ভাবসম্প্রসারণঃ স্বার্থক জনম আমার জন্মেছি এ দেশে,স্বার্থক জনম মা গো, তোমায় ভালোবেসে [Class 6 7 8 9 10 ‍SSC HSC]

এই পোস্টে তোমাদের জন্য একটি সুন্দর ভাবসম্প্রসারণ দেওয়া হয়েছে – “স্বার্থক জনম আমার জন্মেছি এ দেশে, স্বার্থক জনম মা গো, তোমায় ভালোবেসে”। আশা করি সহজ ভাষায় লেখা হওয়ায় ভালো লাগবে এবং পুরোটা মন দিয়ে পড়বে।

ভাবসম্প্রসারণঃ স্বার্থক জনম আমার জন্মেছি এ দেশে,স্বার্থক জনম মা গো, তোমায় ভালোবেসে [Class 6 7 8 9 10 ‍SSC HSC]

ভাবসম্প্রসারণঃ স্বার্থক জনম আমার জন্মেছি এ দেশে,স্বার্থক জনম মা গো, তোমায় ভালোবেসে 

মূলভাব : জন্মভূমির প্রতি টান, হৃদয়ের টান। তাতে আছে আত্মিক বন্ধন। এ জননী সদৃশ্য জন্মভূমি সম্বন্ধে আমাদের দেশের প্রাচীন সাহিত্যে বলেছে- ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী।’ এই কালের কবি রবীন্দ্রনাথও বলেছেন :

‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা
তোমাতে বিশ্বময়ীর তোমাতে বিশ্ব মায়ের আঁচল পাতা।’

সম্প্রসারিত ভাব : মা আমাদের জীবনের শুরু—তিনি জন্ম দেন, অসীম কষ্ট সহ্য করে আমাদের পৃথিবীর আলো দেখতে সাহায্য করেন। তারপর স্নেহ, ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে গড়ে তোলেন আমাদের শৈশব। জীবনের প্রথম পরিচয় আমরা তার মাঝেই পাই। তার স্নেহ আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে সঙ্গ দেয়। ঠিক তেমনই, জন্মভূমিও আমাদের জন্য এক ‘মাতৃস্বরূপ’। জন্মের পর আমরা যে দেশ দেখি, যে দেশের আলো, বাতাস, পানি ও খাদ্যে বেড়ে উঠি, যে দেশ আমাদের আশ্রয় দেয়—সেই দেশ নিছক কোনো ভূখণ্ড নয়, সে-ও এক মা। জন্মভূমির প্রকৃতি, তার মানুষ, গাছপালা, পশুপাখি, এমনকি ধূলিকণাও সন্তানের কাছে প্রিয় ও আপন। এই জন্মভূমির প্রতি প্রতিটি মানুষের আজন্ম ঋণ থাকে। যে দেশ আমাদের আশ্রয় দিয়েছে, সেই দেশের কল্যাণেই আমাদের জীবন গড়ে উঠেছে। তাই জন্মভূমির প্রতি দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসা আমাদের স্বভাবগত। এ দেশের জন্য কাজ করাই আমাদের সত্যিকারের আত্মত্যাগ, আর দশের মঙ্গলের মধ্য দিয়েই আমাদের জীবন সার্থক হয়ে ওঠে।

এ মানবিক গুণে জন্মভূমি হয়ে উঠে জননী। স্বর্গ অলীক কল্পনা হলেও জননী ও জন্মভূমি আমাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বিষয়। তাই আমাদের কাছে স্বর্গের চেয়ে জন্মভূমি অধিকতর বরণীয়া ও আকর্ষণীয়া।

এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো

মূলভাব : ‘জননী জন্মভূমি স্বর্গাদপী গরিয়সী।’ জননী জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। দুনিয়ায় জন্মভূমি-ই সবার চেয়ে অধিক প্রিয়। তার ভালোবাসায় জীবনও ধন্য। তার ধন, দৌলত, রূপ-ঐশ্বর্য থাক বা না থাক, তার কোলে প্রাণ জুড়ায়, মন স্বস্তি পায়, স্নিগ্ধ হয়। তাই জন্মভূমিকে ভালোবেসে জীবনকে সার্থক করে তোলাই হচ্ছে জীবনের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।

সম্প্রসারিত ভাব : কবি লেখকেরা জন্মভূমিকে স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলে আখ্যায়িত করে গেছেন। জন্মভূমির বুকে স্বর্গের মত সুখ অনুভব করা যায়। অনেকেই জন্মভূমিকে জননীর সাথে তুলনা করেছেন। জননী আর জন্মভূমি একাকার হয়ে মিশে আছে। জননীকে যেমন আমরা ভালোবাসি, তার কাছে আমরা যেমন সুখ খুঁজে পাই, তেমনি জন্মভূমির কাছেও আমরা তেমন স্বর্গীয় সুখ অনুভব করি। সন্তানের কাছে মা যেমন আপনজন তেমনি জন্মভূমিও প্রত্যেক মানুষের কাছে অতি আপন। জননীর কাছে যেমন সন্তান তার সমস্ত শান্তি খুঁজে পায়, তেমনি জন্মভূমির কাছে আমরা খুঁজে পেতে পারি অনাবিল আনন্দ এবং সুখ। তাই আমরা জননীর সাথে জন্মভূমিকেও স্বর্গের সাথে তুলনা করতে পারি। যে ভূমিতে মা সন্তান জন্ম দেয় তার কাছে সে ভূমিই তার জন্মভূমি। আর সেই জন্মভূমি বা মাতৃভূমি প্রত্যেকের কাছে অতি আপনজন। এ জন্মভূমির বুকেই তার বেড়ে উঠা, জন্মভূমির আলো, বাতাস সব কিছু গ্রহণ করে তার বেঁচে থাকা। আর এ জন্মভূমিকে মানুষ ভালো না বেসে থাকতে পারে না। মায়ের মতোই জন্মভূমিকে আমরা ভালোবেসে ধন্য হই। এ জন্মভূমিই মানুষের বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়। এ জন্মভূমির বুকে ফসল ফলায়। সেই ফসল মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফুল, ফল, গাছপালা সবকিছুই আমরা মার্তৃভূমির কাছ থেকেই পেয়ে থাকি। অর্থাৎ মানুষের বেঁচে থাকা, তার যাবতীয় কর্মকাণ্ড, সবকিছুই জন্মভূমির অবদান। তাই যার যার জন্মভূমি তার কাছে অতি আপন, অতিপ্রিয়। নিজের বাড়ির মতোই নিজের জন্মভূমি পরিচিত। এখানে সে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারে, যা খুশী তাই করতে পারে। কিন্তু পরদেশে সেটা সম্ভব নয়। সেখানে প্রতি পদে পদে বাধা বিপত্তি আসে। তাই নিজের দেশকে ভালোবেসে মানুষ হাসি মুখে মৃত্যুবরণ করতে পারে। যারা নিজের জন্মভূমিকে ভালোনা বেসে, অন্যের জন্মভূমি বা অন্য দেশকে ভালোবেসে সুখ খুঁজতে চায়, তারা প্রকৃত সুখ অর্জন করতে পারে না। এক পর্যায়ে তারা নিজের মাতৃভূমির কাছে ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ে। কারণ নিজের দেশের বা নিজ জন্মভূমির সবকিছুই তার অতি প্রিয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তার কবিতায় নিজভূমিকে ভালোবেসে এভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন যে- 

‘দেখিতে গিয়াছি, পর্বতমালা, দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে শুধু দু পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপর একটি শিশির বিন্দু।’

তাই প্রত্যেকের নিজের দেশকে ভালোবেসে সার্থক হওয়া উচিত। আর জন্মভূমিকে ভালোবেসে যদি তার মৃত্যুও হয় তবুও সেই মৃত্যু স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবে আর এখানেই প্রকৃত সুখ ও সার্থকতা লুকায়িত রয়েছে।

ভাবসম্প্রসারণটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আমাদের ওয়েবসাইটে আরও অনেক সহজ এবং সুন্দর ভাবসম্প্রসারণ পাওয়া যাবে। আরো পড়তে চাইলে ভিজিট করো 👉 StudyTika.com।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.