাজপ্রবাহ হবে আরো প্রাণময়, আরো গতি-প্রাণ। সম্মিলিত কর্মতরঙ্গের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। দীর্ঘকালের পুঞ্জিত গ্লানির অবসান হবে। মন হবে নতুন প্রত্যয়ে উজ্জীবিত। প্রতিবন্ধী-বর্ষ পালনের ব্রত তখনই হবে সার্থক, সুন্দর। যখন সমাজ এই অবহেলিত উপেক্ষিত মানুষের জন্য ন্যায্য বা পূর্ণ অধিকার লাভের সুযোগ করে দেবে, সমতার ভিত্তিতে প্রতিবন্ধীদের সমস্যা সমাধানের উপায়-উদ্ভাবন করবে। প্রতিবন্ধী-বর্ষের এই হল মানবিক ঘোষণা। 

প্রতিবন্ধী হবার কারণ : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গড় হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা দশ ভাগ কোনো-না-কোনোভাবে প্রতিবন্ধী। শারীরিক ও মানসিক পঙ্গুত্ব বা বিকলাঙ্গ মানুষকে প্রতিবন্ধী করে তোলে। মানুষের এই শারীরিক ও মানসিক পঙ্গুত্ব ও বিকলাঙ্গ সংঘটিত হয় নানা কারণে। যেমন : জন্মগত, ব্যাধিগত, অপুষ্টি কিংবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে, অথবা অজ্ঞাত কোন কারণে। এই কারণগুলোর কোনটির জন্যই প্রতিবন্ধীরা নিজেরা দায়ী নয়। বরং এর জন্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যর্থতাকে দায়ী করা যায়। 

সমাজের কঠোর হৃদয়হীনতা : সমাজ প্রতিবন্ধীদের প্রতি যুগে যুগে অত্যন্ত হৃদয়হীন আচরণ করেছে। এ প্রসঙ্গে হৃদয়হীন ‘স্পার্টা’র কথা স্মরণ করা যেতে পারে। আমাদের এই দরিদ্র দেশটি কখনোই তার প্রতিবন্ধীদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে নি। 

প্রতিবন্ধী দূরীকরণের উপায় : চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং দারিদ্র্য ও অশিক্ষা হচ্ছে প্রতিবন্ধী হবার মূল কারণ; এবং তা দূরীকরণ নিঃসন্দেহে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য মূলত- 

১. প্রতিবন্ধীত্বের মূল কারণগুলোর মূলোচ্ছেদ এবং 
২. প্রতিবন্ধীদের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার উপর নির্ভর করে। 

প্রয়োজন জাগ্রত চেতনার যথার্থ ও সুষ্ঠু কর্মসূচি গ্রহণ। শুধু মধুবর্ষী শব্দ-বিলাস নয়, চাই মহৎ অনুভবের বাস্তব রূপায়ণ। ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাহায্যের হাত সম্প্রসারিত করেছে। গত কয়েক বছরে সাত হাজারের ওপর প্রতিবন্ধীর কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সমাজ-কল্যাণ অধিদপ্তর প্রতিবন্ধীদের জন্য পাতিপুকুরে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতিবন্ধী-প্রশিক্ষণকেন্দ্র সব জেলাতেই খোলা হবে। এসব কেন্দ্রে সেলাই, কাটিং, ছাপাখানা ও বই বাঁধানোর কাজ শেখানো হবে। শেখানো হবে হালকা ধরনের যন্ত্রপাতি চালানোর কাজ। এছাড়া আছে সরকারের বিভিন্ন অনুদান-ব্যবস্থা। তাছাড়া প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের গুরুত্ব অনুধাবন করে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের উদ্যোগে প্রণীত হয়েছে প্রতিবন্ধীবিষয়ক নীতিমালা। 

শুধুমাত্র সরকার নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিও এ মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক সংস্থাও এগিয়ে এসেছে এই কাজে। বিশ্বব্যাপী প্রতিবন্ধীদের সহায়তায় জাতিসংঘ (UN), আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এবং বিভিন্ন দেশ সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের প্রচেষ্টায় প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়ন এবং সমাজে অন্তর্ভুক্তির সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রয়োজনের তুলনায় আয়োজন এখনও সামান্য। মূলত প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের জন্য বহু ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ও বহু পেশাভিত্তিক কৌশল প্রয়োজন। প্রয়োজন প্রতিবন্ধীতার কারণগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। এর মধ্যে রয়েছে- 

১। মা শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য যোগান। 
২। রোগ নির্ণয় ও এর প্রতিকারের দ্রুত পদক্ষেপ। 
৩। গুণমুখী স্বাস্থ্যনীতি। 
৪। সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। 
৫। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি। 
৬। শিক্ষার প্রসার। 
৭। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের দিকটিকে দিতে হবে বিশেষ ও সমবেদনাপূর্ণ গুরুত্ব। 
৮। দিতে হবে তাদের শিক্ষা ও কাজের সহায়ক উপকরণ, এ লক্ষ্যে তাদের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ।

৯। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করা। 
১০। প্রতিবন্ধীরা যাতে কোনভাবেই বিরূপ পরিবেশের শিকার না হয় তার দিকে লক্ষ রাখতে হবে, ইত্যাদি। 

বাংলাদেশ নানা সমস্যায় জর্জরিত একটি দেশ। সুস্থ মানুষেরই এখানে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার পথে বহু বাধা, সেখানে প্রতিবন্ধীদের অবস্থা আরও করুণ। দারিদ্র্য, বেকারত্ব আর প্রতিকূলতার মধ্যে তারা বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। রাজপথে ঘুরে বেড়ানো অসংখ্য অন্ধ, খঞ্জ মানুষের আর্তনাদ আমাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত করে তোলে। আজও লক্ষ লক্ষ প্রতিবন্ধী সমাজের করুণা ও দয়া-ভিক্ষার ওপর নির্ভরশীল। তাদের জন্য কাজের সুযোগ ও সম্মানজনক জীবনের ব্যবস্থা না থাকায়, ভিক্ষাবৃত্তিই যেন একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা জন্ম থেকেই ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার, যাদের জীবন মাঝপথেই থমকে গেছে, তারা যুগের পর যুগ অবহেলা ও অনাদরের শিকার হয়েছে। কিন্তু সময় বদলেছে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাতে হবে। আজকের সচেতন সমাজে আমাদের বলা উচিত— "এরা আমাদেরই ভাই, আমাদের স্বজন। আমরা এদের পাশে থাকব, এদের প্রতি দায়িত্বশীল হবো।

উপসংহার : প্রতিবন্ধীরা পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের গলগ্রহ নয়, নয় করুণার পাত্র, এই পৃথিবীতে তাদেরও কিছু দেয়ার আছে- যদি আমরা তাদের প্রতি সদয় হই এবং তাদেরকে যদি আমরা একটু আদর দিয়ে স্নেহ দিয়ে, ভালবাসা দিয়ে তাদেরকে গড়ে তুলি, তাহলেই চির-অবহেলিত প্রতিবন্ধীরা খুঁজে পাবে তাদের দুর্লভ মানব-জন্মের একটি গৌরবময় অধ্যায়।

Conclusion: এটি ছিল প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের সামাজিক দায়িত্ব নিয়ে একটি রচনা। আরো রচনা পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটে আসতে থাকুন। StudyTika.com এ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রচনা আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে!

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.