এই ব্লগে একটি সুন্দর রচনা আছে — “বিদায় হজ রচনা Class 7 8 9 10 SSC HSC (২০+ পয়েন্ট)”। আশা করি এটি আপনার ভালো লাগবে।\
বিদায় হজ রচনা ১
সূচনা :
দশম হিজরিতে হজের সময় মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) মুসলমানদের উদ্দেশে তার জীবনের সর্বশেষ ভাষণ প্রদান করেন। এই ভাষণে তিনি ইসলামী জীবনব্যবস্থা ও মানবিক মূল্যবোধ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন। ইতিহাসে এই ঐতিহাসিক ভাষণটি ‘বিদায় হজের ভাষণ’ নামে সুপরিচিত।
ভাষণের ঘটনা :
আরবি যিলকাদ মাসের শেষ দিকে মহানবি (স) কয়েক হাজার অনুসারী নিয়ে হজের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। একসময় আরাফাতের ময়দানে প্রায় দুই লক্ষ লোক সমবেত হলেন। সেখানেই ‘জাবালে রহমত’ নামের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মহানবি (স) তার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন ।
বিদায় হজের ভাষণ :
আল্লাহর প্রশংসা করে মহানবি (স) সেদিন যে কথাগুলো বলেছিলেন তা সংক্ষেপে নিচে তুলে ধরা হলো—
ক. মনে রেখো, একদিন তোমরা আল্লাহর কাছে হাজির হবে এবং নিজ নিজ কাজের হিসাব দিতে হবে।
খ. তোমাদের দাস-দাসীরাও আল্লাহর বান্দা। তাদের প্রতি সদয় থাকবে এবং নিজেদের সমান খেতে পরতে দেবে।
গ. অন্যায়, অবিচার ও পাপ থেকে দূরে থাকবে ।
ঘ. ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর নিজের ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে না।
এ ছাড়া তিনি আরও কয়েকটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে বলেন-
১. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও উপাসনা করো না।
২. পরের সম্পদ হরণ করো না ।
৩. কারও ওপর অত্যাচার করো না।
মহানবি হযরত মুহম্মদ (স) আরও বললেন— তোমাদের কাছে আমি দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। আল্লাহর বাণী আল-কুরআন ও আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ রাসুলের জীবনের আদর্শ। এ দুটি তোমাদের সঠিক পথ দেখাবে ।
উক্ত ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো –
একদিন সবাইকে অবশ্যই আল্লাহর দরবারে হাজির হতে হবে এবং নিজেদের কর্মের পূর্ণ হিসাব দিতে হবে। স্ত্রীদের সঙ্গে সদয় আচরণ করা অপরিহার্য, কারণ যেমনভাবে পুরুষদের তাদের ওপর অধিকার আছে, তেমনি নারীদেরও পুরুষদের ওপর অধিকার রয়েছে। আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা যাবে না এবং অন্যায়ভাবে কারো প্রাণ হরণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। অন্যের আমানত রক্ষা করা এবং সকল প্রকার পাপকর্ম থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। জাতি, বর্ণ, গোত্র কিংবা সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল মুসলমান সমান মর্যাদার অধিকারী। বংশের অহংকারের কোনো ভিত্তি নেই—শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র মাপকাঠি হলো তাকওয়া ও সৎকর্ম। যে ব্যক্তি আল্লাহভীতি ও নেক আমলের মাধ্যমে এগিয়ে, সে-ই প্রকৃত অর্থে শ্রেষ্ঠ। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না, কারণ অতীতের বহু জাতি ধর্মীয় চরমপন্থার কারণে ধ্বংস হয়েছে। এ কথা স্মরণ রাখতে হবে, মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে নবুয়তের ধারা চিরতরে সম্পন্ন হয়েছে।
উপসংহার:
ইসলামের প্রবর্তক, মানবতার মুক্তির অগ্রদূত মহানবি হযরত মুহম্মদ (স)-এর বিদায় হজের ভাষণ মানবজাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর এ ভাষণে রয়েছে মানবতা ও ন্যায়বিচারের অমর বাণী
বিদায় হজ রচনা ২
ভূমিকা : ইসলামের ইতিহাসে মহানবি হজরত মুহম্মদ (স.)-এর বিদায় হজের আনুষঙ্গিক বিষয় এবং ভাষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচ্য। দশম হিজরি সনের জিলকদ মাসে আরাফাতের ময়দানে নবিজি (স.) হজ উপলক্ষে মানবতার জন্য বিদায় হজের ভাষণ দেন। নবিজির উক্ত ভাষণে মানবজীবনের সব বিষয়ই উঠে এসেছে।
বিদায় হজের উদ্দেশ্যে যাত্রা : মহানবি (স.) দশম হিজরিতে মদিনা থেকে মক্কার পথে হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে রওনা হন লক্ষাধিক মুসলমান নিয়ে। জুল হুলাইফায় গিয়ে মহানবি (স.) ও তাঁর সঙ্গীরা সবাই হজের জন্য ইহরাম বাঁধেন।
বিদায় হজের ভাষণ : আরব দেশের নানা স্থান থেকে প্রায় দুই লক্ষ মানুষ নবিজি (স.)-এর সাথে হজ পালনের জন্য আরাফাত ময়দানে আসেন। জাবালে রাহমাত নামক পাহাড়ে দাঁড়িয়ে নবিজি (স.) সমবেত মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দেন। এটিই ছিল আরাফাতের ময়দানে নবিজির শেষ ভাষণ। ভাষণের বিষয়বস্তু বিশ্বের ইতিহাসে নবিজির উক্ত ভাষণ মানবাধিকারের সনদ হিসেবে স্বীকৃত। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের দায়িত্ব, কর্তব্য ও অধিকারের শাশ্বত বাণী হিসেবে তিনি বলেন -
- 'হে মানব সকল! আমার কথা মনোযোগের সাথে শুনে রেখ। কারণ আগামী বছর আমি তোমাদের সাথে এখানে সমবেত হতে পারব কি না আমি জানি না।'
- ‘আজকের এ দিন, এ স্থান, এ মাস যেমন পবিত্র, তেমনি তোমাদের জীবন ও সম্পদ পরস্পরের নিকট পবিত্র। মনে রাখবে, অবশ্যই একদিন সকলকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে। সেদিন সকলকে নিজ নিজ কাজের হিসাব দিতে হবে।’
- ‘দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে। তোমরা যা আহার করবে, পরিধান করবে, তাদেরও তাই আহার ও পরিধান করাবে। তারা যদি কোনো অমার্জনীয় অন্যায় করে ফেলে, তবে তাদের মুক্ত করে দেবে, তবুও তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করবে না। কেননা, তারা তোমাদের মতোই মানুষ আল্লাহর সৃষ্টি। সকল মুসলিম একে অন্যের ভাই এবং তোমরা একই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ।'
- ‘তোমরা যারা উপস্থিত আছ, তারা অনুপস্থিতদের কাছে আমার বাণী পৌঁছে দেবে। হয়তো এই উপদেশ তারা বেশি করে মনে রাখবে’।
এরপর মহানবি (স.) জোর দিয়ে বললেন : ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। নিজের ধর্ম পালন করবে। যারা অন্য ধর্ম পালন করে, তাদের ওপর তোমার ধর্ম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা কোরো না।
মহানবি (স.) চারটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখতে বললেন :
- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও উপাসনা কোরো না।
- অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা কোরো না।
- পরের সম্পদ অপহরণ কোরো না।
- কারও ওপর অত্যাচার কোরো না।
তিনি আরও বললেন : তোমাদের কাছে আমি দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি :
- আল্লাহর বাণী আল কোরআন এবং
- আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ রাসুলের জীবনের আদর্শ।
“এ দুটি তোমাদের পথ দেখাবে।” এই কথার মাধ্যমে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় ভাষণ শেষ করেন। তখন তাঁর চোখ-মুখ আনন্দ ও প্রশান্তিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি আবেগভরে বললেন, “হে আল্লাহ! আমি কি তোমার বার্তা তোমার বান্দাদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি?” সারা আরাফাত ময়দানে উপস্থিত লক্ষ লক্ষ মানুষের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হলো: “হ্যাঁ, আপনি পেরেছেন।” এই উত্তরে মহানবি (সা.)-এর অন্তর আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তিনি সমবেত জনতার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমরা সাক্ষী থাকো—আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। বিদায়।”
উপসংহার: ইসলাম ধর্মে বিদায় হজের ভাষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদায় হজের ভাষণে নবিজি (স.) যেসব কথা তুলে ধরেছেন, সেগুলো পালন করা হলে মানবজীবনে সফলতা সুনিশ্চিত ।
আমাদের ওয়েবসাইট StudyTika.com-এ আরও অনেক সুন্দর রচনা পড়তে পারেন। আপনার সময় দিন, ভালো রচনা শিখুন।