এই ব্লগপোস্টে রয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাবসম্প্রসারণ— “বিপদে মোরে রক্ষা কর, এ নহে মোর প্রার্থনা...” সহজ ভাষায় বোঝানো হয়েছে এই কথাগুলোর গভীর অর্থ। পড়ে দেখুন, আশা করি ভালো লাগবে।
বিপদে মোরে রক্ষা কর, এ নহে মোর প্রার্থনা,বিপদে আমি না যেন করি ভয়,দুঃখতাপে ব্যথিত চিত্তে নাইবা দিলে সান্ত্বনা,দুঃখ যেন করিতে পারি জয়
মূলভাব : মানুষের জীবনে দুঃখ, কষ্ট ও বিপদ থাকবেই—এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এসব দেখে ভয় পেলে চলবে না। সাহস ও দৃঢ় মনোভাব নিয়ে এসব বিপদকে মোকাবিলা করতে হবে। কবি প্রার্থনা করেছেন, যেন তাঁর ভিতরে সেই শক্ত মনোবল থাকে, যাতে তিনি বিপদে ভেঙে না পড়েন।
সম্প্রসারিত ভাব : সংসারে দুঃখ আছে, দৈন্য আছে, জীবনে চলার পথে অজস্র বিপদের ঝুঁকি আছে। প্রতি পদক্ষেপে মানুষকে বিপদ অতিক্রম করতে হয়। আল্লাহ অনুগ্রহ করে আমাদের বিপদ থেকে রক্ষা করবেন ও দুঃখ-যন্ত্রণায় সান্ত্বনা দিবেন তা আমরা প্রার্থনা করি না। আমরা প্রার্থনা করি যে, আমাদের দেহে ও মনে এতখানি শক্তি জেগে উঠুক যে আমরা যেন বিপদকে নির্ভয়ে অতিক্রম করতে পারি এবং আপনার শৌর্যের দ্বারা দুঃখকে জয় করে তুলতে পারি। জীবন সংগ্রামে মানুষ যদি নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে পলায়নমুখী হয়, তাহলে মানবজীবনের কোনো অর্থই হয় না। বিপদ থেকে দূরে থেকে নির্বিঘ্নে নিরাপদে জীবন কাটানোর মধ্যে কোনো গৌরব নেই; বরং দুঃখকে মোকাবিলা করে, সমস্ত দুঃখকে মাথা পেতে গ্রহণ করে সুখের জন্য যারা জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় তারাই সত্যিকার মানুষ। কবি বিপদ থেকে মুক্তি চায়নি, বরং দুঃখে ভেঙে না পড়ে তা সহ্য করার শক্তি চেয়েছেন। জীবনের আসল সার্থকতা হলো দুঃখকে জয় করা। আল্লাহ আমাদের দুঃখ দেন, আবার সেই দুঃখ সহ্য করার শক্তিও দেন। তাই দুঃখ অন্যায় নয়। মানুষকে প্রতিনিয়ত দুঃখের সঙ্গে লড়াই করে সুখ পেতে হয়। এই লড়াইয়ের মাঝেই আছে আসল আনন্দ। তাই বিপদের সময় শান্তি চাওয়ার বদলে প্রার্থনা করা উচিত আত্মশক্তির জন্য, যাতে সাহসের সঙ্গে সব কষ্ট সহ্য করা যায়। এই আত্মশক্তিই দুঃখ পেরিয়ে মানুষকে সুখের দ্বারে পৌঁছে দেয়।
মন্তব্য : বিপদকে ভয় না পেয়ে বরং বিপদকে মোকাবিলা করেই ছিনিয়ে আনতে হবে সুখ। বিপদে যারা ভয় পায় তারা কখনো সুখের নাগাল পায় না।
বিকল্প
লভাব : আল্লাহ অনুগ্রহ করে আমাদের বিপদ থেকে রক্ষা করবেন ও দুঃখ-যন্ত্রণায় সান্ত্বনা দিবেন, তা আমরা প্রার্থনা করি না। আমরা প্রার্থনা করি যে, আমাদের দেহে ও মনে এতখানি শক্তি জেগে উঠুক যাতে আমরা বিপদকে নির্ভয়ে অতিক্রম করতে পারি এবং আপনার শৌর্যের দ্বারা দুঃখকে জয় করে তুলতে পারি।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের জীবনে দুঃখ, কষ্ট, দৈন্য, বিপদ থাকবেই—এগুলো জীবনেরই অংশ। তাই এগুলোর ভয়ে ভেঙে পড়া একদম ঠিক নয়। জীবন মানেই সংগ্রাম, আর সেই সংগ্রামে আমাদের নিজের ভিতরের শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে হবে। কাউকে সাহায্যের জন্য হাত পাতলে আমাদের আত্মসম্মান কমে যায়, মানুষ হিসেবে মর্যাদাও ক্ষুন্ন হয়। আল্লাহ যখন দুঃখ দিয়েছেন, তখন সেই দুঃখকে জয় করার শক্তিও সঙ্গে সঙ্গে দিয়েছেন। যদি এই শক্তি না থাকত, তবে দুঃখ দেওয়াটাই অন্যায় হতো। জীবনে টিকে থাকতে হলে আমাদের এই দুঃখের সঙ্গে লড়াই করে এগিয়ে যেতে হবে। এই সংগ্রামই জীবনের মূল চালিকা শক্তি। যে মানুষ শক্ত মনের অধিকারী, সে এই যুদ্ধকে উপভোগ করে—এই লড়াইয়ের মধ্যেই তার আনন্দ। কিন্তু দুর্বল ও ভীরু মানুষ কখনোই এই আনন্দ পায় না। তারা দুঃখ দেখে ভয়ে সরে যায়, অথচ সাহসীরা সংগ্রামের মধ্যেই জীবনের আসল সুখ খুঁজে পায়। অবশেষে, যখন কেউ দুঃখকে জয় করে সামনে এগিয়ে যায়, তখন তার জীবনে এক নতুন আনন্দের জোয়ার আসে। সেই মুহূর্তে তার কষ্টের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে যায়, মনে শান্তি ও গর্বের অনুভূতি জাগে। তাই আমাদের উচিত দুঃখের ভয়াবহ রূপ দেখে হতাশ না হয়ে, সেই দুঃখকে জয় করার সাহস প্রার্থনা করা। আত্মশক্তির সাহায্যে আমরা জীবনে সঠিক পথ খুঁজে পেতে পারি এবং একটি সুন্দর ও সম্মানজনক জীবন গড়ে তুলতে পারি।
ভাবসম্প্রসারণটি কেমন লাগলো? যদি ভালো লেগে থাকে, তাহলে StudyTika.com ওয়েবসাইটে আরও ভাবসম্প্রসারণ পড়তে ভিজিট করুন। সহজ ভাষায় আরও অনেক ভাবসম্প্রসারণ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।