রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক কাকে বলে? (সহজ সংজ্ঞা) | রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উদ্দেশ্য | বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যা | রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক

আপনি কি কখনও ভেবেছেন, আমাদের দেশের অনেক ব্যাংক কেন সরকার পরিচালিত হয়? এই ধরনের ব্যাংকগুলো শুধু টাকা জমা বা ঋণ দেওয়ার জন্য নয়, বরং দেশের অর্থনীতি ও সমাজকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো আমাদের জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলে। এই পোস্টটি পড়লে আপনি জানবেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক কি এবং কেন এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক কাকে বলে?(সহজ সংজ্ঞা)

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক কাকে বলে?

যে ব্যাংকগুলো সরকার সম্পূর্ণ মালিকানায় রেখে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন এবং জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করে, তাদেরকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বলে। 

এক কথায়, এই ব্যাংকগুলোর মালিকানা একমাত্র সরকারের হাতে থাকে।

ব্যাখাসহ বললে, “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক” বলতে বোঝায় সেই ব্যাংকগুলো যেগুলো সরকারের মালিকানায় পরিচালিত হয়। অর্থাৎ এগুলো পুরো বা আংশিকভাবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এগুলো সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, কৃষক, শিল্পপতি সবাইকে সেবা দেয়। যেমন: সঞ্চয় গ্রহণ করা, ঋণ দেওয়া, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে অর্থায়ন করা ইত্যাদি।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উদ্দেশ্য

  • দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি রাখা।
  • সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সেবা করার সামাজিক দায়িত্ববোধ পালন।
  • জাতীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনা।
  • জাতীয় নিরাপত্তা সাধন করা।
  • সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম করা।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যা

বর্তমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৯টি। এর মধ্যে ৬টি হলো বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ৩টি হলো বিশেষায়িত ব্যাংক।

তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়: তালিকাভুক্ত ব্যাংক এবং অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংক। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি এবং অ-তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৫টি।

তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক ৬টি, বেসরকারি ৪৩টি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক ৩টি।

৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক

  1. সোনালী ব্যাংক
  2. রূপালী ব্যাংক
  3. জনতা ব্যাংক
  4. অগ্রণী ব্যাংক
  5. বেসিক ব্যাংক
  6. বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড

সোনালী ব্যাংক

বাংলাদেশের প্রধান এবং বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে দেশের ১২৩৭টি শাখা এবং ২টি বিদেশি শাখা রয়েছে। হেড অফিস ঢাকার মতিঝিলে।

জনতা ব্যাংক লিমিটেড

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ করা হয়। দেশের ৬৪টি জেলায় মোট ৯১২টি শাখা রয়েছে। হেড অফিস ঢাকার মতিঝিলে।

অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড

১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত, সাবেক হাবিব ব্যাংক এবং কমার্স ব্যাংকের মিলিত উদ্যোগে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাখা রয়েছে। অনলাইনে ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য ৯৬২টি শাখা রয়েছে।

রূপালী ব্যাংক লিমিটেড

১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত। স্থির ও চলমান জমা, বিনিয়োগ, ঋণ, কৃষি ঋণ, বৈদেশিক মুদ্রা, রেমিটেন্স, ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করে। ৫১% মালিকানা সরকারের হাতে, ৪৯% বেসরকারি খাতে। ৫৮৬টি শাখা রয়েছে।

বেসিক ব্যাংক লিমিটেড

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গুলোকে সহায়তা করার জন্য ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠা। ১৯৯২ সালে সরকারের হাতে ১০০% শেয়ার হস্তান্তরিত হয়। দেশের ৭২টি শাখা রয়েছে।

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড

২০০৯ সালে শিল্প ব্যাংক এবং বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা একত্রিত করে প্রতিষ্ঠা। দেশের বড় ও মধ্যমেয়াদি শিল্প খাতে ঋণ প্রদান করে। ৫০টি শাখা রয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক

  1. রাজশাহী কৃষি ব্যাংক উন্নয়ন
  2. প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক
  3. বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক

রাজশাহী কৃষি ব্যাংক উন্নয়ন

১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কৃষি ঋণ সরবরাহে কাজ করে। শাখার সংখ্যা ৩৮৪। হেড অফিস রাজশাহীতে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক

বিদেশগামী কর্মীদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের জন্য ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা। দেশের বিভিন্ন জেলায় শাখা সংখ্যা ১০১।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক

১৯৭৩ সালে কৃষি খাতে উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা। ১০৩৮টি শাখা রয়েছে। কৃষি ছাড়াও সাধারণ ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে।

FAQ

  • বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাংক কোনটি? সম্পদ ও দায়ের দিক থেকে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
  • বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ ১০টি ব্যাংকের নাম কি? ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কমার্স, পদ্মা, এক্সিম, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ন্যাশনাল, ইউনিয়ন ব্যাংক ইত্যাদি।
  • বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংক গুলো কি কি? সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)।

উপসংহার

বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়েছে। আরও শিক্ষামূলক তথ্য ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে StudyTika.com এ আমাদের অন্যান্য পোস্টগুলো পড়তে ভুলবেন না।

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.