মোবাইল ফোন রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

 ভূমিকা: এই ব্লগপোস্টে রয়েছে মোবাইল ফোন রচনা। সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে ক্লাস ৭, ৮, ৯, ১০, এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য

মোবাইল ফোন রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

মোবাইল ফোন রচনা ১

সূচনা : 

আধুনিক যুগ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ। আজকের দিনে যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সহজলভ্য মাধ্যম হলো মোবাইল ফোন । এটি আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।

মোবাইল ফোন কী : 

মোবাইল ফোন হলো একটি তারবিহীন ফোন, যার সাহায্যে দূরের মানুষের সাহায্যে কথা বলা যায় ও ক্ষুদে বার্তা পাঠানো যায়।

মোবাইল ফোন আবিষ্কারের ইতিহাস : 

মোবাইল ফোন কেউ একজন আবিষ্কার করে নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই এটার উদ্ভাবন কাজ শুরু হয়। আমেরিকার বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্রাহাম বেল প্রথম টেলিফোন আবিষ্কার করেন, তাঁর ‘বেল’ টেলিফোন কোম্পানির গবেষক রিচার্ড এইচ ফ্রাংকিয়েল এবং জোয়েল এস এ্যাঞ্জেল বেতারে বিদ্যুৎ ব্যবহার যন্ত্রের কৌশল থেকে আজকের মোবাইল কৌশল উদ্ভাবন করেন। 

তবে সীমিত পর্যায়ে সেন্ট লুইসে ১৯৪৬ সালে প্রথম বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয়। ধাপে ধাপে এর উন্নতি হয়েছে । আগে ১৯৬৪ সালের দিকে শুধু গাড়িতে মোবাইল ফোন থাকত ৷ ১৯৭৩ সালে ‘মটরোলা’ কোম্পানির গবেষক মার্টিন কুপার হাতে ধরা ছোট সেট তৈরি করেন এবং প্রথম উদ্ভাবক কোয়েল এস. এ্যাঞ্জেলকে প্রথম কলটি করেন।

মোবাইল ফোন যেভাবে কাজ করে :

যে এলাকায় মোবাইল ব্যবহার করা যায়, সেই এলাকাকে ছোট ছোট অংশে বা 'সেল'-এ ভাগ করা হয়। প্রতিটি সেলে একটি শক্তিশালী বেতার টাওয়ার বসানো থাকে। এই টাওয়ারগুলো একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে একটি অদৃশ্য নেটওয়ার্ক তৈরি করে। মোবাইল ফোনের ভেতরে একটি অ্যানটেনা থাকে। যখন কেউ মোবাইলে 'হ্যালো' বলে, তখন সেই শব্দটি মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দ্রুত অন্য প্রান্তে পৌঁছে যায়। তারপর সেই শব্দ বেতার তরঙ্গ হয়ে অপর গ্রাহকের ফোনে পৌঁছে যায় এবং সেখানে আবার শব্দে পরিণত হয়।

মোবাইল ফোনের সুবিধা : 

মোবাইল ফোনের সুবিধা অনেক। পাশের ঘরে ফোন করা থেকে শুরু করে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তেই এখন মোবাইল ফোন দিয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। মোবাইল ফোন সেট দিয়ে এখন ঘড়ি, ক্যালেন্ডার, টর্চলাইট ক্যালকুলেটরের কাজ থেকে শুরু করে কম্পিউটারেরও অনেক বিচিত্র ধরনের কাজ করা যায়।

মোবাইল ফোনের অসুবিধা : 

মোবাইল ফোন দিয়ে যেমন অনেক ভালো কাজ হয় তেমনি এর খারাপ ব্যবহারও হতে পারে। মোবাইল ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে।

উপসংহার : 

আজকের দিনে মোবাইল ফোন ছাড়া আমরা একটা দিনও কল্পনা করতে পারি না। তবে মোবাইল ফোনের খারাপ ব্যবহার হতে পারে। তাই সবাইকে খারাপ ব্যবহার পরিহার করে এটিকে প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করতে হবে

মোবাইল ফোন রচনা ২

ভূমিকা

বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। আর এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিজ্ঞানের যে কয়টি বিষ্ময় কর আবিষ্কার রয়েছে মোবাইল ফোন তাদের মধ্যে অন্যতম। টেলিফোনেরই একটি উন্নততর সংস্করণ হল এই মোবাইল ফোন। বিবর্তনের সোপান বয়ে আসে সভ্যতা আর সভ্যতা হচ্ছে মানবজাতির মেধা, বুদ্ধি  ও অভিজ্ঞতার সমষ্টি। আধুনিক এই সভ্যতায় সৃষ্টি হয়েছে ইলেকট্রনিকের অনেক বিস্ময়কর আবিষ্কার আর এই বিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং আশ্চর্যজনক আবিষ্কার হল এই মোবাইল ফোন।

মোবাইল ফোন এখন আধুনিক জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং নানা দরকারি কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এক সময় মোবাইল ফোন কেবল কথা বলার জন্যই ব্যবহার হতো, কিন্তু এখন এটি ইন্টারনেট চালানো, ছবি তোলা, লেখালেখি, কেনাকাটা সহ অনেক কাজেই ব্যবহৃত হয়। দূরে থাকুক বা কাছে—মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহজেই যোগাযোগ করা যায়। তাই মোবাইল এখন মানুষের সবচেয়ে প্রিয় ও প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক ডিভাইস হয়ে উঠেছে।

তবে এখন মোবাইল ফোন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নয় এখন এটি অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার এক নতুন বিপ্লব এনেছে এই মোবাইল ফোন। আর বিশ্ব সভ্যতার কাছে উন্মোচন করেছে যোগাযোগ মাধ্যমের নব দিগন্ত।

মোবাইল ফোন কি

মোবাইল ফোন হল ছোট আকারের তার বিহীন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস। সেলুলার ফোন হিসেবে বা হ্যান্ডফোন হিসেবে ও মোবাইল ফোনকে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ইংরেজি মোবাইল (Mobile) যার অর্থ হলো স্থানান্তর যোগ্য বা ভ্রাম্যমান ডিভাইস। মোবাইল ফোনের মধ্যে শব্দ বা তথ্য গ্রহণ এবং প্রেরণ করার জন্য ইনপুট এবং আউটপুট ইউনিট থাকে আর থাকে একটি ডিসপ্লে ইউনিট বা পর্দা যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী নিজের ফোনে অপরপ্রান্ত থেকে আসা যে কোন ফোন কলের নম্বর সহ কানেকশন বা সংযোগের প্রকৃতি দেখতে পাই।

মোবাইল ফোন হলো ছোট আকারের একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যার সাহায্যে সেলুলারা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দ্বিমুখী বা ফুল ডুপ্লেক্স যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। মোবাইলের মধ্যে শব্দ গ্রহণ ও তথ্য প্রেরণ করার জন্য ইনপুট, আউটপুট ইউনিট থাকে। প্রত্যেকটি মোবাইল ফোনে একটি ডিসপ্লে ইউনিট বা পর্দা থাকে আর এই ডিসপ্লে ইউনিট বা পর্দার সাহায্যে ব্যবহারকারী নিজের ফোনে অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসা সকল প্রকার তথ্য দেখতে পারে।

প্রতিটি মোবাইলের ডিসপ্লেতে সময় এবং তারিখ প্রদর্শিত হয়ে থাকে। প্রতিটি মোবাইল ফোনে একটি এন্টেনা থাকে আর এই এন্টেনার সাহায্যেই মানুষ এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারে। এই মোবাইল ফোন খুব সহজেই মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে কারণ এটি হাতের মুঠোয় করে পরিবহন করা যায়।

মোবাইল ফোনের আবিষ্কার

মোবাইল ফোনের আবিষ্কারক হলেন ডক্টর মার্টিন কুপার। ১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল তিনি প্রথম সফলভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে যোগাযোগ করেন। সেই সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে হাতে ধরা প্রথম মোবাইল ফোন তৈরি করেন। তাই তাঁকে ‘মোবাইল ফোনের জনক’ বলা হয়। সেই মোবাইল ফোনটির ওজন ছিল প্রায় ১ কেজি। এরপর ১৯৮৩ সালে বাজারে আসে মটোরোলার তৈরি প্রথম বাণিজ্যিক ফোন ‘Motorola DynaTAC 8000X’। এরপর ১৯৮৯ সালে জাপানে শুরু হয় সেলুলার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মোবাইলের বাণিজ্যিক ব্যবহার। ১৯৯০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৪৬ কোটি। ডক্টর মার্টিন কুপারের হাত ধরেই মোবাইল ফোন আমাদের জীবনে দ্রুত যোগাযোগ ও নানা কাজে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে। বর্তমানে নকিয়া, স্যামসাং, হুয়াওয়ে ও সনি বিশ্বের জনপ্রিয় মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত।

মোবাইল ফোনের সংযোগ

একটি মোবাইল ফোনের মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে হলে বা সংযোগ পেতে হলে বৈজ্ঞানিক এবং বিধি সম্মতভাবে কিছু উপাদানকে সংযোগ দিতে হয়। একটি হ্যান্ড সেট মোবাইল ফোনে সবার আগে প্রয়োজন হয় মোবাইলের আবশ্যকীয় উপাদান। আর এই উপাদান গুলোকে সঠিকভাবে ধরে রাখা যায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। একটি মোবাইলে সঠিকভাবে সংযোগ পেতে হলে মোবাইলের সিম কার্ড, পিন কোড এবং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য সঠিকভাবে থাকতে হবে।

যদি এই তিনটি উপাদানের কোন একটি উপাদান না থাকে তাহলে মোবাইলে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না কারণ সিম কার্ডের সাথে ফোনটিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যুক্ত থাকে একটি নেটওয়ার্ক। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নেটওয়ার্ক গুলো সিম কার্ডের সাথে শতভাগ যোগাযোগ রক্ষা করতে সক্ষম হয়।

মোবাইল ফোনের প্রচলন

বিজ্ঞানী গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেন এবং উনিশ ১৯ শতকে সর্বপ্রথম তিনি দূরে অবস্থিত মানুষের কথাবার্তা টেলিফোনের মাধ্যমে আদান প্রদানের সক্ষম হন। আর টেলিফোনের সহজিকরণ ব্যবস্থা থেকেই আজকের এই মোবাইল ফোনের আবিষ্কার। জার্মানিতে সর্বপ্রথম মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয়। আর বাংলাদেশে মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু হয় ১৯৯৬ সাল থেকে। আর এই বিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে এসে এখন বাংলাদেশে মোবাইলের জয়জয়কার।

মোবাইল ফোনের বিবর্তন

বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে স্বয়ংক্রিয় ও তার বিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোনের যাত্রা শুরু হয়। যদিও সুদূর অতীত থেকেই এই প্রযুক্তির আবিষ্কার ও কার্যক্ষমতা নিয়ে গবেষণা ও মূল্যায়ন হয়ে আসছিল। মোবাইল ফোনে ভিডিও পদ্ধতি আবিষ্কার করার ফলে প্রযুক্তি গত দিক দিয়ে মোবাইল ফোন আরো এক ধাপ এগিয়ে যায়। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মোবাইল ফোন এখন অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে।

ডক্টর মার্টিন কুপার কে বলা হয় আধুনিক সেলফোনের জনক। তার হাত ধরেই বিচিত্র কাজের এবং দ্রুত যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোন পথ খুঁজে পেয়েছে। বর্তমানে সারাবিশ্বে খ্যাত নামা বড় বড় প্রতিষ্ঠান নানা নকশা ও রকমারীর কার্যসম্পাদনে সক্ষম হয়েছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। আর এই বিভিন্ন কোম্পানিগুলো বর্তমানে মোবাইল ফোন বাজারজাত করেছে। আর এদের মধ্যে স্বনামধন্য মোবাইল কোম্পানিগুলো হল - নোকিয়া, স্যামসং, সনি, হুয়াওয়ে  প্রভৃতি।

মোবাইল ফোন তৈরির বিভিন্ন কোম্পানি

বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাজারে বিভিন্ন কোম্পানি তৈরির মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ কোম্পানি হল স্যামসাং, অস্পো, শাওমি, সিম্ফনি, হুয়াই, মটোরোলা, নোকিয়া, ভিভো প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের চায়না মোবাইল ফোনও পাওয়া যায়। এই কোম্পানিগুলো বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন দামের ফোন বাজারজাত করেছে।

কোন কোন মোবাইল ফোনে ক্যামেরা থাকে আবার কোন কোন মোবাইল ফোনে ক্যামেরা সহ মেমোরি কার্ডের ব্যবস্থা থাকে। প্রায় সব ধরনের মোবাইলেই অডিও এবং ভিডিও, গান, ছবি সংরক্ষণ করা যায় এবং ইচ্ছা মত তা ব্যবহার করা যায়। তবে যে ফোনের কার্যকারিতা বেশি তার দামও একটু বেশি। কিন্তু বাজারে সব সুবিধাসহ চায়না মোবাইল গুলোর দাম এখন অনেক কম এবং তার সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে এসেছে।

ফলে বর্তমানে সাধারণ মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চায়না মোবাইল ব্যবহার করে থাকে। তবে অনেক সৌখিন মানুষ আছেন যারা বিভিন্ন কোম্পানির নামি - দামি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকেন।

মোবাইল ফোনের ব্যবহার

আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর পূর্বে মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয়েছে। বর্তমানে সারাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৮৭ ভাগ লোক মোবাইল ফোনের যোগাযোগের আওতায় এসেছে। মোবাইল ব্যবহারের শুরুর দিক থেকে মোবাইল ব্যবহার করতো শুধু ধনী এবং সৌখিন পরিবারের লোকজন। কিন্তু বর্তমানে আর ধনী নয় রিক্সা চালক, ফকির সবার কাছে মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোন দেখতে পাওয়া যায়।

২০১২ সালের এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ১১ কোটিরও বেশি মানুষ মোবাইল ফোনের আওতায় এসেছে। বর্তমানে মোবাইল ফোনের জনপ্রিয়তা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। মোবাইল ফোনে শুধু কথা বলা নয়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আরো অনেক সেবা মানুষ গ্রহণ করে থাকে। যেমন- এসএমএস, এমএমএস, ইমেইল, ইন্টারনেট, ব্লটুথ ইত্যাদিও ব্যবহার করে থাকে।

মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয়তা

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে মোবাইলের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির যুগে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষ দেশ-বিদেশ সহ বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগের সাথে সাথে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ও আচার ব্যবহার ইত্যাদি সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছে। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ছাড়া মানব জীবন যেন অচল হয়ে পড়ে। মোবাইল ফোন এমন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যার প্রয়োজনীয়তা সর্ব ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়।

মনে হয় এইতো সেদিনের কথা, মোবাইল আবিষ্কারের পূর্বে মানুষ চিঠি লেখা, চিঠি পাওয়ার অপেক্ষা ও অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে রেখেছিল। কিন্তু অতীতের সেই চিঠি লেখা, চিঠি পাওয়ার অপেক্ষা ও অনিশ্চয়তাকে দূর করতে মোবাইল ফোন নিয়ে এসেছে পরিষেবা এসএমএস। কম্পিউটার দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে এই মোবাইল ফোন। মোবাইলের মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব চলমান সব ধরনের ফটোগ্রাফি, সহজলভ্য ও স্থির ভাবে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে এই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে।

মোবাইল ফোন যে মানুষের শুধু নিত্যদিনের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে তা নয় এখন মোবাইল ফোন বিনোদনের অজস্র মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রেডিও, গেমিং, এম্পি থ্রি সহ টিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও উপভোগ করা যায় মোবাইলের মাধ্যমে। মিনিটের মধ্যেই পরীক্ষার্থীরা তাদের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল ঘরে বসে দেখতে পাচ্ছে। কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়, ভর্তি পরীক্ষার ফ্রম পূরণ ইত্যাদি যেকোনো কাজ করা যায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।

বর্তমানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নেট ব্যাংকিং ব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা পালন করছে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে ক্রেডিট কার্ডের বিকল্প হিসেবেও মোবাইল ফোন ব্যবহার করা সম্ভব হবে। মোবাইল ফোন এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে ঘরে বসেই সবকিছু পাওয়া যায় আলাদিনের সেই আশ্চর্য প্রদীপের মত। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মোবাইল ফোন তার গুরুত্বকে তুলে ধরে মানুষের সামনে।

মোবাইল ফোন যোগাযোগের মাধ্যম

সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে জীবনধারণের অপরিহার্য উপাদান হলো সঠিকভাবে যোগাযোগ মাধ্যম। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা ইমেইল ব্যবহার করে যে কোন বিষয় খুব সহজেই সংগ্রহ করতে পারি। দেশ-বিদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন মানুষের খবর আমরা মুহূর্তের মধ্যেই নিতে পারি। এছাড়াও যে কোন প্রয়োজনীয় বিষয় ডাউনলোড করে রেখে প্রয়োজনে তা আবার ব্যবহার করা যায়। আর এই সব কিছু সম্ভব হয় মোবাইল ফোনের যোগাযোগের মাধ্যমে।

মোবাইলে ইন্টারনেটের ব্যবহার

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেটের কারণে পুরো পৃথিবী আজ একটি ছোট গ্রামের মতো হয়ে গেছে, যাকে বলা হয় ‘বিশ্বগ্রাম’। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আমরা ইন্টারনেটে খুব সহজে দেশ-বিদেশে তথ্য পাঠাতে পারি। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বের যেকোনো প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করে মোবাইলেই সংরক্ষণ করা যায়। এমনকি যেকোনো দেশের লাইব্রেরি থেকেও দরকারি বই বা তথ্য ডাউনলোড করে পরে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই।

মোবাইল চিত্ত বিনোদনের মাধ্যম

বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির যুগে মোবাইল ফোন মানুষের চিত্ত বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মানুষ আর বিনোদনের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা টিভির সামনে বসে থাকে না, সিনেমা দেখার জন্য মানুষ এখন আর সিনেমা হলেও ভিড় জমায় না, মানুষ সকল চাহিদা পূরণ করে তার এই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গান শোনা, ছবি তোলা, গেম খেলা, ভিডিও দেখা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ চিত্ত বিনোদনের চাহিদা পূরণ করতে থাকে। 

মোবাইলে অন্যান্য সেবা

মোবাইলের মাধ্যমে ঘরে বসেই যেকোনো ধরনের সেবা পাওয়া সম্ভব হয়। জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে মোবাইল ফোন বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করে থাকে। মানুষ এখন ঘরে বসেই স্বাস্থ্য সেবা বা টেলি মেডিসিন, কৃষি সেবা, আবহাওয়ার খবর, রেলের টিকিট সংগ্রহসহ সকল প্রকার তথ্য সেবা গ্রহণ করে থাকে ঘরে বসেই। মোবাইলের এই সেবা জীবন যাত্রার মান কে করেছে অনেক উন্নত এবং মানুষের জীবন যাত্রা কে করেছে অনেক সহজ।

জাতীয় জীবনে মোবাইল ফোনের অবদান

জাতীয় এবং সামাজিক জীবনে ও মোবাইল ফোনের গুরুত্ব অপরিসীম। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে মানুষ এখন জনগণকে খুদে বার্তা পাঠায়। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা, পরিবার পরিকল্পনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সর্বোপরি শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে ও সচেতন করে তোলে এই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। আর এই মোবাইল ফোনের অবদান ব্যাপক প্রভাব ফেলে মানুষের জাতীয় জীবনে।

মোবাইল ফোনের অপকারিতা

মোবাইল ফোন মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ডিভাইস। প্রতিটি জিনিসের যেমন ভালো দিক রয়েছে তেমনি এর খারাপ দিক ও রয়েছে। তেমনি মোবাইল ফোনের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর অপকারিতা ও রয়েছে। বিজ্ঞানের সকল আবিষ্কারেই রয়েছে ক্ষতিকারক কিছু দিক তেমনি মোবাইল ফোনের রয়েছে অনেক ক্ষতিকারক দিক। নিচে মোবাইল ফোনের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরা হলো-

অর্থের অপচয়

বর্তমানে মানুষ সবচেয়ে বেশি অর্থের অপচয় করে মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে। ২০১৩ সালের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসেব মতে, মোবাইল সিমের ওপর আমদানি কর ৬00 টাকা থেকে কমিয়ে ৩০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। আর এই সহজলভ্যতার ফলে মোবাইলে গ্রাহক এখন অনেক বেড়ে গেছে। মানুষের ধারণা আমদানি কর ৬00 টাকা থেকে ৩০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে তাহলে মোবাইল হয়েছে সহজলভ্য।

আর এই কারণে মানুষের অর্থের অপচয়ও ব্যাপক বেড়ে গেছে। মানুষ এক মিনিটের মধ্যে যে কথা শেষ করতে পারে তা এখন সে ১০ মিনিট ধরে বলে যা তার অর্থনৈতিক দিকের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অধিকাংশ সময় মানুষ বুঝতেই পারেনা মোবাইলের মাধ্যমে মানুষ কত আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

স্বাস্থ্যের ক্ষতি

বর্তমানে মোবাইলের অতিরিক্তি ব্যবহার মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের যে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে সেগুলো হল-

  • মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় রাস্তা পারাপার দুর্ঘটনা ডেকে আনে।
  • নিত্য প্রয়োজনীয় কাজকর্মের ক্ষতি করে
  • আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি করে
  • অতিরিক্ত কথা বললে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়
  • মোবাইল ফুসফুস ও  হার্টের চাপ সৃষ্টি করে থাকে
  • কানের ক্ষতি হয় এবং মানুষের শ্রবন শক্তি লোভ পায়
  • একটানা তিন মিনিটের বেশি কথা বললে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে।
  • অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহার মানুষের প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
  • মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন ক্যান্সার রোগের জন্য অন্যতম দায়ী।

বাংলাদেশে মোবাইল ফোন

বাংলাদেশ সর্ব প্রথম মোবাইল জগতে প্রবেশ করে সিটি সেল কোম্পানির মাধ্যমে। ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে মোবাইল ফোন চালু করা হয়। ঢাকা শহরে এএমপিএস মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন সেবা চালু করেন "হ্যাচিসন বাংলাদেশ"  টেলিকম লিমিটেড। বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৯৬ সাল থেকে।

 বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব মোবাইল কোম্পানিগুলো বাজার দখল করে রেখেছে সেগুলো হল- গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, টেলিটক, সিটি সেল, এয়ারটেল প্রভৃতি। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণফোন, এয়ারটেল, সেবা এই তিনটি কোম্পানিকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনুমোদন প্রদান করেন। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল ফোন ব্যবহারে মধ্যবিত্তদের আশা পূরণ হয়ে যায়।

আর এরই ফলশ্রুতিতে সাধারণ মানুষের কাছে মোবাইল ফোন হয়ে ওঠে সহজলভ্য। আর এরই সূত্র ধরে বিভিন্ন কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের সাধ্যমত প্রচেষ্টা চালিয়ে যায় নিজ নিজ গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে। আর এর ফলে সাধারণ মানুষের কাছে মোবাইল ফোন হয়ে ওঠে সহজ । এখন মোবাইল ফোনের ব্যবহার কোন অসাধারণ ঘটনা নয় সৌখিন এবং ধনী-দরিদ্রের কোন ব্যাপার নয় মোবাইল ফোন এখন মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে আহার নিদ্রার মতো সাধারণ ঘটনা।

উপসংহার

বর্তমান বিজ্ঞানের একটি অনবদ্য সৃষ্টি হলো মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এক মিনিটের মধ্যে পুরো বিশ্বের সব খবর সংগ্রহ করা যায় মুহূর্তের মধ্যেই। প্রাচীনকালে খবর পেতে সময় লেগে যেত দিনের পর দিন এবং মাসের পর মাস। কিন্তু বর্তমানে মানুষ ঘরে বসে মুহূর্তের মধ্যে সব খবর পেয়ে যায় তার হাতে থাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে।

বর্তমান সময়ের মোবাইল ফোন বিশ্বের আশীর্বাদ হলেও এর কতিপয় খারাপ দিক রয়েছে। আর এই ক্ষতিকারক দিকগুলো কমিয়ে আনতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তা হুমকি স্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে। বিষের বিভিন্ন দেশ যেমন - জাপান, পর্তুগাল, সিঙ্গাপুর, ইসরাইল গাড়ি চালানো সময় মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

তবে সঠিকভাবে মোবাইল ফোনের ব্যবহার আমাদের জাতিকে আরো উন্নতি ও অগ্রগতির দিকে ধাবিত করবে। তাই মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহার আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে করতে হবে।


এই ছিল মোবাইল ফোন রচনা। আরও সুন্দর ও সহজ রচনা পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট — StudyTika.com।

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.