তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

 ভূমিকা: এই ব্লগপোস্টে তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনার উপর একটি সহজ ও সুন্দর রচনা দেওয়া হয়েছে। পুরোটা পড়লে অনেক উপকারে আসবে।

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা রচনা Class 7 8 9 10 ‍SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা রচনা ১

ভূমিকা :

মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী। এর মধ্যেই জীবনে ঘটে অনেক ঘটনা। সমৃদ্ধ হয় স্মৃতির ভাণ্ডার। কোনো স্মৃতি আনন্দের, কোনো স্মৃতি বেদনার। আনন্দের ঘটনাগুলো স্মৃতি হয়ে মনকে রোমাঞ্চিত করে, আর বেদনার স্মৃতিগুলো আঘাতে আঘাতে হৃদয়কে করে জর্জরিত এবং ক্ষতবিক্ষত। ছোট ছোট ঘটনাগুলো কালের আবর্তে হারিয়ে যায়, আর বড়গুলো স্মরণীয় হয়ে থাকে। এমন অনেক ঘটনা থাকে মানুষের জীবনে যা ভুলে থাকা যায় না। আমার জীবনেও এ রকম ঘটনা আছে, যা পতিনিয়ত আমাকে আঘাত হানে, কষ্ট দেয়। ঘটনাটি ঘটেছিল কয়েক বছর আগে। সে দিনটি আজো আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। 

স্মরণীয় ঘটনা :

ঘটনাটি আমার শিক্ষাজীবনের সাথে জড়িত। আমি ছিলাম নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার গোবিন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। এখান থেকে পাস করে ভর্তি হয়েছিলাম দুপ্তারা সেন্ট্রাল করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে। এখানে চার বছর পড়ালেখার পর রাজনৈতিক কারণে আমাকে স্কুল বদলাতে হয়েছে। ভর্তি হয়েছিলাম মদনপুরে অবস্থিত রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৯০ সালে এস. এস. সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলাম এই বিদ্যালয় থেকে। সে বছর রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আমরা এস.এস.সি পরীক্ষার্থী ছিলাম সত্তর জন। শফিক উল্লাহ নামে আমাদের একজন সহপাঠী ছিল। সে ছিল নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। তার ব্যবহার ছিল অমায়িক। সকলের সঙ্গেই সে এক মুহূর্তে মিশে যেতে পারত। এটাই ছিল তার একমাত্র বড় গুণ। কিছু পড়ালেখায় অত্যন্ত দুর্বল ছিল। তার মতো অমনোযোগী ছাত্র আমি আর কোথাও দেখিনি। সে নাকি কখনোই কোনো ক্লাসের পরীক্ষায় পাস করেনি। প্রত্যেক ক্লাসেই দু’বছর ফেল করার পর শিক্ষকরা তাকে তুলে দিতেন উপরের ক্লাসে। দশম শ্রেণিতেও সে দু বছর পড়েছে। শিক্ষকদের বেতের ভয়ে সব সময় শ্রেণিকক্ষে পেছনের চেঞ্চে বসত সে। দু তিন পিরিয়ড ক্লাস চলার পর আর তার দেখা পাওয়া যেত না। হয়ত কোথাও মাছ ধরতে চলে গেছে, নয়ত কারও সাথে সিনেমায়। না হয় কখনো কোথাও মাত্রা দলের আগমন ঘটেছে শুনে সেখানে চলে গেছে সে। এই ছিল শফিক উল্লাহর চিরাচরিত স্বভাব। 

শফিক উল্লাহ আমাদের সঙ্গে টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল। শিক্ষকরা তাকে এসএসসি পরীক্ষার জন্য মনোনীত করেননি নিশ্চিত ফেলের পরিসংখ্যান বেড়ে যাবে বলে। যেদিন পরীক্ষার ফল জানানো হয়েছিল সেদিন সে স্কুলেই আসেনি। বিকেলের দিকে আমরা কয়েকজন শফিক উল্লাহদের বাড়িতে গেলাম। গিয়ে দেখলাম মন খারাপ করে বসে আসে সে। লেখাপড়ায় মনোযোগী না হলেও ফেল করার পর ভীষণ মন খারাপ করার স্বভাব ছিল তার। আমরা তাকে নানাভাবে সান্ত্বনা দিলাম। চিন্তা না করতে অনুরোধ করলাম। কিনউত কে শোনে কার কথা। উল্টো তার চোখ থেকে পানি নেমে এল। সে বলে, দীর্ঘদিনের স্কুল জীবনে আমরা নাকি তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। অথচ তাকে বাদ দিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় আমরা অংশগ্রহণ করব, এই বেদনা সে সহ্য করতে পারছিল না। তাছাড়া আগামী বছর থেকে নতুন সিলেবাসে পরীক্ষা দিতে হবে, তখন সমস্যা হবে আরও অনেক বেশি। 

আমরা শফিক উল্লাহর বাবাকে বললাম, তিনি যেন স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে আবেদন করেন ছেলেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার জন্য। ছাত্রদের পক্ষ থেকে আমরাও আবেদন জানাব। শেষ পর্যন্ত আবেদন মঞ্জুর হয়েছিল। মৌখিকভাবে নানা ধরনের শর্ত আরোপ করে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল শফিক উল্লাহকে। অনুমতি পাওয়ার পর এমন আনন্দের ঝলক দেখেছিলাম তার চেহারায়, যা আর কোনোদিন কারও মুখে দেখিনি। যেন সে দু হাতে আকাশের চাঁদটাকেই পেয়ে গিয়েছিল। আমরাও তাকে বারবার চাপ দিচ্ছিলাম, শফিক উল্লাহ, ঠিকমত পড়, একটু মনোযোগী হও, এবার কিন্তু পাস করতে হবে। তা না হলে আর কখনোই তোমার পক্ষে এসএসসি পাস করা হবে না। কারণ, আগামী বছর থেকে নতুন সিলেবাসে পরীক্ষা দিতে হবে। 

আমাদের পরামর্শ শফিক উল্লাহর মনে ধরেছিল। দুষ্টুমি একেবারে ছেড়ে না দিলেও পড়ালেখায় মনোযোগী হয়েছিল। বাড়িতেও পড়ত। স্কুলে এসে কোচিং ক্লাসেও নিয়মিত অংশগ্রহণ করত। পরীক্ষার পূর্বদিন পর্যন্ত তার মধ্যে আর তেমন কোনো অনিয়ম দেখা যায় নি। আমরা সকলেই খুশি হয়েছিলাম। পরীক্ষার পর সে বলেছিল, মনে হয় এবার আমি ফেল করব না-অন্তত পাস করতে পারব।

একদিন টেলিভিশনের রাতের সংবাদে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের কথা জানানো হলো। আমার যেন তর সইছিল না, কতক্ষণে রাত শেষ হবে আর রেলস্টেশনে গিয়ে ফলাফল দেখে নেব পত্রিকায়। সারারাত ঘুম হলো না, খুবই অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে কাটলো। সকাল হতেই স্টেশনের দিকে ছুটলাম। সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখলাম আরও কয়েকজন। আমরা ব্যস্ত হয়ে ফলাফলের পাতায় চোখ বুলাতে লাগলাম। আমি তিন বিষয়ে লেটার মার্কসহ প্রথম বিভাগে পাস করেছি। অন্যান্যদের মধ্যে আরও দুজন প্রথম বিভাগ এবং বাকিরা দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেছে। এবার আমরা সবাই মিলে শফিক উল্লাহর রোল নম্বর খুঁজতে শুরু করলাম। প্রথমে তৃতীয় বিভাগে খুঁজলাম। একবার দেখে যখন ফেলাম না, তখন আবার খুঁজলাম। কিন্তু পাওয়া গেল না। আমাদের মন খারা হলো। সে পাস করতে পারেনি। কতক্ষণ পর আরও একবার খুঁজলাম, না পেয়ে আমাদের একজন বলল, দ্বিতীয় বিভাগে খুঁজে দেখি না। তাই করা হলো। একজন চিৎকার করে বলল, এই যে পাওয়া গেছে, শফিক উল্লাহ দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেছে। সে কী আনন্দ আমাদের! মুহূর্তে যেন নিজেদের পাসের কথা ভুলে গেলাম আমরা। সবাই মিলে ছুটে চললাম শফিক উল্লাহদের বাড়ির দিকে। 

বাড়িতে ওঠেই পেয়ে গেলাম শফিক উল্লাহর বাবাকে। তিনি জানালেন শফিক উল্লাহ স্টেশনের দিকে গেছে মিনিট দশেক আগে। আমরা পত্রিকা খুলে ফলাফল দেখালাম শফিক উল্লাহর বাবাকে। তিনি হাসবেন না কাঁদবেন বুঝতে পারছিলেন না। শুধু একবার শফিক উল্লাহর মাকে ডেকে বললেন, তোমার ছেলে পাস করেছে। শফিক উল্লাহর মা কাছে এসে দাঁড়ালেন। ছেলের পাস করার সংবাদটা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। কেবল তাকিয়েছিলেন ছলছল দৃষ্টিতে। এ সময়ে খবর এলো, স্টেশনে কে যেন রেলের নিচে কাটা পড়েছে। শুনে আমরা ছুটে গেলাম স্টেশনের দিকে।

মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। লোকজনকে ঠেলে ঠেলে আমি ভেতরে ঢুকলাম। দেখলাম, শফিক উল্লাহর দ্বিখণ্ডিত দেহটি পড়ে আছে নিথর হয়ে। চোখ দুটো তখনো তাজা। তাকিয়ে ছিল আমার দিকে। আমার চিৎকার দিতে ইচ্ছে হচ্ছিল, কিন্তু পারছিলাম না। একটু পরেই পুলিশ এসে কাটা লাশ নিয়ে গেল রেলওয়ে থানায়। জানানো হলো, আপাতত লাশ দেওয়া হবে না। তারপর ডায়রি লেখা হলো। শফিক উল্লাহ কীভাবে মারা গেল, বিস্তারিতভাবে লেখা হলো ডায়রিতে। লাশ দেওয়ার দাবি জানিয়ে ব্যর্থ হলাম আমরা। 

অবশেষে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলাম। অনেক কথা কাটাকাটির পর কর্তৃপক্ষ রাজি হলেন এক শর্তে, আমাদের সকলের স্বাক্ষরসহ লিখে দিতে হবে যে, ভবিষ্যতে এর জন্য রেলওয়েকে দায়ী করা যাবে না। আমরা তাই করলাম। তারপর শফিক উল্লাহর লাশ নিয়ে হাজির হলাম বাড়িতে। প্রথমেই চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন শফিক উল্লাহর মা। কান্নাকাটি শুরু করল ভাইবোনেরা। সে কী কান্না! শফিক উল্লাহর বাবা কোনো শব্দ করলেন না। শুধু তাকিয়ে ছিলেন বোবা মানুষের মতো। চোখে কোনো পানি ছিল না। হয়তো অতি শোকে তিনি পাথর হয়ে গিয়েছিলেন। এমন ‍দৃশ্য আমি আর কখনো দেখি নি। দিনটি আমার কাছে আজও স্মরণীয় হয়ে আছে। 

উপসংহার :

শফিক উল্লাহর আত্মহত্যা ছিল সত্যিই এক মর্মান্তিক ঘটনা। সে সবসময় পরীক্ষায় ফেল করত। তার ধারণা ছিল এস.এস.সি পরীক্ষায় সে পাস করতে পারবে না। তাই সে ফলাফল প্রকাশের সংবাদ শুনেই ফেলের কথা ভেবে আত্মহত্যা করেছিল রেলগাড়ির চাকার নিচে পড়ে। এটা আমার জীবনে সবচেয়ে মর্মান্তিক স্মরণীয় ঘটনা।

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা রচনা ২


ভূমিকা

প্রকৃতির পালাবদলে দিন আস দিন যায়। জীবন প্রবাহে ঘটে নানা ঘটনা। প্রতিনিয়ত বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায় অইেশ ঘটনা। কখনো কখনো এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যা চাইলে ও ভোলা যায় না। মানুষের জীবন স্মৃতিময় হয়ে থাকে।আমার জীবনের তেমনি স্মৃতময় ঘটনা ২০০৬ সালে ২৯ এপ্রিলের কাল রাত। এটি ছিল একটি ঝড়ের রাত। জীবনে অইেশ ঝড়ের কথাই শুনেছি। কিন্তু সে রাতে ঘূণিঝড়ের যে তন্ডবলীলা প্রত্যক্ষ করেছি, এর কোনো তুলনা হয় না।

স্মরণীয় রজনী

ঝড় জলোচ্ছাস এবং প্লাবনের দেশ বাংলাদেশ। এর ফলে প্রতিবছরই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে বাংলাদেশের বুক ধবংস হচ্ছে ধন প্রাণ সব কিছু। এমনই একটি চরম দুঃখের রজনী ২০০৬ সালে ২৯ এপ্রিল । এটি আমার তথা জাতীয় জীবনের একটি বেদনার ইতিহাস মৃত্যুও মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমার রক্তাক্ত হৃদয়ের আহাজারি। এদিন উপকূলীয় অঞ্চলের হাতিয়া সন্দ্বীপ চট্রগ্রাম চর জব্বার নোয়াখালি সমুদ্র অঞ্চলের প্রবল ঘূণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল। এটি ছিল স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়।

ঝড়ের পূর্ববাস

বেশ কিছুদিন ধরে গোমড়া মুখে প্রকৃতি থেমে থেমে কাঁদছিল। এরপর আবহাওয়া দেখা দিল বিরুপ প্রতিক্রিয়া । কখনো আকাশ মেঘে ঢাকা কখনো প্রবল বৃষ্টি। ২৭ এপ্রিল আবহাওয়া দফতরের নজরে এল ঝড়ের পূর্বাভাস। রেডি ও টিভি থেকে ঘোষণা করা হলো বঙ্গোপসাগরে নিম্ন চাপের সৃষ্টি হয়েছে।ক্রমে তা উওরে সরে যাচ্ছে এবং প্রবল ঝড়ের রুপ নিচ্ছে । ২৮ তারিখ তা আরো প্রবল রুপ ধারণা করল। বেতারের ইথারে ভেসে এল মহাবিপদ সংকেত ১০ নম্বর সিগন্যাল সবাই সাবধান জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানকে সরে যেতে বলা হলো।

ঝড়ের বর্ণনা

২০০৬ সালের ২৯ এপ্রিল সকাল থেকেই শুরু হয় একটানা বর্ষণ । ঝড়ো বাতাসসহ বর্ণণে পৃথিবীটা যেন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছিল। প্রকৃতির এ অপূর্ব বিভীষণমূর্তি আগে কখনো দেখিনি। দুপুরের দিকে কিছুটা শান্ত হয়ে এল পরিবেশ। মনে হলো পৃথিবীর উপর থেকে কালো ছায়া সরে গেছে। কিন্তু মনে হয় ভয়ে দূর হচ্ছিল না। দিন শেষে সন্ধ্য আসল ঈশান কোণে কালো মেঘের আভাস ফুটে উঠে। কিছুটা সময়ের মধ্যে আকৃতির বর্ণাঢ্যতা লাভ করে দিগন্ত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষসহ সকল প্রাণী যেন সৃষ্টিকর্তার দয়ার জন্য উর্ধ্বমুখে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে ছিল। রাস্তায় কোনো জনমনবছিল না। রাখাল বালকেরা নিত্য দিনের মতো গোধূলিলগ্নে গুরুর পাল নিয়ে ঘরে ফিরছিল না। কদম ডালে বসে ভিজে কাক অসহায় আর্তনাদে প্রকৃতির কারুণ্য ফুটিয়ে তুলেছিল । সব মিলিয়ে চারদিকে বিষণ এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল। ধীরে ধীরে অন্ধকার আরো গাড় হয়ে আসছিল। গাছপালা রাস্তা ঘাট কিছুই দেখা যা ছলি না। হঠাৎ আকাশে মেঘের গর্জন শোনা যায়। মানুষের সামনে এসে দাঁড়াল মহাদূযোগ। রাতের প্রথম প্রহরে সাঁ সাঁ শব্দে শুরু হলো নির্মম নিষ্ঠুর প্রচন্ড ঝড়। ক্রমে রাতের প্রথম প্রহর গড়িয়ে এল মাঝরাত। শুরু হলো কেয়ামত আলামত। বাতাসের গতিবেগ গিয়ে দাঁড়াল ২৫০ কিলোমিটারে । চারদিকে কানফাটা বজ্রধ্বনি আগুনের শো শো শব্দ যেন শিঙ্গাধ্বনি। তার সাথে ২০ থেকে ৪০ ফুট উচু জলোচ্ছ্বাস। ঘরে ঘরে মানুষের মরণের চিৎকার । রাক্ষুসী ঝড়ের হুঙ্কারে পৃথিবী প্রকম্পিত। কাঁচা ঘর বাড়ি গাছপালা বিকট শব্দ করে ভেঙ্গে যাচ্ছে । আকাশব্যাপী বিদ্যুাতের চমক এবং মেঘের গর্জনে ধরণী খন্ড বিখন্ড হওয়ার উপক্রম। সমগ্র প্রভৃতি ধ্বংসের আনন্দে মও। ভয় ব্যাকুল পৃথিবী তারই পদতলে ত্রাণি ত্রাণি চিৎকার দিশেহারা।

ঝড়ের রাতে আমাদের অবস্থা

ঝড়ের রাতে বাব মা ভাইবোন মিলে আমরা সবাই বাড়িতেই ছিলাম। ঝড় শুরু হলে আমরা সবাই আল্লাহকে ডাকছিলাম। মা আমাদের তিন ভাই বোনকে কাছে নিয়ে বসেছিলেন।বাবা রাত ১১ টার দিকে এশবার আজান দিয়েছিল।কারণ আল্লাহর রহমতে ছাড়া ঐ সময় আমাদের বাঁচার কোনো উপায় ছিল না। হঠাৎ ঝড়ের একটি ঝাপড়া এসে আমাদের ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে যায়। মা বাবা ভাই বোন আমরা সবাই ভয়ে দিশেহারা হয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম। কিছুক্ষণ পরই দেখলাম ঘরের ভেররে পানি ঢুকছে । দেখতে দেখতে পানি হাঁটু পরিমাণ হয়ে গেল। চারদিকে ঘোর অন্ধকার। বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। তবু ও উপায় বাঁচাবার জন্য সবকিছু জন্য সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। ঝড়ের সাথে লড়াই করে এবং পানি সাঁতরিয়ে আমরা পাশের একটা বাসার দোতলায় আশ্রয় নিলাম।সেখানে আমাদের মতো আর ও অনেক লোক আশ্রয় নিয়েছে।

ঝড়ের অবসান

ভোর চারটা পযর্ন্ত চলে তান্ডবলীলা । মেঘের লীলায়, মেঘের লীলায় বজ্রের গর্জনে বাতাসের শক্তিতে যেন অকালে ভীষন কিয়ামতের পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। শেষ রাতের দিকে ঝড়ের বেগ ধীরে ধীরে কমে আসে। যেন বাতাসের শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরই মুয়াজ্জিন মসজিদে আজান দেয়। এ সময় চারদিকে বাড়ি ঘর ও স্বজনহারা মানুষের ক্রন্দনে বাতাসে ভারী হয়ে উঠে। কিছুক্ষণ পরই মুয়াজ্জিন মসজিদে আজান দেয়। এসময় চারদিকে বাড়ি ঘর ও স্বজনহারা মানুষের ক্রন্দনে বাতাস ভারী হয়ে উঠে।

ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি

ভোরের আমরা নিচে নেমে এলাম। চারদিকে ধ্বংসস্তুপ উপর সামীহিন বিরান ভূমি। নিষ্ঠুর ঝড় কেড়েই নিয়েছে সব। মাঝে মাঝে দু একটি অর্ধ ধ্বংস দালাল এবং ডালাপালাহীন বৃক্ষ পূর্বের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। যত্রতত্র মানুষ আর গবাদি পশুর লাশ পড়ে রয়েছে । তাদেরকে সরানোর মতো কোনো লোক দেখা গেল না। গাছের মগডালে ও আটকে থাকতে দেখলাম । মানুষ আর পশুর পাখির চিৎকার পৃথিবী প্রকম্পিত । স্বজনহারা মানুষ আপন জনের খোঁজে চারদিকে ছুটাছুটি করছে। সেদিন কার ঝড়ে আমাদের গ্রামে বগু লোক মারা যায়।

উপসংহার

ঝড় তুফান ভয়ঙ্কর । কিন্তু সে যে নিমিষে সর্বহারা করতে পারে তা সেবারই প্রথম উপলব্ধি করলাম। ভাবতাম মৃত্যুর রুপ না জানি কেমন। ঝড়ের সে রাতে চোখের সামনে মৃত্যুর রুপ প্রত্যক্ষ করলাম। সে রাতের কথা মনে হলে এখন ও শরীর শিউরে উঠে। হৃদয়ের বাজে ব্যথা।এ রাতের কথা আমি কোন দিন ভুলব না ভোলার নয়।

উপসংহার: রচনাটি আশা করি তোমার ভালো লেগেছে। আরও দারুন দারুন রচনা পড়তে ভিজিট করো — StudyTika.com।

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.