আপনি কি জানেন, আমাদের চারপাশের অনেক জিনিসের মূল্য সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে কমে যায়? কখনো কি ভেবেছেন, কেন একটা মেশিন, আসবাবপত্র বা বাড়ির কিছু অংশের ব্যবহার যত দিন যাচ্ছে তত কম মূল্যবান হয়ে যাচ্ছে? এটি শুধু ঘটনার স্বাভাবিক প্রভাব না, বরং হিসাববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও। এই ব্লগপোস্টে আমরা আলোচনা করব অবচয় সম্পর্কে। অবচয় কাকে বলে, এর কারণ কী, এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ—সবকিছুই খুব সহজ ভাষায়। পড়ে দেখুন, আপনি অজানাই হয়তো এই বিষয়ের অনেক কিছু মিস করছেন!
অবচয় কাকে বলে?
অবচয় হলো একটি সম্পত্তির মূল্য বা কার্যক্ষমতার ধীরে ধীরে হ্রাস যা ব্যবহারের ফলে, সময়ের প্রভাব বা অন্য কোনো কারণে ঘটে। এটি স্থায়ী বা অস্থায়ী হতে পারে এবং ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবের অংশ।
অবচয়ের সংজ্ঞা
অবচয় (Depreciation) শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Depretium থেকে উদ্ভূত। "De" মানে হ্রাস এবং "Pretium" মানে মূল্য। অর্থাৎ সম্পত্তির ব্যবহারের কারণে যার মূল্য হ্রাস পায় তাকে অবচয় বলা হয়। আধুনিক হিসাববিজ্ঞানে, এটি সম্পত্তির ক্রয়মূল্য থেকে অবশিষ্ট মূল্য বাদ দিয়ে তার কার্যকর জীবনকালের মধ্যে ভাগ করে হিসাব করা হয়।
অবচয়ের মূল ধারণা
প্রতিটি স্থায়ী সম্পদের একটি কার্যকর জীবনকাল থাকে। সময়ের সাথে সাথে সম্পদের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। ব্যবসায় ব্যবহৃত সম্পদ যেমন দালান, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ইত্যাদিও এর বাইরে নয়। সম্পদের কার্যক্ষমতা হ্রাসকে অবচয় বলা হয়।
বিভিন্ন সংজ্ঞা
R.N Carter: "Depreciation is the gradual and permanent decrease in the value of an asset from any cause." অর্থাৎ যে কোন কারণে সম্পত্তির স্থায়ী মূল্য হ্রাস অবচয়।
স্পাইসার এবং পেগলার: যে কোন কারণে নির্দিষ্ট সময়ে সম্পত্তির কার্যক্ষমতার হ্রাসকে অবচয় বলা যায়।
সারসংক্ষেপে, ব্যবহার বা সময় অতিবাহনের ফলে সম্পদের ক্রমাগত মূল্য হ্রাস যা মেরামত বা আংশিক প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে পূরণ করা যায় না, সেটাই অবচয়।
অবচয়ের কারণসমূহ
অবচয়ের কারণ প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্তঃ
- অভ্যন্তরীণ কারণ (Internal Causes)
- বাহ্যিক কারণ (External Causes)
অভ্যন্তরীণ কারণ
সম্পদের নিজস্ব স্বাভাবিক কারণে যখন অবচয় হয়, তাকে অভ্যন্তরীণ কারণ বলে। এর উদাহরণসমূহঃ
- ব্যবহারজনিত ক্ষয় (Wear and Tear): স্থায়ী সম্পত্তি ব্যবহারের ফলে ক্ষয় হয়, যেমন যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র।
- সময়ের প্রবাহ (Passage of Time): কিছু সম্পত্তি ব্যবহার না হলেও সময়ের সঙ্গে মূল্য কমে, যেমন ইজারা সম্পত্তি, পেটেন্ট।
- সন্তোপ বা নিষ্কাশন (Consumption or Extraction): সরাসরি সম্পদের ব্যবহারে বা নিষ্কাশনে হ্রাস ঘটে, যেমন তেলখনি, লৌহখনি, বনভূমি।
বাহ্যিক কারণ
অভ্যন্তরীণ কারণে ছাড়া যে কারণে সম্পদের মূল্য হ্রাস হয়, তাকে বাহ্যিক কারণ বলা হয়। এর উদাহরণসমূহঃ
- অপ্রচলন (Obsolescence): নতুন প্রযুক্তি বা পরিবর্তিত চাহিদার কারণে সম্পদ হঠাৎ অপ্রচলিত হতে পারে।
- বাজার দরের স্থায়ী হ্রাস (Permanent Fall in Market Price): বাজারমূল্য হ্রাসের কারণে শেয়ার, সিকিউরিটি ইত্যাদির অবচয় ঘটে।
- অব্যবহার (Left Unused): সম্পদ ব্যবহারের অভাবে তার মূল্য ও কার্যক্ষমতা কমতে পারে।
- অস্বাভাবিক কারণ (Abnormal Causes): আগুন, বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদির কারণে সম্পদের ক্ষয় ও মূল্য হ্রাস ঘটে।
আশা করি, আপনি এখন অবচয় সম্পর্কে কিছুটা বা পুরোটা বুঝতে পেরেছেন। হিসাববিজ্ঞানে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা ব্যবসা ও দৈনন্দিন জীবনে খুব কাজে আসে। আরও অনেক সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা StudyTika.com-এ কাজ করি। আপনি চাইলে আমাদের আরও ব্লগপোস্ট পড়ে আরও নতুন কিছু শিখতে পারেন। আমাদের সঙ্গে থাকুন, পড়াশোনাকে আরও সহজ ও আনন্দময় করে তোলার জন্য!