বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

এই ব্লগপোস্টে রয়েছে একটি সুন্দর ও সহজ রচনা— “বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প”। ছাত্রছাত্রীদের জন্য লেখা এই রচনাটি একবার পড়েই দেখুন।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা ১

ভূমিকা: মানুষ ভ্রমণ করতে পছন্দ করে। এই পছন্দকে কাজে লাগিয়ে ভ্রমণ-বান্ধব এক ধরনের ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যার নাম পর্যটন শিল্প। এই শিল্পের কাজ হলো কোনো অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলোর তথ্য ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে তুলে ধরা, ভ্রমণের সুবন্দোবস্ত করা এবং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা। বাংলাদেশের একাধিক বনাঞ্চল, পাহাড়-নদী-ঝরনা, শস্যশোভিত মাঠ ও সবুজ প্রকৃতি, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র-সৈকত, নান্দনিক স্থাপত্য ও ভাস্কর্য, প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ও নিদর্শন প্রভৃতি দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তাই বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা প্রচুর। এগুলোর টানে বিপুল সংখ্যক বিদেশি পর্যটকের বাংলাদেশে আসার সুযোগ রয়েছে। এভাবে বাংলাদেশ পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রথমে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন-কেন্দ্রসমূহের দিকে তাকানো যাক।

সুন্দরবন: বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের অধিক জায়গা জুড়ে সুন্দরবন অবস্থিত। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও বরগুনা জেলায় এর অবস্থান। সুন্দরী বৃক্ষ, গোলপাতাসহ নানা জাতের উদ্ভিদ এবং চিত্রল হরিণ, বাঘ, বানর, হনুমানসহ নানা জাতের পশুপাখির আবাস এই সুন্দরবন। অভ্যন্তরে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য খালে রয়েছে কুমির। রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকগণ নৌযানে করে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে যেতে পারেন। ভয় ও ভালো-লাগার অপূর্ব মিশেলের কারণে সুন্দরবন ভ্রমণ যে-কোনো পর্যটকের স্মৃতিতে স্থায়ী হয়ে থাকে।

সিলেটের রাতারগুল: সিলেট জেলার গোয়াইনঘাটে অবস্থিত রাতারগুল জলাবন বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন হিসেবে পরিচিত। এর মোট আয়তন প্রায় ৩,৩২৫ একর। বর্ষার সময় এখানে পানির গভীরতা ২০ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত হয়, যদিও সাধারণ সময় পানির গভীরতা থাকে প্রায় ১০ ফুট। এই পানির উপর ভেসে থাকা গাছপালার দৃশ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। দর্শনার্থীরা নৌকায় চড়ে বনের ভেতরে ঘুরে বেড়াতে পারেন। বনে রয়েছে কদম, হিজল, অর্জুন, ছাতিমসহ নানা প্রজাতির গাছ, যা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি ভ্রমণের সময় ভাগ্য ভালো থাকলে বানর, বেজি, গুঁইসাপের মতো বন্যপ্রাণী এবং সাদা বক, মাছরাঙা, পানকৌড়ির মতো পাখির দর্শনও মিলতে পারে।

সমুদ্র সৈকত: কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম (১২০ কিলোমিটার) প্রাকৃতিক সৈকত। এই সৈকতের অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়ত পর্যটকরা কক্সবাজারে আসেন। সমুদ্র ছাড়াও কক্সবাজার জেলায় রয়েছে অনেক ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ধর্মীয় উপাসনালয় এবং বুদ্ধ মূর্তি, যা স্থাপত্যশিল্পের দিক দিয়ে অমূল্য সম্পদ। এছাড়া চট্টগ্রামের পতেঙ্গা, কক্সবাজারের ইনানি, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এবং সুন্দরবনের কটকা প্রভৃতি সমুদ্র সৈকতগুলোতে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে যান। বাংলাদেশের সবচেয়ে দক্ষিণে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। পুরো দ্বীপজুড়ে নারিকেল গাছের সারি এবং সমুদ্রের নীল জলরাশির সৌন্দর্য উপভোগ করতে, সেই সঙ্গে নানা ধরনের প্রবাল দেখতে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণ করেন।

পার্বত্য অঞ্চল: বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাসমূহ অর্থাৎ রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাক্ষেত্র। একদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায় উঠে মেঘ ছোঁয়ার আনন্দ, অন্যদিকে প্রাকৃতিক জলের উৎস ঝরনাধারা পর্যটকদের অভিভূত করে। রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে নৌকায় ভেসে বেড়ানো যায়। হ্রদের উপরে একটি সুদৃশ্য ঝুলন্ত সেতু রয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলার অন্তর্গত আলুটিলা পাহাড়, রিসাং ঝরনা, মায়াবিনী লেক প্রভৃতি স্থানে ভ্রমণের হাতছানি পর্যটকরা অগ্রাহ্য করতে পারে না। সিলেটের জাফলং-এর পিয়াইন নদীতে মনোমুগ্ধকর পাথুরে জলের ধারা, মৌলভীবাজারের মাধবকুণ্ড ঝরনা; হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল ও পঞ্চগড়ের চা বাগান; শ্রীমঙ্গলের ইকোপার্ক প্রভৃতি স্থান প্রায় সারাবছরই পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। এ অঞ্চলসমূহে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের বর্ণিল জীবনাচারও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। বাংলাদেশের একমাত্র পার্বত্য দ্বীপ মহেশখালী। বিখ্যাত আদিনাথ মন্দির ও বড়ো রাখাইনপাড়া বৌদ্ধ মন্দির এই দ্বীপেই অবস্থিত।

পুরাকীর্তি: বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর রয়েছে গভীর ঐতিহাসিক গুরুত্ব। পুরান ঢাকার লালবাগে অবস্থিত মুঘল স্থাপত্য লালবাগ কেল্লা, বুড়িগঙ্গার তীরে নির্মিত আহসান মঞ্জিল, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও-এ গড়ে ওঠা অনন্য স্থাপত্যশৈলী বিশিষ্ট পানাম নগর, কুমিল্লায় আবিষ্কৃত প্রাচীন নগর ময়নামতী, বগুড়ার মহাস্থানগড়, নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার অন্তর্গত আড়াই হাজার বছর পুরনো প্রত্ননিদর্শনসহ উয়ারী ও বটেশ্বর গ্রাম, নওগাঁ জেলায় আবিষ্কৃত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহার পাহাড়পুর এবং বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ—এসব নিদর্শন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যকলার এক মূল্যবান ধারাবাহিকতা সৃষ্টি করেছে।

ঐতিহাসিক স্থাপনা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য বহনকারী স্থাপত্যগুলোও এক বিশেষ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। যেমন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে নির্মিত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহিদদের স্মৃতিতে সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘর, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে মিরপুরে নির্মিত বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও সেখানে অবস্থিত স্বাধীনতা জাদুঘর—এসব স্থাপনাগুলো ইতিহাসপ্রেমী পর্যটকদের গভীরভাবে আকৃষ্ট করে।

বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অবস্থা: বিশ্বব্যাপী পর্যটন একটি সম্ভাবনাময় ও দ্রুত বর্ধনশীল খাত হিসেবে বিবেচিত। বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে পর্যটকেরা প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ভ্রমণের পেছনে। অনেক দেশ রয়েছে যাদের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি পর্যটন খাত। বাংলাদেশেও পর্যটন শিল্প ধীরে ধীরে উন্নতি লাভ করছে। বিদেশি পর্যটকদের আগমনে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি দেশীয় পর্যটকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রতি বছর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ দেশীয় পর্যটক দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করে থাকেন, যাদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এ বিপুল সংখ্যক পর্যটকের চলাচল ও ভ্রমণের ফলে পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিও গতিশীল হয়ে ওঠে। পরিবহণ, হোটেল, রেস্তোরাঁ, পোশাক, অলংকারসহ নানা ব্যবসায়িক খাত সরাসরি এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। ফলে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত। অর্থনীতিবিদদের মতে, সঠিক পরিকল্পনা ও উন্নয়নের মাধ্যমে পর্যটন খাত থেকে জাতীয় জিডিপির ১০ শতাংশ পর্যন্ত অর্জন সম্ভব।

পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব: একটি দেশের পর্যটন শিল্প বিকশিত হলে সেই দেশের সংস্কৃতিও সমৃদ্ধ হয়। পর্যটন এলাকায় অধিবাসীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হয়। পর্যটকদের আগ্রহ রয়েছে এমন স্থান, স্থাপনা বা বিষয়ের প্রতি স্থানীয় অধিবাসীদেরও শ্রদ্ধাশীল করে তোলে। তারা নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষায় তাগিদ অনুভব করে। এছাড়া পর্যটনের সূত্রে বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের মেলবন্ধন একটি মানবিক বিশ্ব তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

পর্যটন শিল্পের বিকাশে করণীয়: পৃথিবী ব্যাপী পর্যটন শিল্প এখন দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। বাংলাদেশে কয়েকটি বিষয়ের প্রতি নজর দিলে পর্যটন এলাকাগুলোতে পর্যটকদের যাতায়াত বাড়বে। প্রথমেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত যাতায়াত ব্যবস্থার দিকে। উন্নত পথ ও যানবাহনের ব্যবস্থা না থাকলে পর্যটকরা নিরুৎসাহিত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলসহ বেশকিছু পর্যটনকেন্দ্রে পৌঁছানোর সহজ পথ ও যানবাহনের ব্যবস্থা নেই। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। পর্যটকরা যাতে নির্ভয়ে ও নিঃসঙ্কোচে ভ্রমণ করতে পারে, তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। অতিরিক্ত ভ্রমণ-ব্যয় পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে। তাই, যাতায়াত এবং থাকা-খাওয়াসহ সংশ্লিষ্ট ব্যয় যাতে সীমার মধ্যে থাকে তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

উপসংহার: বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, স্থাপত্যকলা, স্থানীয় অধিবাসীদের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন ও সংস্কৃতি পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট। তবে পর্যটনকে একটি শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে ও স্থায়ী রূপ দিতে দরকার রাষ্ট্রীয় নীতিমালা ও এর প্রয়োগ। স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি পর্যটনকেন্দ্রের অধিবাসীদেরও পর্যটকদের সহযোগিতায় সম্পৃক্ত করা উচিত। পর্যটকদের যথাযথ নিরাপত্তা ও সহযোগিতা দেওয়া গেলে ভ্রমণের প্রতি তাদের উৎসাহ আরো বাড়বে। এর ফলে একদিকে যেমন বাংলাদেশের মানবিক সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরিচয় বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়বে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির চাকা আরো গতিশীল হবে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা ২

(একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো)

ভূমিকা:

প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ নতুন স্থান আবিষ্কারের জন্য ভ্রমণ করে আসছে। প্রতিটি দেশেই রয়েছে এমন কিছু স্থান, যা অন্যান্য দেশ ও জাতির মানুষের কাছে আকর্ষণীয়। ভ্রমণ ও পর্যটন মানুষের জানার কৌতূহল ও মননশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে পর্যটন শিল্পও ক্রমাগত পরিবর্তন ও উন্নত হয়েছে। পর্যটন বর্তমানে একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। তবে এই খাতটি এখনো প্রাথমিক অবস্থায় রয়ে গেছে এবং এর উন্নয়নের জন্য পরিকল্পিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

পর্যটনের সংজ্ঞা ও বৈশ্বিক গুরুত্ব:

পর্যটন হলো একটি আনন্দদায়ক এবং শিক্ষামূলক ক্রিয়াকলাপ, যা মানুষকে বিভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি এবং পরিবেশ সম্পর্কে জানার সুযোগ প্রদান করে। পর্যটনের মাধ্যমেই মানুষ বিভিন্ন দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং জীবনধারা সম্পর্কে জানতে পারে। একবিংশ শতাব্দীতে পর্যটন বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। পর্যটন শুধুমাত্র ভ্রমণ সম্পর্কিত নয়, এটি বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের পথও তৈরি করে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের আকর্ষণীয় স্থান:

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি দেশ। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থান পাহাড়পুর, ময়নামতি, এবং সোনারগাঁও পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া সিলেটের চা বাগান, রাঙ্গামাটির কাপ্তাই লেক, বান্দরবানের নীলগিরি ও সাজেক ভ্যালির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশের পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করেছে। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে ষাটগম্বুজ মসজিদ, পুঠিয়া রাজবাড়ি, এবং কান্তজিউ মন্দির পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়। এসব স্থান বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের কাছে দেশের পরিচয় তুলে ধরে এবং পর্যটন শিল্পের বিকাশে সহায়তা করে।

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রস্তাব:

বাংলাদেশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পর্যটনের সুযোগ। এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, এবং ঐতিহাসিক পর্যটন।

  1. প্রাকৃতিক পর্যটন: সুন্দরবন, কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিন, এবং রাঙ্গামাটি পর্যটকদের কাছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য জনপ্রিয়।
  2. সাংস্কৃতিক পর্যটন: দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, যেমন ময়নামতি, পাহাড়পুর এবং সোনারগাঁও দেশের সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের সাথে পর্যটকদের পরিচয় করিয়ে দেয়।
  3. ধর্মীয় পর্যটন: ষাটগম্বুজ মসজিদ, কান্তজিউ মন্দির, এবং বিভিন্ন মাজার পর্যটকদের ধর্মীয় অনুভূতি এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানতে সহায়তা করে।
জাতীয় পর্যটন নীতিমালা ও প্রস্তাবনা:

বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে প্রথম পর্যটন নীতিমালা গৃহীত হয়, যা বিভিন্ন পর্যায়ে পর্যটন খাতকে উন্নত করতে সহায়তা করে। তবে বর্তমান সময়ে এই নীতিমালা আধুনিক প্রযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক পর্যটনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই, পর্যটন খাতকে আরও শক্তিশালী ও দক্ষ করার জন্য নীতিমালা আপডেট করা জরুরি। কিছু প্রস্তাবনা নিম্নরূপ:
  1. পর্যটন সম্পর্কিত বিনিয়োগ বাড়ানো।
  2. পর্যটন সংক্রান্ত অবকাঠামো উন্নয়ন।
  3. পর্যটন স্থানে সুরক্ষার ব্যবস্থা বৃদ্ধি।
  4. বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য উন্নত ও কার্যকর প্রচারাভিযান চালানো।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পর্যটনের ভূমিকা:

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্প একটি সম্ভাবনাময় ও গুরুত্বপূর্ণ খাত। যদিও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এই খাত থেকে বাংলাদেশের আয় কিছুটা কম, তবুও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি সম্ভাব্য উৎস হিসেবে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পর্যটন শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হওয়া এবং স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব। পাশাপাশি, দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণ করাও সম্ভব।

পর্যটন শিল্পের প্রধান সমস্যা:

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের পথে রয়েছে বেশ কিছু বাধা:
  1. যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব: অনেক পর্যটন স্থানে পৌঁছানো বেশ কষ্টকর, কারণ সড়ক এবং অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত নয়।
  2. আবাসন ব্যবস্থা: পর্যটন স্থানে উন্নতমানের হোটেল, রিসোর্ট এবং অন্যান্য আবাসন সুবিধা প্রয়োজন।
  3. অবকাঠামো ও নিরাপত্তা সমস্যা: অনেক পর্যটন স্থানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেই।
  4. পর্যটন সম্পর্কিত সেবা: পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পর্যাপ্ত সেবা ও সুবিধা নেই যা পর্যটকদের অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের সম্ভাবনা:

বাংলাদেশের পর্যটন খাতের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের পর্যাপ্ত পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে আরও উন্নত করা সম্ভব। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, এবং ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়। বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা, এবং পর্যটন স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে এই খাতের উন্নতি হতে পারে।

পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য করণীয় পদক্ষেপ:

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:
  1. পর্যটন সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
  2. পর্যটন খাতে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা।
  3. পর্যটন স্থানের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
  4. উন্নত আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
  5. পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা।
  6. পর্যটন স্থানগুলিতে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে পর্যটকদের জন্য সেবা প্রদান।
উপসংহার:
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিকে অগ্রসর হতে পারে। পর্যটন খাতের উন্নয়ন দেশের অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকারের পর্যাপ্ত উদ্যোগ এবং স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে পর্যটন খাতকে আরও উন্নত করা সম্ভব। পর্যটন খাতের সঠিক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

রচনাটি ভালো লাগলে, আরও অনেক সহজ ও দরকারি রচনা পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট— StudyTika.com। এখানেই পাবেন সব শ্রেণির রচনা একসাথে।

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.