ভাইরাস কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | ভাইরাসের আবাসস্থল | ভাইরাসের আকৃতি | ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য | T2 ব্যাকটেরিওফাজ

ভাইরাস হলো এমন এক অদ্ভুত জীবাণু যা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু এটি আমাদের জীবনে অনেক প্রভাব ফেলে। ছোট হলেও এর ক্ষমতা বিশাল—মানুষ, প্রাণী এবং উদ্ভিদের শরীরে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ভাইরাস কেবল জৈব কোষের ভিতর প্রবেশ করলেই সক্রিয় হয়, আর বাইরে এটি অচল থাকে। এই ব্লগপোস্টে আমরা ভাইরাসের সংজ্ঞা, গঠন, প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং তার উপকার-অপকার সবই সহজ ভাষায় আলোচনা করেছি। যদি আপনি জানতে চান ভাইরাস কেমন করে কাজ করে এবং এটি আমাদের জীবনে কিভাবে প্রভাব ফেলে, তাহলে পুরো পোস্টটি মন দিয়ে পড়ুন।

ভাইরাস কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | ভাইরাসের আবাসস্থল | ভাইরাসের আকৃতি | ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য | T2 ব্যাকটেরিওফাজ

ভাইরাস কাকে বলে?

অতি ক্ষুদ্র অণুজীব যা নিজে স্বতন্ত্রভাবে বেঁচে থাকতে পারে না, শুধু জীবিত কোষের ভিতরে প্রবেশ করে বংশবিস্তার করতে পারে, এটিকেই ভাইরাস বলে।

ভাইরাস (Virus) হলো একটি অতি ক্ষুদ্র, অকোষীয় এবং বাধ্যতামূলক পরজীবী জীবাণু যা নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন দিয়ে গঠিত। ভাইরাস নিজে থেকে খাদ্য গ্রহণ বা স্বতন্ত্রভাবে বৃদ্ধি করতে পারে না। এটি কেবল জীবদেহের কোষের মধ্যে প্রবেশ করলে সক্রিয় হয়ে প্রজনন ও রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। জীবদেহের বাইরে এটি রাসায়নিক কণার মতো নিষ্ক্রিয় থাকে।

ভাইরাসের আবাসস্থল

ভাইরাস জীব ও অজীব উভয় পরিবেশে বাস করতে পারে, কিন্তু সক্রিয় থাকে কেবল সজীব কোষের মধ্যে। উদ্ভিদ, প্রাণী, ব্যাকটেরিয়া, সায়ানোব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অ্যাকটিনোমাইসেটিসের সজীব কোষে ভাইরাস অবস্থান করে।

ভাইরাসের আকৃতি

ভাইরাসের গড় ব্যাস ৮-৩০০ ন্যানোমিটার। কিছু ভাইরাস আরও ক্ষুদ্র। উদাহরণস্বরূপ, গবাদি পশুর ফুট অ্যান্ড মাউথ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস ৮-১২ ন্যানোমিটার। ভ্যাকসিনিয়া ও ভেরিওলা ভাইরাস বৃহত্তর, ২৮০-৩০০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত।

  • পোলিও ভাইরাস: ১২ ন্যানোমিটার
  • ভ্যাকসিনিয়া ভাইরাস: ২৮০-৩০০ ন্যানোমিটার
  • TMV: ৩০০ ন্যানোমিটার

ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য

ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য দুটি ভাগে ভাগ করা যায়- জড়-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য এবং জীবীয় বৈশিষ্ট্য।

ভাইরাসের জড়-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য ভাইরাসের জীবীয় বৈশিষ্ট্য
(i) অকোষীয়; কোষপ্রাচীর, সাইটোপ্লাজম, রাইবোসোম নেই। (i) পোষক কোষে প্রবেশ করলে সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে।
(ii) নিজস্ব বিপাকীয় এনজাইম নেই, খাদ্য গ্রহণ করে না। (ii) DNA বা RNA এবং প্রোটিন দিয়ে গঠিত।
(iii) স্বাধীনভাবে প্রজনন করতে পারে না। (iii) মিউটেশন ঘটাতে এবং প্রকরণ তৈরি করতে সক্ষম।
(iv) জীবকোষের বাইরে নিষ্ক্রিয়। (iv) অভিযোজন ক্ষমতা আছে।
(v) বংশগতীয় পুনঃসমন্বয় ঘটে।

ভাইরাসের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিন্যাস

(ক) আকৃতি অনুসারে

আকৃতি উদাহরণ
দন্ডাকার TMV, আলফা মোজাইক ভাইরাস, মাম্পস ভাইরাস
গোলাকার পোলিও ভাইরাস, ডেঙ্গু ভাইরাস, HIV, TIV, Corona
ঘনক্ষেত্রাকার হার্পিস ভাইরাস, ভ্যাকসিনিয়া ভাইরাস
ব্যাঙাচি/শুক্রাণু আকার T2, T4, T6 ভাইরাস
ডিম্বাকার ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
বুলেটাকার র‌্যাবডোভাইরাস

(খ) পোষকদেহ অনুসারে

ভাইরাসের নাম উদাহরণ
প্রাণী ভাইরাস হাম, পোলিও
উদ্ভিদ ভাইরাস TMV, CMV, ব্যাকটেরিওফাজ ল্যাম্বডা
ব্যাকটেরিওফাজ T2 ফাজ
জাইমোফাজ ইস্ট আক্রমণকারী ভাইরাস
সায়ানোফাজ নীলাভ সবুজ শৈবাল ধ্বংসকারী LPP2

(গ) নিউক্লিক অ্যাসিডের ভিত্তিতে প্রকারভেদ

ভাইরাসের DNA বা RNA-এর ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়।

ভাইরাসের গঠন

T2 ব্যাকটেরিওফাজ

T2 ফাজের শরীর দুই ভাগে ভাগ করা যায়: মাথা এবং লেজ।

  • মাথা: দৈর্ঘ্য ৯০-১০০ nm, প্রস্থ ৬৫ nm। DNA-এ ৬০,০০০ জোড়া নিউক্লিওটাইড এবং ১৫০টি জিন থাকে। DNA অণুটি প্যাঁচানো।
  • লেজ: দৈর্ঘ্য ৯৫-১১০ nm, ব্যাস ১৫-২৫ nm। লেজ-মাখার সংযোগস্থলে কলার, নিচে বেসপ্লেট এবং চারপাশে ৬টি স্পাইক থাকে।

HIV (Human Immunodeficiency Virus)

HIV হলো গোলাকার RNA ভাইরাস যা মানুষের WBC-এর ম্যাক্রোফাজ ও T-cell লিম্ফোসাইট আক্রমণ করে। এটি AIDS রোগ সৃষ্টি করে।

  • আকৃতি: গোলাকার, প্রোটিনের ক্যাপসিড আবরণ থাকে।
  • ক্যাপসিডের বাইরে 1100 µm পুরু ফসফোলিপিড বাইলেয়ার থাকে।
  • GP 120 ও GP 41 গ্লাইকোপ্রোটিন কাঁটার মতো আবরণে যুক্ত থাকে। GP 120 ভাইরাসকে কোষে সংযুক্ত হতে সাহায্য করে।

টোবাকো মোজাইক ভাইরাস (TMV)

TMV হলো দন্ডাকৃতির উদ্ভিদ ভাইরাস যা তামাক গাছে মোজাইক রোগ সৃষ্টি করে। দৈর্ঘ্য ২৮০-৩০০ nm, প্রস্থ ১৫-১৮ nm। RNA ও প্রোটিন দিয়ে গঠিত। বাইরে ক্যাপসিড নামে প্রোটিন আবরণ থাকে।

ভাইরাসের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

ভাইরাস অপকারিতা

  • মানবদেহে রোগ: ভাইরাস মানুষের দেহে বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে, যেমন বসন্ত (measles), হাম (mumps), পোলিও (polio), জলাতঙ্ক (rabies), ইনফ্লুয়েঞ্জা (flu), হার্পিস (herpes), ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, কোভিড-১৯, হেপাটাইটিস, মাংকি পক্স, কাপোসি সার্কোমা। এগুলো ভাইরাসের কারণে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • উদ্ভিদের রোগ: ভাইরাস উদ্ভিদের শস্য ও ফলমূলে রোগও সৃষ্টি করে। উদাহরণ: শিমের মোজাইক রোগ, আলুর লিফরোল রোগ, পেঁপের লিফকার্ণ রোগ।
  • পোষা প্রাণীতে রোগ: গরু, ভেড়া, ছাগল, শুকর, মহিষের মতো পশুদেরও ভাইরাস আক্রান্ত করতে পারে। যেমন ফুট অ্যান্ড মাউথ রোগ।
  • ব্যাকটেরিয়ার ওপর প্রভাব: কিছু ভাইরাস কিছু উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে, যা দেহের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস: HIV ভাইরাস এডস রোগের মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
  • মারাত্মক ভাইরাস: ইবোলা, জিকা, নিপা, সার্স, MERS, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, হেপাটাইটিস-বি, চিকুনগুনিয়া, হিউম্যান হার্পিস ভাইরাসও মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

ভাইরাস উপকারিতা

  • টিকা (Vaccine) তৈরি: বসন্ত, পোলিও, গ্রেগ, জলাতঙ্ক রোগের প্রতিষেধক টিকা ভাইরাসের মাধ্যমে তৈরি হয়।
  • অন্যান্য রোগের টিকা: জন্ডিসের (hepatitis) টিকাও ভাইরাস ব্যবহার করে তৈরি করা হয়।
  • দৈনন্দিন ওষুধ ও চিকিৎসা: কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় ইত্যাদি রোগের ওষুধ তৈরিতে ব্যাকটেরিওফাজ ভাইরাস ব্যবহার করা হয়।
  • উদ্ভিদের সৌন্দর্য ও রোগ প্রতিরোধ: কিছু ফুলের যেমন টিউলিপ ফুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও ভাইরাস সাহায্য করে।
ভাইরাস আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং চমকপ্রদ বিষয়। কিছু ভাইরাস অসুস্থতা সৃষ্টি করে, আবার কিছু ভাইরাসের মাধ্যমে টিকা তৈরি করা হয়, যা আমাদের সুরক্ষা দেয়। ভাইরাসের জীবন, প্রকারভেদ এবং তার গুরুত্ব বোঝা সত্যিই রোমাঞ্চকর। আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনার ভাইরাস সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার হয়েছে। আরও অনেক সুন্দর ও সহজ লেখা জানতে StudyTika.com-এ ভিজিট করতে ভুলবেন না।

Getting Info...

إرسال تعليق

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.