রাসায়নিক বন্ধন নিয়ে পড়তে গেলেই আমরা অনেক সময় পাই বন্ধন শব্দটি দেখি, কিন্তু বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বুঝতে পারেন না—এটা আসলে কী, কীভাবে তৈরি হয়, বা কেন আলাদা। ঠিক এই কারণেই আজকের এই পোস্টটি। এখানে আপনি খুব সহজ ভাষায়, একদম বন্ধুর মতো বুঝে নিতে পারবেন পাই বন্ধন সম্পর্কে দরকারি সব বিষয়। তবে শুরুতেই পুরো উত্তর বলে দিলে তো মজা নষ্ট হয়ে যাবে! তাই ধীরে ধীরে, সহজ উদাহরণসহ পুরো পোস্টটি পড়লে বিষয়টি নিজে থেকেই খুব পরিষ্কার হয়ে যাবে। চলুন তাহলে সুন্দরভাবে শিখে নিই এই গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক ধারণাটি।
পাই বন্ধন (Pi Bond) এর সংজ্ঞা
সমযোজী বন্ধন সৃষ্টির সময় যখন একই অক্ষে অবস্থিত সমান্তরালভাবে বিদ্যমান দুটি পরমাণুর যোজনী অরবিটালের পাশাপাশি অধিক্রমণ ঘটে, তখন উৎপন্ন বন্ধনকে পাই-বন্ধন বলে।
আরো বিস্তারিত বললে, সমযোজী বন্ধন তৈরি হওয়ার সময় যখন দুটি পরমাণুর সমান্তরাল অবস্থায় থাকা যোজনী অরবিটাল পাশাপাশি অধিক্রমণ (sidewise overlap) করে একটি নতুন বন্ধন গঠন করে, তাকে পাই বন্ধন বা π-বন্দন বলা হয়। এই নামের গ্রিক বর্ণ π মূলত p-অরবিটালকে বোঝায়, কারণ পাই বন্ধন কেবল p-অরবিটাল দিয়েই গঠিত হয়। s-অরবিটাল গোলাকার হওয়ায় এটি পাই বন্ধন গঠনে অংশ নিতে পারে না।
পাই বন্ধনের সহজ ব্যাখ্যা
পাই বন্ধন সাধারণত সিগমা বন্ধনের তুলনায় দুর্বল হয়। উদাহরণ হিসেবে কার্বন-কার্বন দ্বিবন্ধনে একটি সিগমা বন্ধন এবং একটি পাই বন্ধন থাকে। পাই বন্ধনের শক্তি কার্বন-কার্বন একক বন্ধনের অর্ধেকেরও কম, তাই এটি সিগমা বন্ধনের চেয়ে কম স্থায়ী।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী, পাই বন্ধনে অরবিটালগুলো পাশাপাশি অধিক্রমণ করে, কিন্তু এ ধরনের অধিক্রমণে মুখোমুখি অধিক্রমণের মতো (সিগমা বন্ধনে যেমন হয়) বেশি ওভারল্যাপ হয় না। ফলে পাই বন্ধনে ইলেকট্রন ঘনত্ব কম থাকে এবং বন্ধন দুর্বল হয়।
পাই বন্ধনে দুটি আলাদা স্থানে ইলেকট্রন মেঘ থাকে। এই কারণে এই বন্ধনটি সিগমা বন্ধনের তুলনায় বেশি বিস্তৃত বা ছড়ানো। কিন্তু পাই বন্ধন ভাঙা ছাড়া পরমাণুরা এই বন্ধনের চারপাশে ঘুরতে পারে না, কারণ ঘুরলে p-অরবিটালের সমান্তরাল অবস্থান নষ্ট হয়ে যায়।
নোডাল সমতল সম্পর্কে
দুইটি একই ধরনের পরমাণু দিয়ে তৈরি অণুতে পাই বন্ধনের মধ্যে একটি নোডাল সমতল থাকে, যা বন্ধনযুক্ত পরমাণুগুলোর মধ্য দিয়ে যায়। অ্যান্টি-বন্ডিং π* অরবিটালে এই নোডাল সমতলের সংখ্যা আরও বেশি থাকে।
পাই বন্ধনের বৈশিষ্ট্য
- সিগমা বন্ধন হওয়ার পর দুটি অরবিটাল সমান্তরালভাবে পাশাপাশি অধিক্রমণ করে পাই বন্ধন গঠন করে।
- অধিক্রমিত স্থানে ইলেকট্রন মেঘের ঘনত্ব কম হয়।
- পাই বন্ধন সিগমা বন্ধনের তুলনায় দুর্বল।
- সংকর অরবিটালে পাই বন্ধন হয় না; শুধুমাত্র বিশুদ্ধ p-অরবিটালে পাই বন্ধন সৃষ্টি হয়।
সিগমা ও পাই বন্ধনের পার্থক্য
সিগমা বন্ধনের বৈশিষ্ট্য
- সিগমা বন্ধন গঠনে দুটি অরবিটাল একই সরলরেখায় থাকে।
- মুখোমুখি অধিক্রমণের মাধ্যমে সিগমা বন্ধন খুবই দৃঢ় হয়।
- প্রতিটি একক বন্ধন সিগমা বন্ধন।
- সিগমা বন্ধনযুক্ত পরমাণু তাদের অক্ষ বরাবর ঘুরতে পারে।
- সংকর ও বিশুদ্ধ উভয় অরবিটাল থেকেই সিগমা বন্ধন গঠন হতে পারে।
পাই বন্ধনের বৈশিষ্ট্য
- পাই বন্ধন গঠনে অরবিটালগুলো সমান্তরাল অবস্থায় থাকে।
- পার্শ্ব অধিক্রমণের ফলে পাই বন্ধন দুর্বল হয়।
- সিগমা বন্ধন হওয়ার পর অতিরিক্ত পাই বন্ধন তৈরি হয়ে দ্বিবন্ধন ও ত্রিবন্ধন গঠিত হয়।
- পাই বন্ধনযুক্ত পরমাণু অক্ষ বরাবর ঘুরতে পারে না।
- s-অরবিটাল ও সংকর অরবিটাল বাদে অন্য বিশুদ্ধ অরবিটালে পাই বন্ধন সৃষ্টি হয়।