বন্ধুরা, আজকের এই ব্লগপোস্টে আছে একটি সুন্দর রচনা— “একটি ট্রেন ভ্রমণ” নিয়ে। রচনাটি খুব সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে। আশা করি তোমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বে।
একটি ট্রেন ভ্রমণ রচনা ১
সূচনা :
ভ্রমণ সবসময়ই সকলের জন্য আনন্দদায়ক একটি অভিজ্ঞতা। আমি একজন ছাত্র এবং পাশাপাশি ভ্রমণপ্রিয় একজন বালক। বিশেষ করে ট্রেন ভ্রমণ আমার কাছে অত্যন্ত উপভোগ্য ও রোমাঞ্চকর মনে হয়। চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখা, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা সত্যিই দারুণ এক অনুভূতি।
যাদের সাথে ভ্রমণ :
আমার নাম সমু। আমার একজন অন্তরঙ্গ বন্ধ আছে। সেও আমাদের স্কুলে পড়ে। বার্ষিক পরীক্ষার পর দুই পরিবারের লোকজন ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সিলেট ভ্রমণ করি। আমরা সিলেট গিয়েছিলাম ট্রেন যোগে। এটি ছিল আমাদের জন্য আনন্দঘণ ট্রেন ভ্রমণ।
ভ্রমণ যাত্রার প্রাক্কালে :
ফেনী থেকে সিলেট একটি দূর পাল্লার ট্রেন ভ্রমণ। আমরা ছিলাম ছাত্র। আমরা একাকী সিলেট যেতে পারি না। আমরা আমাদের মা-বাবার তত্ত্বাবধানে সিলেট ভ্রমণ করি। আমাদের দুই পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল আটজন। এজন্য ভ্রমণ যাত্রার তিনদিন পূর্বে আমরা আটটি ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করি।
ভ্রমণ যাত্রার কারণ :
বাংলাদেশের সিলেট শহরটি দুইজন মহাপুরুষ দরবেশ—হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.)—এর পূণ্য স্মৃতি বিজড়িত হওয়ায় একে অত্যন্ত পবিত্র ও সম্মানিত স্থান হিসেবে গণ্য করা হয়। আমাদের মা-বাবা এ দুই অলির মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সিলেট ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। এই উদ্দেশ্যে তাঁরা ট্রেনে ভ্রমণের জন্য আটটি টিকিট সংগ্রহ করেন এবং সিলেট যাত্রার পূর্ণ প্রস্তুতি নেন। সেই সুবাদেই আমাদের এই আনন্দঘন ট্রেন ভ্রমণের সুযোগ হয়।
ভ্রমণের বর্ণনা :
ট্রেনটি ছিল আন্তঃনগর। নির্দিষ্ট দিনে সকাল ৯:৩০ মিনিটে আমরা রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত হলাম। ট্রেনটি ছিল পাহাড়িকা এক্সপ্রেস। সকাল ১০:০০ টায় ট্রেনটি স্টেশন ফ্লাটফরমে প্রবেশ করল। আমরা ট্রেনে প্রবেশ করলাম। টিকেটের নির্দিষ্ট আসন ছিল। আমি এবং আমার বোন সেবু, জয় এবং তার বোন জয়িতা জানালার পাশের আসনে বসে গেলাম। কয়েক মিনিটের মধ্যেই গাড়ির পারিচালকের বাঁশি বেজে উঠলে ট্রেন চলতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেনটি পূর্ণ বেগে চলতে আরম্ব করল।
প্রাকৃতিক দৃশ্য ও মানুষের জীবন চিত্রের বর্ণনা :
আমরা জানালার মাধ্যমে বাইরে চিরসবুজ সৌন্দর্য দেখতে লাগলাম। দেখতে মনে হচ্ছিল আমরা চিরসবুজ মাঠের মধ্য দিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলছি। কৃষকরা তাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে মাঠে কাজ করছিল। গরু-ছাগল, মহিষ মাঠে ঘাস খাচ্ছিল। কিছু কিছু কৃষক তাদের কাঠের নির্মিত লাঙল দিয়ে মহিষ যোগে জমি চাষ করছিল। মৎসজীবীরা পুকুরে খালে ডোবায় মাছ ধরছিল। দীর্ঘ ট্রেন ভ্রমণের পর যখন ট্রেনটি শ্রীমঙ্গল অতিক্রম করছিল আমরা তখন থেকে ছোট বড় পাহাড় টিলা দেখতে শুরু করলাম। ট্রেনটি তখন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। সবুজ চা বাগান দিগন্ত প্রসারিত হয়ে তার মধ্য দিয়ে আমরা বার বার অতিক্রম করে যাচ্ছিলাম। আমরা অনূভব করছিলাম যে আমরা সকলেই চা বাগানের চির সবুজ সাম্রাজ্যে প্রবেশ করছিলাম। কিছু কিছু চা শ্রমিক বাগানে কাজ করছিল। আমরা পাহাড়ের উপরে অনেকগুলো মানুষের থাকার ঘর দেখলাম। আমরা অনেক গুলো নৃগোষ্ঠি ও উপজাতির লোকজনকে পাহাড়ের পাদদেশে কাজ করতে দেখলাম। অনেক মানুষ শাকসবজির বাগানে কাজ করছিল। কিছু গরিব মানুষ পাহাড় থেকে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করে আনছিল। আমরা সবগুলো দৃশ্য একে একে উপভোগ করছিলাম।
উপসংহার :
আমাদের ট্রেন শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যা বেলায় সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত হয়। আমরা সকলে একটি রেস্টহাউজে উপস্থিত হই। দুরপাল্লার ট্রেন ভ্রমণ কষ্টকর হলেও এটি ছিল ভীষণ উপভোগ্য। এ ট্রেন ভ্রমণটির কথা জীবনে ভুলতে পারবো না।
একটি ট্রেন ভ্রমণ রচনা ২
ভূমিকা :
যেকোনো ধরনের ভ্রমণই আনন্দদায়ক । ভ্রমণ করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি । আর ভ্রমণ থেকে অর্জিত হয় অনাবিল আনন্দ ও প্রশান্তি। প্রকৃতপক্ষে, ভ্রমণের ফলে মানুষের চিত্ত যেমন প্রফুল্ল হয় ঠিক তেমনি সে অনেক অজানার সন্ধান লাভ করে ।
রেলভ্রমণের প্রস্তুতিপর্ব :
ভ্রমণের দিনক্ষণ অবশেষে ঠিক হলো। আমি তো আর দেরি একদমই সহ্য করতে পারছিলাম না। খালামনি স্টেশনে গেলেন টিকিট কাটতে। রেলে যাত্রী দিন দিন বেড়েই চলেছে, তাই আগেভাগে টিকিট না কাটলে সিট পাওয়া মুশকিল। খালামনি সুন্দরবন ট্রেনের টিকিট কেটে এনে আমার হাতে দিলেন—গ বগির ২৭ ও ২৮ নম্বর সিট আমাদের জন্য, সকাল ৭:৪০ মিনিটের ট্রেন। আনন্দে আমি আরও উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলাম। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ গোছাতে শুরু করলাম; মনে করে প্রয়োজনীয় সবকিছু তুলে ফেললাম। মামাতো ভাই দীপ্তর জন্যে আগে থেকেই কেনা একটা উপহার ব্যাগের একদম ওপরে রাখলাম। মা মামির জন্য কিছু জিনিস দিয়েছিলেন, সেগুলো খালামনির ব্যাগেই রাখা হলো।
রেল স্টেশনের দৃশ্য :
আমাদের বাড়ি থেকে স্টেশন খুব দূরে নয়। রিকশায় আমরা স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । প্রায় ১৫ মিনিট পর আমরা কমলাপুর স্টেশনে নামলাম। এই স্টেশনটিকে একবারে নতুন করে সাজানো হয়েছে। ছাদের ওপর ট্রান্সপারেন্ট গ্লাস লাগানোয় সম্পূর্ণ আলো স্টেশনের ভেতরে পড়ছিল। মোট ৬টি প্লাটফর্ম আছে এ স্টেশনে এবং সবগুলোতেই ট্রেন প্রতিদিন যাতায়াত করে। স্টেশনের ভেতরে বিশুদ্ধ পানি খাবার সুন্দর ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া স্টেশনটিও বেশ পরিষ্কার। তবু কিছু মানুষ খাবারের ঠোঙা এদিক-ওদিক ফেলল। আমার খুব খারাপ লাগল ওই দৃশ্য দেখে ।
বিরতি স্টেশনসমূহের চিত্র :
সুন্দরবন আন্তঃনগর ট্রেন হওয়া সত্ত্বেও এটি বড় বড় স্টেশনগুলোতে যাত্রাবিরতি দিচ্ছিল। আমি সেই সুযোগে জানালা দিয়ে প্রতিটি স্টেশন মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম। প্রথমেই আমার যে বিষয়টি মন ছুঁয়ে গেল, তা ছিল মানুষের মুখের ভাষা। একেকটা অঞ্চল পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের কথার ধরণ, উচ্চারণ কতটা বদলে যায়, তা দেখে আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। যদিও বইয়ের পাতায় এসব আগে পড়েছি, কিন্তু বাস্তবে এমন অভিজ্ঞতা প্রথমবার দেখে সত্যিই আমি অবাক হয়েছিলাম। কিছু স্টেশনে প্রচুর ভিড়, আবার কোথাও ছিল একেবারেই নির্জন পরিবেশ। তবে প্রতিটি স্টেশনে ট্রেন থামার সঙ্গে সঙ্গেই ফেরিওয়ালারা নানারকম পণ্য নিয়ে ট্রেনে উঠে পড়ছিল।
ট্রেনের ভিতরের দৃশ্য :
নির্দিষ্ট সময় পর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যাত্রীদের টিকিট চেক করতে এলেন। আমার কাছে টিকিট চাইতেই আমি বের করে দিলাম। দেখতে পেলাম দু’জন যাত্রী টিকিট ছাড়াই উঠেছে। তাদের জরিমানা করলেন সাদা পোশাক পরা ব্যক্তিরা আমার পাশে একটি পরিবার বসেছে; খুব আনন্দ করছে তারা। ট্রেনের ভিতরের খাবার দেবার ছেলেটি এসে মাঝে মাঝে কিছু লাগবে ন কি না জিজ্ঞেস করছিল। তাছাড়া ফেরিওয়ালা, ভিক্ষুক বিভিন্ন সময়ে যাত্রীদের কাছে তাদের আবেদন-নিবেদন রাখছিল। তবে একটি লোক খুব সুন্দর গলায় লালনগীতি গাইছিল । আমি আর খালামনি দুজনেই শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলাম ।
গন্তব্যে পৌছার পর :
প্রায় ৫ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষে আমরা যশোর স্টেশনে পৌঁছালাম। দেখি মামা আর দীপ্ত আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমাদের দেখে তারা এগিয়ে এলো। আমি দীপ্তর সঙ্গে করমর্দন করলাম। মামা স্নেহভরে আমার মাথায় হাত রাখলেন এবং খালামনিকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানালেন। আমরা অটোরিকশায় উঠলাম, আর যাওয়ার পথে আমি দীপ্তকে আমার ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা বললাম। ও খুব আনন্দ পেল এবং বলল, সে আমার সঙ্গে ঢাকায় যাবে।
রেলগাড়ির রাত্রি :
যশোর থেকে সুন্দরবন ছাড়ে বেলা চারটায় । মামা আমাদের তুলে দিতে এলেন। দীপ্তও সঙ্গে এসেছিল, কিন্তু ও ঢাকায় আসতে পারেনি। ফেরার পথে ট্রেনে রাত হয়ে গিয়েছিল। রাতে ট্রেনের ভিতরে খুব অদ্ভুত লাগছিল। যে রাস্তাগুলো দিনের আলোয় আমার মনে আনন্দের সঞ্চার করেছিল সেগুলোই রাতে ভীতির সঞ্চার করছিল। রাত ন’টায় আমরা কমলাপুর স্টেশনে পৌছলাম। স্টেশনে এসে দেখি বাবা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।
উপসংহার :
আমার জীবনে আনন্দের অনেক মুহূর্ত এসেছে। কিন্তু সেবারের গরমের ছুটির রেলভ্রমণ যেন আমার কাছে একেবারে জীবন্ত। আজও আমি সুযোগ হলেই সেই রেলভ্রমণের স্মৃতি রোমন্থন করি। সেবার যদি দীপ্ত আমাদের সঙ্গে আসত তাহলে হয়ত আরও বেশি আনন্দ হতো। তবে আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমার দেওয়া উপহারটা ওর খুব ভালো লেগেছিল। আসার সময় আমাকেও একটি উপহার দিয়েছিল দীপ্ত- যা এখনো আমার কাছে যত্নে রাখা আছে।
এই ছিল আমাদের আজকের রচনা। তোমাদের ভালো লেগে থাকলে, দয়া করে StudyTika.com এ ভিজিট করে আরও সহজ ও সুন্দর রচনা পড়ো। এখানে অনেক শিক্ষামূলক রচনা আছে তোমাদের জন্য!