এই ব্লগপোস্টে বাংলাদেশের সংস্কৃতি নিয়ে একটি সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ রচনা দেওয়া হয়েছে। সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যেন সব শিক্ষার্থীরা সহজেই পড়তে ও বুঝতে পারে।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি রচনা
সংস্কৃতি : সংস্কৃতি হলো মানুষের আচার-আচরণের সমষ্টি। মানুষের জাগতিক নৈপুণ্য ও কর্মকুশলতা, তার বিশ্বাস, আশা-আকাঙ্ক্ষা, নৈতিকতা, রাজনীতি, ভাষা, কলা, মূল্যবোধ সবকিছুই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত । সংস্কৃতি হচ্ছে সমাজের মানুষের অর্জিত জ্ঞান, বিশ্বাস, কলা, নীতি, নিয়ম, সংস্কার ও অন্যান্য যে কোনো বিষয়ে দক্ষতার সর্বাধিক সমাবেশ।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেন, সংস্কৃতি মানে সুন্দরভাবে, বিচিত্রভাবে বাঁচা।’ সংস্কৃতি সম্পর্কে এমারসন বলেন, সংস্কৃতিই খুলে দেয় সুন্দরের চেতনার দরজা। সংস্কৃতি সম্পর্কে ম্যাথু আর্নল্ড-এর অভিমত হলো, সংস্কৃতি আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় বিশ্বের সর্বোত্তম জিনিসগুলোর সঙ্গে এবং সেই সঙ্গে মানুষের গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে। আবার কালটাজার গ্রাসিয়ান বলেন, ‘মানুষ জন্মায় বর্বর হয়ে, সংস্কৃতিই তাকে করে সুসভ্য”। তবে সংস্কৃতি শনাক্তকরণের কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নেই, গণ্ডি নেই। এটি চলমান জীবনের প্রতিচ্ছবি।
এলাকাভিত্তিক এর ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। একটা নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের জীবন প্রণালী অর্থাৎ মানুষের দৈনন্দিন আচার-আচরণ, কাজকর্ম, পোশাক-পরিচ্ছদ, প্রচলিত লোককাহিনী, ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান, চিন্তা-চেতনা সবকিছুই সংস্কৃতির মধ্যে গড়ে।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য : সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলো মানুষের দীর্ঘদিনের আচার-আচরণ, কাজকর্ম, রীতিনীতির মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য কোনো প্রথা বা উপাদান। বাংলাদেশের সংস্কৃতির রয়েছে গৌরবময় ঐতিহ্য। এখানে বাস করে মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ আরো অনেক জাতি। এখানে প্রাণ খুলে তারা তাদের প্রাণের ভাষায় ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠান পালন করে। একের অনুষ্ঠানে অন্যেরা হয় আমন্ত্রিত; একে অপরের সাথে ভাগ করে নেয় এ আনন্দ।
আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে ধর্মীয় রীতিনীতি, উৎসব, লোকসাহিত্য, সঙ্গীত, ঋভিত্তিক উৎসব, বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, খেলাধুলা, সামাজিক প্রথা প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত। আমাদের সংস্কৃতির চর্চা হয় সুপ্রাচীন কাল থেকেই। বিভিন্ন সময়ে আমাদের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং সমৃদ্ধি এসেছে।
মধ্যযুগে সুলতানী শাসনামলে বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সুলতানী শাসকরা সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় চর্চাকে উৎসাহিত করতেন, যা ঐতিহ্য, শিল্প ও সাহিত্য ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এবং অগ্রগতি এনে দেয়। হোসেন শাহের শাসনামলে শ্রী চৈতন্যদেব বৈষ্ণবধর্ম প্রচার করেন, যা বাংলার ধর্মীয় চর্চা ও সংস্কৃতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। মোগল শাসনামলে সাহিত্যিকদের উৎসাহিত করে কবিতা, গল্প এবং উপন্যাস রচনায় আরও অগ্রগতি সাধিত হয়। মোগলরা লেখকদের দরবারে আহ্বান করতেন এবং সাহিত্যকে উত্সাহিত করতেন, যা বাংলার সাহিত্যিক পরিবেশকে সমৃদ্ধ করে।
ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজি সংস্কৃতির প্রভাবে বাংলা সাহিত্য নতুন আঙ্গিকে পরিণত হয়। ইংরেজি ভাষার ব্যবহারে সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে গভীর পরিবর্তন ঘটে, যা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
পাকিস্তান আমলে, রাজনৈতিক কারণে আমাদের সংস্কৃতির উপর প্রভাব পড়লেও, তা অস্তিত্বের দিক থেকে বেশি গুরুত্ব পায়নি। তবে পাকিস্তান আমলে কিছু সংস্কৃতির নানা রূপ পরিবর্তিত হতে থাকে, কিন্তু তা বেশি দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়নি।
বাংলাদেশের লোকসাহিত্য : আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম উপাদান হলো লোকসাহিত্য। লোকসাহিত্যের ইতিহাস ও ঐতিহ্য হাজার বছরের পুরনো। বাংলা ভাষা সৃষ্টির প্রাথমিক যুগেই লোকসাহিত্যের জন্ম। সাধারণ মানুষের মনের কথা, মুখের কথা ভাষা ও ছন্দে বাণীবদ্ধ হয়ে এবং তা লোকমুখে প্রচারিত ও প্রচলিত হয়ে যে সাহিত্য সৃষ্টি হয় তাকে লোকসাহিত্য বলে।
যে সাহিত্য লেখা হয়নি তালপাতার মূল্যবান গাত্রে, যে সাহিত্য পায়নি সমাজের উঁচু স্তরের সমাদর, যে সাহিত্য পল্লীর সাধারণ মানুষের কথা বলেছে গানে গানে, যে সাহিত্যের রচয়িতার নামও অনেক সময় হারিয়ে গেছে তাকে বলা হয় লোকসাহিত্য। এ সাহিত্য সাধারণ মানুষ ও পল্লীর আলোছায়া, ভালোবাসা ও স্মৃতিকে সম্বল করে বেঁচে আছে।
লোকসাহিত্য পত্নীবাংলার সাধারণ মানুষের হৃদস্পন্দন। এ সাহিত্য পল্লীর মানুষের আনন্দকে ফুটিয়ে তুলেছে ফুলের মতো, বেদনাকে বাজিয়েছে একতারার সুরের মতো। এখানে আছে সরল অনুভবের কথা। এ সরলতাই সকলকে মোহিত করে। লোকসাহিত্য তাই পল্লীর মানুষের বুকের বাঁশরী।
বাংলার লোকসাহিত্য প্রকৃতপক্ষে এক অপরূপ সম্পদ, যা গ্রাম্য জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত, আনন্দ-বেদনা, সংগ্রাম এবং সহজ-সরল মানুষের অভিব্যক্তির সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত। পল্লীজীবনের এক এক খণ্ডচিত্র, যেগুলি নিঃস্বার্থভাবে নিজস্ব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে রচিত, তেমনি বাংলা লোকসাহিত্যও তার নিজস্ব সংস্কৃতি, চেতনা ও ঐতিহ্য ধারণ করে। গ্রামের মানুষগুলো, যারা নিরক্ষর হলেও তাদের গানে, কাব্যে এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এক গভীর অনুভূতি প্রকাশ পায়। তাদের কর্মমুখর অবসর মুহূর্তগুলোও হয়ে ওঠে এক ধরনের আত্মপ্রকাশ। বাংলার গ্রাম্য সুরের মূর্ছনাগুলি যেমন তাদের জীবনকে মূর্ত করে তোলে, তেমনি সেই সুরগুলোতে ভরপুর থাকে সহজ-সরল আনন্দ এবং একেবারে প্রাণবন্ত সৌন্দর্য। লোকসাহিত্যের মাধ্যমে এই আবেগ, প্রেম, দুঃখ ও আনন্দের প্রকাশ এক অবিস্মরণীয় কল্পনা তৈরি করে। এই সাহিত্যের ভাণ্ডার এত বড় এবং বৈচিত্র্যময় যে, এতে সব ধরনের সৃষ্টি—কবিতা, গান, কাহিনি, গল্প, প্রবাদ ও বিভিন্ন আঞ্চলিক ঐতিহ্যের মিশেল দেখতে পাওয়া যায়। লোকসাহিত্য তাই চিরকালীন আবেদন এবং হৃদয়ে নূতন রকমের মায়ার সৃষ্টি করে। যেমন-
১. ছড়া আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে
ঢাক-ঢোল ঝাঁঝর বাজে
অথবা, ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেব কিসে।
২. লোকসঙ্গীত : মনমাঝি তোর বৈঠা নেরে
আমি আর বাইতে পারলাম না।
৩. গীতিকা : ভিনদেশী পুরুষ দেখি চাঁদের মতন লাজরক্ত হইল কন্যার পরথম যৌবন।
৪. ধাঁধা সবুজ বুড়ি হাটে যায়
হাটে গিয়ে চিমটি খায়।
উত্তর : লাউ।
৫. রূপকথা, উপকথা, ব্রতকথা: রাজরানীর গল্প, রাজকন্যা রাজকুমারের গল্প, রাক্ষস-খোক্ষসের
গল্প, দৈত্য-দানবের গল্প প্রভৃতি।
৬. প্রবাদ প্রবচন: সবুরে মেওয়া ফলে
অথবা, অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী।
৭. খনার বচন: কলা রুয়ে না কেটো পাত তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।
অথবা, যদি বরধে মাঘের শেষ,
ধন্য রাজার পুণ্য দেশ।
বাংলাদেশের ধর্মীয় রীতিনীতি :
বাংলাদেশসহ সমগ্র উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক বিকাশের মূলে রয়েছে ধর্মের প্রভাব। বাংলাদেশের মানুষ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী। বিভিন্ন ধর্মের লোকজন একই সমাজে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করছে। কোনো ধর্মের ধর্মীয় উৎসবে সকল ধর্মের লোক আনন্দ প্রকাশ করে। একের আনন্দে অপর ধর্মের লোক একাত্মতা প্রকাশ করে। এ দেশের মানুষ স্বাভাবিক ধর্মভীরু ও আনন্দ প্রকাশে স্বতঃস্ফূর্ত। তথাপি কিছু উগ্রপন্থী, সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংঘাত সৃষ্টিতে মাঝে মাঝে ইন্ধন যোগায় যা সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির ধারাকে বাধাগ্রস্ত করে।
বাংলাদেশের সঙ্গীত : আমাদের সমৃদ্ধ সঙ্গীতভাণ্ডার আমাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য। জারী, সারী, ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, মুর্শিদী, মারফতী, পালাগান প্রভৃতি গানের চর্চা হয় নিয়মিত। এছাড়া বিয়ের গান, ফসল তোলার গানের প্রচলন ছিল। গান এবং কথা ও অভিনয়ের সমন্বয়ে কবিগান, যাত্রাপালা দর্শক-শ্রোতাদের অফুরন্ত আনন্দ দান করতো।
দেওয়ানা মদীনা, রহিম-রূপবান, চম্পাবতী, আলোমতি, বেদের মেয়ে, লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, চণ্ডীদাস-রজকিনী প্রভৃতি যাত্রাপালার কাহিনী প্রাণভরে দেখতো। ঘুম পাড়ানী গান গেয়ে মায়েরা সন্তানদের ঘুম পাড়াতেন। তবে বর্তমান যুগের পরিবর্তনে এসব ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে।
দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ভিন্ন স্বাদের গানের দিকে ঝুঁকে পড়েছে, যেগুলোর সাথে আমাদের সংস্কৃতির নৈকট্য নেই। বর্তমানে দেশীয় সঙ্গীত চর্চা যেটুকু হচ্ছে তা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। এক শ্রেণীর মানুষ আবার অশ্লীলতা মেশানো সঙ্গীতের দিকে ঝুঁকে পড়েছে যা আমাদের জন্য মর্মপীড়ার কারণ।
বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন : সমগ্র বাংলার বিস্তীর্ণ জনপদে ছড়িয়ে থাকা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ আমাদের সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করে। আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের মধ্যে ঢাকার লালবাগ কেল্লা, বগুড়ার মহাস্থানগড়, কুমিল্লার আনন্দ বিহার, শালবন বিহার, ময়নামতির নিদর্শনসমূহ, সোনারগাওয়ের নিদর্শনসমূহ, পাহাড়পুরের সোমপুর বিহার প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ঢাকার লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, ছোট কাটরা, বড় কাটরা, হোসনী দালান মুসলিম শাসনামলের নিদর্শন। নওগাঁ জেলার সোমপুর বিহার, জগদ্দল বিহার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল রাজাদের স্থাপত্য। এ স্থানদ্বয়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে।
উৎসব ও বাঙালি আমেজ হরেক রকমের উৎসব ও ঋতুভিত্তিক সাংস্কৃতিক জীবনধারা আমাদের জীবনকে আলোড়িত করে, রক্তে তোলে আশ্চর্য-উন্মাদনা। বাংলা নববর্ষ, ফাল্গুন তথা বসন্তের আগমন প্রভৃতি উৎসবে বাঙালি মেতে ওঠে নিজস্ব সাংস্কৃতিক অনুভূতির শিহরণে। বাংলা সাহিত্যের দুই প্রাণপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রতিপালিত হয়।
ঋতুভেদে আমাদের সমাজে উৎসব বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। হেমন্তকালে ঘরে ঘরে নতুন পিঠার আয়োজন, শীতকালে খেজুর রস ও পিঠা-পায়েসের আয়োজন বাংলার গ্রাম্য সংস্কৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। ফসল তোলার প্রাক্কালে নেচে গেয়ে আনন্দ করা, অনাবৃষ্টির সময় মেঘের গান গাওয়া, ভরা বাংলার নৌকা বাইচ প্রভৃতি ছিল গ্রাম বাংলার নিত্যদিনের চিত্র।
বাংলাদেশের কুটির শিল্প : বাংলাদেশের ঘরে ঘরে কুটির শিল্প ছিল মানুষের কর্মের উৎস। কিন্তু বৃহৎ শিল্পের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে কুটির শিল্প আজ বিলুপ্ত প্রায়। তবে বেত, বাঁশ, পোড়ামাটির কাজ আজও টিকে আছে। শিক্ষিত সমাজের সচেতনতাই এই ঐতিহ্যকে বিপুল পৃষ্ঠপোষকতা দান করেছে। ঢাকার শাখার কাজ, রূপার তারের কাজ, টাঙ্গাইলের শাড়ি, জামালপুরের বাসন, সিলেটের শীতল পার্টি প্রভৃতি ঐতিহ্যবাহী কারুকার্য এখনও দেশে-বিদেশে যথেষ্ট সমাদৃত হচ্ছে। এগুলো বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল সংস্কৃতির অনন্য দিক ।
বাংলাদেশের খেলাধুলা : গ্রামীণ খেলা আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য। তবে অনেক খেলা এখন হারিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। শুকনো মৌসুমে দাঁড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছট বর্ষা মৌসুমে হাডুডু খেলার বহুল প্রচলন ছিল এ দেশে। ভরা বর্ষায় নৌকাবাইচ ছিল এক চমৎকার বিনোদন। কিন্তু এসব সংস্কৃতির বেশির ভাগই আজ কালের গর্ভে নিমজ্জিত। পারিবারিক ও সামাজিক দিক : আগের দিনে এ দেশের মানুষ পারিবারিক বন্ধনে সুখে শান্তিতে বাস করতো। কবি দ্বিজেন্দ্র লালের ভাষায়,
‘ভাইয়ের মায়ের এমন স্নেহ
কোথায় গেলে পাবে কেহ ।
কিন্তু যৌথ পরিবার প্রথা, সামাজিক বন্ধন ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে। মানুষ সুখে-দুঃখে অন্যের পাশে দাঁড়ানো ভুলে যাচ্ছে। যৌথ পরিবার প্রথা মানুষের মনে এখন আর সাড়া জাগায় না। তবে এটি সামাজিক বিবর্তনের একটি দিক। কিন্তু সামাজিক সহযোগিতা দিন দিন কমছে। নগরভিত্তিক পেশিশক্তির দৌরাত্ম্যের বিস্তৃতি, নষ্ট রাজনীতির প্রভাবে গ্রাম্য সমাজে অশান্তির ছায়া নেমে এসেছে। তবুও শাস্তি প্রিয় মানুষ নিজেদের সামাজিক ঐক্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট রয়েছে।
উপসংহার : সংস্কৃতি আমাদের সমাজ জীবনের প্রতিচ্ছবি। কোনো সমাজের কোনো সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য যখন দীর্ঘদিন ধরে সে সমাজের মানুষের জীবনযাত্রায় গ্রহণযোগ্যতা ধারণ করে টিকে থাকে তখন তা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। কিন্তু বাংলার সংস্কৃতি আজ আর সে পূর্বতন অবিচ্ছিন্ন ধারায় নেই। আধুনিক ও বিদেশী সভ্যতায় মোহান্ধ হয়ে আমরা আমাদের স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত জীবনধারাকে হারিয়ে ফেলতে বসেছি।। তাই এখনই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
এই ছিল বাংলাদেশের সংস্কৃতি নিয়ে একটি সহজ রচনা। আরও অনেক রচনা পেতে ভিজিট করুন আমার ওয়েবসাইট — StudyTika.com। সেখানে আপনি আরও দারুন সব রচনা পাবেন, সহজ ভাষায় লেখা।