ভাবসম্প্রসারণঃ বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস [Class 6 7 8 9 10 ‍SSC HSC]

“বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস”—এই গভীর ভাবসম্প্রসারণটি এখানে সহজ ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। যদি আপনি শিক্ষার্থী হন এবং ভাবসম্প্রসারণ খুঁজছেন, তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য একদম সঠিক জায়গা। মন দিয়ে পুরো লেখাটি পড়ুন।

ভাবসম্প্রসারণঃ বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস [Class 6 7 8 9 10 ‍SSC HSC]

বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস

তদানীন্তন পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী শুরু থেকেই পূর্ব বাংলা ও বাংলার মানুষের সঙ্গে বৈরী আচরণ ও ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। তারা ২৩ বছর ধরে শোষণ-বঞ্চনা, অত্যাচার-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে এদেশের মানুষের সবরকম অধিকার কেড়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে তাই যথার্থভাবেই বাংলার মানুষের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাসের কথা দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ক্ষমতসীন গোষ্ঠী গোড়া থেকেই বাংলাকে উপনিবেশ করার ষড়যন্ত্রে তৎপর হয়ে ওঠে। প্রথমে তারা ৫৬ ভাগ মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এদেশের মাতৃভাষা বাংলাপ্রেমী ছাত্র-জনতা ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে সারা দেশকে ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সারা দেশে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে হরতাল আহ্বান করা হয়। তদানীন্তন সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে মিছিল-মিটিং বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে বরকত, সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ অনেকেরই তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়, তাঁরা শহীদ হন। ছাত্র-জনতা সারা দেশ প্রতিবাদ-বিক্ষোভে অচল করে দিলে জালিম সরকার বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হয়। এরপর শিক্ষাব্যবস্থা সংকুচিত করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বাতিল করার দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে সামরিক সরকার আবারও হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এতে শহীদ হন মোস্তফা ওয়াজিউল্লাহ ও বাবুল। তীব্র আন্দোলনের মুখে সামরিক সরকার শিক্ষা কমিশন বাতিল ঘোষণা করে। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানেও ঘটে পুলিশি নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড। ১৯৬৯ সালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আসাদ ও সার্জেন্ট জহুরুল হক। এরপর ১৯৭০-এর নির্বাচনে বাংলার মানুষের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্রে জালিম পাকিস্তানি সরকার মেতে উঠলে এর প্রতিবাদ ও আন্দোলনের মুখে আবার বাংলার মানুষের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়। এদেশের মানুষের রক্তে লাল হয়েছে রাজপথ। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল- এই ২৩ বছরের ইতিহাস বাংলার মানুষের রক্তে রাজপথ লাল হওয়ার ইতিহাস। তাই তো ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে- বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।

বিকল্প

মূলভাব : ধ্বংস, মৃত্যু, অশ্রু আর ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল বাংলার স্বাধীন আঙিনা। পুণ্য রক্তস্রোতের ধারায় লেখা বাংলার অমর ইতিহাস।

সম্প্রসারিত ভাব : দীর্ঘ প্রায় দুই শতাব্দী ধরে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের শৃঙ্খলে নিষ্পেষিত হয়েছিল বাঙালি জাতি। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ স্বাধীনতা পেলেও বাঙালির ভাগ্যে পূর্ণ মুক্তি আসেনি। ফলে বাংলার মাটিতে একের পর এক জেগেছে বিদ্রোহের আগুন, বয়ে গেছে রক্তের স্রোত। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালির মুক্তির পথে প্রথম বড় বিজয়—এই আন্দোলন পরবর্তীতে সব সংগ্রামের প্রেরণার উৎস হয়ে ওঠে। ১৯৫৮, ১৯৬৬ ও ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা বাংলার দুর্দম তরুণদের রক্তে রাঙিয়ে দেয় রাজপথ। বারবার রক্তাক্ত হয় বাংলা, কিন্তু দমন করা যায়নি জাগ্রত জনতার গর্জন। পাক বাহিনী হার মানে বাঙালির অদম্য জাগরণের কাছে। স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর বাঙালিরা একত্রিত হয়ে রুখে দাঁড়ায়। তারই চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৭১ সালে, যখন পাকিস্তানি হানাদাররা বাংলার স্বাধীনতা রুখতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। কিন্তু সাহসী ও সংগ্রামী বাঙালিদের অগ্রযাত্রা থামানো সম্ভব হয়নি। লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলার পবিত্র ভূমি। জন্ম নেয় এক গৌরবময় ইতিহাস—বাংলার স্বাধীনতা।

মন্তব্য : এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি অর্জন করে স্বাধীন ভূখণ্ড আর সবুজ লালের চেতনা-মিশ্রিত পতাকা। এভাবেই রক্তের পথ পাড়ি দিয়ে বাঙালি জাতি অর্জন করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

এই ছিল সহজ ভাষায় লেখা ভাবসম্প্রসারণ “বাংলার ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস”। আরও অনেক সহজ ভাবসম্প্রসারণ পেতে ভিজিট করুন আমার ব্লগ StudyTika.com—এখানে ক্লাস ৬ থেকে এইচএসসি পর্যন্ত নানা ধরনের ভাবসম্প্রসারণ পাবেন। এখনই দেখে নিন!

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.